দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসে, তখন আমরা ও গর্বের জোয়ারে ভাসি। আমার বাড়ির সামনের রাস্তাটা যখন পাকা তখন আসলেই আমি গর্বিত হই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌছে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিদ্যুত,পাকা রাস্তা,স্কুল কলেজ,কমিউনিটি ক্লিনিক উন্নতির চরম শিখরে আজ বাংলাদেশ। ভাবতে ভালো লাগে জনগনের টাকা জনগনের কাজে লাগছে। কিন্তু জনগনের টাকা জনগনের কাজে সঠিকভাবে আদৌ লাগছে তো ?
রাস্তাঘাট, কার্লভার্ট, ব্রিজ এসব টিকছে তো? যতদিন তার টেকার কথা? আমার জানামতে আমাদের দেশের রাস্তাঘাট, মফস্বলের ছোট খাটো কার্লভার্ট বা ব্রিজ টিকছে না বেশিদিন। কিন্তু কেন? কে দ্বায়ী এর জন্য? সরকার ? জনগন ? না, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান? আসলে এক কথায় সবাই দায়ী। সরকার দায়ী ঠিকমতো পর্যবেক্ষনের অভাবের জন্য, ক্ষমতার পালাবদলে এসব প্রতিষ্ঠানে দলীয়ট লোক নিয়োগ, সে সৎ হোক বা দুর্নীতিবাজ হোক দেখার দরকার নেই। সরকারের দরকার দলের লোক। জনগনের দোষ তাদের অজ্ঞতা এবং গা সওয়া ভাব।
আমরা দেখেছি, রাস্তা অনুযায়ী সেখানে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে, কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে না, সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা কেউ দিচ্ছে না, কেউ জানেই না সে নির্দেশনা। জানলেও মানেই না। সবাই মনে করে এটা শুধু তার বাপের টাকায় নির্মাণ করা সড়ক। যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। ট্রাফিক পুলিশ এই আইন সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত থাকেন, কোথায় কোন রাস্তায় কোন যানটি যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু সে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে মালবোঝাই ট্রাক, বাস ধারন ক্ষমতার বাইরের সড়কে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে। আমার কাছে কথা হচ্ছে যখন মিডিয়াতে একটা খবর ছাপানো হয় অমুক সড়কে, অমুক ব্রিজ ভেঙ্গে বাস বা ট্রাক খালে। ঠিক তখনই ঐ ট্রাক মালিকের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যাবস্থা নেওয়া হয় না কেন ? ঐ সড়কে কোন ট্রাফিক পুলিশ ডিউটিতে ছিলো তার বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয় না ?
যাই হোক, আমরা প্রায়ই মিডিয়ার কল্যাণে টিভিতে দেখি, অমুক ব্রিজ বা কার্লভার্ট ভেঙ্গে ট্রাক খালে। অমুক শহরের সাথে অমুক শহরের যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ। আসলে ঐ ট্রাক পার করার ধারন ক্ষমতা ঐ ব্রিজের আছে কিনা দেখার কি কেউ নেই? এর কি কোনো নিতিমালা নেই? যদি থাকে তবে কেন তাৎক্ষনিক ঐ ট্রাক মালিককে জেল জরিমানা করা হয় না? মিডিয়াতে কেন পরবর্তীতে দেখানো হয় না, এই বিষয়ে কেউ শাস্তি পেল কিনা ? অথবা কেন ধিক্কার জানানো হয় না, বলা হয় না যে, ঐ ট্রাকের ঐ রাস্তায় যাওয়ার একতিয়ার নেই। থাক মিডিয়ার দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে আমি আসিনি। আর যদি আসি রাস্তা নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে আলোচনা করতে তবে আমার লেখাই শেষ হবে না। শুধু একটা কথা বলি,ক্ষমতার অপব্যবহারে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো এমন নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে যে আমরা দেখতে পাই,এক বছর যেতে না যেতেই রাস্তায় বড় বড় গর্ত।
এবার আসি উন্নয়নের আরেক সিঁড়ি রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের কথায়। আসলে সিঁড়িতে উঠি আমরা ধাপ পার হয়ে উপরে উঠি। মানুষের জীবন যাপন ও এক একটা সিঁড়ি। জীবনের চলার সিঁড়িতে আমরা পা রাখি একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌছানোর জন্য। জীবনের সেই সিঁড়ির শেষ পর্যায় বলতে কেউ বুঝি সর্গ অথবা নরক।
রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র ও দক্ষিণ বঙ্গের দোযখের সিঁড়ি। আমরা সবাই জানি প্রতিটা কর্মের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আছে। রামপালের কোল ঘেঁষেই সুন্দরবন। মানে সুন্দরবনের কোল ঘেঁষেই রামপাল। তাই রামপাল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের উপর প্রভাব পড়বেই।
সুন্দরবন আসলেই দক্ষিণ অঞ্চল অর্থাৎ পুরো বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। অথচ এই সুন্দরবন নিয়ে চলছে নানক ষড়যন্ত্র। কখনো আগুন কখনো তেল জাহাজ ডুবি। এর কোনো সঠিক তদন্ত নেই।
তাপ বিদ্যৎ কেন্দ্র নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইনা। কারণ এই বিষয়গুলো বড়ই জটিল। শুধু তাপের অর্থ ও ধর্ম মতে তাপের প্রভাবে পরিবেশের গাছপালার কতোটা ক্ষতি হয় তা আমরা সবাই জানি। আমি মোংলার মেয়ে, তাই সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দা হয়েও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১০ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত দিলেও আমরা অতোটা ভয় পেতাম না। কারন সমুদ্রে ওঠা ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের কাছে বাধা পেয়ে দুর্বল হয়ে উপকূলে এসে পৌছায়। তাই খেয়াল রাখবেন, ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ঐ দক্ষিণ অঞ্চলের তেমন একটা ক্ষতি হয় না।
একটা সময় আমাদের বোকামির কারণে এই সুন্দরবন ধ্বংস হলে আমরা বাঁচব না।
১৭টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
তুঘলকি চিন্তাটা কী তাই তো বলেননি আপু। 🙁
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ব্রিজ-কালভার্ট তথা সুন্দরবনের ধ্বংস ঠেকানোর বুদ্ধি পরামর্শ কই? 🙁
মৌনতা রিতু
এর জন্য যা করতে পারি তা একজন নাগরিক হিসেবে বলতে পারি তা পরের পর্বেই লিখি ?
ইকবাল কবীর
সত্যি বলতে কিছু বলার নাই প্রশাসনকে। সবাই আছে যার যার আখের গোছাতে। দেশের দিকে তাকানোর সময় কই!!??
মৌনতা রিতু
একদম ঠিক। তবুও চোখ খুলতে হবে। মুখ খুলতে হবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
তুঘলকি শাসন আমল থেকে আমরা এ জীবনে কোনোদিনও মুক্তি পাবো না আপু।
আপনি লিখে যাবেন, আমরাই পড়বো। যাদের অব্যবস্থার জন্য আমাদের আজকের এ জীবন-যাত্রা, তারা কেউই দেখবেনা।
যারা জেগে ঘুমায় তাদের কি আর জাগানো যায়?
মৌনতা রিতু
জাগাতে হবে। এই দেশটা সবার।
আবু খায়ের আনিছ
রোড আইনগুলোর সীমাবদ্ধতা বেশি। বাস-ট্রাক মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতির কাছে এই আইনগুলো কিছুই না। কোন ড্রাইভার একসিডেন্ট করলে তিন মাস বা ছয় মাসের জেল এর বেশি নয়, দিলেই শুরু হয় শ্রমিক ধর্মঘট, পরিবহন ধর্মঘট ইত্যাদি।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যথেষ্ট আন্দোলন হচ্ছে এর বিরুধীতা করে, কিন্তু কিছুতেই সরকারের কর্ণগোছর হচ্ছে না। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এর বিরুধীতা করেছি।
মৌনতা রিতু
এমন যায়গা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা উচিৎ যেখানে লোকবসতি কম। প্রাকৃতিক বনোজ সম্পদ কম। হতে পারে চর অঞ্চল।
আবু খায়ের আনিছ
বাংলাদেশে বিদুৎ ঘাটতি আমার জানা মতে মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট এর মত, অদূর ভবিষ্যতে এর চাহিদা বাড়বে ঠিক আছে, কিন্তু তার জন্য সুন্দরবন ধ্বংস করে নয় অন্য কোন জায়গায় হোক।
দীপংকর চন্দ
মন্তব্যে কী লিখবো?? কী লেখা উচিত??
একটি দেশের সিংহভাগ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে ধরনের হয়, সেই দেশ ঠিক সে ধরনের সরকার ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়!
সরকার কোন বিদেশী মানুষের সমন্বয়ে গঠিত নয়, আমাদের নিজেদের মানুষেই গঠিত।
অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন।
ভালো থাকবেন। সবসময়।
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল। ভাল থাকুন সর্বদা।
অপার্থিব
সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ আর জনগণের কাছে জবাবদিহির করার বাধ্যবাধকতা না থাকায় সরকার রামপালের বিদ্যুতকেন্দ্র তৈরীর মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস পায়। জনগণের স্বার্থের চেয়ে কর্পোরেট স্বার্থই তাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য। ইন্ডিয়ায় যেখানে বনাঞ্চল থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরত্বের আগে কোন ক্ষতিকারক কারখানা নির্মাণ নিষিদ্ধ সেখানে বাংলাদেশ সরকার ইন্ডিয়ার এক কোম্পানীকে সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দুরত্বে রামপালে এই বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। উল্টো আবার বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রী রামপালের ক্ষয় ক্ষতির পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়ে বলেছে যেহেতু এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে তাই এ থেকে পিছনে ফিরে আসার সুযোগ নেই। এই হচ্ছে আমাদের জনগণের সরকার!!!
মৌনতা রিতু
এইসব নেতাদের আমরা ধিক্কার জানাই। এরা তো আসলে শিক্ষিত নয়। শিক্ষার আঁতুর ঘরেও গেছে কিনা সন্দেহ।
জিসান শা ইকরাম
রাস্তা ব্রিজ কালভার্ট ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জনসাধারন একেবারেই অজ্ঞ
আর কর্তৃপক্ষও এসব নিয়ে তেমন একটা ভাবেন না।
রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমরা চাইনা।
দেশে অনেক স্থান আছে এধরনের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের।
আপনার সমাজ সচেতনতা মূলক পোষ্ট গুলো খুবই ভাল হয়।
মৌনতা রিতু
এ কোন ব্যবস্থা ? কে দিল এই বুদ্ধি ? আমরা সবাই জানি এই আত্নঘাতি বুদ্ধি কোন যায়গা থেকে এসছে। সরে যাবেও দক্ষিণ দিকে সুন্দরবন। বাংলাদেশে এর সামান্য অংশ বাশেষই এক সময় শুধু অবশিষ্ট থাকবে।
তখন আমরা বলব, এক সময় বাংলাদেশে সুন্দরবন ছিল।
বাংলাদেশে কতো চর এলাকা আছে সেখানে কেন এই প্রকল্প হচ্ছে না ?
মেহেরী তাজ
এক সময় অনেক মালবাহী গাড়ির গায়ে আমি লেখা দেখেছি “সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন”। এই কথার সঠিক ব্যাখ্যা আমার জানা ছিলো না! কিন্তু এখন জানি! আমার মনে হয় প্রত্যেক বড় সড়কের মাথায় বসাতে চাওয়া সেই ওজন মাপা মেশিন টা এবার সরকারের বসানোই উচিৎ।
সুন্দরবন কে বাঁচানোর উপায় বলুন!
মৌনতা রিতু
সুন্দরবন এখন বাঁচবে না কোনোভাবেই। ও আরো দক্ষিণে সরে যাবে। তবুও পরের পোষ্টে লিখব।