"মুজিব শব্দটি একটি যাদু" "মুজিব একটি আলৌকিক নাম" পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর দলের নেতা ও জনগনের ভাগ্য পরিবর্তনের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তার প্রদেশের বৃহত্তর স্বায়ত্বশাসনের যে ন্যায্য দাবী জানিয়েছিল তা ঐ পাকিস্তানি শাষক গোষ্ঠি না মেনে বঙ্গবন্ধুকে জেলে দেয়। তখনকার বঙ্গবন্ধুর সেই দাবিই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বাস্তব রুপলাভ করে। কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় বীর থেকে দেবতায় পরিণত হয়। দেশি বিদেশি পত্রিকা গুলোতে হেডলাইন গর্জে উঠল, " মুজিব শব্দটি একটি যাদু, মুজিব একটি অলৌকিক নাম"।   অন্ধকার থেকে আলোতে আসার অত্যান্ত কষ্টকর সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমানের প্রভাব তাঁর শরীরে পড়তে শুরু করেছিল। তিনি লন্ডনে কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে দেশে ফিরে প্রত্যোকটা জেলায় জেলায় ঘুরে তিনি তাঁর জনগনের সব কয়টা মুখ দেখার পর কাজ করতে চাইলেন। কিন্তু এদিকে দেশে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীন কোন্দল, রেষারেষী, আর দু একজনের মধ্যে বহিঃশক্তির প্রভাব দারুনভাবে পরিলক্ষিত হয়।অথচ বঙ্গবন্ধু দেশের উন্নতি ও যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের জন্য সাহায্য সহযোগিতার জন্য চিন্তিত ছিলেন। দেশের অতি জরুরী এবং পাহাড় সমান সমস্যার দিকে নজর দেওয়াটাই ছিল জরুরী।পাকিস্তানী হায়েনাদের হিংস্র থাবায় চরম আক্রোশে দেশটি একটি বৈধ্যভূমি আর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। দোকানপাটে খাদ্য ছিল না, খাদ্যদ্রব্য কিংবা জীবন রক্ষাকারী কোনো ওষুধ। দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পাট আর চা শিল্প ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী দেশের এক কোটি শরনার্থী ফিরে আসতে শুরু করে তাছাড়া দেশের ভিতরে প্রায় দু'কোটি লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। তাদের সকলের আশ্রয় আর খাদ্য বস্ত্রের সংস্থান ঠিক ঐ মুহূর্তে অতি জরুরি ছিল। কিন্তু যানবাহন, রাস্তাঘাট, ফেরী, সেতু ইত্যাদি চরমভাবে ধ্ংস করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে বিকল ও স্থবির করে দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তানীরা এখানেও তাদের হায়েনা বুদ্ধি খাটিয়েছিল। তারা চেয়েছিল যুদ্ধের পর বাঙ্গালী ভাতে, কাপড়ে ও আশ্রয়ে যেন মরে যায়।

আন্তর্জাতীক রিলিফ সামগ্রী জায়গামত পৌছান অলৌকিক ব্যাপারে পরিনত হল। ঐ ধ্বংসস্তুপের মাঝে জনগনকে বাঁচানো আর একটা আসন্ন দুর্ভিক্ষকে ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশকে ২৫ লক্ষ টন খাদ্য সামগ্রী একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতীক সম্প্রদায় থেকে তা কিছুটা আসতেও শুরু করল, কিন্তু তা দেশের ৬০ ভাগ গ্রামে পৌছানো এক রকম অসম্ভব হয়ে পড়ল। এরই মধ্যে আবার দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে চলে যেতে লাগল। এখানেও দেশের ভিতরের স্বাধিনতা বিরোধীরা আগুনে ফুক দিতে শুরু করেছিল।

এদিকে সাড়ে তিন লাখের ও বেশী আগ্নেয়াস্ত্র সাধারন মানুষের হাতে রয়ে গেল। বিভিন্ন ধরনের অভাব অনটনে মানুষ হয়ে উঠল বেপরোয়া। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে দেশের ভিতর গৃহযুদ্ধের সম্ভবনা দূরিভূত হল। বঙ্গবন্ধু খুব সহজ সরল ভাবে সকলের সমস্যা সমাধানের জন্য তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গীতে আদর করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতেন,"ঠিক আছে যা আমি ব্যপারটি দেখছি।"স্বভাব সুলভ আচরন বল্লাম এই জন্য যে, অল্প বয়স থেকেই তার ভিতর এমন সব গুনাবলি পরিলক্ষিত হয়েছিল। যাতে করে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে তিনি যে একদিন কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ন হবেন তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। তাঁর একটা গুন ছিল, তিনি অতিমাত্রায় সমাজ সচেতন ছিলেন। আর ছিল রাজনীতির প্রতি অদম্য আগ্রহ। তিনি একবার মাত্র দশ বছর বয়সে নিজের ঘর থেকে মজুরদের চাল বিতরন করতে গিয়ে তার পিতার হাতে ধরা পড়েন। জিজ্ঞেস করলে বলেন,"এটা আমাদের অনেক আছে তাদের তো কিছুই নেই।" তখন তার পরিবারটি ছিল মধ্যবিত্ত পরিবার। তাঁর পিতা লুৎফর রহমান স্থানীয় জেলা জর্জ কোর্টে চাকরি করতেন।

বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মিনিয়্যাল স্টাফদের সমর্থন করতে গিয়ে আাই বছর করাবরন করেন। কিন্তু এর আগেও কয়েকবার বৃটিশবিরোধী আন্দোলন এবং অন্যান্য কারনে তাকে জেলে যেতে হয়েছে।

যাইহোক, এই মহান মানুষের জীবনি লিখতে গেলে অনেক লিখতে ইচ্ছে করবে। কারন তার জীবনের প্রতিটা সময়ই ছিল ঘটনাবহুল।

বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে বাংগালী কোটি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত বার বারই অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। তিনি দেশেফিরে এক অব্যক্ত অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। তিনি বাইরে যতটা খুশি প্রকাশ করতেন আসলে ততটা খুশি তাঁর মনের কোণে জমা ছিল না। তার সারাটা জীবন কেটেছে মাঠে ময়দানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গায়ে গা লাগিয়ে থেকে। অথচ আজ তিনি প্রশাসকের এই যে শক্ত আবরন ভেঙ্গে সাধারনের মাঝে মিশতে পারছেন না। এই কষ্টটা তিনি কাউকেই বোঝাতে পারছিলেন না। কারাগারে চরম নিঃস্বঙ্গতার মাঝে দিনের পর দিন কাটানো যে কতোটা কষ্টকর তা বলার মতো না। কথা বলতে না পারারও অনেক কষ্ট। বঙ্গবন্ধু তাংর জীবনীতে লিখেছেন,"আমাকে কারাগারে একটা কক্ষে একা রাখা হত, কারো সংগে কথা বলতে দেয়ক হত না। অথচ কারা নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো বন্দীকে তিনমাসের বেশী একা রাখা নিয়ম নেই"। কারাগারে নিঃস্বঙ্গতার মাঝে তিনি দেশের ন'মাসের কিছুই জানতে পারলেন না। সময় তাঁর জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। বাঙ্গালী জাতী নতুন আশায়, নতুন প্রত্যাশায় এক নব জীবনে পা বাড়ানোর জন্য তার মুখের পানে চেয়ে আছে। ববঙ্গবন্ধু ভেবেই যাচ্ছিলেন কীভাবে তার প্রান প্রিয় বাঙ্গালীকে ক্ষুধা দারিদ্রের অন্ধকার থেকে আলোতে আনবেন। তিনি অনুধাবন করতে পারছিলেন বাঙ্গালীর জন্য বাঙ্গালীর জন্য আর ধৈর্য্য ধরা সম্ভব নয়। তার উপর দলীয় অনেক লোকের উচ্চাভীলাসি জীবনের আকাঙ্খা, তাদের অনেকের উসৃঙ্খল আচরন তাকে বার বার বিচলিত করছিল। তিনি ছিলেন অত্যধিক নরম হৃদয়ের, তাই এরা তার এই সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ঠকানোর চেষ্টা করেছে।

কিন্তু অনেক দেশের শত্রুর সাথে একা তিনি কীভাবে পারববেন! চোখ বড় লোভী কিছু দুশের শত্রু যতটা পারে লুটপাটের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সীমান্ত দিয়ে রেলের ইন্জিন, বৃটিশদের রেখে যাওয়া তামার পাত, পাট চা, বিদেশী সাহায্য সব ভারতে পাচার করতে লাগল কতিপয় ব্যবসায়ী দালাল ও মজুতদার গোষ্ঠী। কিন্তু এতেও তারা বঙ্গবন্ধুকেই দোষারোপ করল। মূর্খ কিছু জনগনকেও ভুল বোঝাতে সক্ষম হল। কিন্তু তারা একটিবার ভেবে দেখল না,যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটি দেশে সব কিছু একার পক্ষে গোছান কতটা কষ্টকর। যেখানে ছিল প্রায় সবাই চোর। বঙ্গবন্ধু কোনো বিষয়ে জানতে পারলে, তার আশপাশে থাকা চাটুকরেরা বলত,"এসব দুষ্টু লোক আর স্বাধীনতা বিরোধীদের রটানো কুৎসা"। বঙ্গবন্ধু সাদা মনেই তাদের বিশ্বাষ করেছেন। কারন পিতা কখনো সন্তানকে অবিশ্বাষ করেনা। যেমন করেননি তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রের গুন্জন শুনেও।

কিন্তু বাংলার কিছু কিছু কুলাংগার বার বার তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু বাংলার অধিকাংশ মানুষ তা বিশ্বাষ করেনি। তারা অপেক্ষায় ছিল, আর সেই অপেক্ষা হতাসায় পরিণত হয় ১৫ই আগস্টে।

আমি ছাত্র জীবনে থাকতে এমন অনেক কথা শুনেছি। নিজেকেই অনেক প্রশ্ন করেছি। আব্বা বলত, সঠিক ইতিহাস জানতে অপেক্ষা করো। তিনি অনেক বই পড়তেন। পুরাতন অনেক পত্রিকা আসত আমাদের বাড়িতে। তাই ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসেছি।

আমাদের নতুন প্রজন্মের জানা উচিৎ, বঙ্গবন্ধু কীভাবে পাকিস্তান কারাগার থেকে জীবিত ফিরে আসেন।

ববঙ্গবন্ধুকে ১৯৭১ সালের ২৫ তারিখ ভোর রাতে গ্রেফতার করে ইয়াহিয়া খান তার দেশে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়েছেন। একটি বিশেষ সামরিক আদালতে তাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রদান করে। বঙ্গবন্ষুর প্রিজন সেলের পাশেই একটি কবর খনন করা হয়। বঙ্গবন্ধু কবর দেখে জীবনের শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তুভাগ্যের চরম সৌভাগ্য সেই রাতেই যুদ্ধ বিরতি ঘষনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব, তাঁর বুদ্ধিদিপ্ত তেজময় চেহারা দেখে জেলারের মায়া হল, হয়তবা বলা যেতে পারে জেলারের বিবেক জাগ্রত হল, এবং জেলার এও জানতে পারলেন ইয়াহিয়া খানের পদত্যাগ অত্যাসন্ন। তাই তিনি দেরি না করে চুপিচুপি বঙ্গবন্ধুকে তার ব্যক্তিগত কোয়ার্টারে নিয়ে রাখলেন। জেলার তাখে দুইদিন লুকিয়ে রাখলেন। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াখানের স্থলাভিষিক্ত হন। ভুট্টোকে ইয়াহিয়া অনুরোধ করেন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দিতে। কিন্তগ ভুট্টো তা অস্বীকার করে। দু'সপ্তাহ পরেই বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

চলবে,,,,, এই তথ্যগুলো পেয়েছি *বাংলাদেশ রক্তের ঋণ বইটি থেকে এবং বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনীমূলক বইটি থেকে। এবং নিজের উপলব্দি। যা একান্ত অনুভূতি হিসেবে প্রকাশ করেছি।

কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ