সীমার সাথে যে আমার আবার দেখা হবে তা আমি কোন দিন কল্পনাও করতে পারিনি
আমি যে সীমার কথা বলছি সে, আমি আমরা ২০/২৫ বছর আগে এক সাথে পড়াশুনা করতাম
এতদিন পর আমি পুরোপুরই ওকে ভুলে গিয়েছিলামওকে ঘিরে কোন স্মৃতির কথা মনে করাও ছিল দুঃসাধ্যের মত কোন বিষয়
তবে যা আমার মনে ছিল, যা হয়তো আমি সহজেই মনে করতে পারি তা হচ্ছে ওর কমনীয় মুখ মন্ডল, মিষ্টি মিষ্টি কথা যা ও হাসি-আনন্দে বা সুখে-দুঃখে সব সময় বলত আর ওর বন্ধু সূলভ আচরণ ও বিনম্র ব্যবহার
কেন জানি আজও আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় সীমা এই সমস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো উপরিস্থিত স্বর্গ ভান্ডার থেকেই লাভ করেছিল
সব ছাত্র-ছাত্রীরা ওকে খুব পছন্দ করত শিক্ষকরাও খুবই ভালবাসতেন ওকে
ওর জন্মটাও ছিল আশির্বাদ স্বরুপ কেন না ওর মা-বাবা উভয়ই শিক্ষিত ছিলেন এমন এক সময়ে শিক্ষিত ছিলেন যখন সমগ্র জনগোষ্ঠির ৯৫ শতাংশই ছিল অশিক্ষিত
তারা অতি ধনীও ছিলেন না আবার অতি গরীবও ছিলেন নাভদ্রোচিতভাবে জীবন যাপনের জন্য যা থাকা দরকার তার প্রায় সবই ছিল-নিজের বাড়ি ছিল, চাষ যোগ্য কিছু জমি ছিল আর ছিল প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা
এমন কোন প্রমাণ নেই যে সীমার বাবা কখনও কিছু টাকা চেয়ে কারও কাছে হাত পেতেছিলেনকিন্তু অন্যদের সাহায্য করার মত তার যে একটা উপকারী মন ছিল তা প্রমাণ করতে পারে এমন অনেক লোক এখনও জীবিত আছেন
উপকারের বিনিময়ে তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন নি ঠিকই তবে সবার কাছে তিনি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেনএক সময় এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে আশেপাশের সাধারণ জনগণ তাকে রাজনৈতিক কোন নেতার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেনা করতে শুরু করেছিল এ কারণেই তাকে এবং তার পুরো পরিবারকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের এক প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী নেতার রোষানলে পড়তে হয়েছিল এই নেতা তাকে তার পথের কাঁটা হিসেবে ধরেও নিয়েছিল আর তাকে যেকোন উপায়ে নিশ্চিহৃ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল এ উদ্দেশ্যে সেই নেতা সবকিছু করেছিল কিন্তু নিশ্চিহৃ হওয়ার আগেই সীমার বাবা তা বুঝতে পেরেছিলেন এবং যত দ্রুত সম্ভব পরিবার সহ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেনএ জন্য খুব বেশি সময়ও নেননি তিনি হঠাৎ করেই একদিন পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন কেউ জানত না কোথায় হয়তো বা কোন শহরে এমন ধারণাই করেছিল সবাই
গ্রাম ছাড়ার পর থেকে সীমাকে আর কোন দিনও এলাকার কোথাও দেখিনি
অবশ্য আমিও জীবনের শুরুতেই গ্রাম ছেড়েছিতারপর থেকেই বিভিন্ন শহরে, নগরে, বন্দরে আছি কিন্তু সীমাকে আর দেখিনি কোথাও
একদিন আমার এক বন্ধুকে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় মারাত্বকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল ওর স্ত্রীর কাছ থেকে খবরটি প্রথম শুনে কি করব আর কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম নাশেষে হাসপাতালে ছুটে গেলাম
পৌঁছার আগেই বন্ধুকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছেসেই মূহুর্তের অবস্থা কি তা জানার জন্য ওর স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলাম ২ বা ৩ মিনিটের মধ্যেই দেখলাম একজন সেবিকা আমার দিকেই এগিয়ে আসছেকাছাকাছি আসেতেই প্রশ্ন করল, “হাই, তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ না?”
”না তো! একদমই না দুঃখিতআমি উত্তর দিলাম “
”আমি সীমা, সেই সীমা যার সংগে তুমি পড়াশুনা করতে এখন আমি এই হাসপাতালের একজন সেবিকা” সীমা বল্ল
আমি চিনলাম এবং কথা বলা শুরু করলাম
কিছুক্ষণ পর সীমা ওর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিয়ে আমাকে অপেক্ষা করতে বা ওকে অনুসরণ করতে বল্লকারণ ও তখন এক নবজাতক শিশুর মাকে দেখতে যেতে চাচ্ছিল সেই মা প্রথম বারের মত এক ছেলে সন্তানকে জন্ম দিয়ে তখন ভীষন অসুস্থ্য
সীমা অতি উৎসাহের সাথে জানাল নবজাতক শিশুটির মা ওই একই গ্রাম থেকে এসেছে যে গামে একদিন অন্যান্যদের মতই সীমা ও আমিও জন্ম নিয়েছিলাম এবং কৈশর পর্যন্ত থেকেছিলাম
জানতে অস্থির হয়ে অতি আগ্রহে প্রশ্ন করলাম “কে সে”?
”বলছি, এস আমার সাথে”
আমি ওর সংগে সংগে যেতে লাগলাম
একেবারে দক্ষিণের বিশেষ একটি কেবিনে ছিল রুগিটি হেঁটে গেলে মাত্র তিন মিনিটের দূরুত্ব
বেহুশ হয়ে পড়ে আছে রুগিটি আশে পাশে বিভিন্ন নামের আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অসংখ্য ওষুধআমি সহজেই বুঝতে পারলাম ভীষন অসুস্থ্য সেকিন্তু চিনতে পারলাম না
”কে সে”? আবারও প্রশ্ন করলাম আমি”
সীমা বলতে শুরু করল কিন্তু শেষ করতে পারল না তার আগেই আমি বুঝতে পারলাম মহিলাটি সেই নেতার ছেলের বউ যে সীমা এবং তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া হতে বাধ্য করেছিল
”সীমা, তুমি জান …”?
সীমা সাথে সাথেই বলে উঠল, “হ্যাঁ, জানি স্মৃতিতে সবই আছে রাগ, ক্রোধ, ক্ষেভ এখনও জ্বালায় প্রতিশোধের আগুন রাত, দিন সব সময় তাড়িত করে সময় এখন আমার হতে ইচ্ছে করলেই আমি প্রতিশোধ নিতে পারি মা সন্তান উভয়কেই শেষ করে দিতে পারি কিন্তু আমি একজন মেয়ে আর একজন সেবিকা বিশ্বের সকল মেয়েদের মত, সকর সেবিকাদের মত আমিও বিশ্বাস করি জীবনের জন্যই জীবন কিন্তু মৃত্যুর জন্য নয়
৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
জীবনে মানুষকে অনেক কিছুই দেখতে হয়, অনেক বাধা বিপত্তি আসে কিন্তু যারা এইসব বাধা পেরিয়ে সত্যিকারের মানুষ হিসাবে সমাজে স্থান করে নিতে পারে তারাই এই ইহজগতে জয়ী হতে পারে।
গাজী বুরহান
মেয়েটি শিক্ষিত ছিল বলে জেনেছে, প্রতিশোধ হল বর্বর প্রতিকারপদ্ধতি।
নীলাঞ্জনা নীলা
সোনেলার ভূবনে স্বাগত জানাচ্ছি।
প্রথম পোষ্টটি “একান্ত অনুভূতি” বিভাগের অন্তর্ভূক্ত হবার কথা ছিলো।
যাক সীমাকে জেনে ভালো লাগলো। উনার প্রতি শ্রদ্ধা। সেবিকার মন এমনই হওয়া উচিৎ। তিনি যে অনেক উঁচু মনের মানুষ তাঁর এমন কথাতেই বোঝা যায়।
এখানে এসেছেন, সবার লেখা পড়ুন, নিজেও লিখুন এবং আপনার গুরুত্ত্বপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে সকলকে অনুপ্রাণিত করুন। ধন্যবাদ।
মেহেরী তাজ
প্রথম লেখা! কিছু বানান ভুল আর গল্পের মাঝে কিছু অপ্রয়োজনীয় ফাঁকা। তাছাড়া ঠিক আছে! প্রথম লেখা হিসেবে ঠিক আছে। নিয়মিত লিখতে থাকুন অন্যের লেখা পড়তে থাকুন আশা করছি ছোট ছোট ভুল গুলো ঠিক হয়ে যাবে।
সোনেলা পরিবারে আপনাকে স্বাগতম ভাইয়া…..। -{@
মৌনতা রিতু
সোনেলা পরিবারে স্বাগতম। পরিবারকে আপন করুন। পরিবার আপনাকে আপন করেই নিয়েছে।
প্রতিশোধ ইচ্ছে করলেই নেওয়া যায়। এই যে প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছে পোষন করাটাও জীবনের ব্যর্থতা। সেই বুঝে ওঠা থেকে শুনে আসছি, “তুমি যা করছ তক মুখে এনো না। উপকর যা করছ তা নিরবেই থাক”। আরো শুনেছি, “প্রতিটা মানুষের মাঝেই বাস করে একটা জানোয়ার তাকে ধীরে ধীরে মানবিক গুনাবলি দিয়ে বস করে নাও, তবেই জীবন সার্থক।”
আবু খায়ের আনিছ
স্বাগতম সোনেলায়। -{@