নীরবতাদের কথকথা

নীলাঞ্জনা নীলা ২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১০:৫৪:০০অপরাহ্ন গল্প ৩২ মন্তব্য

আজ রাস্তায় এতোই ভীড় যে পা ফেলা যাচ্ছেনা। কোন এক সিনেমার নায়ক-নায়িকা আসবে, পুরো শহর যেনো এদিকেই দৌঁড়ে আসছে। ওদিকে দেরী হয়ে যাচ্ছে অর্ডারগুলো সকাল এগারোটার মধ্যে দিতে হবে। অনুপা কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করে। ছোটখাটো অর্ডার পায়। একসময়ের শখ আজকের পেশা। স্পর্শ হঠাৎ করেই চলে গেলো না-ফেরার দেশে। আর কঠিন ধাক্কা খেলো যখন দেখলো একটা টাকাও সেভিংস একাউন্টে নেই। উল্টো অফিস থেকে অগ্রিম নিয়ে সব শেয়ার বাজারে খুইয়েছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছিলো। তাছাড়া বয়স চল্লিশের পর কোনো চাকরী পাওয়া অসম্ভব না  হলেও বড্ড কঠিন। তখনই প্রতিবেশী একজন কাঁথা বানানোর প্রস্তাব নিয়ে এলো। অনুপাকে দেখেছিলো কাঁথা বুনতে। ব্যস অনুপার ব্যবসায়িক জীবন শুরু। আর তাতেই যা আসে কোনোরকমে চালিয়ে নিয়ে যায় মা আর মেয়ে। মোটামুটি পরিচিত হয়ে গেছে অনেকের কাছেই। তাছাড়া সময়ের ব্যাপারে কোনো আপোষ করেনা অনুপা, আর এটাই তার ব্যাবসায়িক স্ট্রাটেজি।

আজ অনেক তাড়া, কারণ আজকের এই অর্ডার যাবে নিউজিল্যান্ডে। পরিচিত কাষ্টমার আগেই জানিয়ে রেখেছিলো নিউজিল্যান্ড থেকে আত্মীয় আসবে নক্সীকাঁথা চাই। সেই কাঁথা নিয়ে রওয়ানা হয়েছে অনুপা। অথচ পথে এত্তো ভীড়। কোনোভাবে বাসস্টপেজে পৌঁছে গিয়েই দেখলো বাসটা চলে যাচ্ছে। দৌঁড়ে গিয়ে উঠলো বাসে। ভীড়ের মধ্যে কতো যে হাত এদিক-ওদিক চালান করছে অনুপার শরীরে। এমনই মেজাজ বিগড়ে গেলো একেবারে জায়গামতো বসিয়ে দিলো অনুপা, জোরে কেউ একজন চিৎকার দিয়ে উঠলো। বেশ কিছু জায়গা খালি হতেই দেখলো লোকটাকে। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে জানালার দিকে চেয়ে দেখতে লাগলো। জেলা শহরকে লাগে যেনো বিশাল বড়ো এক শহর, এতো যানজট। এমনিতে বাসে পনেরো মিনিট লাগে, আজ একেবারে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। সময়ের এতো হেরফের কখনোই করেনি অনুপা। একেবারে ছোটবেলা থেকেই সময়ের ব্যাপারে খুবই ডিসিপ্লিনড। যাই হোক অবশেষে পৌঁছুলো। দরোজা খোলার পর যে মুখটা দেখলো অনুপা একেবারে চমকে গিয়ে চুপ। এমনকি সামনে যে দাঁড়ানো, সেও। 'তুই অনুপা না?' মাথা দোলালো, 'তুইইইইইই...তুমি, না আপনি তৃণা, না?' অমনি তৃণা বললো, 'আমায় আপনি করে বলছিস কেন? কত্তো বছর! প্রায় তিরিশ, না!' আচমকা সহজ হয়ে এলো অনুপা, জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ও একমাত্র বান্ধবী তৃণা। পুরোনো দিনের কতো কথা চলে এলো। যখনই বর্তমানের দিনকাল কথার ভেতর দিয়ে কথা হওয়া শুরু হলো অমনি চুপ হয়ে গেলো মুখ। কথারাই কথা লুকিয়ে নিলো নিমেষে। অনুপা তার বর্তমান দিনলিপি তৃণার একমুহূর্তের স্মৃতির কাছে রাখতে চায়না। সেই স্মৃতিগুলোই থাক যার মধ্যে কোনো দীর্ঘশ্বাস নেই, ছিলোনা।

বন্ধুতা...
বন্ধুতা...

হ্যামিল্টন, কানাডা
২২ এপ্রিল, ২০১৭ ইং।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ