ভিন্ন জগৎ

মনির হোসেন মমি ২ অক্টোবর ২০১৬, রবিবার, ০৪:১৩:৫৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, গল্প, বিবিধ ২০ মন্তব্য

jjjjলাইইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদুর (রাঃ)।দরূদ শরিফটি বেশ কয়েক জন সমচ্চোরে বলছেন আর লাশের খাট কাধে নিয়ে হাটছেন মুসলমানদের শেষ ঠিকানা কবর স্থানের দিকে।কবর স্থানে লাশটি নামিয়ে তার আরেক বার জানাযা পড়ালেন।আরেক বার তার বড় ভাই মৃত ব্যাক্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে তাকে ঋণ মুক্ত করার ঘোষনা দিলেন।কবর স্থানটি মৃত ব্যাক্তির বাড়ীর অতি নিকটে তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে একটি ছোট খাল যা শষ্যাদি উৎপাদনে সেচে বিভিন্ন জমিনে পানি সরবাহ করা হয়।জানাযা ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম শেষে লাশটিকে চিরতরে বিদায় ঘরে নামিয়ে বাশ ও বাশের বেড়া দিয়ে ঢেকে দেন তারপর আত্মীয় স্বজনরা কবরে এক মুঠো করে মাটি দিলেন অতপর কবর খুড়ার লোকেরা কবরটিকে অবশিষ্ট মাটি দিয়ে ভরে দিয়ে আবার মোনাজাত করেন অতপর একে একে সবাই করব স্থান হতে বিদায় নিলেন।লাশটি ছিল পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুয়া,টুপি-পাঞ্জাবী এবং মুখে লম্বা লম্বা দাড়ি গজানো,পৃথিবীর মানুষের চোখে এক পরহেযগার ব্যাক্তি বলে হয়তো তার জানাযায়ও প্রচুর লোক হয়েছিল।
পর দিন প্রায় সন্ধ্যায় পিতার কবরটি এক নজর দেখে আসতে পুত্র তার কবর স্থানে গেলেন।কবর স্থানে দূর হতে হঠাৎ কবরটির দিকে লক্ষ্য করলেন সে,কবরটির উপরে প্রচন্ড তাপে পিচ ঢালা রাস্তার উপর তাকালে যেমন আফছা স্বচ্ছ বাষ্পের তরঙ্গ দেখা যায় তেমনি কবরটির উপর সে লক্ষ্য করলেন তৎক্ষনাৎ সে কবরটির কাছে গিয়ে আরো একটু বিশ্বস্ত হতে চেষ্টা করল।ধীরে ধীরে যতই সে কবরটির নিকটে যাচ্ছেন মনে এক দিকে এক প্রকার ভয় অন্য দিকে পিতার সহি সালামতে আছেন কি না তার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে।সে যতই কাছে যাচ্ছেন ততই যেন ভয়ে দেহ মনে কাপন আসছে।ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে মাগরিবের আযান দিবে দিবে,
………ঠিক সেই সময় সাহস করে কি না জানিনা কি এক অদৃশ্য যাদুর বন্ধনে কবরটির একে বারে কাছা কাছি গেলেন।কবরটিকে একটু ছিদ্র দেখেন এবং সেই ছিদ্র দিয়ে একটি শিয়াল তার পায়ের আওয়াজ পেয়ে উঠে দৌড়ে চলে গেলো এরমধ্যে তার চোখের পানি এসে গেলো কেননা পিতা বলে কথা।
যদিও মৃত্যুর পর মানব দেহ অসার তার কোন প্রয়োজন নেই এ ধরণীর,কেবল মাত্র ধর্মের রীতি নীতিতে পরিবেশ কিংবা জীবন্ত মানবের লাশটি পচনে যে বিষাক্ত গন্ধ ছড়াবে তাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হন পৃথিবীর মানুষ সে কারনে হয়তো মুসলমানরা কবর দেন,হিন্দুরা পুড়িয়ে ফেলেন খ্রীষ্টান বৌদ্ধরা বক্স বন্দি করেন।নতুবা এ লাশ বাহিরে পড়ে থাকলেও মৃত দেহের কিছুই যায় আসে না।কেননা দেহের মুল বস্তু আত্বা তা যেখানে যাবার সেখানেই চলে গেছেন বা যায়।হয়তো ফের এ আত্বা কোন এক ভিন্ন রূপ ধরে পৃথিবীতে আবার আসতেও পারেন তা কেবল স্রষ্টাই জানেন।তবুও দীর্ঘ দিনের জন্ম মৃত্যুর আত্বার আত্বীয়তায় মায়া লেগে থাকে।এই মায়ার জালে ফেসে মানবেরা একে অন্যের জন্য ভাল থাকার প্রার্থণা করেন।
ছেলেটি কাছে গিয়ে যখন কবরটির ছিদ্র পথে তাকালেন,কবরে কেমন আছেন পিতা তখন হঠাৎ অন্ধকারে জ্বলন্ত আগুন দেখে চিৎকার দিয়ে উঠেন।তার চিৎকারে কবর স্থান মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিরা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে তাকে কবর স্থান হতে সরিয়ে আনেন তখন মসজিদের মাইকে মাগরিবের আযান দিল।আল্লা হু আকবার আল্লা হু আকবার…..।আযানের ধ্বণি কানে পৌছতে সে স্বাভাবিক হলেন এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন।নামাজ শেষে ইমাম সাহেব তাকে নিয়ে মজলিসে বসলেন।
-হুজুর এইডা কি দেখলাম
ll;l;'kl-এটা নিশ্চিত গুনাহগার কাজের নমুনা,তোমাকেই খোজে বের করতে কি সেই গুনাহ।
-নাতো আমি যতটুকু জানি…..(ফ্লাস ব্যাক)
পাশের বাড়ীতেই ছিলো আমরা এক পর সম্পর্কের খালা,তারা দুজনেই ছিলেন খুবই ঘনিষ্ট সই।যেখানে তার সাথে গল্পের ছলেই সে বলেই ফেললেন কিছু অপ্রত্যাশিত কথা।
-দেখছো,আমার পুলায় হজ্বে যাইবো বউকে নিয়া আমারে কিছু কইলুনিই না।থাক তাতে কি হয়েছে এর পরের বার যামুনে।
-হ,ওরা আগে সাইড়া আহুক।
তারপর সে একাই বেশ কয়েক বার হজ্ব করেছেন তার সংখ্যা দিন লম্বা হচ্ছিল যা নির্ণয় হয়তো সেও বলতে পারবেন না।
-তার মা আছেন?
-না গত হয়েছেন বেশ আগেই।
-এখন যা করার তোমাকেই করতে হবে।
-কি করব!আমিও যে তার অধৈত সন্তান।
খবর পেয়ে তার এক অবৈধ সন্তান ছুটে আসেন তার জানাযায়।সম্ভবত পবিত্র হজ্ব আদায়ের নেয়ামত হলেন সে।
মানুষ তুই ভবে আসলি কেন,
যেখানে হিসাবের কারবারী
স্রষ্টার হাতে তোর প্রান চাবি,
পাপ-পূর্ণ্যর হবে না তো বিচার
এমন ভাবনা ভাবলি কেন?
uoijhol
ইমাম সাহেবের কিছু বয়ানে ছেলে দুটোকে অবাক করল।ইসলাম ধর্ম পালনে যেমন সহজ তেমনি কঠিন তার পাপের শাস্তি।অবৈধ সন্তানটিকে লক্ষ্য করে ইমাম সাহেব বললেন।
-তোমার জন্ম অবৈধ হতে পারে তোমার জন্ম দাতাতো সেই,তার জন্যেই তুমি দুনিয়ার আলো বাতাস দেখতে পারছো সুতরাং তুমি তোমার পিতার প্রতি কোন কষ্ট রাখবে না এ সমস্যা সমাজ আর ধর্মের।আর একটি কথা হলো সে কি কোন ভাল কাজ করেননি?
প্রথম পুত্রের অভিমত।
-আমার চোখে খারাপ বলতে কিছুই তার দেখেনি।আমার জানা মতে,সে নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন যখন তার নামাজের বয়স হয়েছিল তখন থেকেই।তবে আমার নানীর মুখ থেকে কিছু শুনাম শুনেছিলাম।
-বিস্তারিত জানলে বলো।
-আমার মায়ের পরিবার ছিলেন খুবই গরিব।নানী একটি ধান ভাঙ্গানোর মেশিন ঘরে ভাঙ্গানো ধানের কুড়া মানে ধানের আবরণ গুলো কোলা দিয়ে ঝেরে আলাদা করতেন।সেখানে ব্যাবসায়িক খাতিরে সে মানে আমার পিতার যাতায়াত ছিলো।একদিন আমার নানীর সাথে আমার মা গিয়েছিলো সেই ধান ভাঙ্গানোর মেশিন ঘরে তখনিই সে আমার মাকে দেখে পছন্দ করেন।নানীকে অনেক রিকুয়েষ্ট করেন বলে যে সে তার মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিবেন কি না।নানী প্রথমে ইতস্তঃ করেন কেননা সে ছিলেন অর্থে সম্পদে ধনী আর মায়ের পরিবার ছিলেন দিন এনে দিনে খাওয়ার মতো।পরবর্তীতে অবশ্য সে মানে আমার পরলোকগত পিতা নানীকে অভয় দিয়ে রাজী করান।আমার জানা মতে এটাই ছিলো তার একটি ভাল কাজ।যা একটি গরিব পরিবার সমাজে মাথা উচু করে বাচার অধিকার পেয়েছিলেন।
ইমাম সাহেব একটু চিন্তিত কি ভাবে এর সমাধান দিবেন মৃত ব্যাক্তির আত্বীদের।তার ধারণা হজ্ব পালনে ব্যার্থ মায়ের ঐ সামন্য হাক যা মনের গভীর হতে আসা সামন্য কষ্ট লাগাই এই মৃত ব্যাক্তির কবরের এমন শাস্তি।তবুও ইমাম সাহেব বলে কথা এর সমাধান যদিও নেই তবুও শান্তনাতো তাদের দিতে হবে।
-যাক আল্লাহ ভরসা আল্লাহ যা করেন তা মানবের কল্যায়ণের জন্যই করেন।তিনি মহান দয়ালু তার ইচ্ছেতেই এ জগৎ সংসার চলে।আমরা মানব আল্লাহের সৃষ্টি আটষর্ট্রি হাজার মাখলুকাতের মধ্যে এক মাত্র মানব জাতিই পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতি।যাক আসল কথায় আসা যাক,তোমাদের পিতার এমন অপরাধের সমাধান পৃথিবীর কেউ দিতে পারবেন না তা একজনই পারতেন আর সে হলো তার পরলোকগত মা।তিনি আজ বেচে নেই সুতরাং এ ঘটনা আমাদেরকে মায়ের প্রতি অযত্ন বা কষ্ট দেয়ার নমুনা স্বরূপ মেনে নিয়ে বেশী বেশী করে আল্লাহর দরবারে কাদঁতে হবে।এ থেকে তোমাদের শিক্ষা নিতে হবে তোমাদের মা বাবা আত্নীয় স্বজনদের সাথে সর্বদা উত্তম ব্যাবহার করবে।তোমাদের পূর্ণ্যের উপর ভর দিয়ে হয়তো আল্লাহ তোমাদের পিতার শাস্তি মওকুফ করতে পারেন।
পরকালের আজাব ও বেহস্ত সম্পর্কে ইমাম সাহেব বেশ কিছু সহি হাদিস শুনালেন তাদের।হাদিসগুলোকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন মজলিসে উপস্থিত মুসুল্লিদের।উপস্থিত মুসুল্লিদের অধিকাংশদের চোখের জল টল টল করছে যা মোনাজাতের সময় ঝর ঝর করে ঝড়িয়ে পড়ে।

১০৮৪জন ১০৮১জন
0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ