“একটি কালো নেইলপলিশ”

মেহেদী পাতা ১৭ মার্চ ২০১৫, মঙ্গলবার, ০১:২৩:১১অপরাহ্ন বিবিধ মন্তব্য নাই

সাইকেলটা স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রেখে বসলাম আমাদের টিনশেডটার নিচে। আমরা কত হাড়ভাঙ্গা মাস্তানের দল এর নিচে বসে থেকে ডাকাত হবার সার্টিফিকেট নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম,কিন্তু এই বুড়ো যেমন ছিল,তেমন-ই আছে। মুখ থোবড়ানো এই টিনশেডটার গায়ে রঙ লেগেছে শুধু,ঠিক যেন বুড়োর পাকা চুলে কলপ দেয়ার মতো। রহস্যময় এই টিনশেডটা একটা অপ্রমাণিত ব্ল্যাকহোল। এর ছায়ার নিচে ঢুকলেই আমাদের অবসর সময়গুলো এর মাঝে হারিয়ে যায়। কপোত-কপোতী এর ছায়ার নিচে বসে কত বাক-বাকুম করে। কত কুঁড়ে এর নিচে শুয়ে-বসে কাটায়,মিথ্যে ভালবাসার কত সত্য সাক্ষ্য এর নিচে ঘটে যায়,কিন্তু এই বুড়ো কখনও না করে না। আসলে তা করার অধিকারটাই তো তাকে কেউ দেয়নি।আমি ভাবছিলাম,পুরনো দিনগুলোর কথা। পুরনো ঐ স্মৃতিগুলোর খাম-টা স্কুল ছাড়ার পর না জানি কোথায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। আজ সেটা খুঁজে পেয়ে,ধুলো ঝাড়ছিলাম। হঠাৎ ফিক করে হেসে দিলাম।

মনে পড়ে গেল,এই বুড়োর নিচেই স্কুল জীবনের শেষ দিন তখনকার তার সাথে ভালবাসার মিষ্টি ঝগড়া করেছিলাম। ওহ হ্যাঁ,ও বলছিল ওর বন্ধুদের সাথে খানদানি ফুড সেণ্টার [যাকে তারা KFC বলে]-এ যাবে। কিন্তু আমার কাছে যাবার জন্যে দুটো পা ছিল,কোন টাকা ছিল না। আমি হলাম এমন একটা মাটির ব্যাঙ্ক যেটা খুব যত্ন করে কেউ তাকে উঠিয়ে রেখে দিয়েছে। তবে,তাতে কখন পয়সা ফেলেনি। যেভাবেই হোক,ও পে করবে,তাও আমাকে যেতেই হবে। ওকে দিয়ে প্রমিজ করালাম আর কখনও আমার কাছে টাকা না থাকলে আমাকে যেতে বলবে না। ও রাজি হল। তখন বুঝতে পারিনি,ওর ঐ পণ ভাঙ্গার প্রয়োজনটাই ওর আর আসবে না। যাই হোক তখনকার ও আর এখনকার আমাকে ওখানে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতে দিয়ে আমি চলে এলাম দি গ্রেট রেড ব্রিক বিল্ডিং এর সামনে। আহ হা হা হা! এটাও তো স্মৃতির খনি! ঐ যে তেঁতুল গাছ,তার পাশে কাঁঠাল গাছ। দুজন দুজনের কত কাছে,কিন্তু,কেউ কারো সান্নিধ্যে নেই।

পুরো ক্যাম্পাসটাকে আকাশ কান্নায় ভেজায়,ক্রুদ্ধতায় পোড়ায়। তবুও এর সূর্যের আলো ঢোকা করিডোর,হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজানোর সেই জানালার পাশেই আজীবন ,জীবন পাল্টে কেনার মত স্মৃতিগুলো থাকবে। হঠাৎ দেখলাম দোতলার ঐ জানালাটার পাশে তখনকার ও আর এখনকার আমি দাঁড়িয়ে আছি।
-ক্যাম্পে কদিন থাকবে তুমি?
-দেখি ফারুকী সাহেব কদিন রাখে।
-মোবাইলটা খোলা থাকবে তো আপনার,নাকি বন্ধ?
-দেখি ভাবনা চিন্তা করি।
-মানে কী? এমনভাবে বললে যেন আসছে মেয়ের নাম ঠিক করতে বলেছি?
-বেশি পেকে গেছো,তাই না?
-আচ্ছা,আমি যাই,স্যার খুঁজছে। তোমার মোবাইল,তুমি যা খুশি কর।
অল্প,কিন্তু পাগল করা চুলগুলোতে ঢেউ খেলিয়ে চলে যাচ্ছিল ও। আমি ডাকলাম।
-এই,শোন!
ওর ডান হাতটা টেনে নিয়ে হাতের পিঠে চুমু খেলাম। এমন একটা স্পর্শের সান্নিধ্য,যেটা এর আগে ভাবিনি কখনও। হঠাৎ থেমে যাওয়া সময়ের মোহ কাটিয়ে দেখলাম ওর মুখে বিস্ময়,মোহ আর ভালবাসা মেশানো এমন একটা হাসি,যেটার স্মৃতি নিয়ে আজীবন একা বেঁচে থাকা যায়।
-আহনাফ,তুমি না!!কালকে কি মুভি দেখেছিলে,শুনি!
-প্যাটিনসন-ই সব করে যাবে,আমাদের কপালে কিছু জুটবে না?
আচ্ছা,তুমি কালো নেইলপলিশ দাও কেন?
ওর হাতের আঙুলগুলো ধরতে ধরতে বলছিলাম।
-কালো নেইলপলিশ ছাড়া আর কোনটা দেই-ও না।
সূর্যটাকে মেঘ ঢেকে দিয়ে ঐ জানালাটা অন্ধকার করে দিল।

চার কদমে ৬ মাস পেরিয়ে এসে এবার তাকালাম ডান সাইডের বিল্ডিং এর ঐ করিডোরটায়। ঐ তো ঐ যে এখনকার আমি আর তখনকার ও।
ঐ সময়টায় আমার ভালবাসার রঙ্গিন ক্যানভাসটায় কেমন যেন ফিকে দাগ পড়তে শুরু করেছিল। বুঝছিলাম না,ওটা কি পোকায় করেছে,নাকি আমার ক্যানভাসটাই খারাপ ছিল।
-এই,তুমি সত্যি করে বলতো,আন্টি কি তোমাকে কিছু বলছে নাকি?
-না-তো।
-তাহলে কালকে তোমাকে টেক্সট-এ এত কিছু বললাম,তুমি কোন পজিটিভ রিপ্লাই দিলে না!
-এমনি,কিছু হয়নি। ভাল লাগছিল না।
তখন প্রথমবারের মত ওর কোমরে হাত রেখে বলতে শুরু করলাম আমার সাহিত্যিক মনের গলায় আঙ্গুল দিয়ে টেনে আনা ভালবাসা-“শোন,আমি বলছি না যখন-ই বৃষ্টি পড়বে,তোমার হাতে হাত রেখে আমিও বৃষ্টিতে ভিজব,কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজার পর যখন তোমার মাথা ধরে আসবে ,তখন সবসময় তোমার কপালে আমার হাত পাবে। আমি বলছিনা,তোমার জন্যে জ্যোৎস্নাভরা চাঁদ আর মিটমিট করা তারা এনে দেব। কারণ,তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার আকাশের দিকে তাকানোর সময় নেই। আমি বলবনা তোমার জন্যেই বেঁচে আছি,তবে মরতে হলে শুধু তোমার জন্যেই মরব। মোটেও বলবনা,আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে তুমি আছো,কিন্তু এটা সত্যি বলছি আমার ডাইরীর প্রতি একটা পাতায় তুমি আছো। আর বেশি কিছু বলবনা,শুধু বলব,আমি তোমায়-
আমার হাতটা নিজ কোমর থেকে সরিয়ে ও চলে গেল। সেদিন মনে করেছিলাম ওর হয়তোবা কোন কারণে মন খারাপ ছিল। কিন্তু,আমার প্রেমের ক্যানভাসের অয়েল পেইন্টটাই যে খারাপ ছিল,এটা আমি সেদিনও বুঝতে পারিনি। ওর জন্মদিনের মাত্র তিনদিন আগে এরকমটা,আমার বুকে একটা অদৃশ্য গভীর কালো দাগ এঁকে দিল। সেদিন বুঝলাম রঙ ছড়াতে তুলি লাগে না।

পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে একটা দিন পার করে এলাম। হাতের খুলে রাখা ঘড়িটা পকেট থেকে বের করে দেখলাম মাত্র বিকেল হতে শুরু করেছে। আবার রেখে দিলাম পকেটে। এখন তো আর কারও জন্যে সময় আলাদা করতে হয় না। তাই ওটা লাগে না। রাস্তার ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম কালো শার্ট পরা আহনাফ মুখ কালো করে কালো পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটছে। হঠাৎ দেখলাম,চারিদিক কালো হয়ে রাস্তার সোডিয়াম ল্যাম্পগুলো জ্বলে উঠল। বেচারা হাঁটতে হাঁটতে ল্যাম্পপোস্টের নিচে এসে বসল। ছেলেটা নির্ঘাত বোকা। যার জন্যে এত রাতে সে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে,সে হয়ত তখন কারো সাথে খুনসুটিতে ব্যস্ত।
-আমি আসবনা বাসায়। যা খুশি কর!
-হ্যাঁ একটা মেয়ের জন্যেই এত কিছু করছি।
-তোমার দু’হাজার টাকা দেয়া লাগবে না।
-হ্যাঁ ওকে কিছু একটা দেয়ার জন্যেই চেয়েছিলাম,চুরি তো করিনি,রাখি!!
ছেলেটা একদম বোকা। মিঃ হামিদ,তোমার যে কি হবে!! ভাল ভাল গিফট দিয়ে তো আর কাউকে আটকে রাখতে পারবে না। চিন্তিত এই ছেলেটাকে নিজের ফালতু চিন্তায় চিন্তিত হতে দিয়ে হলুদ আলোর সোডিয়াম ল্যাম্পের ছবি হতে উঠে এলাম নীল আকাশের নিচে। তখনও রেড ব্রিক বিল্ডিং এর লাল আভা আর বিকেল বেলার আকাশের নীল ছোঁয়া মিশে গড়ে ওঠা বেগুনী স্মৃতির কুয়াশার মাঝেই হাঁটছিলাম আমি। হাঁটতে হাঁটতে ঐ দিন পার করে,ওর জন্মদিনের দিন এসে বসলাম টিনবুড়োর নিচে। হ্যাঁ,এই তো সেই দিনটা। সকালবেলায় কি বৃষ্টি হয়েছিল!!দুপুরে দেখলাম রংধনু,বিকেলে জ্বলেছিলাম রোদের জ্বালায়। তখন বসে আমি বেনীআসহকলাটা দেখেছিলাম। রংধনুতে একটা রঙ খুঁজছিলাম,কালো রং,”বেনীআসহকালা”,হা হা হা! হঠাৎ দেখলাম আমার পাশের সিটটায় এখনকার ও আর ওর সবসময়কার “saviour friend” আর একটা ভোম্বল। বিশাল বড় একটা Mr.Teddy। হ্যাঁ,আমারই খালি গিফট দেয়া মানা।

-কিরে আজকে তোর বড়লোক জামাই তোকে কি দিবে? iPhone নাকি নাইফোন?
-ফালতু কথা বলিস না। আমার না সত্ত্বেও নিয়ে আসবে অর্থহীন কিছু একটা।
-“এই শোন আমি বলব না আমি তোমাকে ...”
-উফফ! চুপ কর তো! তুই আমাকে বল আমি কিভাবে ওকে বলব!
-Straightcut বলবি!!!
-আজকে ওর সাথে ঘুরবো আর দু’দিন পর ওকে Break-up এর কথা কিভাবে বলব?
-শোন,যেই লেবু টক না,ওটা ফ্রিজে রেখে লাভ নেই। তুই আজকেই ওকে বল। এবং ওর সাথে কোথাও যাবি না। এখানেই বলবি। বলে সরাসরি রিকশা নিবি। শর্মা হাউজ-এ যাবি,ওখানে আমি থাকব। দু’জনে গল্প করবো আর শর্মা খাবো।
-তুই আমার কে,হ্যাঁ?
-কেন,ভবিষ্যৎ জামাই !!!
-তাই নাকি? তা হবে না। আমরা মেয়েরা নেইলপলিশ কিভাবে কিনি জানিস না? এক-একটা নেই,হাতে লাগাই,যেটা খুব ভালো লাগে ওটা কিনে নিয়ে যাই।
-হুম হুম,যাই হোক,আজকেই তুই ওকে বলবি।
-দোস্ত, ও পুরা পাগল হয়ে যাবে। আজকেই বলব?
-ও যা খুশি হয়ে যাক। Shit happens, girl!!
আমার উনি চুপ করে রঙধনুর দিকে মুখ ফিরালেন। আর saviour friend এর বিশ্বস্ত হাতের একটা দেখলাম উনার কাঁধটাকে ভরসা দিচ্ছে।
নাহ! রঙধনুতে কালো রঙ নেই। মোবাইলটা বেজে উঠল।
-আরে মা! আমি সন্ধ্যায় আসব!
-আচ্ছা। রান্না করো। আসব। রাখি।
আমার এখনকার সেটটায় তখনকার একটা মেসেজ আসলো।
"Maeesha
dost tui jordana’r nail-polish kin."
ওহ! হ্যাঁ। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম নেইল পলিশের কি ব্র্যান্ড হয়।
"Roza
Nail-polish na niye shedin ek kouta bish niye jaiti."

এখনকার একটা মেসেজ ইচ্ছে করেই দেখলাম। comparison, huge.
পুড়ে যাওয়া রোদের নিচ দিয়ে সাইকেলে করে হামিদ সাহেব যাচ্ছেন কালো নেইলপলিশ আনতে। আমি যেতে না যেতেই আমার পাশের সিটটায় এখনকার ও এসে বসল। একটু পরেই তখনকার আহনাফের সাথে দেখা করবে। আচ্ছা আজকে এত রোদ! ওর তো পাগল হয়ে যাওয়ার কথা। একটু পরেই ব্যাগ থেকে ওর হাতপাখাটা বের করবে। এখনকার ওকে সবসময়কার মতো অপূর্ব লাগছে। কালো সালোয়ার কামিজ, কালো চুল, কাজল দেয়া কালো চোখ, শুধু ডান হাতে কালো নেইলপলিশ,শুধু বা-হাতে কালো চুড়ি আর মনে হয়তোবা একটা কালো উদ্দীপনা। অনেক ভালো লাগছিলো ওকে দেখতে। চরম একটা ভুল করে ফেললাম। হাত বাড়ালাম ওর দিকে। বুঝলাম তখন আমি স্মৃতির সাথে পাশা খেলছি। পানির নিচের মাছ তো উপরের নীল আকাশ দেখতেই পায়। কিন্তু,কখনো কি ছুঁতে পারে?
এখনকার আমি আসলো এতক্ষণে। ওর কালো জিন্সের বাম পকেটে একটা Jordana-র কালো নেইলপলিশ।এখন সাইকেলটা রেখে এখনকার ওর কাঁধে হাত রেখে পাশে এসে বসবে। চোখে চোখ রেখে বলবে Happy Birthday । সাথে কোন মনভুলানো সম্বন্ধ পদ।
-I Love you.
-আহনাফ,কেমন আছো?
-আজকেও তুমি reply দেবে না? তোমার হয়েছেটা কি?
-তোমাকে কালো জিন্সে ভালো মানিয়েছে। চল স্কুলের সামনে যাই।
-চল। কোথায় যাবে খেতে? বলো।
এখনকার আমি হাত ধরে এখনকার ওকে নিয়ে এলাম।
-এই শোন!কিছুই আনিনি শুধু এই কালো নেইলপলিশটা রাখো।
ডানপকেট থেকে কেন নেইলপলিশটা বের করলাম আমি? ও! বুঝেছি।স্মৃতির কুয়াশা কাটতে শুরু করেছে।
-আমার অনেক আছে,আহনাফ!
-এটা Special. তোমার হাতে দেয়া থাকলে হাজার জনের মাঝেও চিনবো তোমাকে।হা হা হাহ! আসলেই!
ঐ আহনাফ তখন ওর কালো নেইলপলিশ দেয়া আঙ্গুলগুলো গুণছিলো। এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ। ও ভাবতেও পারেনি আর পাঁচ সেকেন্ড পর ও কি শুনবে।
-আহনাফ! তোমাকে একটা কথা বলা দরকার। আজ বলতেই হবে!
রেগে যাওয়া সূর্য আমার কপাল হতে মাত্র ঘাম ঝরাতে শুরু করেছে।
-আহনাফ!আমার পক্ষে সম্ভব না। আজ থেকে তুমি-আমি আগেকার মতো একা পথে হাঁটবো। অনেকের ভীড়ে আমাকে আর না খুঁজলে আমি খুশি হব।
-কি বলছ তুমি!!!! এর মানে কি? এত বড় একটা decision এর কারণটাই বা কি? আমি কি করেছি? আমার কথাটা তুমি চিন্তা করলে না?
-আর একটা কথাও নয়,আহনাফ।তুমি কিছু করনি। আমি বলছি। আর শোন,আকাশের খোলা বুকে একটা পাখি না উড়লেও কিন্তু আকাশের রঙ নীল-ই থাকে। Move on man!!

দুই বছর এর এই মঞ্চনাটক এর পর্দা নামিয়ে দিয়ে,আগে থেকে ঠিক করে রাখা রিকশায় গিয়ে উঠলো ও। আর আহনাফ এর হাত হতে একটি কালো নেইলপলিশ কালো পিচঢালা রাস্তায় পড়ে রাস্তাটাকে নোংরা করে দিল। আহনাফ তখন সন্ধ্যার আলোর ফুটপাথ-এ এসে বসল ঠিক না করে রাখা চোখের জলটাকে বেরিয়ে আসতে দিতে। তার চোখের জলের ফোঁটাগুলো সন্ধ্যার হালকা কালোয় ঘন কালো নোংরা পানির ফোঁটার মত লাগছিল। এখনকার ঐ আহনাফকে নিজের মত থাকতে দিয়ে আমি সাইকেল নিয়ে উঠে এলাম। সেদিন-ও ছিল ১২ তারিখ। আজ সেই ১২-ই এপ্রিল। এক বছর-এর জমে ওঠা স্মৃতির কুয়াশা কাটিয়ে উঠে বেরিয়ে এলাম। একটা বছরে কিছুই পাল্টে নি। কিন্তু অনেক কিছুই আগের মত নেই। যেমন-আমার সাইকেল-এর পেছনের টায়ারটা পাল্টেছি। প্রথম টায়ারগুলোর জোড়া ভেঙ্গে গেছে,কিন্তু সাইকেল চলছে। আমারও তো তেমনি জীবনটা চলছে । কিন্তু,আমি জোড়াভাঙ্গা পথিক।
সাইকেলটাকে হাঁটাতে হাঁটাতে স্কুলের গেটের সামনে নিয়ে এলাম। সোডিয়াম কুপির আলোয় লালকুমারীকে একবার দেখে যাই।
-এই নামাও না!
চেনা কণ্ঠের দিকে তাকালাম।
সেই ডানহাতে কালো নেইলপলিশ। বাঁ-হাতে কালো চুড়ি। আমার দেয়া নেইলপলিশটা না হলেও দেখে ঠিক-ই চিনলাম।
অনেকের ভীড়ে তোমায় খুঁজিনি,কথা রেখেছি। আমার চেনা একজনের এখনকার রুপ এখনকার ও-কে দু’হাত ধরে নামাল।
-Happy Birthday again!!
-Aww!! I.....
বাকিটুকু না শুনে সামনে এগোতে লাগলাম। এটা হল বাস্তবতার ঠাণ্ডা হাওয়া। এসে সমস্ত গাঁ কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। বিশেষ দিনে বিশেষ আবহাওয়া!
বাসার দিকে যাচ্ছি,স্মৃতিকাতরতার জড়তা আমার গতি রুখছে।
বাস্তবতার নিষ্ঠুর বল আমাকে ঠেলছে।
-কাঁদব না আমি,করব না চিৎকার,
বলবো না কিছু,দেবো না ধিক্কার।
তোমার স্মৃতির ছায়ায়,শান্ত ঘুমের আশায়।
আমি বেঁচে আছি।
আমাকে বাঁচতে হবে তোমায় ছাড়া,
বুকের ভেতর আজ নেই কোন সাড়া।
আমি তবুও ভালো আছি।
ডানাকাটা পাখি হয়েও আমি উড়ছি,
পানির মাঝে থেকেও আমি পুড়ছি।
কিচ্ছু জানি না আমি,আমার বেঁচে থাকা দরকার,
কিন্তু এটা যে হয় না,হৃদয় ভাঙ্গনে ভেতরটা তোলপাড়।
তোমার ভালোবাসার গোলাপ আমি চাই না,
বরং ওর কাঁটাগুলো রেখে দিতে পারি।
তোমাকে কিছু বলব না,তোমাকে আমি ভুলবনা,
নীলাঞ্জনা,তোমার সাথে এই জনমের আড়ি।।

বিড়বিড় করতে করতে অর্ধেকটা পথ এসে পড়লাম,হঠাৎ জাকারিয়া ভাই ফোন দিল।
-ভাই আপনার কাগজ-পত্রের মাঝে এত রক্ত কেন? নতুন ক্ষুরটাতেও,কেন?
আপনার পাগলামি কি যাবে না? মিলিয়ে যাওয়া ধোঁয়ার গন্ধ শুঁকে আপনার লাভটা কি?
-জাকারিয়া ভাই,আমার শেলফ এর তৃতীয় তাকে দেখবেন,কাল কাগজে মোড়ানো একটা ভাঙ্গা কৌটা আছে। ওটা এখনই বের করে ফেলে দিন।

এখনকার আমি তখনকার আমি হয়ে সবসময়কার আমার মত মন খারাপ করা মুখ নিয়ে বুয়েটের বাজারে এসে ঢুকলাম। ঐ তো একটা ফার্মেসী।
-আঙ্কেল,কালো ব্যাণ্ডেজ হবে?

0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ