গত দুই-তিনদিন ধরে একটি আলোচিত বিষয় আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। আমি শুধু ভাবছি আর ভাবছি, কিন্তু কোন কূল-কিনারা পাচ্ছি না। উহু, ক্রিকেটার নাসিরের বউ/বিয়েকে হাইকোর্ট বৈধ বা অবৈধ করে কেন দিলো, অথবা বাংলার এন্টার্কটিক বিজ্ঞানী নোবেলম্যান (?) কাজী ইব্রাহীম এখন কোথায় কেমন আছেন সেসব নিয়েও ভাবছি না। আমার মস্তিষ্কের ভাবনায় কেবলই লাখ-লাখ টাকার চুল ঘুরছে!

প্রাপ্ত সংবাদ- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন কর্তৃক ১৪ জন ছাত্রের চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। এবং রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদের চুল কাটা কেনো অবৈধ হবে না এবং চুল কাটার ঘটনায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য উচ্চআদালত।

আরও দেখলাম, প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে প্রশাসনিক তিনটি পদ থেকে অব্যাহতি সহ সাময়িক বরখাস্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক তুষ্টি ঘটেনি। তারা ম্যাডামের স্থায়ী অপসারণের দাবিতে অনশন করছে।

জানতে ইচ্ছে হয় ,
শিক্ষক শিক্ষিকাদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের নাজেহাল হওয়ার সংবাদ আমাদের দেশে নতুন নয়। বরং বেশিরভাগ অভিযোগের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রতি আইনের দয়াপূর্ণ প্রয়োগ দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। তাহলে, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারীরা এমন কঠোর হয়ে গেলেন কেন? তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো করা হয়েছে সেসব আসলেই কতটুকু যৌক্তিক? এমন অনেক অনেক স্কুল/কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য পোশাক, এবং সাজসজ্জা শিক্ষকদের দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়। সেখানে শিক্ষকদের বলা/ধরেবেধে দেওয়া নিয়ম-ই চুড়ান্ত। কারো কোন কিছু বলার বা বিরুদ্ধচারণের সুযোগ নেই। ফারহানা ম্যাডামের বেলায় হঠাৎ কি হলো? তিনি একজন নারী এটা একটি কারন নয়তো?

এবার কিছু ঘটনায় আলোকপাত করি। কিছুদিন আগে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রকে চাঁদার দাবিতে তার ডান হাতের দুইটা আঙ্গুল কেটে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত যতটা জেনেছি ঐ ঘটনায় কোনো রিট করা হয়নি। কেউ করেনি। তারমানে তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

আরেকটু বলি, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের রাস্তার ড্রেনে পড়ে দুইব্যাক্তির নিখোঁজ হওয়া সহ কলেজছাত্রী সাদিয়ার মৃত্যুতেও কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো রিট করেনি। এমনকি তার/তাদের পরিবারকে বিশেষ কোন স্থান থেকে কোনরকম সান্ত্বনা বা সুবিচারের আশ্বাস দেয়া হয়েছে, এমন কোন খবরও পাওয়া যায়নি। হয়তো কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এমন কোন খবর কখনোই আসবেনা।

একজন শিক্ষার্থীর মাথার চুলের (যেটা না থাকলে/কমে গেলে কারো জীবন সম্পুর্ন স্টপ হয়ে যাওয়ার নয়)  ক্ষতিপূরণ যদি ২০ লাখ হয়, এবং এই ঘটনা আদালতের দৃষ্টিতে ধর্তব্য ঘটনায় পরিনত হয়ে যায়, তাহলে একটা ছেলের জীবন অচল করে দিতে তার কাটা দুই আঙ্গুলের দাম অথবা একটা মেয়ের জীবনের দাম নিয়ে ভাবার সময় কি হাইকোর্টের নেই!

এখানে আমি/আমরা কি বলতে পারি না মাননীয় উচ্চ আদালত বিমাতৃসুলভ আচরণের পথে চলছে?

আরও অনেককিছু বলার আছে/থাকেও। কিন্তু বলা যায়না। আমাদের বাক স্বাধীনতা মুলত কাগজ আর কলমের ডগায় ঝুলে আছে, বাস্তবে প্রকাশ করার জন্য যেমন একটা শিরদাঁড়া প্রয়োজন সেটা কি আমার/আমাদের আদৌ আছে!!

যে দেশের ইতিহাসে ভাষা মুক্তি আন্দোলনে,  স্বাধীনতা লাভে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-আন্দোলন/ ছাত্র-সমাজের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সে-ই দেশের ছাত্ররা এখন অনশন/আন্দোলন করে কয়টা চুলের জন্যে! এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের (অভিভাবকদের) লজ্জিত এবং চিন্তিত হওয়ার সময় এসেছে।

 

ফিচার ছবি-গুগল।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

  • মোঃ মজিবর রহমান

    ফারহানা ম্যাডামের বেলায় হঠাৎ কি হলো? তিনি একজন নারী এটা একটি কারন নয়তো? … আপনার ভাবনার কারণ কি শাধুই নারী বলে!! বিচারের বাহিরে থাকবে! বিচার হতে দিন।
    এবার কিছু ঘটনায় আলোকপাত করি। কিছুদিন আগে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রকে চাঁদার দাবিতে তার ডান হাতের দুইটা আঙ্গুল কেটে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত যতটা জেনেছি ঐ ঘটনায় কোনো রিট করা হয়নি। কেউ করেনি। তারমানে তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এখানে বলি সিংগেল বলে এই শিক্ষার্তির ক্ষমতার বাহিরে হতে পারে কিন্তু জোট হলে কিছু হই। এখানে অসহায়ত্ব জীবন থুপড়ে যাবে এটা আমি মনে করি।

    এবার বলি চাটগাঁওয়ের কাহিনী। দেশের বর্ত্মানের হালচালে বলি শক্তি / ক্ষমতা না থাকলে চুপ থাকাই শ্রেয়। শান্তি তো দুরাশা বেঁচে থাকাই দায় হবে।
    যেখানে আইন আছে প্রয়োগ নাই। ক্ষমতাই সেখানে আইন ও প্রয়োগ।

    হ্যাঁ বলতে পারি। আদালত কে। কিন্তু ব্যাখ্যা পাবেন শিক্ষক হয়ে কেন এই কাজ করতে গেলো। ইন্ডিয়ান বাংলা মুভির ডায়ালগ বলি। যশ দাস গুপ্তকে স্যার বলে ” এখনকার ছাত্রদের বাজে কথা/বেশি/প্রেম/ ফ্যাশন।” যশ দাস গুপ্তের উত্তর,” আপনারা প্রাইভেট না পড়লে ফেল করানো, খাতায় নাম্বার কম দেওয়া, ভর্তি ফি, এগুলো বেশি নেয়া আপনাদের ফ্যাশন না?” শিক্ষক চুপ কারণ তাঁর অন্যায়/ অপমান কাজ/ করেছে।

    এখন আমার দুই একটি কথা বলি বোন। সবাই পেশাদার মুভমেন্টে চলে, ছাত্র, অভিভাবক, শিক্ষক এখানে মুক্তি কি? বলুন।? কয়েক বছর আগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী কোচিং তুলে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কি হলো যেই কোচিং মাষ্টার সেই অভিভাবক হয়ে সন্তানদের কে আন্দোলনে নামিয়ে দিল যে কোচিং ের খুব খুব দরকার। যদি বলি তাহলে শিক্ষকগণ ক্লাশে কি পড়াবেন না। কোচিং ই প্রধান! যদি কোচিং প্রধান হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কোচিং করান।

    আরও লেখার ইচ্ছে ছিল সময় স্বল্প।

  • মোঃ মজিবর রহমান

    মানির মান আল্লাহই রাখে।

    শিক্ষক যদি নিজের মান রাখতে না পারেন তাঁর দায় অবশ্যই শিক্ষকের ছাত্রের নয়। অভিভাবক যদি শিক্ষা মনে না করে ক্ষমতা দ্বখায় সুকুলে তাহলে সন্তানকে পড়ানো বাদ দিক। সব খাইছে সালার রাজনিতির ক্ষমতা।

  • খাদিজাতুল কুবরা

    ক্ষমতার অপব্যবহারের দৌরাত্ম্য সর্বত্র। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। দলীয় ছত্রছায়ার আশ্রয় পশ্রয় ছাত্রছাত্রীদের ঔদ্ধত্যের প্রধান উৎস। ফারহানা মেডামের পদটি লোভনীয় এ বিষয়টি ও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দলীকরণ পক্ষপাতদূষ্ট বিচারিক প্রথার বলি হয়েছেন উচ্চপদস্থ এই শিক্ষিকা লঘু অপরাধে গুরু দণ্ড ও বলা যায়। নার্সারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায়ই শিক্ষকদের মর্যাদার চর্চা আর আগের মতো নেই সেই অর্থে শিক্ষার্থীর মহামূল্যবান চুল কেটে দেওয়া অপরাধ বৈ কী?

    বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। লেখাটি ও সমৃদ্ধ, পড়ে ভালো লাগলো।

  • হালিমা আক্তার

    সব জায়গায় চলছে রাজনৈতিক খেলা। তাই চুল কাটার জন্য বিশ লক্ষ টাকা জরিমানা পার শিক্ষার্থী। গোপাল ভাঁড় থাকলে কি বলতো কে জানে। কি আর বলিবে প্রাণ। চুল ছুলে যাবে মান। শুভ কামনা রইলো।

  • অনন্য অর্ণব

    যেই বঙ্গবন্ধু এক আঙ্গুল তুলে ঘুরে দাঁড়ালে দিল্লি নয় শুধু সাম্রাজ্যবাদের আঁতুড়ঘর ইংরেজ আর আমেরিকার মসনদও কেঁপে উঠতো সেই বঙ্গবন্ধু কে নির্মম নৃশংস ভাবে হত্যা করা জাতি আমরা। কাজেই এখানে এর থেকে ভালো কি আর আশা করবেন। সিস্টেমের চোয়ালে একদলা থুথু মারা ছাড়া আমাদের আর কিই বা করার আছে?

  • রোকসানা খন্দকার রুকু

    ওঁত পেতে থাকা কিছুসংখ্যক মানুষ আছেন যারা আপনার সাথে কখনোই মেধায়, যোগ্যতায় পেরে ওঠেন না। তাদের নাকের ডগা দিয়ে লোভনীয় ও ড্যাসিং আপনি বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াবেন আর তারা অযোগ্য বলে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো তা তো হয় না। জনৈক ডাকাত সর্দারের গল্পের মতো আরকি?
    তো ম্যাডাম যখন চুল কেটেছেন সেটাই মরার উপর খরার ঘা হয়ে এখন এই অযুহাতে তাকে এতগুলো পদ, পজিশন ধরে রাখতে দেয়া যায় না। তাই অন্যকোন কোন কোর্টে গিয়ে হলেও তাঁকে হ্যারাজ করা হবে।

  • সুপর্ণা ফাল্গুনী

    এখনকার বাস্তবতা এটাই প্রমাণ করে যে শিক্ষকের প্রতি যে সম্মান, শ্রদ্ধা থাকার কথা তা বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে নেই। অভিভাবক দের মধ্যে চরম নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে; শিক্ষকরাও আগের মতো শ্রদ্ধার পাত্র নেই। শিক্ষকদের মধ্যেও অনৈতিকতা ঢুকেছে, রাজনীতি এখন স্কুল-কলেজে ও প্রবেশ করেছে। ছাত্র ছাত্রীদের চুলের স্টাইল ও চালচলনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন আপু। অবিরাম ভালোবাসা 🌹🌹

  • নার্গিস রশিদ

    ” আরও অনেক কিছু বলার আছে , কিন্তু বলা যায়না। …………… বাস্তবে প্রকাশ করার জন্য শিরদাঁড়া প্রয়োজন সেটা কি আমাদের আদও আছে ।”
    একদম সত্যি কথা। কতো কিছু লেখতে ইচ্ছা করে সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে , পারি কি?
    ভালো থাকবেন ।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ