গতকাল ১৩ই জানুয়ারী দিল্লীর এক সামরিক হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সে মারা গেছেন ভারতের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অফ ষ্টাফ হিসেবে অভূতপূর্ব ভুমিকা রেখেছিলেন তিনি। দীর্ঘ জীবনে বাংলাদেশের এক অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন জেনারেল জ্যাকব। তাকে উৎসর্গ করে এই লেখাটি লেখা।
জেনারেল জ্যাকবের পুরো নাম জ্যাকব ফার্জ রাফায়েল জ্যাকব। ১৯২৩ সালে কলকাতায় বাগদাদ থেকে আগত এক রক্ষণশীল ইহুদী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। পিতার অসুস্থতার কারণে অল্প বয়সেই দার্জিলিং এর এক বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করানো হয় জ্যাকবকে। ছাত্র জীবনে মেধাবী ছিলেন তিনি, ছিলেন কাব্যপ্রেমী। বিভিন্ন কবির লেখা যুদ্ধের কবিতা তাকে আকৃষ্ট করতো। ১৯৩৯ সালে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলারের জার্মান বাহিনীর নির্বিচার ইহুদী হত্যা গভীর প্রভাব ফেলে সে সময়ের তরুণ জ্যাকবের মনে। জার্মান নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার নেশায় উন্মত্ত হয়ে তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তৎকালীন ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর ভারতীয় ইউনিটে যোগ দেন। আর্মি ট্রেনিং স্কুল থেকে ট্রেনিং সমাপ্তের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার প্রথম পোস্টিং হয় উত্তর ইরাকে। সেখানকার কিরকুক শহরে জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর ১৯৪৩ সালে বিখ্যাত জার্মান সেনাপতি আরউইন রোমেলের নেতৃত্বাধীন আফ্রিকান কর্পসের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উত্তর আফ্রিকায় গমন করেন। কিন্ত উত্তর আফ্রিকায় তার ব্রিগেড পৌঁছানর পূর্বেই সেখানকার যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর জেনারেল উইলিয়াম স্লিমের নেতৃত্বাধীন ১৪ ডিভিশনের হয়ে বার্মায় জাপানিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের পর উপমহাদেশ বিভক্ত হলে তিনি দেশে ফিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ভারতীয় সেনা বাহিনীর হয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জ্যাকব যার মধ্যে অন্যতম ১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধ। তবে জ্যাকব তার সেনা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। সে সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জগজিৎ সিং অরোরার অধীনে চিফ অব স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। মার্চে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিপুল সংখ্যক বাঙ্গালী শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় প্রার্থী হয়। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে হিম শিম খেতে হচ্ছিল সে সময়ের ভারত সরকারকে। শরণার্থী সমস্যার আশু সমাধানের উদ্দেশ্যে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এপ্রিলেই বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে সেনা প্রধান শ্যাম মানেকশকে নির্দেশ দেন। কিন্ত জ্যাকব এপ্রিলে বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেন । তিনি যুক্তি দেখান যে বাংলাদেশে এখন বর্ষা আসন্ন। বর্ষায় নদী অধ্যুষিত বাংলাদেশে তার সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে সফল হওয়া কঠিন। তিনি মধ্য নভেম্বর থেকে যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে অভিমত দেন। তার আগ পর্যন্ত মুক্তি বাহিনীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদানের ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন। জেনারেল মানেকশ তাকে এ ব্যাপারে প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অবহিত করার দায়িত্ব দেন। তিনি এই কাজ সফল ভাবে সমাপ্ত করেন। জেনারেল জ্যাকব জানতেন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ আসন্ন। তাই তিনি এই কয়েক মাস যুদ্ধের প্রস্তুতিতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি ভারতীয় অঞ্চল গুলোতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বপক্ষে বিভিন্ন লজিষ্টিক সাপোর্ট যেমন অস্থায়ী হাসপাতাল, রাস্তাঘাট ইত্যাদী তৈরিকে গুরুত্ব দেন।
জেনারেল জ্যাকব-ডান থেকে দ্বিতীয় জন
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালালে ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। জেনারেল জ্যকব সেনা প্রধান শ্যাম মানেকশর নির্দেশ অমান্য করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার স্বতন্ত্র যুদ্ধ কৌশল প্রয়োগ করেন। মানেকশর নির্দেশ ছিল ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের অন্যান্য শহর যেমন খুলনা , চট্টগ্রাম আগে দখলের। কিন্ত জ্যাকব এর বিরোধিতা করেন। তিনি জানতেন ঢাকা শুধু বাংলাদেশের রাজধানীই নয় , ভুরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত কারণে বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শহর। তিনি ঢাকা দখলকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের ব্যাপারে অভিমত দেন। ঢাকা অভিমুখে যাত্রার উদ্দেশ্যে তিনি উত্তর ভুটানে নিয়োজিত ৬ মাউন্টেন ডিভিশনকে তার অধীনে দেওয়ার আবেদন জানান। কিন্ত তার এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। তার অধীনস্ত দুইটি ডিভিশনে কোন আর্টিলারি না থাকায় তিনি চীন সীমান্ত থেকে সকল আর্টিলারিকে তার অধীনে নিয়ে আসেন। ঢাকা অভিমুখে যাত্রার উদ্দেশ্যে তিনি তিনটি পদাতিক ডিভিশনকেও নিয়োজিত করেন। নভেম্বরে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গী হয়ে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তিনি ক্যাপ্টেন পি কে ঘোষের নেতৃত্বাধীন ৫০ প্যারা ব্রিগেডকে টাঙ্গাইলে মোতায়েন করেন। উত্তরাঞ্চল দিয়েও ভারতীয় বাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। জ্যাকবের নিপুণ যুদ্ধ কৌশলে ১৩ই ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল গুলোতে ভারতীয় সেনাবাহিনী অবস্থান নিতে শুরু করে। কিন্ত ভারতীয় সেনা প্রধান মানেকশ তখনও তাকে ঢাকার বাইরে অন্যান্য শহর দখলের নির্দেশ দেন কিন্ত জ্যাকব এই নির্দেশও অমান্য করেন। সে সময় পাকি প্রধান জেনারেল নিয়াজী ভেবেছিল তার বিপন্ন পাকিস্তানী বাহিনীকে সাহায্য করতে হয়তো চীন ও আমেরিকা এগিয়ে আসবে। কিন্ত তার এই আশা পূরণ হয়নি। ১৩ই ডিসেম্বর জাতিসংঘে উত্থাপিত আমেরিকার প্রস্তাবে ভেটো দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি জ্যাকব। তিনি সব দিক দিয়ে কোণঠাসা জেনারেল নিয়াজীকে আত্বসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্ত ধূর্ত নিয়াজী তাকে যুদ্ধ বিরতির ব্যাপারে আলাপের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। কিন্ত জ্যাকবের উদ্দেশ্য ছিল নিয়াজীকে নিঃশর্ত আত্ব সমর্পণে রাজী করানো। তিনি দিল্লী থেকে প্রেরীত আত্বসমর্পণের দলিল ও তার এক স্টাফ অফিসারকে সঙ্গী করে আলাপের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় ঢাকায় প্রবেশ করেন। তিনি নিয়াজীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আত্বসমর্পণ করলে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের পরিবারগুলোকে উপযুক্ত সম্মানে নিরাপদ অবস্থায় রাখা হবে বলে তিনি নিয়াজীকে আশ্বস্ত করেন। অন্যথায় ৯ মাস ধরে বাঙ্গালীদের উপর চালানো নিষ্ঠুর গণহত্যার প্রতিশোধ হিসেবে মুক্তি বাহিনীর কাছ থেকে করুন পরিনতির স্বীকার হতে হবে বলে নিয়াজীকে সতর্কও করেন। মৌনব্রত পালন করা নিয়াজীর জ্যাকবের প্রস্তাবে নীরব সমর্থন দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না কিন্ত প্রকাশ্য আত্ব সমর্পণে আপত্তি জানায় নিয়াজী। কিন্ত নাছোড় বান্দা জ্যাকব শেষ পর্যন্ত নিয়াজীকে প্রকাশ্য আত্বসমর্পণে রাজী করিয়ে ফেলেন। এরপর ১৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে সংঘটিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র প্রকাশ্য আত্বসমর্পণ, অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
জেনারেল জ্যাকব ৭১ এ যুদ্ধ জয়ের প্রধান কৃতিত্ব হিসেবে মুক্তি বাহিনীর অবদানকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতেন যেটা তাকে অন্য অনেক ভারতীয় জেনারেলদের থেকে আলাদা করেছে। ভারতীয় বাহিনীর একটা বড় অংশের মাঝে ৭১ এর বিজয়কে শুধু তাদের একার কৃতিত্বের বিজয় বলে দাবী করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় কিন্ত জ্যাকব ছিলেন এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনি মুক্তিবাহিনীর অপেশাদার যোদ্ধাদের সাহস ও বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করতেন। মুক্তি বাহিনীই যে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মনোবল ধবংসে সবচাইতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তা তিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেছেন। কোন বিষয় গুলো তাকে হৃদয় থেকে বাংলাদেশের যুদ্ধে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করেছিল এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন- আমি কলকাতার ছেলে, বেড়ে উঠেছি সেখানে। আমি হৃদয় থেকে একজন বাঙ্গালী। ৭১ এ পাকিস্তান আর্মির হাতে বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের দুর্দশায় আমি গভীর ভাবে ব্যথিত ছিলাম।
ব্যক্তিগত জীবনে এই মানুষটি ছিলেন চিরকুমার। দু বার প্রেমে পড়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন তিনি । কিন্ত সেই মেয়ে গুলো তার এই যোদ্ধা জীবন পছন্দ করেনি। তার জন্য অপেক্ষা না করেই তারা নিজেদের পথ বেছে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তার ইহুদী বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনদের একটা বড় অংশ ইসরায়েলে পাড়ি জমায় কিন্ত তিনি ভারতেই থেকে যান। ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি গোয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলতেন- আমি একজন গর্বিত ইহুদী, একই সঙ্গে একজন গর্বিত ভারতীয়। আমি ভারতে জন্মেছি, সেখানেই জীবন কাটিয়েছি, সেখানেই মরতে চাই। শেষ পর্যন্ত তার এই ইচ্ছাটি পূরণ হয়েছে।
জেনারেল জ্যাকব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অতুলনীয় অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেক মৈত্রী সম্মাননা লাভ করেছেন কিন্ত এখনো অনেক বাংলাদেশির কাছে তিনি অপরিচিত। আবার তার ইহুদী পরিচয়টির কারণে তাকে ঘৃণা করার মত মুসলিম বাংলাদেশীরও অভাব নেই এদেশে, জামায়াত-শিবিরের কথা না হয় বাদই দিলাম। সৌদি বাদশাহর মৃত্যুতে এদেশে শোক দিবস ঘোষিত হয় অথচ জ্যাকবের মত বাংলাদেশের এই পরীক্ষিত বন্ধুর মৃত্যুতে কোন রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্ত চাইলেও তো আর ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে মুছে দেওয়া যায় না, সে টিকে থাকে তার আপন মহিমায়। যতদিন আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি টিকে থাকবে ততদিন এই রাষ্ট্রটির অভ্যুদয়ের গৌরবজনক ইতিহাসে জেনারেল জ্যাকবের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিদায় হে মহান জেনারেল, চির শান্তিতে থাকুন।
তথ্যসুত্রঃ
১)http://www.rediff.com/news/special/lt-gen-jfr-jacob-the-man-who-masterminded-pakistans-surrender-in-1971/20160113.htm
২)http://www.ndtv.com/people/born-in-india-will-die-in-india-1971-war-hero-jfr-jacob-had-said-1265402
৩)http://indiatoday.intoday.in/story/jfr-jacob-1971-indo-pakistan-war-hero-liberation-of-bangladesh/1/569401.html
৪)http://www.timesofisrael.com/a-jewish-war-hero-and-the-last-vestige-of-a-dying-indian-community/
৫)http://forbesindia.com/interview/close-range/lt-general-jfr-jacob-i-had-to-ignore-orders/26542/1
৬)http://defence.pk/threads/taking-dhaka-did-not-figure-in-manekshaw%C2%92s-plans-interview-with-general-jacob.60880/
৩৬টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব ফার্জ রাফায়েল জ্যাকব এর মৃত্যুতে আন্তরিক শোক প্রকাশ করছি।১৯৭১ এর আমাদের দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধানের নির্দেশ অমান্য করে তিনি বাঙালীদের আরো ক্ষতির হাত হতে রক্ষা করেছেন।কিছু অজানা তথ্য জানলাম আপনার পোষ্ট পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।
অপার্থিব
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানা উচিত দেশের প্রতিটি মানুষের। স্কুলের বইগুলোতেও এদের জীবনী অন্তভুক্ত করা উচিত।
শুন্য শুন্যালয়
রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ কি বলছেন! আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ থেকে পারলে ভারতের নামটাই মুছে দিতে চাই। অকৃতজ্ঞতার নজির নেই আমাদের।
শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি এই অকুতোভয় সৈনিক কে। তার অবদানের কথা চীরজীবন মনে রাখবে এ দেশের পতাকা। এতকিছু জানা ছিলো না কিছুই। জানলাম তার চলে যাবার পর 🙁
মহান বীর তোমাকে স্যালুট। চিরশান্তিতে থেকো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি পোস্টের জন্যে।
অপার্থিব
স্বাধীনতার পর গত ৪৪ বছর ধরে এদেশে সাম্প্রদায়ীকতা জেঁকে বসেছে। এই সাম্প্রদায়ীকতার হাত ধরে তৈরী হয়েছে ভারত বিদ্বেষ।
যদিও ভারত বিদ্বেষের আরো অনেক রাজনৈতিক , সামাজিক কারণ আছে যেমনঃ ফারাক্কা, তিস্তা, সীমান্তে গুলি ইত্যাদি । মূলত এই ভারত বিদ্বেষের কারণে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয় দের অবদান অস্বীকার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ভারতের অন্যায় আচরণের
অবশ্যই প্রতিবাদ করা উচিত , কিন্ত একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয়দের উপযুক্ত সম্মান দিলে জাতি হিসেবে যে আমরা ছোট হয়ে যাব না এই সত্যটিও উপলব্ধি করা জরুরী। ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে পড়ার জন্য। -{@
শুন্য শুন্যালয়
ভারত বিদ্বেষের কারন যথেষ্ট রয়েছে, তবে অর্ধ কিংবা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে যেইভাবে সাম্প্রদায়িকতা কাজ করে তা দেখে বিষ্মিত হয়ে যাই। এমন পোস্ট কষ্ট করে পড়বো কেন? আপনি আরো আরো লিখুন এমন।
অপার্থিব
চেষ্টা করবো নিয়মিত লেখার। ধন্যবাদ। -{@
ভোরের শিশির
অসাধারণ একটি পোস্ট…
মডুদের নিকট আবেদন রইলো এইটিকে স্টিকি করে দেওয়ার জন্য। এখানে এতো বিস্তারিত করে বাংলাদেশের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু প্রয়াত জেনারেল জ্যাকবকে নিয়ে পোস্ট বাইরে আর কোথায় একসাথে আমি পড়িনি।
আপনাকে ধন্যবাদ অপার্থিব। আমাদের দেশের এই বন্ধুটির পাশাপাশি এই পোস্টকেও আমি মনে রাখবো।
আবারো ধন্যবাদ। -{@
অপার্থিব
ষ্টিকি না করলেও খুব একটা সমস্যা নেই। লেখার পঠন কিংবা মন্তব্যের সংখ্যা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবিত নই । পড়া এবং অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। -{@
ভোরের শিশির
স্টিকি করতে বলা বাকিরা পড়ার জন্য, কারণ এই পোস্ট থেকে অনেক কিছুই জানা যাবে যা আমাদের অনেকেই জানি না।
বাকিটুকু মডুরা বুঝবেন 🙂
আপনিও অনুপ্রেরণা দেন মন্তব্যে। ভাল লাগা রইলো। শুভেচ্ছা -{@
অপার্থিব
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য। শুভ কামনা রইলো।
ভোরের শিশির
শুভেচ্ছা -{@
অনিকেত নন্দিনী
সৌদি বাদশাহর মৃত্যুতে শোক পালন করা হয়, হোক। তাই বলে জেনারেল জ্যাকবের মৃত্যুতে এই মৌনতা মেনে নিতে কষ্ট লাগে। যে সৈনিক আমাদের দেশ আর স্বাধীনতার জন্য এতোখানি করলেন, তার মৃত্যুতে আমরা তাকে সামান্য সম্মান দেখাতেও কিনা কার্পণ্য করছি! ধিক আমাদের। 🙁
অপার্থিব
এটা সত্য যে সৌদিতে শ্রমিক হিসেবে এদেশের অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে কিন্ত আমাদের দেশে জামায়াত শিবিরকে আর্থিক সহায়তা ও সারা বিশ্বে জঙ্গীবাদের বিস্তারে ওয়াহাবী মতাদর্শে বিশ্বাসী সৌদি বাদশাহ ও তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। হ্যা কিছু ভাল কাজ (যেমন ঘূর্ণিঝড়ে সহায়তা ) এরা করে বটে কিন্ত এটা করা হয় সারা বিশ্বের সামনে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু ভাবমূর্তি কিছুটা পুনরুদ্ধারের জন্য। তবুও এদের মৃত্যুতে এদেশে শোক ঘোষিত হয় কিন্ত জ্যাকবের মত পরীক্ষিত বন্ধুর মৃত্যুতে কোন রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয় না, এটাই সবচাইতে আফসোসের। পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। -{@
অনিকেত নন্দিনী
এ আর নতুন কী? আমাদের কৃতকর্মের দরুণ আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবেই পরিচিত।
শুন্য শুন্যালয়
দেরিতে হলেও পোস্টটি স্টিকি করায় মোডারেটরদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অপার্থিব
মডারেটরদের আমার পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ রইলো। -{@
ছাইরাছ হেলাল
অকুতভয় সৈনিকের মৃত্যুতে আমরা শোক জানাচ্ছি, যিনি ছিলেন আমাদের জন্য প্রকৃত যোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে।
আপনাকে ও ধন্যবাদ এসময়ে এমন ভাবে তাঁকে উপস্থাপন করার জন্য।
ধন্যবাদ মডারেটর, সঠিক পদক্ষেপের জন্য, অজানাকে জানানোয় সাহায্য করার জন্য।
অপার্থিব
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সহমত -{@ এ দেশে এমন ভিন দেশি মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাদের কৃতিত্তর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে অনিহা করি এটা আমাদের দূর্ভাগ্য
অপার্থিব
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য একজন মাত্র বিদেশীকে রাষ্ট্রীয় খেতাব (বীর প্রতীক) দেওয়া হয়েছিল । আর কম বেশি অবদান রাখা অন্যান্য বিদেশীদের সম্মাননা দিতে আমাদের চল্লিশ বছর লেগেছে , এটাই সবচাইতে লজ্জার।
মোঃ মজিবর রহমান
তাঁরা আমাদের দেশের জন্য অনেক করেছেন হাজার নমস্কার।
তাঁরা তাঁদের বন্ধত্বের জন্য থাকবেন আমাদের অন্তরাত্বায়।
আর যুগপযুগি পোস্ট দেয়ার জন্য দাদাকে অশেষ ধন্যবাদ।
আর লেখা কামনা করি।
অপার্থিব
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ মজিবর ভাই। -{@
অরুনি মায়া
এমন মহান যোদ্ধার মৃত্যুতে আমি শোকাহত | যেখানে ঋণ শোধ করার সাধ্য থাকেনা সেখানে কেবল কৃতজ্ঞতাই জানানো যায় | আমিও কৃতজ্ঞতা জানাই তার বিশাল অবদানের জন্য |
আপনাকেও ধন্যবাদ উনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবার জন্য |
অপার্থিব
সবার মধ্যে এই কৃতজ্ঞতাবোধ জন্ম হোক , এই প্রত্যাশা করছি। পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। -{@
রিমি রুম্মান
বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু সম্পর্কে জানতাম সামান্যই। আপনার পোস্টটি পড়ে আরও জানতে পারলাম। অল্প কথায় অনেক তথ্য।
শ্রদ্ধাঞ্জলি একজন মহান যোদ্ধার প্রতি।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন সবসময়।
অপার্থিব
পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। -{@ আপনিও ভাল থাকুন সব সময়।
মোঃ ইকরামুল কবির
এনার সম্পর্কে খুব অল্প জানতাম , আপনার পোস্ট টি পড়ে পুরোপুরি জানতে পারলাম ।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি দূরন্ত পোষ্ট উপহার দেবার জন্য ।।
অপার্থিব
এদের সম্পর্কে বাংলাদেশের খুব মানুষই জানে , পাঠ্যপুস্তকে এনাদের বীরত্বের কথা অন্তভুক্ত করা এখন সময়ের দাবী। ধন্যবাদ আপনাকে। -{@
জিসান শা ইকরাম
ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ততার জন্য গত কয়েকদিন ব্লগে বেশি সময় দিতে পারিনি।
তবে চোখ ছিল সারাক্ষনই ব্লগে।মন্তব্য করা হয়নি কোন লেখায়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব এর প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি -{@
৭১ এর বিজয় দেখেছি আমি
বিভিন্ন কারনে হয়ত জেনারেল জ্যাকব তেমন প্রচার পাননি
আসলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা এখনো রচিত হয়নি
কিছুটা অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা,যে কারনে পাকিস্তানের একজন জেনারেলের মৃত্যুতে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শোক বার্তা প্রেরন করেন,যে জেনারেল ১৯৭১ এর যুদ্ধের সময় বাঙ্গালী নিধনে রত ছিলো। আর জেনারেল জ্যাকবের মত স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য আন্তরিক ভাবে অংশ নিয়েও কোন শোকবার্তা পাননা।বর্তমান সরকারের উচিৎ ছিল একটি শোক বার্তা প্রেরন করা। প্রটোকলের কারনে প্রধানমন্ত্রী দিতে পারেন না, তারপরেও শোক প্রকাশের অনেক মাধ্যম ছিল।
আপনাকে ধন্যবাদ এমন এক ইতিহাসকে সামনে এনে দেয়ার জন্য।
শুভ কামনা।
অপার্থিব
সমস্যা হল দেশের অধিকাংশ মানুষ ভারত বিরোধী , কেউ সাম্প্রদায়ীক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আবার কেউ রাজনৈতিক কারণে। এই কারণে সরকারকে সবসময় জনমতের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আবার জ্যাকবের ইহুদী পরিচয়টা সরকারের জন্য সরকারের জন্য কিছুটা মাথা ব্যথার। জাতি হিসেবে আমাদের আরো অসাম্প্রদায়ীক হতে হবে, এই অসাম্প্রদায়ীকতার হাত ধরে তৈরী হবে কৃতজ্ঞতাবোধ। তবেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশীদের পর্যাপ্ত সম্মান দিতে পারবো। আপনারা ভাগ্যবান যে ৭১ এর বিজয় স্বচক্ষে দেখতে পেরেছেন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
কবে যে মনে প্রানে আমরা অসাম্প্রদায়ীক হতে পারবো কে জানে? অথচ ১৯৭১ এর যুদ্ধোত্তর দেশে এমন একটি সমাজ নির্মানের আশা করেছিলাম।
অপার্থিব
সমাজকে সাম্প্রদায়ীক বা অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তোলাটা মূলত নির্ভর করে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা অসাম্প্রদায়িক ? যে বয়সে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় (১০ থেকে ১৮ বছর) সেই বয়সে তাকে ধর্ম শিক্ষার নামে সাম্প্রদায়ীকতা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে এদেশের বিপুল সংখ্যক দরিদ্র শিশু কিশোর মাদ্রাসায় লেখা পড়া করে। রাষ্ট্র তাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না আর শিক্ষার যে রকম বানিজ্যিকরন ঘটেছে তাতে এই সব দরিদ্র শিশুদের মূল ধারার শিক্ষায় টিকে থাকাও কঠিন। অগ্যতা শেষপর্যন্ত মাদ্রাসাই ভরসা। সেখানে অন্য ধর্মা বলম্বীদের কাফের মুশরিক ছাড়া অন্য কিছু বলে সম্বোধন করা হয় না, অসাম্প্রদায়ীকতা তো আরো দুরের কথা। শিক্ষার বানিজ্যিকরন বন্ধ করা এবং একে পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক করাটাই অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
নাসির সারওয়ার
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ওনার নামটা যেভাবে থাকার কথা, আমি তা দেখিনি। ৭১ সালেও ওনার নাম শুনিনি যা বাবার কাছ থেকে পরে জেনেছিলাম।
আপনার এই পোস্ট আমাদের সব জেনারেশনের জন্যই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলে।
অনেক শুভেচ্ছা।
অপার্থিব
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা ভারতীয়দের অবদান অস্বীকার করার প্রবণতা বাংলাদেশে অতীতেও ছিল , এখনো আছে। কারো অবদান স্বীকার করলে যে নিজেদের মহত্ব আরো ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এটা আমরা বুঝতে অক্ষম আজও। পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
মিথুন
বিদায় জেনারেল জ্যাকব, স্মরণ করছি তোমাকে শ্রদ্ধাভরে। ঋনী থাকবো তোমার কাছে আজীবন।
অজানা এই বীরের জীবন থেকে অংশুগুলোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অপার্থিব। অজানাই থেকে যেত নইলে।
অপার্থিব
আপনাকেও ধন্যবাদ। -{@