বন্ধু হতে চেয়ে তোমার

মামুন ৮ ডিসেম্বর ২০১৪, সোমবার, ০৮:০৮:৩১পূর্বাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

[ছেলেবেলায় কোনো পাগল দেখলে জিজ্ঞেস করতাম, ‘ এই পাগল, তোর পাগলি কই?’ পাগল নিশ্চুপ থাকতো... একা একা বিড় বিড় করতে করতে বিভ্রান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে চলে যেত। তখন খুব জানতে ইচ্ছে করত সে কি বলছে। আজ অনেক বড় হয়েছি! এতোটা বড় হয়েছি যে কল্পনায় সেই পাগলকে নিয়ে আসতে পারি। শুধুই কি তাই? ওর হারিয়ে যাওয়া পাগলিও সাথে থাকে। তবে এরা ডিজিটাল যুগের পাগলা-পাগলি। আমার খুব পরিচিত এক ক্যাম্পাসে এই জুটি পাগলা-পাগলি হিসেবে বেশ খ্যাত। এই গল্পে সঙ্গত কারনে ছদ্মনামে এদের পরিচয় দিয়েছি। নিজেদের ভিতর খুব উচ্চ মার্গের সংলাপে এরা ব্যস্ত থাকে। এদেরকে নিয়েই কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। তবে সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এগুলো পড়ে পাগল হলে আমি দায়ী থাকবো না কিন্তু...]

১.

একদিন কথা হচ্ছে দুজনার।

পাগলঃ ‘ কি ভাবছ?’

পাগলিঃ ‘ ভাবছি কৃষ্ণচূড়ার রং এতো লাল কেন? লালের প্রতি কঠিন একটা মোহ আছে আমার। কেমন মাতাল মাতাল লাগে!

- ‘তোমায় আমি সেই লাল এর উৎসমুখে নিয়ে যাবো একদিন। সেখানে দিগন্ত বিস্তৃত রক্তিম আভা নিয়ে সারি সারি কৃষ্ণচুড়া! এ জগতকে রাঙানোর কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে বিশ্বচরাচরের আর কোনোদিকে ওদের খেয়াল নেই।‘

: ’ জানো, আমার জানালায় যে গাছটা উঁকি দিচ্ছে, তার গায়ে পাতার চেয়ে ফুল বেশী। সবসময় যেন আমাকে প্রলুব্ধ করছে!'

-‘ হ্যা, ঠিক তোমার মতো! পাতার চেয়ে ফুল বেশী... তুমি যতটা না নারী তাঁর থেকে প্রেমিকা বেশী... ভালবাসার ডালি নিয়ে অপেক্ষারত একজন বিশেষ কেউ!

:’ উফ! আমাকে মাটির এক হাত উপরে তুলে দিচ্ছ কেন বলতো?

-‘ আচ্ছা এখুনি নামিয়ে আনছি। তবে ওখানে গেলে মাতাল হবার সকল উপকরণও তুমি পাবে। দেখব কতটা মাতাল হতে পারো!’

:’ ইস...মাতাল হতে আমার বয়েই গেছে! তবে তুমি পাশে থাকলে আমি এমনিতেই অবসন্ন হয়ে যাই!’

-‘ এবার কি আমাকে ওপরে তুলে দিতে চাও?’

:’ নাহ! চল হাত ধরে এক সাথে কিছুক্ষণ হাঁটি...’

আর একদিন...

কাঁটা পাহাড়ের ছোট্ট যাত্রী ছাউনিতে আমাদের পরিচিত সেই পাগল তাঁর পাগলিকে নিয়ে বসে আছে। আকাশের অবস্থা খুব গম্ভীর। যে কোনো মুহুর্তেই মনে হয়ে কেঁদে ফেলবে। ওরা দুজন বসে আছে... গল্প করছে...

পাগলঃ 'দেখেছ মেঘগুলো আকাশকে কি করেছে? কেমন ভয়ংকর লাগছে না ওদেরকে!'

পাগলিঃ - কি হাস্যকর কথা বলছ তুমি! মেঘ আবার ভয়ংকর হয় নাকি... মেঘ মানে তো আকাশের মন খারাপ...

' ঠিক আমার মতো?'

- তোমার বুঝি মন খারাপ?

' কেন বোঝনা? আকাশের পানে আর আমার দিকে তাকিয়ে দেখ... কিংবা নিজের মনকে জিজ্ঞেস কর...'

- বাহ রে! মানুষ আর আকাশ কি এক হতে পারে...!

' কেন পারে না? আকাশের মতো উদার বিশাল হতে তো তোমরাই আমাদেরকে বল! বল না?'

- মেঘ আকাশের শুদ্ধ আত্মা... অভিমানী রূপ। অভিমান কি পুরুষের সাজে? আকাশ হল নারীর মতন, মেঘ তাঁর অশ্রুজল...

' নাহ! শুধু তোমাদেরই সাজে?'

- রাগ করলা বুঝি?

' রাগ করলে কি করবে? রাগ ভাঙ্গাবে? আমাকে মানাবে? যা চাই তা দিবে?'

- কি চাও? বাদাম খাবে? নাও খাও...

' নাহ! ইস যদি আকাশ হতে পারতুম! তাও তোমার অশ্রু জলের কাছাকাছি তো থাকতাম। তোমার শুভ্র জলের উষ্ণ পরশ মাখিয়ে নিতাম সারা দেহে।'

- হি হি হি... আচ্ছা এতো কিছু থাকতে আমার চোখের জল ই চাইলে তুমি?!

' কীভাবে বুঝলে শুধু ওটাই চেয়েছি? আর সেই 'এতো কিছু' গুলো কি? আমায় বলবে?'

- নাহ! বলব না। ... মানুষ তাঁর প্রিয়ার মুখে হাসি দেখতে চায় আর তুমি অশ্রু?!

' ওটা যে আনন্দাশ্রু জানু! আনন্দজল ও বলতে পারো, তবে সেটা বলাতে আবার শ্রুতিকটু কিংবা ভাষাগত বিভ্রম হবে নাতো?'

-যাও, ফাজলামো কর না।

' আমি আগেই বলেছিলাম। কি রাগ করলে?'

-হ্যা!

' এখন উপায়? কি করলে রাগ কমবে শুনি?'

-আমার কথা শুনতে হবে। শুনবে?

' কোনটা শুনি নি?'

-না, বল শুনবে?

' আগে বলই না ?'

-চল বৃষ্টিতে ভিজি!

' মাথা খারাপ?! তোমার না সাইনোসাইটিসের প্রব্লেম?'

-তুমি সাথে আছ না জানু! আর কোনো প্রব্লেম নেই।

' আমার সমস্যা আছে।'

-তোমার আবার কি সমস্যা?

' আমার হিংসা হয়।'

-কাকে নিয়ে?

' বৃষ্টির প্রতি... '

-মানে?

' তোমার সাথে সারাদিন ঘুরে ঘুরে কি পাই? বাদামের খোসা রাখার জন্য খালি ঠোঙ্গা... না হয়, চুল ছেড়ে দিবে তুমি- চুলের কাটা পরম নির্ভরতায় থেকে যায় আমার হাতে...

-এর সাথে বৃষ্টির সম্পর্কটা বুঝলাম না?

‘বুঝলে না? বৃষ্টি না চাইতেই তোমার সারা শরীরে ইচ্ছেমত ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে! তোমাতে অবগাহন করে সে মৃদু লয়ে-কখনো বা বেগে না হয় টিপটিপ... টিপটিপ... ঝিরঝিরে অনুভুতির শিহরণ জাগানোর অলিখিত অধিকার সে পেয়ে গেলো না চাইতেই!’

-আর?

‘ তোমার ক্ষীন কটিকে কামড়ে ধরা ঐ একটুকরো আকাশ রঙ্গা সিফন শাড়ি, যা পারেনি লুকোতে তোমার হৃদয়কে ঢেকে রাখা মাংসল পাহাড়। দেখ, কি অবলীলায় সে ওগুলোকেও লেপ্টে দিয়ে দলিত-মথিত করে যায়... আর ব্যঙ্গ করে আমায়! ‘

-উফ! আর শুনতে চাই না। থামো, থামো।

‘ না, শোনই না।‘

-আর শুনবো না। এর থেকে আজ না হয় বৃষ্টিই হও তুমি! তোমার কথার শরের থেকে অন্তত কম আঘাত দেবে!

‘বলছ?’

-হ্যা! চল, আজ তোমার আকাশের মন খারাপ। আমি নারী-আমায় ইচ্ছেমত খাবলে খুবলে আঘাত করে যদি তার মন ভালো করা যায়?

‘পিঞ্চ মারছ?’

-না সাহেব, চল, আজ তোমার আকাশে এই মেঘ বালিকা নিজের স্বরূপ উন্মোচন করবে। যার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করে আছ। তোমায় আর বাদামের খোসা রাখার ঠোঙ্গা হাতে বয়ে বেড়াতে হবে না... কিংবা চুলের কাঁটার সযতন আবাসভুমি হবে না তোমার হাত।

‘ আমি আসলে কথার কথা হিসাবে বলেছিলাম... ‘

-চল, এখন আর ব্যাক করার সুযোগ নেই তোমার।

কাটা পাহাড়ের নির্জন পীচঢালা পথে পাগলি পাগলের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। ওদের দুজনের ওপর প্রচন্ড এক হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বৃষ্টি। চারিদিক অন্ধকার.. আর এর মাঝে সাদা ফোটা ফোটা হয়ে ঝরে পড়া আকাশের আনন্দজল আদিম উচ্ছ্বাসে ওদের দুজনকে শিহরিত করে... কামনার জমাট বাঁধা ঠান্ডায় কেঁপে ঊঠে একে অপরের চোখে তাকিয়ে ইচ্ছেমতো পুড়ে যাবার জন্য যথেষ্ট এক ফায়ারপ্লেস দেখতে পায়!!

(ক্রমশঃ)

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ