আল্লাহপাক সকলের প্রার্থনাই শ্রবণ করেন : দয়ালু আল্লাহ সকলের প্রার্থনা শ্রবণ করেন ও  মঞ্জুর করেন। ফেরাউন আখেরাত ত্যাগ করে দুনীয়ার রাজত্ব ও ক্ষমতায় সন্তুষ্ট ছিল। এ সম্পর্কীত একটি কাহিনী রয়েছে। মিশরের কৃষিকাজ নির্ভর করতো নীল নদের জোয়ারের উপর ভিত্তি করে। একবার নীল নদের জলোচ্ছাস বন্ধ হয়ে গেলে প্রজাগণ ফেরাউনের নিকট গিয়ে জানালো, তুমি নিজের খোদায়ী দাবী কর; আর আমরা পানির অভাবে দুর্ভীক্ষে মরতে বসেছি। তোমার এই খোদায়ী কোন দিন কাজে লাগবে? ফেরাউন প্রজাদের প্রশ্নের উত্তরে বললো, আগামীকাল নীল নদে আবশ্যই জলোচ্ছাস হবে। রাতে সে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ! আমি এমন উপযুক্ত যদিও নই যে, আমার কোন দু’য়া কবুল হবে, কিন্তু আমার সাহস দেখুন আমি আপনাকে ত্যাগ করেছি, বেহেশতের আশা বিসর্জন দিয়েছি, অনন্তকালের জাহান্নামের শাস্তিকে বরণ করেছি। এ সমস্ত কিছুর বিনিময়ে শুধু একটা প্রার্থনা যে,  আপনি আমার একটি দু’য়া কবুল করুন। আমি নীল নদকে আদেশ করামাত্রই যেন তার মধ্যে জলোচ্ছাস আরম্ভ হয়। এর ফলে তার প্রার্থনা কবুল হল এবং নীল নদে জলোচ্ছাসও হল। অভিশপ্ত কাফেরের দু’য়া কিভাবে কবুল হল? এমন প্রশ্ন করে বসবেন না যেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়ালু, তিনি সকলের দু’য়াই কবুল করেন। সবচেয়ে অধিক অভিসাপগ্রস্থ শয়তানের প্রার্থনাও আল্লাহ মঞ্জুর করেছিলেন। আবার সময়টিও এমন ছিল যখন মহান আল্লাহ শয়তানের প্রতি মারাত্বক রকম রাগান্বিত ছিলেন। শয়তান এমন প্রার্থনা করেছিল যা সাধারণত কেউ করে থাকে না, বিচিত্র রাকমের প্রার্থনা যখন কবুল হওয়ার কোন অবকাশও ছিল না। সে দু’য়া করল, “হে আল্লাহ! আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দান করুন।” অথচ আল্লাহর তরফ থেকে অভিশাপ এসেছিল- “ নিশ্চয় তোর প্রতি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমার অভিশাপ।” এমন বিচিত্র সময়ে বিচিত্র রকমের প্রার্থনা যখন কবুল হয়ে গেল তখন ফিরাউনের দু’য়া কবুল হয়ে যাওয়া এমন কি আর অসম্ভব। আল্লাহ তায়ালা শয়তানের দু’য়া কবুল করলেন, তোমাকে কেয়ামত পর্যান্ত অবকাশ দেওয়া হল।

দৃষ্টান্ত দু’টি মুসলমানদের জন্য বড়ই আশাপ্রদ। কেননা আল্লাহর দরবারে যখন তার শত্রুর দু’য়াও কবুল হয় তখন একত্ববাদে বিশ্বাসী আল্লাহর জিকিরকারী গোলামের দু’য়া কিভাবে নামঞ্জুর হতে পারে।

দুনীয়া ও আখেরাতের কল্যান চেয়ে দু’আ করতে হবে : দুনীয়া ও আখেরাতের কল্যান চেয়ে দু’আ করতে হবে। হযরত আবদুল আজিজ বিন সুহায়েব বলেন, হযরত কাতাদা হযরত আনাসকে রা. জিজ্ঞাসা করেন, হযরত রাসুল স. কোন দুয়া দ্বারা বেশীরভাগ দু’য়া করতেন? হযরত আনাস রা. বলেন- বেশিরভাগ তিনি এই দু’য়া করতেন- “ হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে দুনীয়াতেও কল্যান দান কর ও পরকালেও কল্যান বিহিত কর এবং দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।” কাতাদা বলেন, হযরত আনাস রা. যখনই কোন দু’আ করার ইচ্ছা করতেন, এ দু’য়া পড়তেন। অন্য কোন দু’য়া করতে চাইলে এ দু’য়ার সাথে করতেন।

আজকাল দু’য়ার উদ্দেশ্য অনেকটা দুনীয়া লাভের হাতিয়ার হয়ে পড়েছে। জৈনক অফিসার তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করত, “তুমি নামায পড়ে কি পেলে?” এটা শুধু কথার কথা নয় বরং সবৈব সত্যি। আজকাল মহান আল্লাহর এবাদতের পিছনেও কারো কারো দুনীয়া লাভের উদ্দেশ্য কাজ করে থাকে (আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন)। একজন অফিসার মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ গ্রহণ করতেন। আবার নামাযের প্রতি তিনি নিষ্ঠাবান ছিলেন। ফজরের নামাযের পরে এশরাক পর্যন্ত তিনি ওযিফা পাঠ করতেন। পীর সাহেবের নিষেধের কারণে তিনি ওযিফা আদায়ের সময় মুখে কোন কথা বলতেন না। মামলায় জড়িত তদবিরকারীদের সাথে তিনি ইশারায় কথা বলতেন। যেমন কোন আগন্তুক তাকে কোন মামলার তদবিরের বিনিময়ে একশত টাকা দিতে সম্মত হলে এক আঙ্গুল দেখাতেন। তিনি সম্মত না হলে দুই আঙ্গুল দেখাতেন অর্থাৎ দুইশত টাকায় তদবির সার্বস্থ করতেন। যেমনটা রফা হতো তদানুযায়ী ঘুষের টাকা গ্রহণ করার জন্য যায়নামাযের কোনা তুলে ধরতেন এবং সেখানেই টাকা জমা পড়তো। এশরাকের নামায পর্যন্ত তিনি কয়েকশ টাকা নিয়ে স্থান ত্যাগ করতেন। সত্য কথা বলতে গেলে আজকাল বিনিময় বা পাওয়া বলতে এটাকেই বুঝায়। এই ধরণের লোক আমাদের সমাজে কম নয়।

আজকাল দুনীয়া লাভের জন্যও দু’য়া করা হয়। মালে বরকত, চাকুরী লাভ, ঋণ মুক্তি, সুস্থতা ইত্যাদি উদ্দেশ্যকে মুখ্য করে দু’য়া করা হয়। দুনীয়া লাভের উদ্দেশ্যে দু’য়া করা নাযায়েজ তা নয় বরং দুনীয়াকে প্রাধান্য না দেয়া এবং আখেরাতের কামিয়াবির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দুনীয়া চাওয়াটাই উদ্দেশ্য হওয়া বঞ্চনীয়। (চলবে) 

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ