দশদিনের ছুটিই কি সমাধান?

তৌহিদুল ইসলাম ২৩ মার্চ ২০২০, সোমবার, ০৮:৩৭:৫৪অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৫ মন্তব্য

করোনা ভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকবে। এর আগে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ও পরে ২৭ ও ২৮ মার্চের সাপ্তাহিক ছুটিও যোগ হবে। এ ছাড়া ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি এ ছুটির সঙ্গে যোগ হবে।

তবে এ ছুটি কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরি সেবার জন্য প্রযোজ্য হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ দফার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ১০ সিদ্ধান্তের মধ্য রয়েছে গণপরিবহন চলাচল সীমিত রাখা, সব রকম সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দশদিনের ছুটি পেলো সবাই ভালো কথা। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমনণের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে। তবে হয়েছে কিন্তু উল্টোটা। ছুটি পেয়ে সবাই ছুটছে নিজ গ্রামে, শহরে আর এটাই স্বাভাবিক। কারন- সরকার ছুটি দিয়েতো আর বলেনি শহর থেকে বের হওয়া যাবেনা। ছুটি দিয়েতো বলেনি ঘরেই থাকুন। বাইরে বের হলে বা এই ছুটিতে গ্রামে গেলে কি ভয়ংকরতম দিন আসতে পারে! এসব বিষয়ে কোন এওয়ারনেস প্রোগ্রামও করেননি। হুট করে ছুটি দিয়ে দিলেন!

সরকারের এই দশদিনের ছুটির সংজ্ঞাতে অনেক কিছুর ঘাটতি ছিলো বলেই সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারেনি। ফলে ছুটি পেয়ে গ্রামে কিংবা নিজের শহরে ফিরে আসা ব্যক্তিরা আজ নিজেরাই হয়তো একেকজন একেকটি করোনা বারুদ হয়ে আপন শহরে ফিরছে।

অথচ উচিত ছিলো লকডাউন করে তারপর ছুটি দেয়া। আদতে ছুটি দিয়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সহযোগীতাই করা হলো না কি?

আরও অনেক কিছু সমাধানও করা উচিত। এখানে আমি আমার মতামত দিলাম।

✔ এই দশদিন যাতে ছুটি পেয়ে কেউ বেড়াতে না যায় সেটি কার্যকরের ব্যবস্থা করা উচিত। যেখানে সাধারণ কোয়ারেন্টাইন কেউ মানতে চাইছেনা সেখানে ছুটিতে যাতে কেউ ঘরবিমূখ না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

✔ নিম্ন আয়ের এবং শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন নির্দিষ্ট ভাতার সু-ব্যবস্থা করা উচিত, না হলে আয়রোজগার করতে তারা বাইরে যাবেই।

✔ সব অফিস যেহেতু ছুটি তাই যারা করোনা সংক্রান্ত সেবা দেবেন সরকার তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ভাতা দেবেন কি?

✔ বাসায় বসে দাপ্তরিক কাজ করার কথা বলা হয়েছে। থানা পর্যায়ে অনেক অফিস এখনো ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আসেনি। তাহলে তারা কি করে দাপ্তরিক কাজ করবেন?

✔ আগামী চার এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি তাহলে অগ্রীম বেতনের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতোনা কি? যারা মাসের এক থেকে তিন তারিখ বেতন তুলে মাসিক বাজেট নির্ধারণ করেন তাদের জন্য এটি একটি সমস্যাই বটে! অবশ্য আতিপাতিদের টুপাইস কামানো বন্ধ হলো অনেকের।

✔ সর্বোপরি এই দশদিন সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকা লকডাউনই করা যেতোনা কি? বিমানবন্দর এখনো চালু। চারটি রুট বন্ধ করেননি। তারমানে হচ্ছে যেসব দেশ আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট বন্ধ করেছে তাই আপনারাও বাধ্য হয়েছেন ফ্লাইট বন্ধ করতে। তাহলে বাকী চারটি চালু রাখলেন কেন? জীবনের থেকে কি ব্যবসাবাণিজ্যই কি বড় হয়ে গেলো?

✔ অন্যদিকে দেশের সব স্থল বন্দর দিয়ে বিদেশীদের প্রবেশ বন্ধ দিয়েছেন। তাহলে কি দাঁড়ালো? এদেশের মানুষ করোনার জীবাণু নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে? থার্মাল স্ক্যানারই কি সমাধান? দেশের অনেকেই আন্তর্জাতিক রুটের ট্রানজিটের সময় নাপা ট্যাবলেট খেয়েছেন যাতে বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরে শরীরের তাপমাত্রা ধরা না পড়ে তা কি জানেন?

মানবিকতা দেখাতে গিয়ে ক্ষতিই টেনে আনা হলোনা কি? এসবের আসু সমাধান জরুরী।

সবাই নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন। দেশকে ভালোবাসুন। প্রিয় মাতৃভূমির এখন তার সন্তানদের বড্ড প্রয়োজন।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ