আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও শুদ্ধ করে লেখার ব্যাপারে সবার সচেতনতা আশা করছি। আমি নিজেও শুদ্ধ বাংলা বলতে বা লিখতে পারি তা না, তবে চেষ্টা করছি।
যে ভাষার জন্য এদেশের মানুষ আন্দোলন করে, শহীদ হয়, বর্তমানে সেদেশের মানুষের বাংলা বলা ও লেখার অবস্থা দেখলে শহীদেরা আজ মুখ লুকাতেন বলে আমার ধারণা। শুদ্ধ বাংলা বলা এখন আর কোথাও চোখে পড়ে না। কেউ যদিওবা বলেন, সবাই কেমন যেন মুখ টিপে হাসেন। আর শুদ্ধ বানান? ভুলটাকে শুদ্ধ করে দিতে চাইলে উল্টো শুনতে হয় ‘ আরে ব্যাটা, মনের ভাব বুঝলেই হইলো’।
স্কুলগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। ইংরেজী মাধ্যমে পড়া বাচ্চারাতো বাংলার নাম শুনলেই অজ্ঞান। বাংরেজী টাইপ উচ্চারণ আর শব্দের ব্যবহার শুনলে মাথা ঘুরে যায়। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজীর উপর যথেষ্ট দক্ষ হওয়া জরুরী কিন্তু তাই বলে মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে নয়। এব্যাপারে শিক্ষকদের এবং পারিবারিক সচেতনতা খুব জরুরী।
সরকার বিভিন্ন সময়ে আইন করে বাংলা ব্যবহার বাধ্যতামুলক করেছে, কিন্তু অবস্থার উন্নতি চোখে তো পড়ছেই না, বরং দিন দিন এর অবনতি লক্ষ্যনীয়। আইন করে কিছু হয় না, যদি না থাকে সচেতনতা। সময় এসেছে সচেতন হবার। ২১শে ফেব্রুয়ারী আসলেই আমরা বাংলা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি বাঙালী হবার আশায়। আবার ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে ‘যেভাবে চলছে চলুক’ এমন একটা ভাব নিয়ে দিন শুরু করি।
যে ভাষার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা জীবন দিয়েছেন, যে ভাষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গর্বিত জাতি হিসেবে পরিচিত, যেই বাংলাকে সঠিকভাবে রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।
আসুন সবাই শুদ্ধ বাংলা বলা ও লিখার ব্যাপারে সচেতন হই।
বাংলা ভাষার মান রক্ষায় সবার একটু অংশগ্রহণের আশা তো করতেই পারি, তাই না?
২৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করণ, এটি একটি হাজার বছরের শ্লোগানে রূপ নিয়েছে।
হাজার বছর পরেও যে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।
বাংলাকে লালন পালন করে গভীর মমতায় ধারণ করাই উচিৎ আমাদের,
কিন্তু তা আর পারছি কই?
ভাল পোষ্ট।
নিহারীকা জান্নাত
বাংলা ভাষার চেতনা যার যার অবস্থান থেকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলে অবশ্যই একসময় সে শুভদিনের দেখা আমরা পাবো।
একুশের চেতনা অমর হোক।
সশ্রদ্ধ সালাম সকল ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের প্রতি।
অনিকেত নন্দিনী
নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী লেখা।
বাংলা ভাষার মান বজায় রাখার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ শূন্যের কোঠায়। বাংরেজি ধাঁচের কথা বলা এখনকার বাচনভঙ্গিতে বিরক্তিকরভাবে জায়গা দখল করে বসে আছে। অদ্ভুত সব বাংলা শব্দ বলাও চোখে পড়ে। যেমন – যেয়ে। গিয়ে না বলে যেয়ে শব্দটা আজকাল অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন।
কেবল ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষা বলা ও লেখা নিয়ে ঝাঁপিয়ে না পড়ে পুরো বছর জুড়েই বাংলা ভাষার কথন ও লিখন নিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে ও লিখতে হলে বাংলা ব্যাকরণ জানতে হবে। সমাস, প্রত্যয়, সন্ধি, যতিচিহ্ন ও অব্যয়ের ব্যবহার জানতে হবে; জানতে হবে দাঁড়ি বা কমার পরে অব্যয় দিয়ে কখনোই কোনো বাক্য শুরু হয়না।
অপ্রাসঙ্গিক বিষয়: দুই রকমের মুদ্রণাক্ষরে লেখা কেনো?
নিহারীকা জান্নাত
অনেক ধন্যবাদ আপা। মুদ্রণাক্ষরের বিষয়টি সম্পুর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং আগে খেয়ালই করিনি।
বিষয়টি দেখিয়ে দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আর বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে সহজ ভাষায় আপনি কিছু পোস্ট দিলে ভালো হতো।
রিফাত নওরিন
সত্যিই, বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও শুদ্ধ করে লেখার ব্যাপারে সবার সচেতনতা দরকার৷
ভালো লাগল পোষ্টটি৷
নিহারীকা জান্নাত
অনেক ধন্যবাদ আপা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সর্বস্তরে বাংলা চালু হবে এটাই আশা।লেখাটি খুবই সময়োপযোগি -{@
নিহারীকা জান্নাত
আমিও তাই আশা করি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মিষ্টি জিন
ইংরেজি মিশ্রনে বাংলা বলা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এটা ত্যাগ করা দরকার।
আর বিদেশ থেকে এসে কেউ যদি শুদ্ধ ভাষায় বাংলা বলে কবে তাকে ক্ষ্যাত বলেনধারনা করা হয়।এত বছর বিদেশে থাকবে আর একটু বিকৃত ভাবে বাংলা বলবে না তা হয় কখনো?
সবার আগে নিজের ভাষা বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে , তাহলেই ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
খুব ভালো পোষ্ট।
নিহারীকা জান্নাত
বাংরেজী বলে বলে বেশি স্মার্ট হয়েই আজ আমাদের এ অবস্থা।
ধন্যবাদ আপা।
আবু খায়ের আনিছ
খুব সুক্ষ্ম একটা বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে ভাষা, বাংলা বাংলা বলে চিৎকার করেও বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ভাষাবিদ বলে যাদের জেনে এসেছি তাদের বক্তব্য আরো জটিল, “অন্য ভাষার প্রবেশ ভাষাকে সম্বৃদ্ধ করে” এই দোহাই দিয়ে ভাষাকে কুলষিত করা হচ্ছে। আবার আঞ্চলিকতা বির্বজিত ভাষার কথাও বলা হচ্ছে, অথাৎ শুদ্ধভাষার ব্যবহার করতে হবে, আঞ্চলিকতা পরিহার করে। কিন্তু কেন? বাংলা ভাষায় কি আঞ্চলিকতার অবদান নেই বিন্দুপরিমাণ।
বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করা হয়েছে, সাংবিধানিক ভাবেই করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ণ করা হয়েছে কতটুকু? মাত্র কিছুদিন আগে বাধ্যতামূলক অফিসে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে কিন্তু সেটা আদৌ হয়েছে কিনা তার কোন খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে?
দেশের কোন প্রজ্ঞাপন জারী বা কোন আদেশ যাইহোক না কেন প্রথমে তা ইংরেজী করা হয় তারপর বাংলা, কিন্তু কেন? আগে বাংলা হোক তারপর ইংরেজী।
অভ্যন্তরীণ কাজে কেন ইংরেজীর ব্যবহার করতে হবে? আমার দেশে কাজ করতে হলে বাংলায় করতে হবে নয়ত তুমি দূরে থাক এই নীতির কেন বাস্তবায়ণ হচ্ছে না?
হাজার প্রশ্ন আছে, উত্তর দেওয়ার সময় কারো নাই।
নিহারীকা জান্নাত
হাজার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় নেই কারো।
ধন্যবাদ ভাই।
সৈয়দ আলী উল আমিন
আপনার সাথে আমি একমত। বলিষ্ঠ উচ্চারণ।
নিহারীকা জান্নাত
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
পাশে থাকবেন।
শুন্য শুন্যালয়
প্রাইমারী স্কুল থেকে বাংলা বানান এবং উচ্চারণের ভিত্তি গড়ে দেয়া উচিৎ। যারা লেখালেখি করে তাদেরও বানানের অবস্থা ভয়াবহ। আমি নিজেও ধাঁধাঁয় পড়ে যাই বানানের শুদ্ধতা নিয়ে, ভুল বানানের অহরহ ব্যবহারই এর জন্য দায়ী। সবাই সচেষ্ট হলেই সম্ভব আসলে।
ব্যাকরণ আকারে না দিয়ে আপনার বানানের পোস্টগুলো আরো চাই।
নিহারীকা জান্নাত
সহমত। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
আরো সহজ আকারে দেবার চেষ্টা করবো।
মৌনতা রিতু
তোমার এই বাংলা ব্যকরণ নিয়ে লেখাটা আমার খুবই ভাল লাগছে। আমি ঢাকা থাকতে কিছু বাচ্চার বাংলা লেখা দেখে কাঁদব না কি করব বুঝতে ছিলাম না। তার উপর আমেরিকান স্টাইলে ইংরেজী উচ্চারন। ভাবো একবার!
ঠিকই বলেছো, আমাদের মহান ভাষা শহীদরা মুখ লুকাতো। তারউপর দেখেছো, এবার ভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের যায়গায় এবার বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি দিছে।
কোথায় যাবে বলো? কাকে বলবে?
ভালো একজন ব্লগার হয়ে গেছো তুমি। ভাল লাগছে এই সিরিয়াল গুলো।
লিখে যাও।
নীহারিকা জান্নাত
এসব দেখে দেখেই বাংলা নিয়ে লেখার তাগিদ অনুভব করেছি। আমি নিজে খুব দেশ প্রেমিক তা বলিনা কিন্ত বাংলা ভাষার অপব্যবহার দেখলে খুব রাগ হয়, কষ্ট হয়। এমনকি আজকাল ভুল বলতে বলতে ভুলগুলোই শুদ্ধের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
এসব নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে আছে।
অনেক ধন্যবাদ আপা।
পাশে থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
যতই চিৎকার চেচামেচি করি না কেন মৌখিক ভাবে
সে অনুসারে কিন্তু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর কাজ হচ্ছে না।
অবশ্যই আরও লিখবেন।
নীহারিকা জান্নাত
ভাই, স্টাইলের বাংরেজি উচ্চারণে আপনার স্ট্যাটাস উপরে উঠে যায়। আপনি তবে কেন বাংলা বলে বলে গলা ভাংবেন?
আরো লেখার চেষ্টা করবো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শিপু ভাই
প্রমিত বাংলাকে যদি শুদ্ধ বাংলা বলেন তবে আমার আপত্তি আছে। ভাষার মূল কাজ কম্যুনিকেট করা। সে হিসাবে মীনা কার্টুনের বাংলা সবচেয়ে কম্যুনিকেটিভ। আর আঞ্চলিক বাংলাও আমার মতে শুদ্ধ বাংলা। কিন্তু আঞ্চলিক বাংলায় এদেশে সাহিত্য হয় না, পত্রিকায় লেখা হয় না।
বাংলিশ, ভুল বানান পরিত্যাজ্য। তবে সময় হয়েছে আরো কিছু ইংরেজি শব্দকে বাংলা ভাষায় এডপ্ট করার।
নীহারিকা জান্নাত
আমি এখানে ভুল উচ্চারণ বুঝাতে বাংরেজি স্টাইলকে বুঝিয়েছি। আজকাল খেয়াল করে দেখবেন ইংরেজি মাধ্যম পড়ুয়া বাচ্চাদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি। পাশাপাশি অন্যরাও ভাবছে এতে তাদের স্মার্টনেস বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সত্যিই কাম্য নয়।
আমি খাঁটি আঞ্চলিক ভাষার পক্ষে। কিন্ত বাংরেজি উচ্চারণ ও ভুল বানান দেখলে অসহায় বোধ হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
নীহারিকা আপা আপনার ওই কথাটির সাথে পুরোপুরি সহমত পোষণ করছি। সচেতনতা না থাকলে আইন করে কিছুই হয়না।
সুন্দর উপস্থাপনা।