পূর্ব প্রকাশের পর 

হযরত সুলায়মানের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাসুল স. এর হাদিসকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। কারণ অতিতকালের নবী রাসুলগণের দ্বারা প্রবর্তিত প্রথা আমাদের উপরেও প্রযোজ্য, যদি না তার বিপরীতে আমাদের শরিয়াতে কিছু বলা থাকে। উল্লেখ্য, হযরত সুলায়মানের সময়ের মানুষের মন-মানসিকতা ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের সময়ের পরিবেশ ও পরিস্থিতি তুলনীয় নয়। হযরত সোলায়মান ছিলেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী নৃপতি। তাই সম্রাজ্যের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে তাকে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিতে হতো। যেমন- তার প্রজাদের মধ্যে জ্বিনেরা ছিল দুর্বিনীত, সতত চঞ্চল। অবকাশ পেলেই তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করত। তাই তাদেরকে সব সময় রাখতে হতো কাজ দিয়ে। হযরত সুলায়মান তাই তাদেরকে সারাক্ষণ লাগিয়ে রাখতেন প্রাসাদ নির্মাণ, অলংকরন ও অন্যান্য কাজে। রাসুল স. কে এরকম বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তার উম্মতও এসকল কিছু হতে মুক্ত। তাই হযরত সুলায়মানের সময় যা জায়েজ রাসুল স. এর সময় তা নিরর্থক। ঐতিহাসিকেরা বলেন, বখতে নসরের আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত বায়তুল মাকদিসের নির্মাণশৈলী ও অলংকরণ ছিল অটুট। সে তার দুর্ধর্ষ বাহিনীকে দিয়ে ধুলিসাৎ করে দিয়েছিল বনি ইসরাইলের প্রাসাদ, দুর্গ, নগরপ্রাকার ও অন্যান্য স্থাপনা। মসজিদ ও ধ্বংস করেছিল সে। খুলে নিয়ে গিয়েছিল মসজিদের মূল্যবান পাথর ও অন্যান্য সামগ্রী।

‘তামছিল’ এর বহুবচন ‘তামাছিল’ এর অর্থ ভাস্কর্য, মুর্তি, বিগ্রহ, প্রতিমা। আর এখানে ভাস্কয্য বলে বুঝানো হয়েছে পিতল, তামা, সিসা ও মর্মরপ্রস্তর নির্মিত মুর্তিকে। উল্লেখ্য জ্বিনেরা হযরত সুলাময়মানের উদ্দেশ্যে ইয়েমেনে নির্মাণ করেছিল এক বিস্ময়কর স্থাপত্য। এক বর্ণনায় এসেছে হযরত সুলায়মান জ্বিনদের দ্বারা নির্মাণ করাতেন সাধারণতঃ পশুপাখিদের মুর্তি। মসজিদের মধ্যেও তিনি অংকন করিয়েছিলেন ফেরেশতা মন্ডলী, নবী-রসুল ও খ্যাত নামা মনিষীগণের চিত্র। উদ্দেশ্য ছিল ঐ সকল পূণ্যবানগণের স্মৃতি যেন মানুষের অন্তরে জাগ্রত হয় এবং মানুষ যেন তাদের প্রভাবে অনুপ্রাণিত হয় আল্লাহর ইবাদাতে। (তাফসির মাজহারি, নবম খন্ড)

আরো জানি জ্বিনদের কাজ সম্পর্কে :

সুরা সাবার 13 নং আয়াতে কিছু কাজের বিবরণ দেয়া হয়েছে যেগুলো সোলায়মান আ. জ্বিনদের দ্বারা করাতেন। উক্ত আয়াতের ‘মাহারিবা’ শব্দটি মাহরাবুন’- এর বহুবচন। অর্থ গৃহের শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ অংশ। বাদশাহ অথবা বড় লোকেরা নিজেদের জন্য যে সরকারি বাসভবন নির্মাণ করে, তাকেও মেহরাব বলা হয়। এ শব্দটি হারাবা থেকে উদ্ভুত। অর্থ যুদ্ধ। এ ধরণের বাসভবনকে সাধারণত অপরের নাগাল থেকে সংরক্ষিত রাখা হয় এবং এর জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করা হয়। এর সাথে মিল রেখে গৃহের বিশেষ অংশকে মেহরাব বলা হয়। মসজিদে ইমামের দাঁড়াবার জায়গাকেও এই সাতন্ত্র্যের কারণেই মাহরাবুন বলা হয়। কখনো মসজিদ অর্থেই ‘মাহারিবশব্দ ব্যবহার হয়। প্রাচীন কালে মাহারিবা বনি ইসরাঈল এবং ইসলাম যুগে মাহারিবা সাহাবা বলে তাদের মসজিদ বোঝানো হতো।

তামাছিলা শব্দটি “তামাছাল” এর বহুবচন। অর্থ চিত্র বিগ্রহ ইবনে আরাবি আহকামুল কোরআনে বলেন, চিত্র দু’প্রকারের হয়ে থাকে- প্রাণীদের চিত্র ও অপ্রাণীদের চিত্র। অপ্রাণীও দু’প্রকার- (এক) জড়প্রদার্থ, যাতে হ্রাস বৃদ্ধি হয় না; যেমন পাথর, মৃত্তিকা ইত্যাদি। (দুই) হ্রাসবৃদ্ধি হয় এমন পদার্থ; যেমন-বৃক্ষ, ফসল ইত্যাদি। জ্বিনরা হযরত সুলায়মান আ. এর জন্য উপরোক্ত সর্বপ্রকারের বস্তুর চিত্র নির্মাণ করত। প্রথমত তামাছিলা শব্দের ব্যাপক ব্যবহার থেকে একথা জানা যায়। দ্বিতীয়তঃ ঐতিহাসিক বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সোলায়মান আ. এর সিংহাসনের উপর পাখিদের চিত্র অংকিত ছিল। (তাফসির মাআরেফুল ক্বোরআন- সংক্ষিপ্ত-1105-1106 পৃষ্ঠা) (চলবে)

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ