নোয়াখাইল্লা বুদ্ধি
সম্ভবত ১৯৮৯/৯০ সালের ঘটনা । দৃশ্যপট চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনিষ্টিটিউট’র একটি ক্লাসরুম । ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টম্যান্টের অংকের ক্লাস । যতদুর মনে পড়ে ছিদ্দিক স্যারের ক্লাস । আমি এসএসসি পরীক্ষার পর সিপিআই এ ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। অবশ্য দুই সেমিস্টার পড়ে এর ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলাম। তো অংকের ক্লাসের ৩য় সারিতে বসা একটি ছেলে তার সামনের সারিতে অন্য একটি ছেলেকে উসকানি দিয়ে রাগাতে চেষ্টা করছিল । সামনের সারির ছেলেটি একটু খিটখিটে মেজাজের ছিল বলে তাকে রাগানো খুব সহজ ছিল। পেছনের ছেলেটি কাগজের টুকরোকে ম্যাচের কাঠিরমত বানিয়ে ঐ ছেলেটির কানের মধ্যে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল । সামনের ছেলেটি বিরক্তি প্রকাশ করলেও ক্লাসে স্যার থাকায় বেশী কিছু প্রতিকৃয়া দেখাতে পারছিলনা । ছিদ্দিক স্যার ছিলেন খুব কড়া মেজাজের মানুষ। এদিকে সহ্যের একটি সীমা আছে, পিছনের ছেলেটা একটু পর পর সুড়সুড়ি দিতেই আছে । শেষ পর্যন্ত সামনে বসা ছেলেটির পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হলনা । সে অতর্কিতে দাঁড়িয়ে ডান হাতে যত শক্তি আছে সব শক্তি হাতের তালুতে জমা করে ঠাস-সসসসসস করে একটি চড় বসিয়ে দিল পেছনের ছেলেটির গালে।
নিরিবিলি ক্লাসরুমে চড়ের শব্দটি এমন হল:
যেন বিয়ে বাড়ির পটকা,
যেন রিকসার চাকা পামচার ।
যেন হরতালে ফাটানো ককটেল!
ক্লাসের সবাই চমকে উঠল, স্যারও অবাক হলেন।
রুমের পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে স্যার রাগান্বিত হয়ে ডাস্টার হাতে চোখ লাল করে ছেলেটির দিকে তেড়ে আসতে চাইলেন ।
অবস্থা বেগতিক দেখে চড় খাওয়া পেছনের ছেলেটি দাঁড়িয়ে ঝটপট বলে দিলেন স্যার আমি ওকে মাপ করে দিয়েছি। স্যার থমকে গেলেন, যেখানে ভিকটিম ক্ষমা করে দিলেন সেখানে বিচার চলেনা।
অবস্থা দেখে আমিতো পুরোটাই ব্যান হয়ে গেছি। কি তীক্ষ্ম বুদ্ধিরে বাবা!
ছেলেটির বাড়ি ছিল নোয়াখালী।
আর যে চড় মেরেছিল তার বাড়ি ছিল রাজশাহী বিভাগে।
আমি মনে মনে নোয়াখাইল্ল্যা বুদ্ধির তারিফ না করে পারলাম না! সে একটা চড় খেয়েছে বটে! তবে স্যারের রোসানল এবং বড় শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছে উপস্থিত বুদ্ধির কারণে। এই ঘটনা আমার প্রায় সময় মনে পড়ে, এখনো।
(এখানে কাউকে আঘাত দেয়া বা ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। জাস্ট উপস্থিত বুদ্ধির প্রশংসা করা।)
৩৩টি মন্তব্য
তৌহিদ
এখানেও নোয়াখালী!! নোয়াখালী আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা হোক।☺☺
কি বুদ্ধি বাবারে বাবা!!
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ওরা চায় বিভাগ, আপনি চান রাষ্ট্র?
ইঞ্জা
নোয়াখাইল্লা হানি হাগোরার বুদ্ধি আছে, নাহলে উল্টোই ধরা খেতো। 😄😄😄😄😄
চাটিগাঁ থেকে বাহার
হানি হাগোরা মানে কী ভাইজান?
ইঞ্জা
😀 ভাই আপনি চট্টগ্রামের মানুষ হয়ে এইটা জানেননা, অবাক হলাম। 😲
এক সময় নোয়াখালির মানুষ অপুষ্টিতে ভুগত, প্রায় ডায়রিয়াতে ভুগতো, তাই তাদেরকে হানি (পানি) হাগোরা (হাগা বা পায়খানাকারী) বলা হয়। 😜
শাহরিন
খুবই ভালো লেগেছে নোয়াখাইল্যা শব্দটি বাদে।
বিঃদ্রঃ আমার বাড়ি নোয়াখালী না 🙂।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আমি মনে করি,
ঢাকাইয়্যা, চাটগাঁইয়্যা, নোয়াখাইল্যা, বরিশাল্যা এগুলো গালি নয়, আঞ্চলিক শব্দ।
এখানে নোয়াখাইল্যা বুদ্ধি বলে আমি নোয়াখালির গুণ কীর্তন করেছি।
তবুও আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
নিজেই সেভ জোনে গেলেন।বুদ্ধি মানে জাপানি বুদ্ধি।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
একেবারে জাপানি বুদ্ধি।
নিজে সেভ জোনে না গেলে অনেকের মনে কষ্ট আসতে পারে। কাউকে কষ্ট দিয়ে মজা নেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
ভাভাগো!
একটি কুলিন বিভাগ তাদের খুবই প্রয়োজন।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
বিভাগ একদিন হয়তো হয়েই যাবে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
বিভাগ একদিন হয়তো হয়েই যাবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা, বুদ্ধির তারিফ করতেই হয় 🙂
তবে আমি কিন্তু আপনার এই লেখার তারিফ করতে চাচ্ছি। চড়ের শব্দের যে বিবরণ দিলেন! 😂😂
বাহার ভাইয়া, আপনি রম্য লেখেন না কেন?
চাটিগাঁ থেকে বাহার
উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আপু। চেষ্টা করবো রম্য লিখতে।
আপনাকে জন্য শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
“অবস্থা বেগতিক দেখে চড় খাওয়া পেছনের ছেলেটি দাঁড়িয়ে ঝটপট বলে দিলেন স্যার আমি ওকে মাপ করে দিয়েছি। স্যার থমকে গেলেন, যেখানে ভিকটিম ক্ষমা করে দিলেন সেখানে বিচার চলেনা।
অবস্থা দেখে আমিতো পুরোটাই ব্যান হয়ে গেছি। কি তীক্ষ্ম বুদ্ধিরে বাবা!
ছেলেটির বাড়ি ছিল নোয়াখালী।”
চড় খাওয়া ছেলেটি বললো মাফ করে দিয়েছে। ছেলেটির বাড়ি নোয়াখালী।
আবার বললেন,
“আর যে চড় খেয়েছিল তার বাড়ি ছিল রাজশাহী বিভাগে।”
যে চড় খেয়েছিল তার বাড়ি রাজশাহী।
বিষয়টা আমি বুঝতে পারিনি। এ হয়ত আমাই অক্ষমতা। লেখক কি আমাকে একটু বুঝতে সাহায্য করবেন?
জিসান শা ইকরাম
এটি আমার চোখেও পড়েছে নীরা সাদিয়া। এখানে বর্ননায় মনে হয় ওলট পালট হয়ে গিয়েছে।
চর এর বর্ননায় মুগ্ধ হলাম,
কানের মধ্যে এমন সুর সুরি খুবই অসহ্য।
আমি বরিশাইল্যা 🙂
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এখানে না বুঝার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না! আরেকবার পড়ার অনুরোধ করছি।
আমার বন্ধুরা একজনের বাড়ি ছিল নোয়াখালী আরেকজনের বাড়ি রাজশাহী বিভাগে।
আমি এখানে রাজশাহী জেলা বলিনি, রাজশাহী বিভাগ বলেছি।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আমি দু:খিত, আপনার দু’জনেই রাইট আছেন। আমারই গলদ ছিল।
আসলে যে চড় মেরেছিল তার বাড়ি ছিল রাজশাহী বিভাগে। আমি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তালগুল পাকিয়ে ফেলেছিলাম। আমি প্রথমে লিখেছিলাম যে চড় খেয়েছিল তার বাড়ি রাজশাহী। আবারো দুঃখিত!
#নীরা সাদীয়া আপু
#জিসান শা ইকরাম ভাইজান
নীরা সাদীয়া
এবার বুঝতে পেরেছি।
আকবর হোসেন রবিন
হা হা হা। লেখাটা রম্য হিসেবে দারুণ।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ধন্যবাদ। বুদ্ধিটা দারুণ না!
নিতাই বাবু
দেখুন! দাদা, আঁইও এক নোয়াখাইল্লা হোলা। তয় আঁর বুদ্ধিসুদ্ধুই নাই। এক্কারে সাদাসিধা মানুষ আঁই! মনের মাধ্যেও গড়মিল নাই।
বাড়ি: নোয়াখালী বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে মাহাতাবপুর গ্রামে। থানা: চৌমুহনী।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
‘‘সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে বড় রাস্তায় পৌছার আগেই পথে ১২ জন ভিক্ষুক পাওয়া গেল। বুরহান উদ্দিন সাহেব ১০ টাকার একটি নোট ভাঙ্গিয়ে প্রথম জনকে ২ টাকা দিলেন। পরবর্তী ৮ জনকে ১ টাকা করে দিলেন। আরো ৩ জন ভিক্ষুককে টাকা দিতে না পারায় বুরহান উদ্দিনের মনটা খচখচ করতে লাগলো।’’
দাদা, উপরের কথাগুলো খাটি নোয়াখাইল্ল্যা ভাষায় তরজমা করে দিন তো। দেখি আপনি কতটা খাঁটি নোয়াখাইল্ল্যা!!!
আগেই বলে রাখছি আমি এই কথাগুলো চাটগাঁইয়্যা ভাষায় লিখতে পারবো না!! আমারে আবার লিখতে বলিয়েন না।
নিতাই বাবু
একদিনকা বিয়াঁনে অফিসে যাওনের লাই বাসাত্তুন বাইর অই বড় রাস্তায় যাওনের সুম ১২ জন হইরের লগে বুরান সাবের দেঁয়া অঁই যায়। বুরান সাব ১০ টেয়ার একখান নোট ভাঙাই হইলা এক হইররে ২ টেয়া দি, হরে ৮ জনেরে ১ টেয়া করি দি দিছে। বুরান সাব বাঁই ৩ জন হইররে আঁতে টেয়া দিতে হারে ন বলি হেতেনের মনকান খচখচানি শুরু করি দিছে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
হাহাহাহাহাহাহাহা……
ভাউরে, আঁইত হাসি বন্ধ কইত্তে হারিন্নঅ….
*
আপনারে নাম্বার দিতে নোয়াখাইল্ল্যা ভাষার উপর থিসিস করছেন এমন লোক লাগবে।
তবে আমার বিচারে ১০ এ ১০….
নিতাই বাবু
ধন্যবাদ দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করতেই হয় বাহার ভাই। তাই স্যারের ডাস্টারের বাড়ি খাওয়া থ্বিকা বাইচা গেইলা।
ভাল লাগল বাহার ভাই।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
একেই বলে বুদ্ধির জোরে বেঁচে যাওয়া। এমন বুদ্ধি থাকলে মন্দ হয় না। তয় কানে সুড়সুড়ি দেয়ার মতো কু-বুদ্ধি না থাকাই ভালো!
মোঃ মজিবর রহমান
যার বুদ্ধি নাই সে সুড় সুড়ি দেওয়ার সাহস পাইনা। তবে উপস্থিত বুদ্ধি খুবই দরকার জীবন চলার পথে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনার সাথে একমত মজিবর রহমান ভাই। জীবনে উপস্থিত বুদ্ধির দরকার আছে। বেকুবের সাথে বেহেস্তে যেতেও অনেকে রাজি নন।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা বুদ্ধির ঢেকিঁ। নোয়াখাইল্লাগো যেমন বুদ্ধি আছে তেমনি আছে প্রচন্ড সাহস। আমাদের এখানে মানে আদমজী জুট মিলে এক সময় রাজত্ব করত তারা। তারা বলত মাটির তলদেশেও নোয়াখাইল্ল্যাগো খুইজ্জা পাইবেন। সে এক অসীম সাহসীর সময়।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
নোয়াখালীর লোকের জাপানের লোকের মতো পরিশ্রম করতে পারে বলে তাদেরকে জাপানী হিসেবে অভিহীত করা হয়ে। পরিশ্রমি হিসেবে আমি তাদেরকে সম্মান করি।
আপনাকে ধন্যবাদ মনির ভাই।
মনির হোসেন মমি
হুম ঠিক বলছেন- ওরা শুধু পরিশ্রমী নয় ওরা যে কোন কাজ যে কোন অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে জানেন। সন্মান তাদের প্রাপ্যই।