আমেরিকা কর্তৃক র‍্যাবের দিকে আঙুল তোলা, তার পরপর অভিজিৎ হত্যার পলাতক আসামীকে ধরিয়ে দিতে পুরষ্কার ঘোষণা আর ওদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার নিজস্ব মুদ্রা চালু কি একই সূত্রে গাঁথা নয়?

একটা স্বাধীন ভূখণ্ডে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে কী করে রোহিঙ্গারা নিজস্ব মুদ্রা চালু করার সাহস পায়? রোহিঙ্গা ক্যাম্প কী তবে সরকারি নজরদারিতে নেই?

বাংলাদেশের বুকে কী তবে আরেক ইজরায়েল গজিয়ে ওঠার প্রস্তুতি চলছে? ইজরায়েল গজিয়ে ওঠায় ফিলিস্তিনরা আজ বাস্তুহারা। বাঙালিও কী রোহিঙ্গাদের জন্য স্থান ছেড়ে দিয়ে নিজেরা বাস্তুভিটার লড়াইয়ে ফিলিস্তিনদের মতো বছরের পর বছর লড়াই করতে করতেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুদ্ধ করেই মরবে? গত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনরা কেবল লড়াই করেই মরছে, কিন্তু মাটি আর ফিরে পাচ্ছে না। আমেরিকা যেদিকে নজর দেয়, সেদিকই কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়। ফিলিস্তিন হয়েছে, ইরাক হয়েছে, লিবিয়া হয়েছে, আফগানিস্তান হয়েছে, ইয়েমেনে চলছে, পাকিস্তানও লেজেগোবরে অবস্থা। আর বাংলাদেশ?

শকুনের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। এ দৃষ্টি বহুকাল আগে থেকেই কার্যকরের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছিলো, হয়তো একই গতিতেই এগিয়ে যেতো লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনায়। কিন্তু বাধ সেধেছে শেখ হাসিনা সরকার। আর বাধ সেধেছে চীনের উত্থান। চীন সামনে না থাকলে হয়তো এতোটা দ্রুতগতি হতো না। চীনকে ঠেকাতেই আমেরিকা নিয়ন্ত্রণারোপে মরিয়া। আর বরাবরের মতোই তারা বেছে নেয় টার্গেট করা ভূখণ্ডের ভেতরের মীরজাফরদের। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানের দিকে তাকালে একই চিত্র দেখা যাবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙতে লাদেন সৃষ্টি আমেরিকার। সোভিয়েত ভাঙার পর সেই লাদেনকে ধরতেই আফগানিস্তান আক্রমণ। এগুলো সবই একের পর এক ছক আকারে ঘটে গেছে। বাংলাদেশেও এ টাইপের ছক অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) নেতা, সে জন্মগতভাবে পাকিস্তানি, বেড়ে উঠেছে সৌদিতে। বর্তমানে সে নেতৃত্ব দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। মায়ানমার সরকার এ কারণেই তাদের খেদিয়েছে। আর আমরা বাঙালিরা কিছু মার্কিনী পেইড এজেন্ট আর কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে রোহিঙ্গা দরদে উথলে ওঠে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলাম বর্ডার খুলে দিতে। শেখ হাসিনা সরকারও জনচাপে তাই করলেন। দেশ পরিচালনায় একজন সরকার প্রধানকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সর্বদিক বিবেচনায় নিয়েই কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার এখানেও ভোটের রাজনীতিকেই গুরুত্ব দিতে গেলেন। কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে জনচাপ আমলে নেয়া কতোটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল? জনচাপ থেকেও আন্তদেশীয় স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ নয় কী? অবশ্য ওদিকে চীনও দাঁড়িয়ে, কোনটা আমলে নিয়েছিলেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমরা আমজনতার একটা বড় অংশ বরাবরই এর বিরোধী ছিলাম, এখনো আছি।  যাহোক, এবার আরসার নিজস্ব মুদ্রা চালু বিষয়ে তিনি কী করবেন সেটাই দেখার বিষয়। এটুকু বুঝি, বর্তমান বাংলাদেশ জিও পলিটিক্সের শিকার। খুবই নাজুক একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ দেশ। এ পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক চালে ভুল করলে বিরাট খেসারত দিতে হবে। একদিকে আমেরিকা আরেকদিকে চীন দাঁড়িয়ে, মাঝখানে আমাদের স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব।

প্রয়োজন দেখা দিলে বাঙালি কী মাটি রক্ষায় একাত্তরের মতো জেগে উঠবে? নাকি পলাসীর যুদ্ধের মীরজাফরদের মতো বর্তমান মীরজাফরদের হারামিপণায় চুপ থেকে দেশকে বেনিয়াদের কব্জাভূত করার সুযোগ করে দেবে?

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ