বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম পরশক্তি টিম ইন্ডিয়ার সাথে গতকাল এক অবিস্মরণীয় ওয়ানডে ম্যাচ খেললো বাংলাদেশের টিম টাইগাররা। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বাইশ গজের এক যুদ্ধে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সাহসী যুবারা ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে ৭৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারিয়ে দিল তাও আবার ২৮ বল হাতে রেখেই। দু’দেশের বাইশ গজের যুদ্ধে সামিল হয়েছিল ১৮ জুন ২০১৫ বৃহস্পতিবারের মীরপুর শের এ বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আইসিসি ওয়াল্ড কাপের পর চার মাস ধরে পুড়ে চলা এক অপমানের বৃত্ত এ দিন মীরপুর মাঠে শেষ করে ফেললেন এগারো বাঙালি। আইসিসি বিশ্বকাপ কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে আমপায়ারদের পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং এর কাছে পরাজিত হয়ে বাঙালি কোটি কোটি বাঙালি যে হতাশায় ভোগছিল বাংলাদেশের ইয়াং টাইগাররা গতকাল মিরপুরে ভারতকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে যেন সে অপমান ও হতাশার গ্লানি ধূয়ে-মুছে মধুর প্রতিশোধ নিল। ভারতের বিপক্ষে এ বিশাল জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল ফ্লুক ছিল না। টাইরার দেশপ্রেমে উদ্বেলিত হয়ে দেখিয়ে দিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ জয় কোন অঘটন ছিলনা, এটা ছিল বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশে গর্বিত আনন্দবার্তা। গতকাল টাইগাররা ভারত বধ করে বুঝিয়ে দিল এশীয় ক্রিকেটে তো বটেই, গোটা ওয়ান ডে পৃথিবীতেই তারা এখন দুর্নিবার শক্তি। যারা যারা এখন ক্রিকেটের সব পরাশক্তিকেই হারা সক্ষম।

গতকাল এক উজ্জল অপরাহ্নে টসে জিতে ভারতকে ৩০৮ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। যা ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বিশাল রানের টার্গেট তাড়া করতে যেয়ে ২২৮ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। এ জয়ের ফলে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে থাকলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এদিন ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া পেসার মুস্তাফিজুর রহমান নেন ৫ টি উইকেট। টসে জেতার পর বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভাল ফাইটিং স্কোর দাঁড় করাতে পারবে কিনা সেটি নিয়ে বেশ সংশয় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসান ও সাব্বির আহমেদের দৃঢ়তায় ভারতকে একটি ফাইটিং স্কোর দিয়েছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ভালই খেলছিলবাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে একের পর এক উ্ইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে একের পর এক সাজঘরে ফেরত যান তামিম ইকবাল ,লিটন দাশ ও মুশফিকুর রহিম। মাত্র তেইশ রানে এই তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ দল। ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন দুই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। দুজনে মিলে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ দলের জন্য রেকর্ড রানের পার্টনারশীপ করেছিলেন। ওভারপ্রতি তারা সাড়ে সাত রান বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি সবকিছু ওলট-পালট করে দিল। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ১৫.৪ বলে এক উইকেটে ১১৯ রান করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ভারতীয় বোলাররা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের উপর আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। তামিম , লিটন এবং মুশফিককে হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগেনি বাংলাদেশ দলের। সাকিব ৫২ রান এবং সাব্বির ৪১ রান করেন। সাকিব এবং সাবিবর জুটি ৮৩ রানের জুটি করেন। ২৭ বলে ৩৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন নাসির হোসেন। এ প্রতিশোধের ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে কাঁপিয়ে দিলেন উনিশ বছরের তরুণ বাঁ হাতি পেসার মুস্তাফিজ। যাঁকে এক বছর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট চিনত না। অথচ ওই মুস্তাফিজই একে একে বিশ্বসেরা বেটিং জিনিয়াস রায়না, রোহিত শর্মাকে।
বাংলাদেশে ক্রিকেটের অকৃত্তিম বন্ধু সুনীল গাভাস্কার ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে যখন ৭৯ রানে জিতায় প্রশংসা করতে ভুললেন না। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে যদি ওদের খেলা আপনি দেখে থাকেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওরা কিন্তু দারুণ খেলছে। তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলছে। তারা যত বেশি খেলবে, ততই উন্নতি করবে। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স তো অবিশ্বাস্য ছিল। প্রথম ওয়ানতে তাদের জয় আমার কাছে অপ্রত্যাশিত কিছু মনে হয়নি।’... কিন্তু সুনীল গাভাস্কার বলছেন, বাংলাদেশের এই জয়ে তিনি অন্তত অবাক নন। এটি তাদের ধারাবাহিকতারই প্রতিচ্ছবি। ‘বাংলাদেশের কাছে ভারতের লজ্জাজনক হার’ শিরোনামে ভারতের শীর্ষ সংবাদ চ্যানেল এনডিটিভি একটি বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তি গাভাস্কার। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এমন নয় বাংলাদেশ হুট করে ভাল খেলতে শুরু করেছে। টেস্টে এখনও ধারাবাহিক হতে না পারলেও ওয়ানডেতে পোশাকের মতোই ঝলমলে তাদের পারফর্মেন্স।
শেষ করবো এই বলেই বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বে এতদিন বাংলাদেশকে যারা অবহেলা করেছে, বাংলাদেশের নাম শুনলে নাক ছিটকাতেন তাদের মুখেই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জয়গান। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বর্তমান নৈপুণ্যে আত্মসিন্তোষ্টিতে না ভোগে আগামী বিশ্বকাপ নিয়ে এখনই হোমওয়ার্কে বসে যেতে হবে। বাংলাদেশের এখন সবই আছে শুধু দরকার নিবিড় পরিচচ্চার।

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ