চিঠি – তৃতীয় অংশ

এস.জেড বাবু ২৯ মার্চ ২০২০, রবিবার, ০৮:৩১:৫২অপরাহ্ন চিঠি ১৯ মন্তব্য

কখনও ভাবনায় পড়ে যাই-
পছন্দ শব্দটার উপর আপেক্ষিক প্রভাব আসলে কিসের ?
চোখের ?
না মনের ?
প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খায়, ঘুরে ফিরে প্রশ্নগুলো আবারও সেই একই প্রশ্ন করে, আমি সময় পেলে ঠান্ডা মাথায় যোগ বিয়োগ মিলাই, পছন্দ কাকে বলে!
গুণ ভাগ সরল অংক শেষেও- সে প্রশ্নের সঠিক জবাব খুঁজে পাইনা। তবে আশাহত নই, জীবনে একবার অন্তত “পছন্দ” শব্দটার সমার্থক অনুভূতি উপভোগ করার ইচ্ছে জাগ্রত থাকে হৃদয়ের প্রতিটি সূর্যোদয়ে।

যদিও সে সময় টি-শার্ট থেকে শুরু করে পেন্ট পিস পর্যন্ত মা কিনে আনতেন, ফিরোজা রংয়ের ডোরাকাটা লুঙ্গি মায়ের পছন্দ- হাতের তালুয় সরিষার তেল নিয়ে চিকচিক করে চুলে মাখিয়ে, বাম পাশে সিতা করে, কপালের উপর তেলে ভেজা হাতে চুলগুলো চাপড়ে দিয়ে, আয়নাটার সামনে দাড় করিয়ে বলতেন- দেখ ! এইবার আমার ছেলেকে সবাই পছন্দ করবে, আয় আয়, একটু থুথু দিয়ে দিই। এমন করে এটা করবি, এমনি করে দাড়াবি- আমার সব কিছু মায়ের পছন্দের-
তবুও নিজে থেকে পাত্রি পছন্দ করার মতো সৌভাগ্য/ সাংবিধানিকে অধিকার বা সুযোগ দুইবার পেয়েছিলাম-
একবার আমার বন্ধুর জন্য-
আর একবার আমার নিজের-

সেই প্রাইমারী জীবনের বন্ধু সজল, ওর সবকিছুতেই আমার পছন্দ হওয়া / পছন্দ করা জিনিষ লাগতো। খাতার কভার, কলমের রং, পেন্সিল বক্স থেকে শুরু করে শার্ট, পেন্ট, লুঙ্গি, পড়ার টেবিল সব আমার মতো, আমার পছন্দের। স্কুল, কলেজ পেড়িয়ে ইউনিভার্সিটিতে একই বিষয়ে পড়াশোনা। ওর হাতের লিখা হুবাহু আমার মতো, এতটাই অবিকল যে আমার মা ও সে লিখা দেখে বুঝতে পারতো না। ব্যাবধান বলতে আমি আমার পরিবারের একমাত্র সন্তান, আর সে চার বোনের একমাত্র বড় ভাই। তখন বিকম প্রথমবর্ষের ছাত্র আমরা। স্বাভাবিক ভাবেই সজলের পরিবার থেক ওর বিয়ের জন্য চাপ দেয়া শুরু হয়। মাত্র এগারো মাস বয়সের ব্যাবধানে ওর ইমিডিয়েট ছোট বোন কল্পনা দেখতে শুনতে অধিকতর সুশ্রী। দেহের গঠন আট দশজনের চেয়ে ভালো এবং এইচ এসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তেমন বয়সের একটি সনাতন ধর্মের বিবাহ্যোগ্য মেয়ে যে কোন পরিবারের নিত্য চিন্তার বিষয়। সব বুঝে শুনে সজল তার মায়ের কথায় রাজি হলো এক শর্তে। “মেয়ে অবশ্যই অরণ্য (আমি) পছন্দ করে দিতে হবে।

আমি সব শুনে অবাক হলেও বিষয়টি সহজ ভাবেই মেনে নিই। সজলের পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু হয় পাত্রি দেখা। জাত কুল / বংশ মর্যাদা মিলিয়ে সজলের মামা পাত্রি দেখে প্রাথমিক ভাবে “ওকে” বললেই আমি আর সজল ফাইনালি মেয়ে দেখতে যাবো।

ভাবছো এতকথা লিখে লিখে তোমাকে কেন বলছি ?
তুমি গল্প দুটো শুনলে হাসবে তাই, এই মুহুর্তে যেন তোমার হাসি মুখটা দেখতে পাচ্ছি। তোমার হাসি- আমার মায়ের পছন্দ আর আমার লোভ, তোমার চোখ- আমার মায়ের পছন্দ আর আমার তৃষ্ণা, সবটুকু তুমি- আমার মায়ের পছন্দ ছিলে-
আর আমার ?
আমার তুমি পছন্দ ছিলে না, ছিলে বুকের বামপাশে হৃৎপিন্ডের গতি, রকেট গতির সে নিঃশ্বাসে- তুমিহীনা আজকাল মোমবাতিটাও নিভেনা ভালোমতো।

চলবে-

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ