প্রায় ভোর-রাত, জাঁক করে বসলাম, র’ মত নয়, উদ্দেশ্য ভাত-ঘুম বা ঝিমুনি টাইপ কিছু একটা। এ-ওর কাঁধে-বুকে মাথা ফেলে কাজ চলে যাচ্ছিল, এভাবে কতক্ষণ কেটেছে তা মালুম নেই, ঘুম ভেঙ্গে গেলে কফির ঘ্রাণ নাকে এসে পৌঁছুল ভাল করেই, খিদেটা-ও চনমনে, মোচরা-মুচরি শেষ করে হাল্কা কনুই চালিয়ে তাঁর পাক্কা-ঘুম কাঁচা করে কফির উৎস খুঁজে নিলাম।
উরি-বাস!! শালিরা দেখি সক্কাল বেলায়-ই চাঁদের হাট বসিয়ে ফেলেছে, ক্যাফেটি ব্যানার- ফেস্টুন আর পোস্টারে রমরমা, নূতন একটি বার্গারের প্রমোশনাল অফার, অতিকায় রেড-মাঙ্কিগুলো সাবড়ে যাচ্ছে সেগুলো ক্যাফেতে বসে-বসে, এমনিতে দাম পনের ডলার, এখন মাত্র সাত ডলার, প্রচার-টাইম বলে, আকার-আকৃতি দেখে একটু দমে গেলাম, প্রস্থে টেনিস বলের আকারের সমান কিন্তু উচ্চতায় বলের অর্ধেক, ভাবছি গোটা তিনেকের কমে কাজ হবে না। আর-ও ভাবলাম আমরা পূর্ব দেশীয় মানুষ, হারামিরা আমাদের কী-না-কী খাইয়ে পুটু মেরে দেয় তার ঠিক-ঠিকানা নেই, তাই প্রথমে একটি করে বার্গার ও কফি দিয়ে শুরু করি, দেখি-না-কী-হয় সিস্টেম।
কাউন্টারের নাদুস-নুদুস (ফাইন) গোলাপি শূকরী-ছানাটিকে জিজ্ঞেস করলাম বার্গারের সাথে কফি ফ্রি কী-না!! মৃদু হেসে প্রবল মাথা নাড়ানাড়ি এপাশ-ওপাশ, এবার আর একটু ঘন হয়ে নিচু স্বরে বললাম আমাদের দুজনকে অন্তত একটি কফি দাও, ভাগাভাগি করে খাই। এ-কথা শুনে চিড়ল দাঁত সব বের করে হেসে কুটি-কুটি, সাথে ছোট্ট প্লেয়ার্স থাকলে দাঁত তুলে ফোকলা করে দিতাম।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কাউন্টারের অন্য ধাড়ী শূকরীটি নিবিষ্ট-গোল-চোখে ঝিকমিকে শিকল-দাঁত মেলে আমার সঙ্গিনীকে গিলছে!! ঝট্ করে আড়াল দিয়ে দাঁড়ালাম, এ-শালি শিউর ‘রং’!! এবারে আমার দাঁত কেলানো!! দেখ হারামি কত বড় দাঁত!! ভেংচি!! অপ্রস্তুত ও লজ্জাইত করতে পেরে আনন্দ আর আনন্দ।
যে-ই-না কামড় বসাতে যাচ্ছি, মনে পড়ে গেল 83 X 7!! ধুর বাল বলে কু-চিন্তা ঝেরে ফেলে খেতে শুরু করে দিলাম, কিন্তু এ-কী!! আমি কোথায়!! কী খাচ্ছি!! সিদ্ধান্ত নিলাম স্বর্গ-ফর্গ সব বাদ, বাদ সব ঘুরাঘুরি, আমি আর কোথাও যাব না, পকেটে যে পর্যন্ত রেস্ত আছে সে পর্যন্ত ইট বার্গার, থিংক বার্গার ও স্লিপ বার্গার!! খোঁচায় সম্বিৎ ফিরে পেলে দু’টো কফি নিয়ে বাইরে এসে বসলাম, ঠাণ্ডা কফি পেলাম না, ঠাণ্ডা করেই খেতে হবে স্টারবাকের কফিটি।
অভব্য, অসভ্য, বদমাশ, নেমকহারাম সময় এখন উসাইন বোল্টের পিঠে সওয়ার হয়ে ছুটছে!!
হঠাৎ পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কান ঝালাপালা শব্দে লাউড স্পিকারে বিমানে সেঁধিয়ে যাওয়ার শেষ ঘোষণাটি ভেসে এলো, গাট্টি-বোচকা নিয়ে ভো দৌড়!! পড়ে রইল না-খাওয়া সাধের কফিটি, যে-টি তখন-ও উষ্ণ!!
ভাল কথা,
ভেজা-চোখ, নাতিদীর্ঘক্ষণের প্রবল জড়াজড়ি ও হাল্কা চুমা-চাট্টি সহ বিয়োগান্তক কিছু দৃশ্য কাট্ করা হলো (অবশ্য মিলেঙ্গে ফের)।
৩৪টি মন্তব্য
নীহারিকা
আপনি কি চীজ তা এই লেখা না পড়লে বুঝতাম না। বেচারা কফি!!! মায়া হচ্ছে আপনার জন্য। শেষের লাইন কয়টা পড়ে লজ্জা পাইলাম, তাই আর কিছু লেখলাম না। আল্লাহ জানে ফির মিলেঙ্গের পর আর কি কি আসিতেছে।
এত অল্প অল্প করে দিলে চলে?
ছাইরাছ হেলাল
সত্যি বলছি বার্গারে হেভি চিজ ছিল,
ইস!! কফি!! (কান্দনের ইমো হপে)। নাহ্ এর পর আর তেমনের কী আর বাকী থাকে!!
এত কিছু লিখলাম তাকে বলছেন অল্প!! আবার পড়েন, মন দিয়ে, ফড়ফড়িয়ে পড়লে হবে না।
নীহারিকা
ফড়ফড়িয়ে পড়ি নাই তো। পড়া শুরু কইরা চোক্ষের পাতি ফেলতে না ফেলতেই দেখি পড়া শেষ। দুই তিনবার চোক্ষের পাতি ফেলতে তো দিবেন? কত কি যে বাকি থাকলো তা একমাত্র সাক্ষীরাই বলতে পারে। আমরা গালে হাত দিয়া বসলাম।
ছাইরাছ হেলাল
চৌক্ষেরে কইবেন একটু যেন আস্তে-ধীরে কাম-কাইজ করে, এত্ত তাড়াহুড়োর কী আছে!!
সব কিছুর সাক্ষী থাকে না, হয়-ও না, পড়ে-ই কল্প-চৌক্ষে দেখে নিতে হয়।
একটু বসেন, পেয়ে যাবেন সময় হলেই।
তা-ও রক্ষা, হাত গালে, মাথায় ওঠে-নি!!
নীহারিকা
পরের পর্ব আসুক, চুপ করলাম। ;?
ছাইরাছ হেলাল
আইচ্ছা,
ইঞ্জা
বেশ মজার তো, এতো ছোট বার্গার বিক্রি করে স্টারবাক, আজ জানলাম।
বাকিটা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য নাই বা করলাম আজ, আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 😀
ছাইরাছ হেলাল
শালারা মহা শয়তান!!
বাচ্য না করে অপেক্ষা মন্দ না, চলুক।
ইঞ্জা
চলুক। 😀
ছাইরাছ হেলাল
চলিপে!!
জিসান শা ইকরাম
এত্ত কিছু হইছে এয়ারপোর্টে?!!! আর আমি কিছুই দেখলাম না? নাকি আমিও আবার অন্য ধান্ধায় বিজি ছিলাম?
আচ্ছা নিজেকে নিজে কখন ভুলে যায়? :p
পানির পরে না খাওয়া কফি 🙁 এত স্বাদের আর কস্টলি জিনিসপত্র অধরাই থেকে যায় আসলে।
এমন সুখের ভ্রমনের জন্যই দেশ ভ্রমন কিনা কে জানে? 😀
ছাইরাছ হেলাল
অনেক কিছুই হয়!! যে যা দেখার তা দেখে, যা করার করেও!!
ধরুন আপনি একটি ব্লাক ডায়মন্ডের ঘ্রাণ পেলেন, দিগ্বিদিক একটু আউলাইয়া যেতেই পারে, পারে না!!
ভ্রমণ, দেশ বা বিদেশ অবশ্যই আনন্দের, যদি তা করা যায়!!
দামী জিনিশপাতি-ই হারানোর চান্স বেশি থাকে।
মৌনতা রিতু
তো এইছিল ভ্রমণ গল্প! ওরে আল্লাহ্! কি কি করে আসলেন? হালাল হারাম চিন্তা না কইরা টেস্টি টেস্টি বার্গার খেয়ে নিলেন? আপনাগো দেশ ভ্রমণ বুঝতারলাম।
কাটছাট যা করছেন কইয়া ফালান। শুনে একটু ধন্য হই।
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন সফরে মুসাফির হালতে কানুন শিথিলতার সুযোগ রেখেছেন দয়াময়,
সে কথা মনে রেখে সামান্য উদরপূর্তি করেছি মাত্র!!
দ্যাশ আর ভ্রমণ করতে পারলাম কৈ!! ভ্রমণ-ই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দূরে ঠেলে ফেলেছে!!
আমার আর কিছু কওনের নাই, এরপর যা বলার ধুম্র-সুন্দ্রীই বলবে, অপেক্ষা করুন।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাইসাব, আপনাকে এতো গরম মনে হয়নি।
আপনার শারীরিক গতর আপনাকে আপাদমস্তক শান্তশিষ্ট মনে হয় কিন্তু এতো রাগাম্বিত মনে হয়নি। আমার মনে হয় এইপস্ট প্রথম পেলাম আপনি ভাওই রেগে জেতে পারেন।
হালাল চিন্তা কইরা আল্লাহকে ভয় করেন। আল্লাহ মঙ্গল করবে।
ছাইরাছ হেলাল
আরে নাহ্, সামান্য ফাজলামো মাত্র।
অবশ্যই আমরা আল্লাহকে ভয় করব।
নীলাঞ্জনা নীলা
এই বুঝি ভ্রমণকাহিনী? স্টারবাকসে কফি খাইতে যান কেন? ওইটা হলো র’য়ে, সয়ে খোশমেজাজে, আমুদে মন নিয়ে আড্ডা দিয়ে দিয়ে কফি পানের জায়গা। তাছাড়া কফি যদি ঠান্ডাই খাবেন, তাহলে আইসড কফি নিলেই পারতেন! আর হালাল-হারাম খেয়াল করেননি? আপনার বেহেস্তের পাসপোর্ট গেলো। 😀
এতো রসিয়ে ভ্রমণ কাহিনী কুবিরাজ ভাই লিখতে পারেন! এত্তো জ্ঞান নিয়া ঘুমান ক্যাম্নে? ;?
ছাইরাছ হেলাল
ঠাণ্ডা কফি দিতে পারল না দেখে গরম-ই নিতে হয়েছে যে,
ওদিকের আসন পাক্কা আগে থেকে-ই, নো চিন্তা।
রসিয়ে লেখা শিখছি মাত্র!! দেখতে থাকুন,
তবে আমি যেমন ভ্রমণ করেছি তাই-ই বললাম, চেপে-চুপে না রেখে, তাতে কোন কাহিনী হয়েছে কী না জানি না,
এমুন ভ্রমণ কাহিনী বুঝি যুইত লাগে না!!
আপনিও একটি শুরু করে দিন।
নীলাঞ্জনা নীলা
চেপে-চুপে কাহিনী পোষায় না। বললে সবটুকু, নইলে একেবারেই না।
বহুত যুইত লাগে। আসলে আমার মাথার ভিতর ফাঁপা। বুঝতে সময় লাগে।
ভ্রমণ কাহিনী শুরু করবো আমি!!! অতো ধৈর্য আমার নাই। 😀
ছাইরাছ হেলাল
আজব!! চাপলাম কৈ!!
মাথার দুষ দিয়ে আর কী হবে!!
ভ্রমণ কাহিনী লিখতে আলাদা ধৈর্য লাগে নাকি!! আমাদের পড়ার ধৈর্য আছে, শুরু করেই দেখুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
সব মনে নেই তো! কতো কতো যে জায়গা, নামই ভুলে গেছি। দেখি হিরোশিমা নিয়ে লেখা যায় কিনা! কিছু ছবি পেয়েছি খুঁজে। ছবি দেখে দেখে যতোটা পারা যায় আর কি!
ছাইরাছ হেলাল
গুড গার্ল!!
অপেক্ষাই এবারে তাহলে।
অপ্সরা
হা হা অনেক হাসলাম ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
ধন্যবাদ দিচ্ছি।
নীরা সাদীয়া
বার্গার আমার প্রিয় একটা খাবার। এমন বর্ণণা দিলেন…… যাক, আপনার কাছে একটা বার্গার তো পাওনা রইল, তবে এমন বার্গার নয় কিন্তু। হাহাহা
ছাইরাছ হেলাল
জ্বী, আপনার পছন্দের বার্গার পাওনা রইল।
মিষ্টি জিন
বাপের জন্মে এমন ভ্রমন কাহিনী শুনি নাই।
কি আমার ভাষা এবং তার ব্যাবহার। মরি মরি।
:D) :D)
ছাইরাছ হেলাল
তাও ভাল জায়গামত মরছেন!!
জানাশোনার শেষ যে নেই!!
মিষ্টি জিন
ভ্রমন এঁখন এখনো শুরুই হয় নাই , এয়ারপোটেই এত কাহিনি দেখে না মইরা কই যাই? :D) :D) :D)
ছাইরাছ হেলাল
এত্ত ভালুবাসাবাসি রেখে কই যাই!! কেমনে যাই!!
এখুনি মইরেন না, সুন্দ্রির কথাবার্তাটুকু শুনে যান, কামে লাগতে পারে আখেরে!!
মিষ্টি জিন
ওরে ,এই শখানেক বয়সে এয়ারপোটে বসেও ভালুবাসাবাসি? ও আল্লাহ ও খোদা… :D) :D) :D)
ছাইরাছ হেলাল
আমার বয়স ঢের, মানি,
হাতের কড়ে মাত্র পঁচিশ, গুনি!!
শুন্য শুন্যালয়
এয়ারপোর্টে যাইবার কালে দুইজনের কিচ্ছা শুনি, হের পরে দুই দুগুনে তিন হইয়া যায়। আর এইসব কিচ্ছাকাহিনী, ছেঃ ছেঃ। বংশের আইমিন বিডির সক্ষম পুরুষগুলার মান আর থাকলোনা। দুইন্যার প্রেম পিরিত কিনা এয়ার্পোর্টে? লগেরডা এত্তো ফটুক তুলে, ভিডিও করে, এইসব রঙ রঙ রঙ্গিন কাহিনী চলচ্চিত্র মিস করি ফালাইলো?
উষ্ণ কফি ফেলাইয়া ভাগন দেয়া লাগছে তার বেবাক রাগ দেখি সোনেলায় আইস্যা উগড়াইছেন। এইসব কোন বই পইড়া শিখছেন শুনি?
ভয়াবহ প্রেম রোগে ধরেছে আপনারে? আবার ভ্রমণে বেরুচ্ছেন কবে? বাকি কাজ সমাপ্ত করা লাগবেনা?
ছাইরাছ হেলাল
পিরিতি মানে-না স্থান-কাল-পাত্র, এয়ারপোর্ট সেখানে নস্যি!!
দুই দু গুনে শুধু তিন না, চার পাঁচ ছয় ও হইতারে!!
কেউ কিছুই মিস করে-নি, আরও কত কাহিনী আছে তাই বলতে/দেখাইতে পারতেছে না (ডরে)!!
এ অসুখ সাবর্জনীন, শেষ হয়নি দেখতে থাকুন।