জীবনের জন্যেই জীবন

কেসি মিলান ২ আগস্ট ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৭:৩৪:৩৭অপরাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য

সীমার সাথে যে আমার আবার দেখা হবে তা আমি কোন দিন কল্পনাও করতে পারিনি৤

আমি যে সীমার কথা বলছি সে, আমি আমরা ২০/২৫ বছর আগে এক সাথে পড়াশুনা করতাম৤

এতদিন পর আমি পুরোপুরই ওকে ভুলে গিয়েছিলাম৤ওকে ঘিরে কোন স্মৃতির কথা মনে করাও ছিল দুঃসাধ্যের মত কোন বিষয়৤

তবে যা আমার মনে ছিল, যা হয়তো আমি সহজেই মনে করতে পারি তা হচ্ছে ওর কমনীয় মুখ মন্ডল, মিষ্টি মিষ্টি কথা যা ও হাসি-আনন্দে বা সুখে-দুঃখে সব সময় বলত৤ আর ওর বন্ধু সূলভ আচরণ ও বিনম্র ব্যবহার৤

কেন জানি আজও আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় সীমা এই সমস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো উপরিস্থিত স্বর্গ ভান্ডার থেকেই লাভ করেছিল৤

সব ছাত্র-ছাত্রীরা ওকে খুব পছন্দ করত৤ শিক্ষকরাও খুবই ভালবাসতেন ওকে৤

ওর জন্মটাও ছিল আশির্বাদ স্বরুপ৤ কেন না ওর মা-বাবা উভয়ই শিক্ষিত ছিলেন৤ এমন এক সময়ে শিক্ষিত ছিলেন যখন সমগ্র জনগোষ্ঠির ৯৫ শতাংশই ছিল অশিক্ষিত৤

তারা অতি ধনীও ছিলেন না আবার অতি গরীবও ছিলেন না৤ভদ্রোচিতভাবে জীবন যাপনের জন্য যা থাকা দরকার তার প্রায় সবই ছিল-নিজের বাড়ি ছিল, চাষ যোগ্য কিছু জমি ছিল আর ছিল প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা৤

এমন কোন প্রমাণ নেই যে সীমার বাবা কখনও কিছু টাকা চেয়ে কারও কাছে হাত পেতেছিলেন৤কিন্তু অন্যদের সাহায্য করার মত তার যে একটা উপকারী মন ছিল তা প্রমাণ করতে পারে এমন অনেক লোক এখনও জীবিত আছেন৤

উপকারের বিনিময়ে তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন নি ঠিকই তবে সবার কাছে তিনি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন৤এক সময় এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে আশেপাশের সাধারণ জনগণ তাকে রাজনৈতিক কোন নেতার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেনা করতে শুরু করেছিল৤ এ কারণেই তাকে এবং তার পুরো পরিবারকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের এক প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী নেতার রোষানলে পড়তে হয়েছিল৤ এই নেতা তাকে তার পথের কাঁটা হিসেবে ধরেও নিয়েছিল আর তাকে যেকোন উপায়ে নিশ্চিহৃ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল৤ এ উদ্দেশ্যে সেই নেতা সবকিছু করেছিল কিন্তু নিশ্চিহৃ হওয়ার আগেই সীমার বাবা তা বুঝতে পেরেছিলেন এবং যত দ্রুত সম্ভব পরিবার সহ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৤এ জন্য খুব বেশি সময়ও নেননি তিনি৤ হঠাৎ করেই একদিন পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন৤ কেউ জানত না কোথায়৤ হয়তো বা কোন শহরে৤ এমন ধারণাই করেছিল সবাই৤

গ্রাম ছাড়ার পর থেকে সীমাকে আর কোন দিনও এলাকার কোথাও দেখিনি৤

অবশ্য আমিও জীবনের শুরুতেই গ্রাম ছেড়েছি৤তারপর থেকেই বিভিন্ন শহরে, নগরে, বন্দরে আছি৤ কিন্তু সীমাকে আর দেখিনি কোথাও৤

একদিন আমার এক বন্ধুকে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় মারাত্বকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল৤ ওর স্ত্রীর কাছ থেকে খবরটি প্রথম শুনে কি করব আর কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না৤শেষে হাসপাতালে ছুটে গেলাম৤

পৌঁছার আগেই বন্ধুকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে৤সেই মূহুর্তের অবস্থা কি তা জানার জন্য ওর স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলাম৤ ২ বা ৩ মিনিটের মধ্যেই দেখলাম  একজন সেবিকা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে৤কাছাকাছি আসেতেই প্রশ্ন করল, “হাই, তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ না?”

”না তো! একদমই না৤ দুঃখিত৤আমি উত্তর দিলাম ৤“

”আমি সীমা, সেই সীমা যার সংগে তুমি পড়াশুনা করতে৤ এখন আমি এই হাসপাতালের একজন সেবিকা৤” সীমা বল্ল৤

আমি চিনলাম এবং কথা বলা শুরু করলাম৤

কিছুক্ষণ পর সীমা ওর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিয়ে আমাকে অপেক্ষা করতে বা ওকে অনুসরণ করতে বল্ল৤কারণ ও তখন এক নবজাতক শিশুর মাকে দেখতে যেতে চাচ্ছিল৤ সেই মা প্রথম বারের মত এক ছেলে সন্তানকে জন্ম দিয়ে তখন ভীষন অসুস্থ্য৤

সীমা অতি উৎসাহের সাথে জানাল নবজাতক শিশুটির মা ওই একই গ্রাম থেকে এসেছে যে গামে একদিন অন্যান্যদের মতই সীমা ও আমিও জন্ম নিয়েছিলাম এবং কৈশর পর্যন্ত থেকেছিলাম৤

জানতে অস্থির হয়ে অতি আগ্রহে প্রশ্ন করলাম “কে সে”?

”বলছি, এস আমার সাথে৤”

আমি ওর সংগে সংগে যেতে লাগলাম৤

একেবারে দক্ষিণের বিশেষ একটি কেবিনে ছিল রুগিটি৤ হেঁটে গেলে মাত্র তিন মিনিটের দূরুত্ব৤

বেহুশ হয়ে পড়ে আছে রুগিটি ৤ আশে পাশে বিভিন্ন নামের আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অসংখ্য ওষুধ৤আমি সহজেই বুঝতে পারলাম ভীষন অসুস্থ্য সে৤কিন্তু চিনতে পারলাম না৤

”কে সে”? আবারও প্রশ্ন করলাম আমি”৤

সীমা বলতে শুরু করল কিন্তু শেষ করতে পারল না৤ তার আগেই আমি বুঝতে পারলাম মহিলাটি সেই নেতার ছেলের বউ যে সীমা এবং তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া হতে বাধ্য করেছিল৤

”সীমা, তুমি জান …”?

সীমা সাথে সাথেই বলে উঠল, “হ্যাঁ, জানি৤ স্মৃতিতে সবই আছে৤ রাগ, ক্রোধ, ক্ষেভ এখনও জ্বালায়৤ প্রতিশোধের আগুন রাত, দিন সব সময় তাড়িত করে৤ সময় এখন আমার হতে৤ ইচ্ছে করলেই আমি প্রতিশোধ নিতে পারি৤ মা সন্তান উভয়কেই শেষ করে দিতে পারি৤ কিন্তু আমি একজন মেয়ে আর একজন সেবিকা৤ বিশ্বের সকল মেয়েদের মত, সকর সেবিকাদের মত আমিও বিশ্বাস করি জীবনের জন্যই জীবন কিন্তু মৃত্যুর জন্য নয়৤

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ