একটা কথা জিজ্ঞেস করি শাহবাগ আন্দোলনের আগে কয়জন জানতো ব্লগ বলে একটা কিছু আছে আর যেখানে চাইলেই লেখালেখি করা যায় আর যারা সেখানে লেখালেখি করে তাদের ব্লগার বলে।যদি মানুষ সত্যিকার অর্থেই সত্যি উত্তর দেয় তাহলে বাজি রেখে বলতে পারি না জানা মানুষের সংখ্যাটাই বেশি হবে।

 

একটু পিছনে ফিরে যাই,হুমায়ূন আজাদের কথা মনে আছে।না থাকলে মনে করিয়ে দিচ্ছি তিনি বাংলাদেশের প্রথম দিককার প্রথাবিরোধী এবং লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা,নারীবাদ,রাজনৈতিক এবং নির্মম সমালোচনামূলক লেখক ছিলেন।আমি আবারো বলছি তিনি লেখক ছিলেন ব্লগার নয় কিন্তু।হঠাৎ আপনার মনে হতেই পারে তার কথা আনলাম কেন সূত্র মিলাতে তাকে যে আনতে হবেই।

 

তিনি লেখালেখি শুরু করেছিলেন আশির দশকে এবং শুরু থেকেই প্রধাবিরোধী যেটা তার লেখায় বার বার উঠে এসেছে।এবার তার মারা যাবার সনটা মনে করার করে দেখুন তো,২০০৪ সাল এখানে প্রশ্ন হলো যেই মানুষটি শুরু থেকেই প্রথাবিরোধী লিখে আসছিলেন তার উপর কেন ২৪ বছর পরে হামলা চালানো হলো,আগে কেন করা হলো না?তাকে হামলার কিছুদিন আগে ফিরে যাই ২০০৪ সালে তার শেষ যেই বইটি”পাক সার জমিন সাদ বাদ” বেরিয়ে ছিলো সেই বইটি যদি পরে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবে কিভাবে ধর্ম কে পুঁজি করে রাজনীতি উঠে আসে সমাজে কিভাবে ধর্ম কে ব্যবহার করে শত শত ধর্ষণ খুন ও কিছুই হয়না।কিভাবে ধর্ম কে পুঁজি করে আড়ালে সব কলকাঠি নড়ে।এখানে মূলত আড়ালে থেকে ধর্ম ব্যবসায়ী দের কে তিনি সমাজে পকাশ করে দিতে পেরেছিলেন।

 

বাংলাদেশে যখন মৌলবাদ বিস্তার লাভ করতে থাকে,বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, তখন ২০০৪ এ প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ গ্রন্থ।তিনি এই বইটিতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন।এইতে আঁতে ঘা লাগে এবং শুরু হয় তাদের পথের কাঁটা সরানোর প্রথম মিশন এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠিতথা জামাত ইসলাম তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়,এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায়,অবশেষে হামলা করে ব্যথ হবার পরে তার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক বুঝতে সাহায্য করে তার মৃত্যু কেন হয়েছিলো।

 

বুঝতে পারলাম কি যে মানুষ তা শুরু থেকেই এমন তাঁকে কেন পরে ধর্মের দোহাই দিয়ে হামলা করা হলো বলতে পারেন কি পারার তো কথা কারন তিনি যখন তাদের পথের কাঁটা হয়ে গিয়েছিলেন তখনই তাদের উপরে ফেলা হয়েছিলো তার আগে যত কিছুই করুক না কেন কিছুই হবে না।

 

এবার সামনে আগাই তার ও নয় বছর পরের ২০১৩ সালের দিকে,আমাদের গোল্ডফিশ মেমরিতে কি রাজিব হায়দারের কথা মনে রেখেছে? লেখার শুরুর দিকটা এবার লাগবে মানি ব্লগের কথা এবার আসবে,১৩ সালের আন্দোলনের আগে অনেকেই জানতো না ব্লগ খায় না মাথায় দেয়।কিন্তু বাংলা ব্লগের যুগ শুরু হয় ছয় সালের দিকে রাজীভ হায়দার মূলত প্রথম দিকের ব্লগার ছিলেন।

 

বাজারের ছড়ানো কথা কিংবা আমার দেশ নামক ছাগু পত্রিকারর কথা মেনে নিলাম তিনি নাস্তিক ছিলেন।হ্যাঁ ভাই যে মানুষ টি নাস্তিক সে ত শুরু থেকেই নাস্তিক তাই না আজকে জন্য নাস্তিক কালকের জন্য আস্তিক এমন তো নয়।তাহলে লেখালেখি করার ৬ বছর পরে কেন ধর্ম রক্ষার নামে তাঁকে খুন করা হলো বলতে পারবেন কি?
আগের ছয়-সাত বছর কি ধর্ম রক্ষা উচিত ছিলো না,আগের সময়ে কেন আমার দেশ এর মত ধর্ম প্রেমিক পত্রিকা নাস্তিকতা নিয়ে কোন বানী ছাপালো না বলতে পারবেন।এবার ফিরে আসি তাঁকে খুনের সময় টা তে একথা নতুন করে বলার কিছু নেই যে শাহবাগ আন্দোলন তখন তুঙ্গে।তাঁকে খুন করার মূলত ৩টি কারণ ছিলো বলে আপাত দৃষ্টিতে আমার মনে হয়,এক তাঁকে খুন করে পথের তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠা আরো একটি কাঁটা উপড়ে ফেলা, দুই আন্দোলনের হাওয়ায় ভাটা আনা,তিন তাঁকে খুন করার মাধ্যমে সমাজে নাস্তিক ইস্যুর প্রচলন করে জামাতের জন্য হুমকি হয়ে উঠা পরের মানুষ গুলোর খুন সমাজে জায়েজ করে ফেলা।
আগের খুনের থেকে এখানেও কিছু কিন্তু অনেক বছরের ব্যবধান ছিলো,যেই অপেক্ষায় সময়টা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার যে যখন তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে তারা শুধু তাকেই হত্যা করবে।

 

এবার আসি খুনের দ্বায় স্বীকার নিয়ে কিছু কথাতে আনসারুল্লা বাংলার নাম শাহবাগ আন্দোলনের আগে কয়জন শুনেছেন,শাহবাগ আন্দোনলের আগে কয়জন জানতে পড়েছিলেন লিস্টের কথা,একজনও না কারণ আনসারুল্লা বাংলা কিংবা তাদের লিস্টের জন্ম হয়েছে আন্দোলনের পরে।যারা পুরা লেখা পড়েছেন তাদের মনে একটা প্রশ্ন উকি দিতেই পারে তারা কেন এদের হত্যা করছে?সহজ উত্তর এই অনলাইন যোদ্ধাদের ছাড়া কি এত সহজে রাজাকার এর বিচারের কথা ফিরে আসতো আবার কিংবা এদের ছাড়া কি আন্দোলন করে ফাঁসি তেঁ ঝুলানো যেত এত সহজে।একথায় এসব যোদ্ধারা জামাতের জন্য হুমকি কারণ তাদের প্রতিবাদের মুখেই রাজাকার ঝুলছে আজকে তাদের সরিয়ে দিতে না পারলে একদিন তারা এদেশ থেকে জামাত বিতারিত করবে সেটা জামাত ভালো করেই বুঝে গেছে।তাই যে যখন জামাতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছ তাকেই সরানো হচ্ছে হবে যতদিন না আমরা রুখে দাঁড়াবো।

 

আমি আমার প্রথম পর্বে [ অভিজিৎ দের মেরে ফেলার কারণ শুধুই ধর্ম অবমাননা নয়। পর্ব-১ ] জামাত কিংবা তাদের চেলা আনসারুল্লা বাংলা কততা ধর্ম রক্ষায় নিয়োজিত আর প্রথম দিকের ধর্ম প্রচারও রক্ষার এর কথা উল্লেখ করছিলাম এই দুই পর্ব আর সামনের পর্ব গুলোতে আশা করি আমি আস্তে আস্তে তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য বুঝাতে সক্ষম হবো।চলবে.......

0 Shares

২টি মন্তব্য

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ এমন চাল দিয়ে গেলো, পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তান আর ভারত। শুরু হলো রাজনীতি এবং ধর্মনীতির কূটক-নীতি। তারপর এলো ১৯৭১। সেও গেলো। স্বাধীন বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। গণতন্ত্রের নীতি দিলো পালটে এরশাদ। জাতীয় ধর্ম ইসলাম। শুরু হলো রাজনীতির খেলা। তসলিমা নাসরিনের লজ্জ্বা উপন্যাস বাজেয়াপ্ত করে প্রথম খেলা শুরু হলো, সেই সময় তসলিমা নাসরিন বলেছিলো একটি কথা, মুক্তমনা যারা আসবে তাদের সৃজনীশক্তি নিয়ে তাদেরই নাকি জীবনের শেষ দিন হবে। তাঁর কথা ঠিকই হলো, এরপর হলো হুমায়ূন আজাদ স্যার। একে একে এখন ব্লগার।

    চলছে, চলবে। তবে একদিন থামবে। অন্যায়-অত্যাচার করে বেশীদিন টিকে থাকা যায়না। ইতিহাস বলে এ কথা।

    (y) ভালো লিখছেন। অনেক যত্ন করে লিখছেন, অনুরোধ থাকলো নিজেকেও যত্নে রাখুন।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ