এক মুঠো ভালোবাসা (৪০তম পর্ব)

ইঞ্জা ৫ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৫৪:৪৯অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

চিন্তিত অনিক অফিসে প্রবেশ করার সময় অফিসের সবাই সম্ভাষণ জানালেও অনিক জবাব না দিয়ে এগুলো নিজ কেবিনের উদ্দেশ্যে যা অন্যান্য দিনে কখনো হয়নি, আফরিন তা খেয়াল করে নিজেই উঠে অনিকের কেবিনে গেলো।

কফি খাবে, আফরিনের জিজ্ঞাসা?

অনিক ফিরে তাকালো আফরিনের দিকে তারপর বললো, তুমি খাবে?

আফরিন নড করে দুই কাপ কফি নিলো কফি মেকার থেকে, চিনি মিশিয়ে এক কাপ অনিকের সামনে দিয়ে নিজেরটা নিয়ে অনিকের সামনে বসলো।

কি ব্যাপার চিন্তিত মনে হচ্ছে, ছায়া ঠিক আছে তো?

হুম, ও ভালো আছে।

তুমি?

অনিক কফিতে চুমুক দিয়ে বললো, আমিও ভালো আছি, তা তোমার খবর কি?

আমার কি খবর জানতে চাও? 

শুনলাম তোমার জন্য ভালো প্রপোজাল আসছে, অথচ তুমি নাকি বিয়ে করতে চাইছোনা?

কে বললো, মম?

হাঁ। 

দেখো আমি আগে নিজে এস্টাবলিশ হয়ে নিই, তারপর চিন্তা করবো।

আর কতো এস্টাবলিশ হবে, তুমি এখন সাত হাজার ডলার পাও, তাহলে সমস্যা কি?

ওসব বাদ দাও অনিক, তুমি কি নিয়ে চিন্তিত?

অনিক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো তারপর বললো, আসলেই সমস্যা হলো আমার মা।

আন্টি আবার কি করলো?

আসলে উনি চান আমাদের সন্তান হোক।

তো?

আসলে আমরা এতো তাড়াতাড়ি কোন বাচ্চা নিতে চাইছিনা। 

হুম, তা আন্টিকে বলে দাও।

মা গত কয়েকদিন আগে আমাকেও চাপাচাপি করছিলো, আমিও বললাম এখন নয়, কিন্তু মা আজ সকালেও ছায়াকে ফোন দিয়ে একি কথা বললো।

হুম তোমরা বাঙ্গালীরা না একদম ইম্পসিবল, এই দেশে আমি কি করবো না করবো তা আমার বাবা মা বলবে কেন?

আফরিন তুমিও তো বাঙ্গালী?

হাঁ কিন্তু আমেরিকান বাঙ্গালী।

এখন কি করবো বলো?

তাহলে আর কি, তোমরা বেবি নিয়ে নাও।

সিট।

হোয়াট সিট?

নাথিং।

দেখো চিন্তা করে, আমি ডেস্কে যাচ্ছি।

ওয়েট, আমি আন্টিকে কি বলবো, আন্টি তো আমার উপর ভরসা করে আছে?

এই তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?

হোয়াট রাবিস?

তাহলে এতো চিন্তা করছো কেন, আমারটা আমাকেই সামলাতে দাও।

কিন্তু?

কিসের কিন্তু, তুমি বিয়ে করবে বললে নাহয় চিন্তা করতাম, হাসতে হাসতে আফরিন বললো।

ছায়া জানলে তোমার সব চুল ছিড়বে।

ছিড়বেনা, ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, বলেই হাসতে হাসতে আফরিন রুম থেকে বেরিয়ে এলো, এরপর  টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলো।

সন্ধ্যার পর অনিক আর ছায়া সহ গিয়ে রওশনের বাবাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে এলো, অনিক নিজে গিয়ে উনার চেকইন করে গেইটের ভিতর প্রবেশ করিয়ে দিয়ে ছায়াকে নিয়ে বেরিয়ে এলো এয়ারপোর্ট থেকে। 

এখন কোথায় যেতে চাও বলো?

অনিকের কথায় ফিরে তাকালো ছায়া, কিছু বলছো?

কি গো মন কোথায় তোমার?

না আসলে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম তো, তাই খেয়াল করিনি। 

উহু, তুমি মার কথায় চিন্তা করছো, ঠিক কিনা?

আসলে সকাল থেকেই কথা গুলো মাথায় ঘুরছে।

আরেহ ওসব এখন বাদ দাও তো, চলো কোথাও ডিনার করি।

কোথায় যাবে বলো?

তুমি কি খেতে চাও? 

এ সময় আমার তেমন কোনো চয়েজ নেই।

তোমার মেক্সিকান ফুড কেমন লাগবে, আফরিনের এলাকাতে খুব ভালো এক রেস্টুরেন্ট আছে, খাবে নাকি? 

তাহলে আফরিনকে ডেকে নাও, অনেকদিন ওর সাথেও দেখা হয় না 

তাও ভালো, তুমিই ফোন করে বললো, 96 মেক্সিকান ফুড শপে চলে আসতে বলো, আমরা আধা ঘন্টার মধ্যেই পোঁছাবো।

ছায়া নিজের ফোন নিয়ে কল করা শুরু করলো। 

আফরিন এড়িয়ে যেতে চাইলেও ছায়ার কারণে পারলোনা, ও রেডি হয়ে চলে এলো রেস্টুরেন্টে, বেশ নিরিবিলি এই রেস্টুরেন্ট, যদিও দুপুরের লাঞ্চে বেশ ভীড় লেগে থাকে।

অনিক আর ছায়া এখনো পোঁছায়নি দেখে নিজে কোনার এক টেবিল নিয়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো, দশ মিনিটের মধ্যেই ওর এসে পড়লো, আফরিন উঠে গিয়ে ছায়াকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো তুমি?

তোমাকে দেখে সত্যি মনটা ভালো হয়ে গেলো, তুমি কেমন আছো।

আমিও ভালো।

এরপর ওরা চেয়ারে বসলে রেস্টুরেন্ট ওয়েটার এসে ওদের টেবিলে মেক্সিকান স্টাটার দিয়ে গেলো যা এক ধরণের সালাদ টাইপের। 

তা আফরিন বলো, এইখানকার কি খেলে ভালো হয়, অনিক জিজ্ঞেস করলো।

তুমি তো আগেও এসেছো, তুমি জানোনা?

তা জানি, এরপরেও আমরা চাই আজ তুমিই চুজ করো।

ওকে, আমিই করছি।

ওয়েটার অর্ডার নিতে এলে আফরিন অর্ডার দেওয়া শুরু করলো, বুরিটোস উইথ মিন্সড মিট ফিলিং, চিকেন কয়েসিল্ডাস, টাকোস ফিলিং, গুয়াকামোলে, রেড স্যানেপার ভেরা ক্রুজানা নিবো আমরা, সব এক একটা আইটেম।

হায় হায় এতো কে খাবে, ছায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো?

এতো কিসের, এতো খুবই সামান্য, অল্প অল্প খাবো, এতে তোমারও টেস্ট করা হবে। 

তাই, তাহলে ঠিক আছে। 

ড্রিংক্স কি নিবে, অনিক জিজ্ঞেস করলো?

টাকিলা বেস্ট হবে, এদের টাকিলার জবাব নেই।

ওকে তাই হোক। 

ওদেরকে ড্রিংক্স সার্ভ করা হলে অনিক গ্লাস তুলে ধরে আফরিন এবং ছায়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করে টোস্ট করে চুমুক দিলো টাকিলার গ্লাসে এরপর বললো, আন্টির সাথে কথা বললাম, উনি বলছেন আমি বুঝালেই নাকি হবে?

হাঁ অফিস থেকে ফিরতেই মমের প্যানপ্যানানি শুরু, আমিও রুমে গিয়ে লক করে বসে রইলাম। 

ছায়া অবাক হয়ে শুনছিলো, ও জিজ্ঞেস করলো, কি বিষয়ে জানতে পারি? 

কি আর, তোমার বান্ধবী নাকি এখন বিয়ে করবেনা।

কেন কি সমস্যা আফরিন?

সমস্যা হলো আমি আরও স্টাবলিস হতে চাই।

বলো এখন, ও ভালো স্যালারি ড্র করছে গত ছ মাস ধরে, এছাড়া আর কয়েক বছর পর তুমি বুড়ী হয়ে যাবে, হাসতে হাসতে অনিক বললো। 

আফরিন তুমি কাউকে ভালোবাসো, ছায়া আফরিনের চোখে চোখ রাখলো।

আফরিন চোখ সরিয়ে নিয়ে পুরা গ্লাসটা খালি করে বোতল থেকে টাকিলা নিলো। 

কি জবাব দিলে না?

অনিকও সূক্ষ্ম চোখে তাকালো আফরিনের দিকে। 

ওয়েটার খাবার সার্ভ করাতে সবাই চুপ করে গেলো, অনিক সবার প্লেটে প্লেটে খাবার সার্ভ করে বললো, নাও শুরু করো।

খেতে খেতেই ছায়া আবার জিজ্ঞেস করলো, কি জবাব দিলেনা বন্ধু?

উনার জবাব কি শুনবে, আমি জিজ্ঞেস করাই আমাকে বলে কিনা উল্টো কথা।

কি বলে, টরটিলা মুখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ছায়া?

শ্যালিকা নাকি বিয়ে করলে আমাকেই করবে, বলেই হা হা হা করে হাসতে লাগলো অনিক।

ছায়া আফরিনের দিকে তাকিয়ে বললো, কি বন্ধু, তোমার মতলবটা কি শুনি?

আফরিন ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, ডুলাভাইকে খোঁচালাম আর কি?

ছায়াও ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, ডুলাভাই না, দুলাভাই। 

ঐ একটা হলেই হলো। 

অবশ্য দুই বান্ধবী মিলে একটাকে শেয়ার করাই যায়, বলেই ছায়া হাসতে লাগলো।

অনিক অবাক হয়ে বললো, মাফ করো আমাকে, আমার একটাই ঠিক আছে, আর লাগবেনা।

 

......... চলবে। 

 

ছবিঃ গুগল। 

 

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ