ভ্রমণ প্রপঞ্চময়তা

ছাইরাছ হেলাল ২২ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৩:১৫:০১অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৫৬ মন্তব্য

PicsArt_03-22-03.05.08
এ এদিকে ঠেলে সে ঐদিকে ঠেলে, ও ও দাঁড়িয়ে মাজা লয়, এমন নয় কোন ভাবেই। প্রশস্ত পথ এতটা যে হাঁটাচলা থেকে যতখুশি ঘোরাঘুরি সব বহাল তবিয়তেই হবে।
g-14 বা h-14 সিট দুটি কয়েক কাঠি সরেস, এমনিতেই বসার সিট গুলো বিমানের ইকোনমি শ্রেণির সিট থেকে প্রশস্ত এবং লম্বা হাঁটুর লোকদের জন্যও বেশ আরামদায়ক। সিটে বসেই আরামছে হাত-পা খেলিয়ে নিতে পারা যাচ্ছে। আর এই সিট দু’টির মাহাত্ম্য হল আপনার সমুদয় মালছামানা/লটবহর (লোটা কম্বল) আপনার সামনে গুছিয়ে বা ইচ্ছেমত মেলে বা সাজাতে পারেন, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। কাকস্য পরিবেদনার চান্স জিরো,(এখানে fire exite তাই ফাঁকা অনেক)
যাচ্ছি ঢাকা থেকে বরিশাল গ্রীন লাইনের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী হয়ে, সহনীয় শব্দ ও বাতানুকূল দ্রুতগামী বিরাট লঞ্চে। প্রায় বিমানাভ্যান্তরের মত। আনন্দদায়ক ছ’ঘণ্টার জার্নি। নো লেট। সকাল আট’টায় ছেঁড়ে দুপুর দু’টোয় বরিশাল। মর্জিমাফিক এই সময়টুকু বিভিন্ন স্লটে ভাগ করে নিলে মজাই-মজা হতে পারে। কায়দাদুরস্ত হয়ে মনে মনে স্লটের সময় সাজাচ্ছি, উথাল-পাতাল না হলেও ভরাট মনানন্দ হাউই হয়ে উড়ে গেল ভাবনায় ছেদ টেনে,
শিশুটি গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে, নেহায়েত আপন জনের মতই আপন হয়ে। জুতোয় ক্ষুদে বাতি জ্বালিয়ে লঞ্চময় আনন্দময় দৌড়ঝাঁপ করতে দেখেছি। বুড়ো হাবড়া বিরক্ত হচ্ছে ভেবে দোনোমোনো ভাব নিয়ে যমজ রমণীদ্বয় দ্রুত এগিয়ে এসে শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে গোঁ ধরে আরও সংলগ্ন হয়ে গ্যাঁট হয়ে দাঁড়াল। অবস্থা কিছুটা বেগতিক ভেবে শিশুটিকে পাশের খালি সিট দেখিয়ে বসতে বললাম, মহা খুশি হয়ে মা-খালাদর(অনুমান)কপালে ভাঁজ ফেলে বসে পড়ল।

যা ভাবছিলাম, স্লটের বিন্যাস নিম্নরূপ হতে পারে,

১.কেতাবি হওয়া (পড়ুয়া ভাব নেয়া)
২.গান শোনা
৩. খেঁড়ো খাতায় লেখা মকশো করা
৪.মেসেজ চালাচালি করা
৫.টেলিভিশনের চলমান মোশা+তিশা দেখা
৬. ক্যামেরায় ছবি তোলা, ভেতরে ও বাইরে
৭. সেলফি, নানা প্রান্তে
৮.নাস্তা করা (লঞ্চ থেকে দেয়া)
৯. তাকাতাকি করা দূর ও কাছের সহযাত্রীদের দিকে, পছন্দ সই(দ্বিপাক্ষিক)
১০. খেজুরে আলাপ, জুত মত হলে
১১. তলরূম পরিদর্শন কানে তুলো দিয়ে
১২. ক্যান্টিনে জিভে জল আনা উপাদেয় পেটিস, বার্গার ও কফি পান
১৩.কাকনিদ্রা
১৪. ফেবু
১৫.ব্লগ

সতর্কতা,
ঝোপ বুঝে কোপ মারার চেষ্টায় অপরিচিত পরিচিতদের থেকে কিছু খাওয়া বা নেয়া ঠিক হবে না, তবে ফেবু সহ নানা এ্যাপের অ্যাড চালু করা যেতে পারে সহি সাবধানে। এক্ষেত্রে সেলফিও জায়েজ।

শিশুটি নিঃশব্দে এটা ওটা নাড়াচাড়া করছে, নিরুপদ্রব ভাবেই। হঠাৎ উঠে গিয়ে যমজদের ব্যাগ হাতড়ে গোটা কয়েক চকলেট বার নিয়ে এসে একটি খুলে খেতে শুরু করল, আধ খাওয়াটা পাশে রেখে এবারে একটি স্নিকার বের করে খুলে আমাকে খেতে ইংগিত করছে, এই প্রথম মনে হল! শিশুটি কী বাকপ্রতিবন্ধী? আমাকে খেতে বলছে, আমি অপ্রস্তুত বোধ করছি, শিশুটি কান্না জুড়ে দিল চকলেট নেইনি বলে, তড়িঘড়ি করে যমজদ্বয় ছুটে এসে বলল শিশুটি বাকপ্রতিবন্ধী, একটু জেদিও, চকলেটটি না খেলেও আমি যেন হাতে নেই, আমি তাই করলাম, এবারে সে আবার শান্ত হয়ে নিজের চকলেটে মন দিয়েছে।

এহেন পঞ্চদশ প্রকারের কাজ নিজস্ব মেজাজ-মর্জির সাথে রফা করে নিতান্ত ভাবেই আগু-পিছু করে করা যেতেই পারে, আর হ্যাঁ সংযোজন- বিয়োজন ইচ্ছাধীনেই থাকল।

জানা গেল যমজাকৃতির রমণীদ্বয় খালাত বোন হন, বরিশাল শহরের স্থায়ী বাসিন্দা।
তবে ছেলেটির মা কে হন তা বুঝতে পারিনি, জিজ্ঞেসও করিনি।(গোস্তাকি মাফ করবেন, হুমায়ূন আজাদের খালাত ভাই-বোন নিয়ে সে বিখ্যাত গল্পের কথা বলছি না, ইশারায় কাফি, তাও না)

নড়ে উঠল সময়, ঘাটে পৌছে গেছে জলযান, জলের যান!
সবাই নামলাম, আমার সাথেই আছে শিশুটি। এবারে যে যার পথে। শিশুটি আমাকে যেতে দিচ্ছে না, কী যেন বলতে চাচ্ছে, অভিভাবকদ্বয় আমাকে জানাল আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে, প্রমাদ গুনলাম, অগত্যা আমার ঝোলা থেকে এক বক্স চকোলেট দিতে চাইলে তা নিতে অস্বীকার করে একজনের কোলে উঠে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিল।

অচিনের বিভূঁইয়ে যে যার পথে পথ দেখে নিলাম, নীরব রোরুদ্যমানতায়।

0 Shares

৫৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ