বাঙালীর জাতীয় জীবনে আরো একটি অর্জন! আমেরিকায় 'অমর একুশে'র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি!!!
হ্যাঁ, প্রশ্ন আসতে পারে এতে এতো আনন্দ বা উচ্ছাসের কী আছে? যেখানে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে জাতিসংঘ ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে!
তখন বলতেই হয়, উচ্ছাস এবং আনন্দ তো বটেই! বাংলাদেশের জন্মতেই যে দেশটির ছিলো প্রকাশ্য বিরোধিতা! স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্র যেখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকসেনাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকারদের বিচারে জোড়পূর্বক হস্তক্ষেপ করেছিলো! সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে 'অমর একুশে'র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, এ তো আমাদের অর্জনই বটে। ন্যায়সঙ্গত অর্জন।
৫২’র ভাষা আন্দোলনেই বাঙালীর স্বাধীনতা অর্জনের স্ফুলিঙ্গ লুকিয়েছিলো। কাজেই ২১শে ফেব্রুয়ারী আমাদের শক্তি। একুশ আমাদের অহঙ্কার, চির প্রেরণার প্রতীক। আর একুশে'র স্বীকৃতি আমাদের অর্জন।
জাতিসংঘ ও ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি লাভের পর বাঙালির 'অমর একুশে' এবারই প্রথম আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কের স্টেট গভর্নর এন্ড্রু এম কুমো আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি সনদটি হস্তান্তর করা হবে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সকল বাঙালিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
’আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ একটি স্মারক স্ট্যাম্প সিলমোহর চালু করছে। এ উপলক্ষ্যে ডাক বিভাগ ‘Celebrating 25 Years of Ekushey February’ International Mother Language Day’একুশে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ শীর্ষক একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করবে।
২০১৪ সালে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশ্বজিত সাহা আমেরিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভের জন্য নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর হোজে পেরাল্টার কাছে প্রস্তাবনাটি পেশ করেন। বিশ্বজিত সাহার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ডাকবিভাগ এই বিশেষ সিলমোহর (Pictorial Cancellation) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ থেকে মাসব্যাপী নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস পোস্ট অফিস সিলমোহরটি ব্যবহার করবে।
১৯৯২ থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে অভিবাসী বাঙালিরা অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে প্রতি বছর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে থাকে। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে এবার থেকে তা স্থায়ী রূপ লাভ করতে চলেছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সামনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হবে। ভাস্কর্যটি ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী সেখানে উন্মুক্ত রাখার পর আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে ভাস্কর্যটি নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আরো একটি খবর হলো, 'অমর একুশে' উপলক্ষে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে দুই সপ্তাহব্যাপী একুশের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে। অমর একুশের গ্রন্থমেলায় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত নতুন বইগুলো সেখানে প্রদর্শিত হবে।
ধর্মান্ধ মৌলবাদী মানবতাবিরোধী অপশক্তি যখন দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডল অস্থির-অশান্ত করে তোলার চক্রান্তে লিপ্ত, তখন চির প্রেরণার প্রতীক অমর একুশে নতুন তাৎপর্য নিয়ে জাতির সামনে হাজির হচ্ছে। একুশ আমাদের এখন আর কেবল শোক নয়, একুশ আমাদের অহংকার।
বাঙালীর জয় অনিবার্য।
জয় বাংলা বাংলার জয়
হবে, হবে, হবে নিশ্চয়।
কোটিপ্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।
১৮টি মন্তব্য
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
জেনে ভালো লাগলো ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ভালো লাগার মতোই খবর। বাঙালীর জয় অনিবার্য।
লীলাবতী
আমাদের এটি ন্যায়সঙ্গত অর্জন। ১৯৭১ এ আমাদের শত্রুর এমন স্বীকৃতি আনন্দের বিষয় বটে। বাংলা আমাদের অহংকার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়।
বাংলা আমাদের অহংকার। (y)
ছাইরাছ হেলাল
এ স্বীকৃতি আমাদের কে মর্যাদার আসনে বসাবে।
যারা এই মহান উদ্যোগের সাথে জড়িত তাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
যদিও আমরা এসব ভুলতে বেশি সময় নেব না।
আমাদের জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ভুলতে সময় না নিলেও আমাদের ন্যায়সঙ্গত অর্জন ইতিহাসে আলো ছড়াবে। আর আলোই একদিন অন্ধকারকে দূর করবে।
স্বীকৃতি আদায়ে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মতো কিছু দেশপ্রেমিক থাকলেই দেশমাতা গৌরবান্বিত হবে।
ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
জেনে ভাল লাগলো………
মোদের গর্ব মোদের ভাষা
আমরি বাংলা ভাষা।
শুভ কামনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…..
মোঃ মজিবর রহমান
খুব ভাল লাগ্ল।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
\|/ \|/ \|/
রুহুল
আমার একটু লোভ লাগছে। আপনি কি আপু আমেরিকা প্রবাসী? আমি কি আপনার মাধ্যমে একটা ষ্ট্যাম্প পেতে পারি? সংগ্রহে রাখার ইচ্ছে
মারজানা ফেরদৌস রুবা
না রে ভাইয়া।
আমি খবরটা দিয়েছি এবার আপনি সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন।
অনিকেত নন্দিনী
খুবই সত্যি কথা। একুশ আমাদের এখন আর কেবল শোক নয়, একুশ আমাদের অহংকার। আমাদের ভাষার অহংকার, দেশের অহংকার, সংস্কৃতির অহংকার। 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y) (y) (y)
অপার্থিব
জেনে ভাল লাগলো। আমেরিকার সরকার ও প্রশাসন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল কিন্ত সেখানকার সাধারন জনগণ ও সিভিল সোসাইটির একটা বড় অংশের বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সমর্থন ছিল।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, সেখানকার সাধারন জনগণ ও সিভিল সোসাইটির একটা বড় অংশের আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থন ছিল। আর বর্তমানের আমাদের এই অর্জন তাদের তখনকার সরকারের বিরোধিতার নৈতিক পরাজয়।
আর ঠিক এখানেই বলতে হয়, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী (y)
তানজির খান
অনেক বড় একটি অর্জন আমাদের। ছড়িয়ে পরুক সর্বত্র আমাদের বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর আত্নজীবনি পড়ার জন্য ব্লগে এসেছিলাম। আশারাখি খুব দ্রুত পরবর্তী পোস্ট পাবো।
শুভকামনা রইল প্রিয় ব্লগার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
দিচ্ছিরে ভাইয়া। 🙂
যাক, ভালো লাগছে আপনাদের অপেক্ষা আর আগ্রহ দেখে। (y)
হ্যাঁ, ছড়িয়ে পরুক সর্বত্র আমাদের বাংলাদেশ।