সারাদিন মিসকল আর চ্যাটিং এস এম এসে দিন কেটে যাচ্ছে, আবির আর নুসারাতের, আবির খুব ভালোই লিখতো, কিন্তু এখন আর আবিরের গল্প লেখা হয়না, কোনো পোষ্ট দেওয়া হয়না আবিরের, সারাদিন শুধু নুসারাত, নুসারাত মাথার ভিতর ঘুরে বেড়ায় তার, এই করে চলছে দিন ফেসবুক থেকে এখন মোবাইল টেক্সট টা দুজনের বেড়ে গেছে, সারাটাদিন কোথায় কি করো এইসব করেই চলছিলো দিন, দাড়ি গুলু বেশ বড় হয়েছে, চুল গুলু ও কাটতে হবে, আজ ১২ তারিখ, কাল দেখা হবে নুসারাতের সাথে, ভালবাসার মানুষ। সত্যি কি ভালোবাসার মানুষ? নাকি একতরফা ভালবাসা? নাকি আবিরের অলিক কল্পনা, যাই হোক কাল বলবেই আবির ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে অনেক টাই ভালোবাসি আমি, ঠিক এতোটাই ভালোবাসি তোমার মাঝেই হয়তো নিজেকে হারিয়েছি নুসারাত, একা একা বিড়বিড় করে চলছে আবির, কিরে বাবা কি বলিস? মায়ের গলায় একটু চমকে গেলো আবির, না মা কিছুনা, গান গাচ্ছিলাম,
আমি তো শুনছিলাম ভালোবাসি ভালোবাসি বলছিলি?
হ্যা মা অই তো রব্রিন্দ্রনাথের ভালোবাসি গান টাই একটু দেখছিলাম পারি কিনা
হুম নে খেয়ে নে
মায়ের হাতে এক গ্লাস দুধ, আবিরের খেতে ইচ্ছে করছেনা, তবু খেতেই হবে, না হলে মা রাগ করবে, কথা না বলে থাকবে, আবির গ্লাস টা হাতে নেয়, মা আজ ১৩ তারিখ না? হ্যারে বাবা কাল পহেলা বৈশাখ
আবির একটু মুচকি হাসি হাসে
কিরে তারিখ শুনে হাসছিস? কোনো বিশেষ কাজ আছে নাকি কাল?
না মা একজনের সাথে দেখা করবো তোমাকে বলা দরকার ছিলো, ভালোই হল। তোমার মন টা কি ভালো তাহলে বলবো
হ্যা বল শুনি আমার রাজপুত্র কোন রাজরানির প্রেমে পরেছে
না মা প্রেম আসলে না মেয়েটাকে ভালো লাগে গো
কে রে বাবা জুই?
না মা, ফেসবুকে পরিচয়
সেদিন ই তো বলেছিলাম, মুখ লুকালি, আরে আমি মা, কিছু হলেও তো বুঝি
মা এখন কি করা যায়?
কাল বাসায় নিয়ে আসিস
কাল আমাদের রমনায় দেখা করার কথা মা, ও যদি না আসে
আরে নিয়ে আসিস, পরে দেখা যাবে, আমি কি শুধু তোর মা? আমি কি তোর বন্ধু নই?
হ্যা মা তার জন্যই তো তোমাকে বলছি
আচ্ছা নিয়ে আসিস কাল এর ভিতর ফোন আসে আবিরের, আবির রিসিব করতে পারেনা, মা ফোন টা কেড়ে নিয়ে যায় হাত থেকে
হ্যালো
আবির আছে?
আছে তো তুমি কে?
আন্টি আমি জুই
ও আচ্ছা মা কেমন আছো তুমি?
জি আন্টি ভালো, আন্টি আবির কই?
নাও কথা বলো
হ্যালো আবির
হ্যা বলো
কেমন আছো?
ভালো তুমি?
আবির তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
বলো
আবির আমি তোমাকে ভালোবাসি
জুই এসব বাজে কথা ছাড়ো, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি
হ্যা আমি জানি তুমি নুসারাত কে ভালোবাসো
তোমাকে কে বলেছে এসব?
নুসারাত বলেছে, কিন্তু আমি তোমাকে চাই আবির
আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না
কিন্তু আবির তুমি জানতে সব, আমি নিশ্চয় তার থেকে কোনো অংশে খারাপ না
এইখানে যোগ্যতা তুলনা করনা জুই, ভালোবাসা যোগ্যতার জিনিস না
আবির
বলো শুনছি
আমি কাল ৬ টায় রমনা অপেক্ষা করবো একসাথে পান্তা ইলিশ খাবো, বাকিটা তোমার ইচ্ছে, এর মাঝেই ওয়েটিং এ ফোন বাজছে নুসারাতের, আমি রাখছি দেখা যাবে বলেই আবির নুসারাতের ফোন রিসিভ করলো
কার সাথে কথা বলছিলা?
এক ক্লাস্মেট ফোন করেছিলো
হুম
কাল কখন আসছো?
ভোরে এক সাথে পান্তা ইলিশ খাবো
মা বলেছে তোমাকে বাসায় আসতে
হ্যা যাবো, আগে রমনায় তারপর বাসায়
আচ্ছা তা কখন আসবো?
৬ টায়
আচ্ছা
কোথায় দারাবো?
খুজে নিবো, ফোন তো আছেই
আচ্ছা
রাতে দুজনের কথা হয় অনলাইনে
পরদিন সকাল বেলায়, আবির আর নুসারাতের দেখা হয় বটতলায়, তারা পান্তা খেতে যাবে, তারা দুজন দুজনের হাত ধরে হাটছে, এমন সময় দেখা হয়ে যায় জুই এর সাথে, তুমি এসেছো বলেই একদম বুকে পড়ে যায় আবিরের,
নুসারাত তাকিয়ে দেখছে, আবির ছেড়ে দিয়েছে জুই কে, আশেপাশের উৎসাহিত মানুষ গুলু চেয়ে চেয়ে দেখছে, কিছুই বলছে না নুসারাত, আবিরের চোখ থেকে চশমা টা পরে গিয়েছে নুসারাত চশমা টা তুলে দেয় তোমার জি এফ? কংরেচুলেসন
না আমার জি এফ না ক্লাস মেট
আর কোনো কথা হয়না তাদের নুসারাত আর আবিরের মুখ একদম কালো হয়ে আছে, হাস্যোজ্জল মুখে হেটে চলেছে জুই তাদের পাশে
সবাই মিলে পান্তা ইলিশ খেলো, মেলায় ঘুরলো তিন জন, আবির নুসারাত কে বলতে পারছে না কিছুই, বেলা ১২ টা যাবার সময় হলো
আজ তিন জন তিন রিক্সায়, যাবার আগে একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে আবির, নুসারাত বাসায় যেয়ে খুলো, অনলাইনে কথা হবে
বাসায় যেয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলু চিন্তা করছে আবির, কিছুই বলতে পারেনি তাকে, এর মাঝে ঘুমিয়ে পরে আবির
নুসারাত কান্না করতে করতে বাসায় এলো, অনেক বার ভেবেছিলো আবিরের দেওয়া কাগজ টা সে ফেলে দিবে, তাতে পজেটিব কিছুই নাই, যা আছে তা নেগেটিভ, বাসায় গিয়ে আগে ল্যাপটপ টা ওপেন করলো নুসারাত , আবির কে ব্লক করলো সে,
এইবার চিঠি টি খুললো নুসারাত
আমি তোমাকে ভালোবাসি সে কথাটি মুখে বলার সাহস আমার নাই, আমি একজন পুরুষ, আমার একজন জিবন্সঙ্গিনি চাই, আমাকে বিয়ে করতে হবে, তোমাকেও করতে হবে, আমি চাইনা আমার ছেলে তোমার মেয়েকে বিরক্ত করুক, তুমি যদি চাও তবে ওরা ভাই বোন হয়ে থাকতে পারে
উত্তরটা ফোনে নয় ইনবক্সে দিও
আই লাভ ইউ
নুসারাত কান্না করছে, প্রচন্ড কান্না করছে নুসারাত, কিন্তু তাতে কোনো লাভ নাই, আবির একটা লম্পট, ভালো মানুষের আড়ালে আবির এইসব ই করে বেড়ায়
সন্ধ্যা ৭ টা, বুকের বাম পাশে প্রচন্ড ব্যাথা করছে আবিরের, আবির একটা টয়াবলেট খেয়েছে, তার হার্টে একটু সমস্যা আছে, আবির নুসারাতের কোনো মেসেজ না পেয়ে ইনবক্স ঘেটে তাকে বার করলো, কিন্তু না নুসারাত তাকে ব্লক করেছে, ছোটো বোনের আইডী দিয়ে পরীর রানি সার্চ দিয়ে পেলো আবির, তার বুক ব্যাথা টা বাড়ছে, প্রচন্ড বাড়ছে, কিছু বলার শক্তি নেই তার, সে শুয়ে আছে, একসময় ঘুমিয়ে পড়ে আবির, আবিরের আর ঘুম ভাঙ্গেনি, সেদিন রাতে হার্ট এট্যাকে মৃত্যু হয় আবিরের
৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
এভাবে হুট করে মেরে ফেললেন? নাহ, ফিনিশিং টা মানতে পারছিনা। প্রথম পর্ব দুটো বেশি ভালো লেগেছিল।
আমি আসলে আপনার যাযাবর মিস করছি।
হৃদয়ের স্পন্দন
হুট করে মেরে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় ছিলোনা, এটি প্রায় বছর দু ইয়েক আগে লেখেছিলাম, প্রথম এক পরব লেখার পর আমার পকেটে সিগেরেট খাবার টাক্কাও ছিলোনা, যার পরিনাম এই, যাযাবর ইনশাল্লাহ কাল থেকে আসবে ফ্রী হলাম আজ
মামুন
এভাবে সমাপ্তিটা হয়ে গেলো? অবশ্য লেখকের স্বাধীনতা বলে কথা।
ভালো লাগা রেখে গেলাম।
শুভ সকাল।
হৃদয়ের স্পন্দন
🙂
খেয়ালী মেয়ে
হায়!!একি হলো?–এতো তাড়াতাড়ি সব কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে দিলেন–শেষ পর্যন্ত ফেসবুককে ঘাতক রুপে দেখতে হবে ভাবিনি :p
হৃদয়ের স্পন্দন
ফেসবুক তো ঘাতক না, ঘাতক আমরা, মশাল জ্ঞানির হাতে আলো দেয় আর সন্ত্রাসের হাতে ধ্বংস 😀