চমেক’এ বিনিদ্র রজনী

আকবর হোসেন রবিন ১৮ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ১২:০৪:০৬পূর্বাহ্ন অন্যান্য ২৫ মন্তব্য

জীবনানন্দ বলে গেছেন - ‘ সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি।’ কথাটা আজ এ জন্য মনে হলো যে, মেডিকেলে পড়ে ডিগ্রী আর সার্টিফিকেট অর্জন করলেই সবাই রোগীর জন্য ডাক্তার হয়না। কেউ কেউ নিজের জন্য হয়, সুন্দরী বউয়ের জন্যও হয়।

বসে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিলাম। তাই কিছুক্ষণ আগে পাশের সীটে কে এসে বসছে তা খেয়াল করিনি। খেয়াল করলাম আরো কিছুক্ষণ পর, যখন ছেলেটা মোবাইলে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। এই কান্না থামলো কান থেকে মোবাইল রাখার মিনিট পাঁচেক পর।

সান্ত্বনা দিবো নাকি কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে আমাকে এই ভাবনার মধ্যে বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি। একটু পরেই দ্বিধামুক্ত করে পিছনের সীট থেকে একজন মুরুব্বি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো, কাঁদছো কেন ?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছেলেটি বলল, ‘ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমার বোন ও বোনের সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু মৃত্যুর সাথে লড়াই করে যাচ্ছে , আজ দুইদিন ধরে।’ এই বলে আবার কাঁদতে শুরু করলো হাত দিয়ে চোখ ঢেকে।

কথাগুলো হচ্ছিলো ‘নিওনেটোলজি ও পেয়িং ওয়ার্ড ’ এর সামনে বসে । এই ওয়ার্ডের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। মেডিকেলের অন্য সব ওয়ার্ডে কান্নার শব্দ গুলো দুঃখের হলেও এই ওয়ার্ডে বেশিভাগ কান্নার শব্দ মধুর। আশাকরি ছেলেটির ভাগ্যেও মধুর কিছু থাকবে।

পরে ছেলেটার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা হলো। কথার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বছর তিনেক পরে ছেলেটিও ডাক্তারির সার্টিফিকেট হাতে পাবে। ঢাকায় একটি মেডিকেলে পড়ে সে।

এইভাবে প্রায় আধঘণ্টা কথা বলার পর আমি আবার চোখ রাখলাম ম্যাগাজিনের পাতায়। কিন্তু কোন ভাবেই পড়ায় মন বসাতে পারছিলাম না । কিছু দূর পর থেকে সারি সারি মাদুর পেতে শুয়ে আছে শতশত নারী পুরুষ বৃদ্ধ। তার মধ্য থেকে কয়েকজনের নাক ডাকার বিশ্রী শব্দ ভেসে আসছে কানে । যা মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে বারবার। এতে প্রতিবার’ই হিটলারের দেশের মানুষদের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো আমার।কোথায় যেন পড়েছিলাম জার্মানরা তাদের হিল্ডেসহাইম শহরে নাক ডাকা বিষয়ক একটি মিউজিয়াম বানিয়েছে। আবার, সেখানে নাকি একটি প্রদর্শনীতে ২০০ রকমের নাক ডাকার নমুনাও দেখানো হয়েছিল। নাক ডাকার ব্যাপারটা তাদের জন্য একটা শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো তার কিছু প্রভাব বঙ্গদেশেও দেখা দিয়েছে।

এইদিকে আমার ঘড়ি বলে দিচ্ছে সেহেরির সময় হয়েছে। প্যান্টের বা’পকেটে হাত দিয়ে দেখি পকেট কিছুটা ভাড়ি, যা ভালো কোন হোটেলে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত।

১৬-০৬-২০১৭ ; চমেক

ছবি: সংগৃহীত

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ