প্লাটফর্ম

মেহেদী পাতা ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৩:০০অপরাহ্ন বিবিধ ৩ মন্তব্য

ইরা বিভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । এই মুহূর্তে সে কমলাপুর রেইলস্টেশনের বারো নাম্বার প্ল্যাটফর্মে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তার ডান কাঁধে কদিন আগে নিউ মার্কেট থেকে কেনা চকলেট কালারের একটা লেদারের ব্যাগ ঝুলছে - দূর থেকে দেখে বোঝাই যায় না যে, ব্যাগটিতে দুই -তিন সেট জামা এবং এক সপ্তাহ চলার মত কিছু টাকাসহ খুঁটিনাটি বেশ কিছু জিনিস খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখা আছে । তবে মেয়েদের ব্যাগ তো ,তাই প্রয়োজনীয় ছোটখাটো সব জিনিস ই একটা মেয়ের ব্যাগে মিলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় - আর বাসা থেকে পালানোর মত একটা সময় যখন সামনে এসে দাঁড়ায় তখন কোন কিছুই ফেলে রাখার মত রিস্কটা আসলে নেওয়া যায়না । কিন্তু আশেপাশের সবকিছু ছাপিয়ে ইরার চোখ বারবার তার বাম হাতের দিকেই চলে যাচ্ছে - তাড়াহুড়ো করে সব জিনিসপাতি গুছিয়ে নিলেও সে তার রুপালী রঙের প্রিয় রিস্টওয়াচ টা হাতে লাগাতে ভুলে গিয়েছে , আর তার বিপত্তিটা এখন সে বেশ ভাল করেই টের পাচ্ছে । কয়টা বাজে সেই সময়টা জানা এখন আসলেই খুব দরকার – চাইলেই হয়ত সে তার ব্যাগের ফ্রন্ট পকেটে বন্ধ হয়ে থাকা মোবাইলটা অন করে ঘড়িটা দেখে নিতে পারে , কিন্তু কেন জানি তার সেই ইচ্ছেটাই হচ্ছেনা । মোবাইলটা অন করলেই হয়ত হুট করে কারো ফোন এসে যেতে পারে - কি দরকার ? রিতুন তাকে বারবার নিষেধ করে দিয়েছে - মোবাইল অন করে রাখার কোন দরকার নেই । সে একদম সময়মত চলে আসবে - তাই কোন দিক থেকেই কোনরকম রিস্ক নেওয়ার প্রশ্ন ই আসেনা । ধরা পড়ে গেলেই তো সব শেষ । ইরার গলার কাছে আটকে থাকা নিঃশ্বাসটা একটু একটু করে ধোঁয়ার মত বের হচ্ছে । ছেলেটা আর কত দেরি করবে এখানে আসতে ?

ইরা সময় জানবার জন্য আস্তে আস্তে হেঁটে যাত্রীদের ওয়েটিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল । আলো জ্বালা শহরের দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িতে এখন প্রায় রাত নয়টা বাজে - অথচ কুয়াশা নেমে আসা আলো আধারী এই রেইলস্টেশন দেখে সেটা বুঝবার ই উপায় নেই । ধোঁয়াটে শীতের হাড় কাঁপানো স্পর্শ রাতের বয়সটা কেমন যেন অদ্ভুতভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে - মনে হচ্ছে রাত্রির দ্বিপ্রহর চলছে । অস্বস্তিতে ইরার ভেতরটা খচখচ করছে । ট্রেন আসবার কথা সাড়ে নয়টায় - আর ঘড়িতে বেজে আছে নয়টা পাঁচ । অথচ এদিকে রিতুনের কোন খবরই নেই । ছেলেরা এমন কেন হয় ?

ওয়েটিং রুমের বদ্ধবদ্ধ ভাবটা ভাল না লাগায় ইরা আবার বাহিরে এসেই দাঁড়ায় । তার চোখের সামনে দুই তিন সারি রেইল লাইন - তাদের গন্তব্য অজানা কিন্তু সেই অজানা পথের গল্পে অনেকখানি সাস্পেন্স রয়েছে । ইরার মুখে কেন যেন হাসি ফুটে ওঠে - সে আজ যার হাত ধরে জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু করতে চাইছে, তাকে সাথে পেলে তাদের অজানার গল্পটা নিশ্চয়ই খুব একটা খারাপ হবেনা । গাধা টা নাহয় গাধামীটা একটু বেশিই করবে - অভিমানে সে নাহয় একটু বেশিই কাঁদবে , কিন্তু তাতে কিছু আসে যায়না । সেই ছোটবেলা থেকেই মেয়েটার রাগ আর অভিমান একটু বেশিই , আর রেগে গেলে বা অভিমান হলে তার দু হাতের আঙ্গুলগুলো কেমন যেন মুঠো পাকিয়ে যায় । কিন্তু ইরা খেয়াল করে দেখেছে , রিতুনের পাশে রেগে বসে থাকলে এই ছেলেটা কিভাবে যেন তার মুঠোর মাঝে নিজের আঙ্গুল গুলো মিলিয়ে দেয় । গাধামী একটু বেশি বলেই কি বিধাতা এই ছেলেটাকে কিছু অতিপ্রাকৃতিক উপায়ে ভালবাসবার ক্ষমতা দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন ? জানেনা ইরা , জানতেও চায়না , শুধু চায় তার এই ভাল লাগাটা বেঁচে থাকুক । তার এই মুগ্ধতাটুকু সজীব থাকুক ।

স্টেশনের বাইরে আঁধারটা গাঢ় হয়ে এসেছে - আলো আঁধারী ছায়ায় ইরার দুই হাতে কালচে হয়ে থাকা মেহেদীর ডিজাইনটা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা । দুইদিন পর পারিবারিকভাবে তার বিয়ের অনুষ্ঠান হবার কথা - বাসার মাঝে দুই পরিবারের মানুষজনের ব্যস্ত আনাগোনা । একজন এসে মুখে হলুদ লাগিয়ে দেয় তো আরেকজন এসে বলে , " ভাবী , মেহেদী এনেছি ! কই হাতটা দেও তো ! " এত মানুষ , অথচ সবার মাঝে থেকেও যেন আলাদা অস্তিত্ব তার - কোন কাজে হাত দিতে চাইলেই আপু আর আম্মু এগিয়ে এসে বলে , " থাক না , আর দুইটা দিন ই তো আছেন বাসায় ! ছোটবেলা থেকে কাজের কাজিগিরি তো বেশ দেখালেন , এই দুইদিন আপনার এমনিই ছুটি ! " মনটা খারাপ হয়ে যায় তার । পরিবারের মানুষগুলোকে ছেড়ে কেমন করে থাকা যায় - সে কেমন করে থাকবে ?

এই যে পরিবার , এটা ভালবাসার - যার কাছে ইরা যেতে চাইছে সে ও তো ভালবাসার ; অথচ একটার সাথে আরেকটার কি না কোন তুলনাই চলেনা - কি অদ্ভুত , তাইনা ? ইরার সবসময় মনে হয় , ভালবাসার আসলে অনেক কয়টা স্কেল আছে আর এই স্কেলগুলো সবসময় একটা থেকে আরেকটা আলাদা হয়ে থাকে - অথচ প্রতিটা স্কেল ই নিজের মাঝে স্বকীয় । আর সেই একেকটা স্কেলে সব ভালবাসাই সবসময় ম্যাক্সিমাম লেভেলে থাকে ; কাউকে কখনো কম বা বেশি ভালবাসা যায়না । পার্থিব স্কেলে ঈশ্বর যেমন সবটুকু ভালবাসা পান , তেমনি পরিবারের স্কেলে আব্বু- আম্মু- আপু । রিতুনের প্রতি ভালবাসাটা আবার হৃদয়ের স্কেলে মাপতে হবে । কিন্তু ভালবাসাটা সবসময় ই ম্যাক্সিমাম - এ জিনিস কখনো কম হতে পারেনা । কাউকে কম ভালবাসা মানেই সেটা ঠিক ভালবাসা না , সেটা অন্য কিছু ।

সোয়া নয়টা বাজতে চলেছে - অথচ রিতুনের র কেও দেখা যাচ্ছেনা । মেজাজটা খারাপ হচ্ছে ইরার - খুন করবে , রিতুনকে সে খুন করবে ; ও যদি নাও আসে খুঁজে বের করে নিয়ে আজ রাতেই তাকে খুন করবে ! কোন মানে হয় ? কত কাহিনী করে সে এখানে এসেছে । বাসায় সবার চোখ ই তার দিকে - অথচ এর মাঝেও সে রিতুনের একটা ফোন আর দুইটা টেক্সট বুঝে নিয়েই তৈরি হয়েছে ; সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়েও এসেছে । আর রিতুনের তো কোন দিক থেকেই কোন ঝামেলা নেই , অথচ তারপরেও কিনা ছেলেটা অনবরত টেনশন আর কম্প্রেশন দিয়ে ইরার মাথার মগজটা একদম সেদ্ধ করে ফেলছে । এগুলো কোন ধরনের অভ্যাস ?

ইরা কখনোই ভাবেনি তাকে বাসা থেকে এভাবে পালাতে হতে পারে , কারন বাসা থেকে পালানোর কোন সম্ভাবনাই ছিল না । রিতুন যেদিন তার বিয়ের তারিখটা জেনে ফেলল , সেদিন ইতস্তত করে ইরার হাতটা ধরে বলেছিল , " ইরা , আই এম সরি ,এখন আর সম্ভব না পালিয়ে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করা - ছেলেমানুষি মানায় না এসবে ।" ইরাও কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মলিনভাবে হেসে ফেলেছিল - কথা বাড়ায়নি আর , ঠিক করেছিল তার কপালে যেভাবে বিয়ে লেখা আছে সেটাই মেনে নেবে । একারনেই রিতুন কে সে একবার ও মনে করিয়ে দেয়নি তার প্রমিজের কথা - চুপচাপ ভুলে যাবার অভিনয় করে গেছে । চার বছর ধরে দুজনের হাসি , দুঃখ আর অভিমানের বেড়া জড়িয়ে যে ভালবাসা লতার মতন বেড়ে উঠেছে তাকে কখনো নিজের সুখের জন্য আঘাত করা যায়না । রিতুন ই যখন চাচ্ছেনা , তবে কেন তাকে বিপদে ফেলতে যাবে সে ? কিন্তু আজ যখন বিয়ের দুইদিন বাকি , তখন ঠিক সকাল বেলা রিতুন ফোন দিয়ে বলল , " ইরা , চল পালাই ।" তারপর ইরার অনেকবার " না " বলা যখন শেষমেশ " হ্যা " হয়ে গেল , তখন পালিয়ে যাওয়া এবং পালানো পরবর্তী প্ল্যানগুলো তৈরি হতে খুব বেশি সময় নিল না । তাদেরকে মিনিমাম এক সপ্তাহ পালিয়ে থাকতে হবে , তাই রিতুন তার নতুন চাকরির এই মাসের বেতন পুরোটাই রেখে দিয়েছে - কি ভেবে যেন ইরাও কিছু টাকা নিয়ে রেখেছে - হাতে বাড়তি টাকা থাকা ভালো বলে । দুজনের চোখেই যে আবছা নীল রঙ্গা স্বপ্ন - আর সেই স্বপ্নই ইরাকে টেনে নিয়ে এসেছে এই স্টেশন পর্যন্ত ।

প্ল্যাটফর্ম ১২ তে প্রতীক্ষিত ট্রেনটি এসে গিয়েছে দুই মিনিট হল । ইরার একইসাথে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এবং পুরনো স্বভাব মতই সেই রাগে তার দুই হাত মুঠো হয়ে যাচ্ছে । একা একা দাঁত কিড়মিড় করতে করতেই সে অনুভব করতে পারল , কেউ একজন তার মুঠো করে রাখা আঙ্গুলগুলোর মাঝে নিজের আঙ্গুল মিলিয়ে দিচ্ছে । ইরা ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে গরম চোখে রিতুনের দিকে তাকাল । তারপর কাঁধে রাখা ব্যাগটা দিয়েই পেটাতে শুরু করল বেচারাকে । কয়েক সেকেন্ড মার খাবার পর রিতুন নিরীহ মুখ নিয়ে ইরার হাত চেপে ধরে বলল , " ম্যাডাম ! পেটানোর জন্য আমাকে তো সারাজীবন ই পাবেন - কিন্তু এখন যদি পেটান ,এই ট্রেন কিন্তু তাহলে মিস হয়ে যাবে ! " এই বলেই রিতুন ট্রেনের দিকে এগোনো শুরু করল । ইরার রাগ তখনো কমে নি , কিন্তু যার উপরে এত রাগ তার হাতের মুঠোতেই যে সে এখন আটকে আছে । আটকে আছে এই মুহূর্তে এবং আটকে থাকবে জীবনের বাকি মুহূর্তগুলো পর্যন্ত ।

ট্রেন চলা শুরু করতেই রিতুন হাত উঠিয়ে ইরার দিকে হাই ফাইভ তুলে বলল , " ইয়েস ম্যাডাম ! পেরেছি , আমরা পেরেছি !" ইরা হালকা ভাবে হাই ফাইভ মিলিয়ে বলল , " শেষ মুহূর্তে এসে যদি না পারতা , তাহলে রিতুন – ট্রেইনের ইঞ্জিনের কসম , তোমাকে খুন করে আমি জেলে গিয়ে ডিনার করতাম ।"

রিতুন হাসতে হাসতে বলল , " আমি এসেছি বিশ মিনিট আগেই – তোমাকে তো এখন কাছে থেকেই দেখব । কিন্তু দূর থেকে দেখার মাঝে যে একটা ছ্যাচড়া টাইপ ভাল লাগা আছে – সেটা তো তোমরা মেয়েরা বুঝবা না । চোখ পাকিও না - ভয় পাই , তাছাড়া এতক্ষন ধরে পালিয়ে যাওয়ার একটা আবহাওয়াও তো তৈরি করলাম । আমাকে হারাবার ভয়ই যদি না পাও বালিকা , তাহলে কিসের জন্য এত আয়োজন করে পালানো ? "

- " হু , তোমার মস্তিষ্ক ! পালিয়ে ঠিক কাজ করিনাই , ভুল করছি । বাসায় কি অবস্থা কে জানে ? "

রিতুন দাঁত কেলিয়ে বলল , " হু তারমাঝে আবার মোবাইল অফ । কি নোট লিখে আসছো বাসায় ?"

- " কি আবার - এই লিখলাম , " আমি তোমাদের জামাইয়ের সাথে পালাচ্ছি । রিতুন আর আমার যৌথ ইচ্ছা পালিয়ে বিয়ে করার । কিছু কিছু আনুষ্ঠানিকতা নাটকীয় হলেই ভাল লাগে - ইতি হ্যান ত্যান ।"

রিতুন হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে । হাসি একটি সংক্রামক ব্যাধি হওয়াতে ইরাও আর মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে পারেনা । তাদের দুজনের মত পাগল আর কয়টা আছে পৃথিবীতে ?

কাহিনীর শুরুটা হয়েছিল আসলে অনেক আগে - ভার্সিটি লাইফের একদম শুরুর দিকে ইরা একদিন রিতুনের সামনে নিতান্তই মজার ছলে বলেছিল , " বিয়ে করলে পালিয়েই বিয়ে করব , পুরা থ্রিলিং একটা কাহিনী হবে - ইয়েস ! " এই কথাটা বলার পরে হয়ত ভুলেই গিয়েছিল সে , কিন্তু ভুলতে পারেনি রিতুন । ইরা তো আর তখন জানতো না , রিতুনের মনেও একই ইচ্ছে ছিল ! তারপর দিন কেটে গেছে - ইরার জীবনের সাথে রিতুনের জীবন মিলেমিশে এক হয়ে গেছে , কিন্তু ইরার কথাটিকে আর কখনোই ছাড়তে পারেনি ছেলেটা । তাই দুজন মিলেই মাঝেমাঝে পালিয়ে বিয়ে করার অদ্ভুত সব প্ল্যান ফাঁদত আর হাসাহাসি করত । তার উপরে রিতুন আবার একদিন প্রমিজ করে বসল , সে ইরাকে নিয়ে পালিয়ে যেয়েই বিয়ে করবে ! আর ইরাও সাথেসাথে 'হ্যা' বলে দিয়েছিল - তার যে ভাল লাগত , খুব ভাল লাগত !

কিন্তু ব্যাটে বলে বাউন্ডারি হচ্ছিল না কিছুতেই । কারন দুজনের ফ্যামিলিই দুজনকে পছন্দ করে বসল খুব করে । এই সপ্তাহে রিতুনের মা নতুন রেসিপি টেস্ট করাতে ইরাকে ডেকে আনেন, তো ঐ সপ্তাহে রিতুনের ডাক পড়ে ইরার বাবার সাথে বার্সা - রিয়েলের খেলা দেখবার জন্যে । তাই পড়াশোনার পার্ট চুকে যেতেই এক আর একে দুই মেলানোর সমীকরন করা শুরু হয়ে গেল । কিন্তু এত কিছু হবে আর ভালবাসার প্রথম ইচ্ছেটা অপূর্ণ থাকবে , তা কেমন করে হয় ? আর তারপর ... তারপরের কাহিনী তো পাঠক জানেন ই , তাইনা ?

রাত বাড়বার সাথে সাথে প্ল্যাটফর্ম ১২ থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটার গতি বেড়ে চলেছে সমান তালে । ট্রেনের শেষ থেকে দ্বিতীয় বগির দুইজন তরুন তরুনি ছাড়া বাকিরা মোটামুটি ঝিমিয়ে নিচ্ছে । তাদের দুজনের হাসাহাসির মৃদু শব্দে কিছু মানুষজন মোটামুটি বিরক্ত । কেউ কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও দিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু এসব নিয়ে আমার গল্পের নায়ক নায়িকার কোনই মাথাব্যথা নেই । রিতুন নামের এলোমেলো চুলের ছেলেটা নিশ্চিন্তে অভিনয় করে দেখাচ্ছে , বাসার প্রতিটা মানুষ তাদের উধাও হয়ে যাওয়ায় কিরকম প্রতিক্রিয়া করছে । আর ইরা নামের চশমা পরা মেয়েটা হাসিহাসি মুখে ছেলেটার অভিনয় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে ।

কিন্তু দুজনের কেউই যেটা দেখছেনা সেটা হল, পাশের সিট থেকে পঞ্চাশোদ্ধ বয়েসের এক দম্পতি খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের শক্ত করে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন । অনেক দিন আগের ঠিক এমন একটি রাতে এই প্রবীন মানুষ দুজনও এই এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থেকেই বেছে নিয়েছিলেন তাদের জীবনের নতুন গন্তব্যে যাবার একটি ট্রেন । হয়ত তাদের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন ছিল , কিন্তু তবুও ইরা আর রিতুন কে দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি একটুও । ঐ যে , চোখেমুখে ছড়িয়ে থাকা ভালবাসার ছাপ – সেটা না হয় পুরনো , না হয় রংচটা – যুগযুগ ধরে একই রকম রঙ্গিন । সেই একই রকম ভাবে ধরে রাখা হাত দেখে তারা মুগ্ধতা চেপে রাখতে পারছেন না এই বয়সে এসেও । আপনিই বলুন পাঠক , খুব শক্ত করে হাত ধরে রাখার মতন এমন শুদ্ধতম দৃশ্য এই পৃথিবীতে কি আর অন্যকিছু হতে পারে ??? লেখকের জানা নাই !!!

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ