রাস্তার পাশে এমন দোকান নেই বাংলাদেশে এমন রাস্তা বিরল। আমাদের শহরের বাসার গেট থেকে বাইরে বের হয়ে এক মিনিটের দূরত্বের মধ্যে এমন চারটি দোকান। ঢাকার বাসার গেট থেকে রাস্তার ঠিক ওপারেই দশ কদম দূরত্বে একটি, দুই মিনিট দূরত্বে আরো পাঁচটি এমন দোকান। ঢাকার উত্তরার বাসা পুরো আবাসিক এলাকায়, জেলা শহরের বাসাও আবাসিক এলাকায়। অথচ এমন দোকানের অভাব নেই।
ঢাকা শহর বা দেশের অন্যন্য বিভাগীয় জেলা শহরে একই চিত্র দেখা যাবে। ছবির এই দোকানটি কিছুটা বড়। এখানে বাসা বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। বাজারে না গিয়ে এলাকার লোকজন দ্রুত প্রয়োজন মিটানোর জন্য এসব দোকান থেকে তাৎক্ষনিক কিছু কেনা কাটা করতে পারেন, যদিও দাম কিছুটা বেশী থাকে বাজারের তুলনায়। এসব দোকানে অনেক কিছুর সাথে তিনটি দ্রব্য অবশ্যই পাওয়া যাবে। সিগারেট, পান এবং চা।
সিগারেট এবং পান বিক্রীর জন্য গলায় বাক্স ঝুলিয়ে বিক্রেতার সংখ্যা কম নয়। রাস্তার পাশে ছোট ছোট টং ঘরের মত দোকান, ভ্যান ইত্যাদিতেও সিগারেট, পান, চা পাওয়া যায়। শুধু সিগারেট বিক্রেতাও আছে।

এর অর্থ হচ্ছে সিগারেট একেবারে হাতের নাগালেই পাওয়া যায় আমাদের দেশের যে কোন স্থানে। শহরের একদম হাতের নাগালে। গ্রামেও আজকাল সহজলভ্য। এই যে হাতের কাছে সিগারেট, এতে অনেক ধূমপায়ী ইচ্ছে করলেও সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারেন না।

আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেছি। এত হাতের কাছে সিগারেট আর চা অন্য কোনো দেশে দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, জনসংখ্যার তুলনায় ধূমপায়ীর সংখ্যা বাংলাদেশেই বেশী।
প্রথম যখন থাইল্যান্ড যাই তখন পর্যটকদের এলাকা সুকুমভিট  হোটেলে থেকেছি। যেহেতু বিশ্বের সমস্ত দেশের পর্যটকরা এই এলাকায় থাকে তাই সিগারেট বা অন্যান্য নেশা দ্রব্য খুব সহজ লভ্য এই এলাকায়। এরপর ব্যংকক যতবার গিয়েছি, ততবার উঠেছি ব্যংকক হাসপাতালের কাছের একটি হোটেলে। কাছাকাছি সিগারেট পাওয়া যায় এমন দোকান ছিল না। সিগারেটে ব্যপক নেশার কারণে ট্যাক্সিতে বাংলাদেশী ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে সিগারেট কিনেছি ৪০০ টাকায়। অর্থাৎ এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে আমার ১২০০ টাকায় খরচ হতো। এই দূরত্বের কারণে সিগারেট খাওয়া কমে যেত ব্যংকক গেলে।
সিঙ্গাপুরে গেলে এক প্যাকেটের বেশী সিগারেট নিয়ে যাওয়া যায় না। ওখানে মোস্তফা মার্কেট বা ইন্ডিয়ান এলাকায় সিগারেট পাওয়া যায় সহজে। অন্যান্য এলাকায় না। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের দোকান যে রাস্তায় সেখানে সিগারেট সহজ লভ্য। রাস্তায় বিক্রী করে বাঙ্গালীরা আমাদের দেশের মতই। অন্যান্য এলাকায় তেমন পাওয়া যায় না। দক্ষিন কোরিয়ার সিউলে সিগারেট সহজলভ্য নয়। 7 Eleven ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ব্যতীত পাওয়া যায় না। উত্তর কোরিয়ার পিয়ং ইয়ং এ সরকারের গেস্ট হিসেবে গিয়েছি দুইবার, রোজ এক প্যাকেট সিগারেট পেতাম সরকারের তরফ থেকে, তবে সহজ লভ্য নয়। ফিলিপাইনের ম্যানিলায় দুই কিলোমিটার হেটে সিগারেট  কিনতে হতো বলে খাওয়া বাদ।
কানাডার টরেন্ট, মন্ট্রিলে সিগারেট কিনেছি অনেক দূরে বন্ধুর গাড়িতে বা ট্রেনে গিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গিয়ে সিগারেট না খেতে পেরে তো মরে যাবার অবস্থা। যার বাসায় উঠেছিলাম, তার সাথে বাঙ্গালী এলাকায় গিয়ে কিনেছি। দাম ১৪ ডলার এক প্যাকেট। চীনের বেইজিং, সাংহাই শহরে সিগারেট তেমন পাওয়া যায় না। পরে এমন অবস্থা হয়েছে যে বিদেশ ভ্রমণের সময় সিগারেটই খেতাম না, সিগারেটের দোকানের দূরত্বের কারণে। দেশের এয়ারপোর্টের বাইরে এসেই সিগারেট মহা উল্লাসে টান দিতাম।

আমি আমার কথাই এখানে বলি, আমাদের দেশেও থাকা কালীন সময়ে বর্বর্তমানে  সিগারেট খাচ্ছি দিনে এক প্যাকেট ( ২০ টি ), অথচ বিদেশে গিয়ে খাচ্ছি না। বিদেশে গিয়ে সিগারেট না খেয়েও থাকতে পারছি। বিদেশে কি সিগারেটে আসক্তি থাকেন আমার? অবশ্যই থাকে, কিন্তু হাতের কাছে না থাকায় সে আসক্তি উপেক্ষিত থাকে। আবার দেশে বসে কেন ধূমপান ছাড়া থাকতে পারিনা বিদেশের মত? এখানে হাত বাড়ালেই পাচ্ছি বলে।

================================
এই পোষ্ট ধূমপানকে উৎসাহিত করার জন্য নয়। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই খারাপ। ইদানীং সিগারেট খাচ্ছি আবার খুব। আর এটি বাদ দিতে পারব না মনে হয়, অথচ বাদ দেয়া উচিৎ আমার।

 

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ