“Bangladesh, Bangladesh Where so many people are dying fast And it sure looks like a mess I’ve never seen such distress”

 

১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে জর্জ হ্যারিসনের এর কনসার্ট ফর বাংলাদশে কথা বললে “বাংলাদেশ” শিরোনামেগাওয়া এই গানটা কানে ভাসে না এমন মানুষের সংখ্যা যেমন খুবই কম ঠিক তেমন কনসার্ট ফর বাংলাদেশের দেড় মাস পরে ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে হয়েছিলো এমনই আরেকটি রক কনসার্ট সে ইতিহাস জানা লোকের সংখ্যাটাও আবার খুব বেশি নয়।

 

যুদ্ধপীড়িত বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্ভর ইংল্যান্ডের ওভালে ‘গুডবাই সামার’ নামে সেই কনসার্ট এর আয়োজন করা হয়েছিলো।কেনিংটন ওভাল ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী টেস্ট ভেন্যুগুলোর একটি।সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের কাছে ছিলো এর মালিকানা। সারের আর্থিক দুর্দশার সুবাদেই তারা তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দিচ্ছিলো মাঠটি। মূল উদ্যোগটি নিয়ে ছিলো ‘কস্তুর’ নামে একটি দাতব্য সংগঠন।১৮ সেপ্টেম্বর সেখানে এক রক কনসার্ট আয়োজনের জন্য সারের অনুমতি চায় বাফেলো কনসার্ট লিমিটেডের রিকি ফার এর জন্য তাদের গুনতে হয়েছিলো ৩০০০ পাউন্ড।কনসার্টের প্রমোটার ছিলেন হার্ভে গোল্ডস্মিথ।

 

কনসার্টের টিকেটের দাম ধরা হয়েছিলো সোয়া এক পাউন্ড। বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে লেখা ছিলো বাংলাদেশের শরণার্থীদের কথা। কনসার্টের আগের দিন পর্যন্ত টিকেট বিক্রি হয়েছিলো মাত্র ১০ হাজার,কনসার্টের দিন পাল্টে যায় ছবি।ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার হলেও ওভালে সেদিন দর্শক হয়েছিলো প্রায় ৪০ হাজারের মতো।আর আশার চেয়েওএর তিনগুনেরও বেশী অর্থ উঠেছিলো।বিজ্ঞাপনে নাম ছিলো দ্য হু’র- সে সময়ের নামকরা রক ব্যান্ড আরো ছিলো দ্য ফেস, যার ভোকাল ছিলেন তখন রড স্টুয়ার্ট। এছাড়া আমেরিকা, দ্য অ্যাটমিক রুস্টার, মট দ্য হুপল, লিন্ডিসফার্ন, গ্রিজ ব্যান্ড, ককাইজ, ইউজিন ওয়ালেস ও কুইন্টএসেন্স অংশ নিয়েছিলো সকাল ১১ টা থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানে।আর এর সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন টেড ডেক্সটার- সে সময়ের বিখ্যাত ডিস্ক জকি ও এমসি।

 

খ্যাতির দিক দিয়ে বাকি ব্যান্ডগুলো অনেক পিছিয়ে থাকায় শেষ পর্যন্ত ফেস এবং হু’কেই টানতে হয়েছে গোটা কনসার্ট। হু গেয়েছে তাদের কালজয়ী সব গান এর মধ্যে ছিলো লাভ এইনট ফর কিপিং,মাই জেনারেশন, সি মি ফিল মি, বেইবি ডোন্ট ইউ ডু ইটের মতো হিট সিঙ্গেলস।     দ্য হু’ আলাদা পিএ সিস্টেম ব্যবহার করেছিলো। এজন্য তাদের অংশটুকু আরো বেশী উপভোগ করতে পেরেছে দর্শকরা।এর বাইরে দর্শকদের মধ্যে ড্রাগসের ব্যবহারও বেশ সমালোচিত করেছে কনসার্টটিকে। দর্শকদের থেকে গায়করাও কম যাননি। হু যথারীতি তাদের গিটার ভাঙ্গার রীতি চালিয়ে গেছে।

 

তবে কনসার্টটিকে রক অ্যান্ড রোলের পাগলপনার টালিখাতায় যোগ করার কৃতিত্বটা কিথ মুনের। হু’র ড্রামার এসেই ক্রিকেটার সাজা ডেক্সটারের হাতের ব্যাট কেড়ে নেন। সেটা দিয়ে ড্রামও বাজান খানিকক্ষণ। শেষদিকে সঙ্গীরা যখন গিটার আছড়াচ্ছেন, কিথ ভাঙ্গেন তার ড্রাম। ভাঙ্গেন মানে সেটার মধ্যে গিয়ে পড়েন। সারা স্টেজে এমনভাবেই ছড়িয়ে যায় তা যা দেখে ডেক্সটার বলে উঠেন : “As you can see, an encore is impossible. We have drums everywhere.” সেটি ছিলো আসলে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা।

 

কস্তর নীল প্লাস্টিকের কিছু বাক্স বানিয়ে দর্শকদের মধ্যে পাঠিয়েছে বাড়তি কিছুর আশায় কিন্তু বাক্সগুলোকে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি পরে।এসবের মধ্যে আলাদা করে বলতেই হয় রড স্টুয়ার্টের কথা চিতা বাঘের সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ ফোঁটা কাটা একটা জ্যাকেট তিনি সেদিন নিলামে বিক্রি করছিলেন তারজন্য বাড়তি ৫০০ পাউন্ড জমা হয়েছিলো।

 

কনসার্টটি পুরোটাই রেকর্ড করা হয়েছিলো ভবিষ্যতে ফিল্ম আকারে প্রকাশ করার আশায় কিন্তু রয়েলিটি নিয়ে ঝামেলা থাকায় তা আর হয়নি কখনো।আমাদের এই যুদ্ধের সময় আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে সাত সমুদ্র দুরের মানুষ গুলোও,এত কিছুর বিনিময়ে পাওয়া এই দেশটার মূল্য শুধু এদেশের প্রতিটি মানুষ দিতে পারলো না হাতে গনা কিছু মানুষ ছাড়া।

 

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ