সুপ্রিয় দর্শক, আপনাদের আমন্ত্রন জানাচ্ছি আজকের বনচটকনাফোন মধ্যরাতের আলাপ অনুষ্ঠানে। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করছি, আজকে আমাদের সাথে আছেন বিশিষ্ট সামাজিক চিন্তাবিদ অধ্যাপক লুকু মিয়া এবং আরো আছেন বর্ষীয়ান ছাত্রনেতা এবং ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট বিপুল চাপদিক ।
-স্লামালেকুম।
-আজকের আলোচনার বিষয়- পহেলা বৈশাখের একাল- সেকাল। প্রথমেই বক্তব্য শুনতে চাইব অধ্যাপক লুকু মিয়ার।
-ধন্যবাদ আপনাকে। তবে ধন্যবাদটা আবার প্রত্যাহার করে নিলাম। কারন আপনার আলোচনার বিষয় আমার পছন্দ হয় নি। প্রথমত পয়লা বৈশাখ সবসময় গরম কালেই হয়ে থাকে তাই এর একাল – সেকাল বলতে কিছুই নাই। দ্বিতীয়ত পয়লা বৈশাখ নিয়ে এত মাতামাতি করার কিছু নাই। কারন এটি একটি বিধর্মী কালচার। এটা আসলে ভারতীয়দের উতসব। আমি যখন ভারতের কাশ্মীরে গেছি, তখন তাদেরকে পয়লা বৈশাখ পালন করতে দেখেছি। আপনি জানেন ওরা অনেক সুন্দর, ওদের ঘর বাড়ি পানি গাছ সব খুব সুন্দর, ওদের বানানো গায়ে দেয়ার শাল গুলাও অনেক সুন্দর আর দামী...
-জ্বী স্যার একটূ সংক্ষেপে বলবেন, চাপদিক সাহেবকেও সময় দিতে হবে এদিকে স্পনসর দের চাপের ব্যাপারটা তো আছেই।
-হ্যা অবশ্যই। তো যা বলছিলাম, ওদের দেশ টা অনেক সুন্দর। আমি আমার স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার গেছি। ওরা অনেক কেনাকাটা করেছে। খাওয়া দাওয়াও বেশ ভাল। তবে যাই হোক, ওরা ভারতীয়। তাই ভারতীয়দের কালচার আমরা পালন করাকে আমি কখনই সমর্থন করি না। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখুন, আমাদের দেশে নানাবিধ সমস্যা। মানুষের মন ভাল নেই। সারাদিন কাজ করার পর রাত আটটার বাংলা সংবাদে যেন একটূ মনোরঞ্জনের উপকরণ থাকে এই সামান্য চাওয়াটাও পুরন করতে পারছে না কেউ। এই যে আমরা এখানে এসেছি, এই মগগুলাতে কি আছে? চা কফি তো দুরের কথা একটু গ্লুকোজ ও নেই। আছে স্রেফ পানি। তাও আধা মগ। এতেই প্রমাণ হয়- দেশ আজকে কতটা সংকটে আছে। এই দুঃসময়ে পহেলা বৈশাখ পালন করা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়...
-জ্বি স্যার ধন্যবাদ।
-না, আমার কথা শেষ হয় নি
-স্যার একটূ সংক্ষেপ করুন
-হ্যা, আমি আর পাচ মিনিটেই শেষ করছি
-স্যার পাচ মিনিট দেয়া যাবে না আপনি দশ সেকেন্ডে শেষ করুন
—দশ সেকেন্ডে কি হয়? দশ ঘন্টায় ও তো সরকারের অনাচারের কথা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। আপনি আমাকে দুই মিনিট দিন।
-স্যার আপনার দশ সেকেন্ড শেষ। আমরা চলে যাচ্ছি চাপদিক সাহেবের কাছে।
-জ্বি, আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে...
-এই মুহূর্তে আমাদের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে হচ্ছে। সাথেই থাকুন।
- 😮
-বিরতির পর আবারো আমন্ত্রন বনচটকনাফোন মধ্যরাতের আলাপে। আমরা শুনছিলাম জনাব বিপুল চাপদিক এর কথা।
-জ্বী। আসলে আমি পয়লা বৈশাখ পালন করা নিয়ে একটূ দ্বিমত পোষন করব জনাব লুকু মিয়ার সাথে। দেখুন প্রথমত এই পয়লা বৈশাখ একটি আন্তর্জাতিক উতসব। তাই বরাবরের মত এ বছর ও আমাদের ঘটা করে পয়লা বৈশাখ পালন করা উচিত। এগিয়ে যাবার এই বিপ্লবে আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। দ্বিতিয়ত আমি বলব পয়লা বৈশাখ উদযাপন আমাদের দেশে নারী খমতায়নে বিশেষ ভুমিকা রাখে। আপনি খেয়াল করে থাকবেন পহেলা বৈশাখে নারীরা শাড়ী চুড়ী ফুল ইত্যাদি পড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এবং তাদেরকে দেখে পুরুষ বিশেষ করে তরুনদের মধ্যে একটা চেতনার সঞ্চার হয়। তারা তাদের হতাশা দুঃখ ইত্যাদি ভুলে এই নারীদের পিছু পিছু ঘুরে থাকে। এভাবে সমাজে নারীদের অগ্রযাত্রা সুচিত হয়।
তবে আমি লুকু ভাই’র সাথে মগে পানি দেয়ার ব্যাপারে একমত পোষন করব এবং আরো যোগ করব যে এই পানিটিও নরমাল। একে ঠান্ডা করার মত পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আমাদের জন্য সহজলভ্য নয়। আমরা ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছি ক্ষমতায় গেলে সবার জন্য বিদ্যুৎ ফ্রি করে দেয়ার। তখন এক মগ নয়, গ্যালন গ্যালন পানি আপনি বিনামূল্যে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে পারবেন।
-জ্বী। অনেক ধন্যবাদ। লুকু মিয়া।
- আমি বিদ্যুতের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই,
-আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথার চেয়েও আমাদের এখনি একটা বিরতি নেয়া জরুরী। তাই এখন একটা বিরতি নিচ্ছি। সাথেই থাকুন।
-আবারো স্বাগতম বনচটকনাফোন মধ্যরাতের আলাপে। শুনছিলাম জনাব লুকু মিয়ার কথা।
- হ্যা, যা বলছিলাম। এই যে বন ধ্বংস করে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এটা কাদের স্বার্থে? আমাদের অংশের বন কেটে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ভারতে পাচার করার চক্রান্ত চালাচ্ছে একটী মহল। আপনারা জানেন, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কুটি কুটি টাকার বিদ্যুৎ পাচার হয়। আবার পাচার করতে গিয়ে আমাদের চোরাচালানকারী ভাইয়েরা বি এস এফ এর গুলিতে নিহত হচ্ছে। কারো কোনও মাথাব্যাথা নাই। খালি দেশের স্বার্থ ভারতের কাছে প্রতিনিয়ত বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে আজকে আমরা ভারতীয় হিন্দু কালচার পালন করছি।
-অনেক ধন্যবাদ। জনাব চাপদিক। সর্ব শেষ কি বলতে চান এ বিষয়ে?
-দেখুন এ ব্যাপারে আমি একটা ভুল ধরিয়ে দিব জনাব লুকু সাহেবের। পয়লা বৈশাখ কিন্তু প্রথম চালু করেন সম্রাট আকবর। তিনি মুসলমান ছিলেন, সুতরাং এটা হিন্দু কালচার বলে মানতে পারলাম না। শুধু তাই না, সম্রাট আকবর তাঁর বেগমকে লাল সাদা শাড়ি পড়িয়ে মেলায় নিয়ে যেতেন। এবং ঘোড়ায় চড়ে প্রজাদের মধ্যে পান্তা – ইলিশ বিতরণ করতেন। তবে আজকে আমাদের দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছেনা। কেন? এ দায় কি সরকারের নয়? তাই আবারো বলতে চাই যে এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যাবস্থা। এই অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরন করার দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রের। তেমনি ইলিশ মাছের অধিকার নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব ছিল। তবে দুঃখ জনকভাবে সরকার আজ তা করতে ব্যারথ এবং চরমভাবে নীতিবিচ্যুত।
-অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। জনাব লুকু মিয়া। আপনার জন্য সময় দুই মিনিট। আপনি কিছু বলুন এ বিষয়ে।
-দেখেন, ইলিশ মাছ এখন জাতীয় প্রয়োজনীয়তায় পরিনত হয়েছে। কিন্তু সরকারের চরম ব্যারথতার কারনে আজ ইলিশের অভাবে চারিদিকে হাহাকার। ইলিশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও পয়লা বৈশাখ পালন করা হয় না। শুধু আমাদের দেশের কিছু মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না। আরেকটি ব্যাপারে আমি চাপদিক সাহেবের ভুল ধরিয়ে দিতে চাই, সম্রাট আকবরকে আপনি খাঁটি মুসলমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন, তবে আমি বলবো- আপনি কি তাঁর বাবার নাম জানেন? তাঁর বাবার বাবার নাম কিংবা তাঁর ও বাবার নাম জানেন? সম্রাট আকবরের পূর্ব পুরুষ হিন্দু ছিল। তাই তিনি এমন একটি বেশরিয়তী প্রথার প্রচলণ করেছেন।
-না। আমি চিনি। আকবরের গ্রামের বাড়ি আমার কানাডা প্রবাসী খালার শ্বশুর বাড়ির পাশে।
-জ্বি না, আপনি ভুল বলছেন...
-ওই মিয়া, আপনে আমাত্তে বেশি জানেন?
-যা ব্যাটা নাস্তিক, তুই কি জানোস কার বাপ হিন্দু ছিল? তোরা কি পড়ালেখা করস?
-তোর এত্তবড় সাহস, তুই আমারে নাস্তিক কস, তুই জানোস আমি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম?
-ম্যা ম্যা ম্যা ম্যা...ধ্রুম!
-ঢিশুম।
-হিচক...
-ঢিশুমাইক...
-সুপ্রিয় দর্শক আমাদের বিদায় নেবার সময় হয়ে গেছে, আমরা আর আলোচনা চালিয়ে যেতে পারছিনা। আশা করি আমাদের অনুষ্ঠান আপনাদের ভাল লেগেছে। কাল আবারো দেখা হবে এমনি কোনও গুরুত্ববহ আলোচনায়। ততক্ষণ ভালো থাকুন। আমার জন্য দোয়া করুন। শুভ রাত্রি।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ