মনের অবস্থা সিরাম( সেরকম) খারাপ। এটা বিয়ের পর  আমার চতুর্থ ঈদ। জামাই কোথায় আমাকে নিয়া নাচানাচি করবে তা না করে তিনি আসেনই নাই। রাজশাহী ট্রেনিং এ গেছেন চারমাসের জন্য। ঈদের ভীর ভাট্টায় টিকিট নাই, তাছাড়া যেতে আসতে সমস্যা, যথাসময়ে না গেলে চাকুরীতে সমস্যা হবে এরকম নানা বাহানায় তিনি আসেন নাই। ঘটনা আসলে অন্য। শশুর বাড়িতে ঈদ করতে তার সমস্যা।

বিয়ে আমি কোনদিনই করতে চাই নাই। সবাই কয় ‘নাহিদ‘ বিয়ে করো, বিয়ে করো! বিসিএস করেছি পাঁচ বছর। এজন্য মখ্খী মিয়ারা খালি ঘুর ঘুর করে। প্রত্যেকদিন দু একটা প্রস্তাব তো আসেই!

আমার তো সারাদিন ট্যাক্স সামলায়া রাতে এমন ঘুম পায় যে চোখে দেখি না। বিয়েটা করে হবে কি? দরকার নাই, ভালোই তো আছি।
সালমান শেখ, আমার জামাই। বুঝলেন, কোথা থেকে নাম্বার পাইছে। ব্যাটা মাষ্টারমশাই, সারাদিন কাম নাই, মেয়েদের দুটো ক্লাস নিয়ে আমাকে খালি ফোন দিয়ে ভুনুর ভুনুর করে।
আমি বলি, - সালমান মিয়া আমি তো নিজের হাতে ভাতও খাইতে পারি না। ছোট বেলায় ডান হাত ভাইঙ্গা গেছিল। তারপর ডান হাতে শক্তি কম বলে মা খাওয়ায় দিত। এখন রীতিমতো অভ্যাস হয়ে গেছে। খেতে বসলে বা হাতে খাবার নেই, মা প্লেট কেড়ে নিয়ে খাওয়ায় দেয়।
আর বলে বা হাতে নাকি খাওয়া হারাম। আমি তো হারাম হালাল বুঝি না। হাত তো হাতই! আল্লাহ দুই হাত দিয়েছে সব কাজ করার জন্য। আমরা সব কাজ করি দুই হাতে। অথচ বা হাতে নাকি খাওয়া যায় না। তো বিয়ের পরে আমারে কে খাওয়াবে?

সালমান শেখ হাসে, -হে হে হে হে! ওরে আমার কইলজা! আমি আছি কি করতে। খাওয়া, গোসল, রান্না সব করব। একবার খালি বউ হও!

মেয়ে মানুষের দিল বড়ই নরম! কয়েকরাতের পুনুর পুনুর আর চৈত্র বৃষ্টিতে তার সাথে দেখা করতে গিয়া আমার ঘন্টা বাজলো।

-এই মাষ্টারমশাই, তুমি এতো ইস্মাট( স্মার্ট) কেন?

বিয়ের পর কয়দিন মাষ্টারমশাই আমার ঘুম নষ্ট করল। অফিসে গেলে খালি ঘুম পায়। এতে অবশ্য মাষ্টারমশাই রান্না- বান্না করে হাতে তুলে খাইয়েও দিত। ভালোই কাটছিল সময়।
কয় মাস না যেতেই তার ঘোর শেষ হলো। তিনি বাড়ি ফেরেন দেরী দেরী করে। সকালে ঘুম থেকে ওঠেন না, বাহানা মারেন। অগত্যা আমার সংসার আমার ঘাড়েই পড়ল। আমার আর ডান হাত- বা হাত কোন হাতেরই খেয়াল নাই। একহাতে রাধি এক হাতে নাকে মুখে খাবার দিয়ে অফিস যাই। আবার ফিরে তাই করি।

কিছুদিন যেতেই শাশুড়ি মা ঘন ঘন ফোন করেন, মা নাহিদ, বিয়ের তো অনেকদিন হল। এবার বয়স হইছে বাচ্চা নাও, বংশের বাতি জ্বালাও। এরপর আস্তে আস্তে সবাই একই গান গায়। শুনতে শুনতে কান পাকে। বয়সও কিন্তু পয়ত্রিশ পার হয়ে গেছে।

এক রাতে মাষ্টারমশাই এর সাথে তুমুল ঝগড়া।বিয়ে কি বাচ্চার জন্য। আমি পারবো না। দুনিয়াতে মানুষের জায়গা দেবার জায়গা নাই। তাদের একটা ধরে এনে বাতি ধরায় দিলে তো হয়! মাষ্টারমশাই কথা বলে না তিনদিন।
রাগের ঠেলায় বন্ধু সুজনের সাথে দেখা করলাম। সে ব্যাটা নেতা, মহা হারামী। আমারে কড়া পানি ধরায় দিল। বিয়ের আগে তো দু একবার খাইছিলাম। এবার কালীবাড়ীর সলিড পানি পেটে পরতে সব কেমন আউলায় গেল। বাড়ি ফিরলাম টলতে টলতে। জামাই কিছুই কয় নাই। আমি তাকে সরি বলে গায়ে পরে গেলাম। কে জানতো তার মনে এই শয়তানি ছিল বলে কিছু কয় নাই।

পরের মাসের সকাল বেলা বিনা কারণে বমি। ও মা, কি বিপদে ফেললা গো! অফিস তো নাই, লম্বা টান দিয়া শুইলাম।

শাশুড়ি মা হাজির, ডাক্তার হাজির। আর শয়তান মাষ্টারমশাই উধাও। সে রাতে একজন অবলা, মাতাল নারীর ইজ্জত নিয়া, প্রেগন্যান্ট মাইরা সে এখন পালাইছে। সবার আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! এদিকে আমার বাতাস ভারী। তারপর খালি দুঃখ আর দুঃখ। লম্বা লম্বা ম্যাক্সি পরে ঘুরি, আটমাস চলছে বুঝলেন? সবাই ঈদ করে , আনন্দ করে। আমি কোমরে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে দেখি। সেল্ফি তোলাও হয় না।

ঈদের জামাও বানাইতে পারি না। কারন পেট নেমে গেলে তো আর সেগুলা পরা হবে না। ঘটনা না জানা বন্ধু, প্রিয় সুরিদ্দরা ঈদে সেল্ফি না পেয়ে রাগ করে। জানায় ছবি না পাইলে আর লিখতো না।

একেবারে সাচ্চা ঢং বুঝলেন! না লেখার বাহানা। কারণ আজকাল সলিড কিছু নাই। ম্যাসেজ লিখলে মাসেও সিন করে না। আবার ঢং মারে, লিখবে না। না লিখলে নাই। কি এমন পিরিতের আলাপটাই যে করে!!

এদিকে বাড়ির লোকজন আমারে ফালায় থুইয়া একটা বিয়া, একটা জন্মদিন, একটা আকিকা, একটা সাধ মানে সাত মাসি খাইতে গেছে।

কাজের মেয়ে আরিফাকে বললাম- বইন তোর পায়ে পড়ি থাক! তুই  অন্ততঃ থাক।

সেও মুখ ভেংচি মেরে বলে,- আমার বুঝি ঈদ নাই! আপনি চলতে পারেন না তাই যাবেন না। সমস্যা হইলে নিচের গেষ্ট রুমটাতে গিয়ে থাকবেন। আর সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। সমস্যা কি? খাবেন আর ঘুমাবেন। আমরা তো তিনদিনেই ফিরবো!

মধ্যরাতে দেখি মশার কয়েল শেষ হয়ে গেছে। পাশের দোকান পাট ঈদের কারণে এমনিতেই বন্ধ। বারোটা পার হয়ে গেছে অগত্যা শুয়ে পড়লাম। মশার মতো খচ্চর জন্তু দুনিয়াতে বোধহয় আর নাই। কানের কাছে এসে ভনর ভনর শুরু করে দিল।

নিচে গেষ্ট রুমের লাগোয়া ফ্ল্যাটে কথা শোনা যায়। নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। আমার সাথে পরিচয় হয় নাই। তবে শুনেছি হিন্দু ভদ্রলোক। ইউ এন ডিপিতে জব করে। কমবয়সী বউ আছে। এনজিও তে জব করে সাচ্চা মনের মানুষ হবে। তার বউকে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ডাক দিলাম। ভদ্রলোক জানালেন, তার বউ নেই। এবং নিজে খুশি মনেই এগিয়ে এলেন গ্যাস লাইট আর কয়েল নিয়ে। দরজা খোলার সাহস হল না। ভেন্টিলেটর দিয়ে কোনমতে হাত বাড়িয়ে নিলাম।

এবার তিনি জানতে চাইলেন- আপনি কে? আপনাকে তো চিনি না।
-আমি বাড়ি অলার ছোট মেয়ে।
-ও আচ্ছা। আপনাকে তো দেখিনি।
-জ্বী, আমি বাইরে থাকি।
-ভালো লাগলো কথা বলে। আপু যদি নাম্বারটা দিতেন। যে কোন সমস্যায় লাগে!

কথা সত্যি! ফোন নাম্বার জরুরী জিনিস। তাও বাড়ি অলার মেয়ের। তাছাড়া আমি যে কেউ নাম্বার চাইলে দিয়ে দেই। কারন অধিকাংশ সময়ই ফোন রিসিভ না করাটা আমার ফ্যাশানের মধ্যে পড়ে। নাম্বার নিয়ে অনেকদিন ফোন দিয়ে বিরক্ত হয়ে লোকজন আর ফোন দেয় না। যদি কোনদিন দেখা হয়।
অতি বিনয়ের হাসি দিয়ে বলি- ফোন দিবেন। অবশ্যই ফোন দিবেন, ব্যস্ত না থাকলে অবশ্যই ধরব।

তো এই ভদ্রলোকের মধ্যরাতে একজন মহিলার কাছে কয়েলের বিনিময়ে নাম্বার চাওয়াটা আমি অতি সহজেই নিলাম। এটা পুরুষ চরিত্র! তাছাড়া মনে শয়তানীও চেপে বসল। মাষ্টারমশাইকে খুব করে জব্দ করার উপায় খুঁজছিলাম। ডিসেন্ট বউদের দাম নেই। মনে মনে মাষ্টারমশাইকে একটা সাজা দেবার প্লান করলাম।

তাকে বললাম- অবশ্যই কাল দেব। আপনার সাথে পরিচয়ও হবে, নাম্বার ও নেবেন।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে কফি খাবার আয়োজন করছি। তিনি আমার নিচের ঘরের দরজায় হাজির। যথারীতি আমি দরজা খুলে তাকে স্বাগতম জানালাম। বেচারা আমাকে দেখে পুরোপুরি হা! আমার মস্তবড় উঁচু মাতৃত্বে যার পর নাই হতাশ। আমাকে দিয়ে তার হবে না চোখে মুখে এমন একটা অভিব্যক্তি। তিনি রীতিমতো ভিমরী খেয়ে কফি সাবার করে পালালেন।

আমার তাকে বলাই হলো না। ইয়াং ম্যান তোমাকে আমার ভীষন ভালো লেগেছে। নাম্বার নাও, মাঝে মাঝে কথা বলবো। বড্ড একা হয়ে গেছি। কেউ পাত্তা দেয় না, কথা বলে না, কষ্টও বোঝে না। আর আমার জামাইকে সাজা দেবার জন্য তোমাকে আমার ভীষন দরকার!!!

ছবি- নেটের।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ