ভর দুপুরে চিপায় বসে হরিহর ভাব নিয়ে গুজুর-ফুসুর করছি মেহজাবিনের সাথে। প্রায়ই যেমন করি এ জায়গাটিতে।

*ওই, আম চুরি করবি?
#হু, কোথায়, কার গাছের?
*ঐ যে খাইশটা বাড়িওয়ালার, কাঁচা-মিঠা আম।
#তা মন্দ বলিসনি, কিন্তু কথা হলো তুই তো বলদা!, গাছে-ফাছে ওঠার হিম্মত তোর কোনদিন ছিল না, হবে বলেও মনে হয় না। বলেছো যখন, ‘সোনা আমার’ আজ রাতেই হবে, রেডি থাকিস।

আধো জ্যোৎস্নায় গুটিগুটি পায়ে গাছের কাছে গিয়ে হাল্কা লাফ মেড়ে যেই না গাছের ডালে চড়েছে মড়াৎ করে ডাল সহ নীচে। দৌড়ে ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম, নাহ্‌ ঠিক আছে সব কিছু। তবে নখ বসে গেছে আমার হাতে। দাঁত কামড়ে চুপ করে সহ্য করে কিছু আম আমি ও কিছু আম সে কুড়িয়ে নিয়ে দ্রুত পা চালালাম। সুস্থ এখন নখ বসাতে পেরে, নো চিল্লপাল্লা। এবারে প্রস্তাব এলো ‘চল, শ্মশানে বসে আম খাই, একটু পরে সকাল হয়ে এলে চলে যাব।’ বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠল শ্মশানের নাম শুনে। বরং ভাব নিয়ে প্রস্তাব দিলাম কাছের নাট মন্দিরের বারান্দায় যাওয়ার ভয়ে ভয়ে। কিছু না বলে মন্দিরের দিকে হাটতে শুরু করল। আম পর্ব শেষ করে ফেরত গেলাম আপাতত যে যার দেশে ।

রাত আড়াইটের কাছাকাছি, জলঝড় চলছে বজ্রের বিদ্যুৎ সহ। ভুতের গপ্পো লেখার কথা ভাবছি আনাড়ি জেনেও। ভুত-প্রেতদের সাথে প্রেমসম্পর্কহীন হয়ে কী করে লিখবো! না জানা কিছু প্রশ্ন ও এসে ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে। জ্ঞানহীন গণ্ডমূর্খ হলে যা হয় আরকি।
ভুতের সাথে পেত্নী/প্রেত্ননী এর সম্পর্ক কী? এদের আবাস-নিবাস কোথায়? সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক না মাতৃতান্ত্রিক? তাদের সমাজ জীবন ও অর্থনীতির রেখাচিত্রটি কী? তাদের বিয়েশাদী হয় কিনা? নাকি লিভটুগেদার করে? হলে উভয়পক্ষের সর্বনিম্ন বিবাহ সক্ষমতার বয়স কত? মানে কিনা? তারা একজনে ক’খানা করে স্ত্রী/পুরুষ এস্তেমাল করতে পারে? তারা কী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে? যদি করে, তা কী প্রাকৃতিক না বৈজ্ঞানিক? নাকি সকাল বিকাল প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে চলে ফেরে? যাত-পাত প্রথা চালু কিনা? যেমন ধরুন ব্রহ্মদৈত্য+ শাঁকচুন্নি ইটি-পিটিস চালাতে পারে কিনা? বিচার ব্যবস্থার স্বরূপ কি? তারা কি গণতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক? এমন আরও হাজারো প্রশ্নের উত্তর না যেনে গপ্পো লেখার চেষ্টা করার কোন মানে হয় না। তার থেকে বরং মেহজাবিনে ফির যাই।

সুনিপুণা বরাবরের মত ঈদের জামায় সুচীকর্ম করছে গভীর মনযোগে গুনগুনিয়ে, খোলতাই মেজাজের আঁচ পেয়ে গা ঘেঁসে বসে জিজ্ঞেস করলাম...
*একটি কথা বলবো?
#একটি কেন ‘সোনা’ ? দশটি বলো।
*তুমি কোন্‌ ব্রান্ডের পারফিউম ব্যাবহার করো?
#নাহ্‌, সাধারণত কোন কিছু মাখি না। কেন?
*তোমার কাছে এলে হাল্কা কিন্তু মিষ্টি একটি ঘ্রাণ সব সময় পাই।
#তাই নাকি! আমি জানিনা তো, অবশ্য এমন হলে নিজের পাওয়ার কথাও না। ভালইতো।
*আমি এবারে নিজে শুঁকে দেখতে চাই তা সত্যি সত্যি।
#দেখ, সমস্যা নেই কোন।
*সুনিপুণ ও গভীর মনযোগে বুক-মুখ-ঘাড়-হাত থেকে গন্ধ খেলাম পেট পুড়ে।
#হয়েছে? এবারে সরে বসো। বুঝতে পেরেছি তোমার ভাল লেগেছে।
তাতে আমার ও ভাল লাগল। কেউ তো এমন করে পরীক্ষা করে দেখেনি, আর তা সম্ভব ও না, তা তুমিও জান, তুমি না বললে হয়ত আমারও অজানাই থেকে যেত।
*(একাডেমিক সুর)

একটু পরে আবার ঘন হয়ে বসলাম বুকে ফু দিয়ে, বসা মাত্রই বিদ্যুৎ বেগে পূর্ণ চোখে চোখ রাখল আমার চোখে, আমার চোট্টা ভাব ধরে ফেলেছে। আমিও বিদ্যুৎ বেগে দশ হাত দূরে ছিটকে গিয়ে প্রস্তুত হলাম।
সুঁই দিয়ে নাক গেলে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অভয়চোখে কাছে এসে বসে
সেলাইয়ের কাজ দেখতে বলল। কাজে লেগে গেলাম তথাস্তু বলে।
কতক্ষণ পরে আবার জিজ্ঞেস করি............
*এই যে দিনের পর দিন এত এত কষ্ট করে এটি বানাচ্ছ, পড়লে সুন্দর লাগবে তো?
#কেন নয়? এই দেখ এখনই পড়ে দেখাচ্ছি?
*(মাথা গলিয়ে পড়ে ফেললে মুহূর্তের মধ্যে?)
#কেমন সুন্দর দেখাচ্ছে এবার বলো?
*ভালই, তবে ব্রহ্মদৈত্যের শেষ তরফের পোয়াতি শাঁকচুন্নির মতো লাগছে।
#তবে রে বদমাইশ, আজ তোর একদিন কী আমার আর দিন।

দৌড় চলুক............

বাইরে প্রচন্ড জলঝড় এখনো চলছে, বজ্র-বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে ভালই। ভাবছি কী লিখে লেখাটি শেষ করবো। দূরে বজ্রপাতের শব্দ পেলাম। সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেল। খুব মাজুর আই পি এসটি কোন রকম শুধু টেবিল লাইট জ্বালিয়ে রাখছে নিভু নিভু করে। তাও বেশিক্ষণ জ্বলবে বলে মনে হয় না। হঠাৎ খুট করে স্পষ্ট শব্দ পেয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিষ্ফল হলাম। অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেছি। চুপ করে বসে আছি। সেই অতি পরিচিত মিষ্টি গন্ধটি টের পেলাম। এরপর কে যেন চেয়ার টেনে আমার পাশে বসল। ভয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে ঘাম নামছে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার সাহস পাচ্ছি না। সামান্য আলোতে আড় চোখে দেখছি কালো পোশাকে মেহজাবিন বসে আছে।

# তোমাকে ভীত দেখতে আমার ভালই লাগে, তবে ভয় পাইয়ে দিতে বা ভয় দেখাতে আজ আসিনি, খুব মন খারাপ, তাই ভাবলাম যাই বসে থাকি তোমার পাশে একটু। লেখায় মন দাও। এই যে এত ছাইপাঁশ লেখো, আমার কথা কোথাও একটি বারের জন্যও লিখেছো? জ্বালালে সারাটি জীবন, পেলাম না মরেও শান্তি। এত কষ্ট...

প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়ল, মনে হলো জানলার পাশে। শব্দে আতকে উঠলাম, টেবিলের শেষ মৃদু আলোটি ও নিভে গেল। ভয়ে শ্বাস বন্ধ বন্ধ লাগছে। মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। জ্ঞান হারাচ্ছি। কতটা সময় এমন কেটেছে জানিনা। হঠাৎ সব আলো একবারে জ্বলে উঠলো। ভয়ে ভয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি। কোথাও কেউ নেই, তবে খুব হাল্কা করে মিষ্টি গন্ধটি এখনো ঘরময় ছড়িয়ে আছে। লেখার খাতার দিকে তাকাতেই দেখি এই মাত্র ফেলা দু’ফোটা জল পড়ে আছে।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ