ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা ১৩তম পর্ব

মনির হোসেন মমি ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার, ০৪:০৮:০৪অপরাহ্ন গল্প, বিবিধ ১৯ মন্তব্য

অসময়ে বৃষ্টি।বৃষ্টির ফাকে রৌদ্রের উকি,এ এক থম থমে অস্বাভাবিক পরিবেশ যেন আপদের হাতছানি।ছোটন হোন্ডা নিয়ে তৎক্ষনাত থানায় প্রবেশ করেন।ততক্ষণে ফুলীকে সেলে ঢুকিয়ে ফেলেন থানার বড় দাড়োগা।ছোটনকে দেখে থানার হাবিলদাররা কেমন যেন নিশ্চুপ অথচ ছোটন পূর্বে যখনি আসত থানায়, থানার চেয়ার টেবিল সহ স্যালুট দিতো তাকে।থানার পরিবেশ আজ একটু অন্য রকম লাগছে ছোটনের কাছে, তবুও ছোটন সিনা টান করে এস আই এর টেবিলেন যান।থানার এস আই বেশ দূর্নিতীপরায়ন, ছোটনের দ্বারাই কমপক্ষে শ'কোটি টাকা কামিয়েছেন।আজ ছোটনকে দেখেও না দেখার ভান করছেন।
-কে আপনি?
-বাহ্ রে...আজ মনে হচ্ছে নতুন করে পরিচয় দিতে হবে!
এর মধ্যে ওসি সাহেব ভিতর রুম থেকে পূর্বে অর্ডার দেয়া মোতাবেক ছোটনকে কয়েক জন হাবিলদার এসে ঘিরে ফেলেন।
-কি হচ্ছে এ সব?
-সরি...ছোটন সাহেব,উপরের অর্ডার আমাদের কিছুই করার নেই,আপনাকে এ্যারেষ্ট করতে হবে।
এস আই চেয়ার থেকে উঠে উত্তর দেন।
-আমার অপরাধ?গ্রেফতারের অনুমতি আছে?
-হুম...আপনাকে গত কয়েক দিন আগে কিছু লোকের গুম হওয়ার অপরাধে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
-কোন প্রুভ?
-আগে ভিতরে ঢুকুন,আদালতে সব প্রমান হবে।
-ফুলী কোথায়?
এস আই ছোটনের কানে ফিস ফিস করে কি যেন বললেন তাতে ছোটন নীরবে থানার লকাপে বন্দী হলেন আর ফুলীকে ছেড়ে দেবার নির্দেশ দেয়।

এ দিকে ফুলীকে একই থানায় মহিলা সেলে রাখা হয়।এখনও তার সম্পর্কে কোন মামলা লেখা হয়নি।সন্দেহ ভাজন হিসাবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।তবে ফুলীর ভয় যেন কাটছে না...ভাবছেন, নাকি শেষ হয়ে যাওয়া সেই সুপারভাইজার হত্যা মামলাটা আবারো নতুন করে তদন্ত হচ্ছে।যাক যা হবার তা দেখা যাবে সাহস হারানো যাবে না।ফুলী নিশ্চুপে বসেছিলেন আনমনে ভাবছিলেন ভাগ্য বিড়ম্বনা স্বীকার ফুলির অতীত বর্তমান ভবিষৎ।কোন মতে বিপদগুলোকে পাস কাটিয়ে নিজের জীবনকে নতুন ভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাগ্য দেবতা তাতে অখুশী হয়ে শেষ পর্যন্ত লোহার চার দেয়ালে বন্দী করলেন তাতেও সে চিন্তিত নয় তার ভাবনা কেবল ছোটনকে নিয়ে।অযথা অকারনে রাগ করাতে আজ এই পরিনতি এতটা রাগ না করলেও পারতেন।ছোটন এখন কোথায় কি করছেন তাকে যে পুলিশে ধরেছে তা জানে কি না ইত্যাদি ভাবনায় মগ্ন যখন তখনই ডাক আসে ফুলীকে ছেড়ে দেবার।
-আপনি এখন যেতে পারেন।
অশ্রুভেজা ছলছল নয়নের জল যেন গড়িয়ে পড়ল।কেনো ধরেছেন,কেনোই বা ছেড়ে দিচ্ছেন তার কোন প্রশ্ন কিংবা উত্তরের অপেক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করেননি ফুলী,সে কেবল আপনা জান বাচা মন্ত্রে নীরবে চলে যাচ্ছেন ঠিক সেই সময় থানার একজন এস আই এর বসার স্থান দেখিয়ে তার সাথে দেখা করতে বললেন।ফুলী কথা মত এস আই এর অফিসের ঢুকেন।
-কে আপনি?
-জি,...আমি ফুলী?
-ও হ্যা...ফুলী..।
-আসুন আমার সাথে....

অপ্রস্তুত ফুলী কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে, সে হাটছেন এস আই এর পিছু পিছু আর ভাবছেন এ আবার কোন মছিবতে পড়তে হয় কে জানে।ফুলীকে এস আই কয়েদীদের সাথে আত্ত্বীয় স্বজনদের কথোপকতনের স্থানে নিয়ে যেতে বলেন এক সিপাহীকে।ফুলী সেখানে স্থির দাড়িয়ে থাকেন,কিছুক্ষণের মধ্যেই দূর থেকে দেখছেন ছোটনের মতো কেউ একজন আসছেন তার দিকে।অবশেষে ছোটনকে দেখে সে অবাক হন এ আবার কখন এলো এখানে, তাও আবার জেলের ভিতর।
-কেমন আছো?
-ভালো,আপনি এখানে কেনো?
-মনে হয় এবার ফেসে যাবো,গুম এবং মার্ডারের মামলা।
-অপরাধীর শাস্তি হবে এটাই স্বাভাবিক।
-তুমিও বললে,হ্যা আমি অপরাধী, তবে যে অপরাধে আমাকে আটক করেছে সেটার সাথে আমি জড়িত নই।আমিতো সব কুকর্ম ছেড়ে দিয়ে তোমাকে নিয়ে নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখছিলাম।
-আপনার ভাই না টাই যেন আছে সে কি জানে?
-ভাই এখনও তার বাড়ীতেই আছেন।গতকাল বিকাল দিকে গুম হওয়া পাচ জনের লাশ নদী থেকে পাওয়া গেছে,আরো দুজনকে খুজছেন।তোমাকে খোজতে এসে থানায় আমি নিজেই ধরা পরলাম।তবে চিন্তা করবে না বের হওয়ার এখানকার সব বাও আমার জানা আছে।

ফুলী ছোটনকে শান্তনা দিয়ে চলে আসেন থানা থেকে সোজা বাসায়।ফুলীর খালা ফুলীকে এতক্ষণ না পেয়ে খুব চিন্তায় ছিলেন এখন ফুলীকে দেখে স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলেন।
-কি রে কই আছিলি?
-ভাগ্যের দরবারে..।
-বুঝিনা তোর তত্ত্ব কথা খোলে ক।
-ছোটন আবারও জেলে।
-কছকি!
-হ'...তবে এবার বের হতে পারবে বলে মনে হয় না।
-কেন?ওতো সরকারী পার্টি করে।
-হুম,এবার গুম এবং মার্ডারের মামলায় জেলে গেছেন।
-হায় হায় কয় কি ছেমরি....আজ না পেপারে আইছে পাচ জনকে নদী থেইকা মরা উদ্ধার করছে পুলিশ!ইস্ কি জগন্যরে বাবা...মানুষ মানুষকে এ ভাবে মারে?টিভিতে দেখাইছে,পিছনে দু'হাত বাইন্ধা পেট ফোটা কইরা ইট বেধে নদীতে ফালাইছে.....মাগ্গো মনে অলে গা শির শির কইরা উডে।
-হ,সেই মামলায়..ই
-কছ কি অরতো ফাসি হইয়া যাইবো!
হঠাৎ ধুম ফেটে শব্দাকারে কান্নার ঢেউ উঠে ফুলীর বুকে...ছোট্র শিশুর মতো কান্নার ঢেউক উঠে।
-এ কেমন জীবন নিয়া আইলাম দুনিয়ায়,যার পদে পদে বিপদ আর অসনি সংকেতের ছায়া পিছু ঘোড়ে বেড়ায়।.....আমি যে আর পারছি না খালা,জীবনকে আর বাচিয়ে রাখতে পারছি না,... মাঝে মাঝে মন চায় পৃথিবীটাকে বিদায় জানাই... এ পৃথিবী মনে হয় আমারে চায় না,যখনি সুখের ছোয়া লাগে তখনি ভাঙ্গনের সূর বাজে।
চলবে....

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা ১২তম

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ