অপেক্ষা মায়াবী এক ভোরের

খেয়ালী মেয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার, ১০:৫৮:০৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৭৫ মন্তব্য

এমনটা আগে কখনো হয়নি, কিন্তু আজ হয়েছে—আব্বু আম্মুর মধুর চেষ্টা ছাড়াই আমার ঘুম ভাঙলো—চোখ মেলে দেখি পাশেই আম্মু বসে আছে আমার পানে চেয়ে—উঠতে যাচ্ছি এমন সময় আম্মু বলে উঠলো আর একটু ঘুমিয়ে নে, এখনো আযানের সময় হয়নি—কিন্তু আমার মাঝে এক অদ্ভূত ভালো লাগা কাজ করছে, উঠে বসলাম, আম্মুকে জড়িয়ে ধরে জানতে চাইলাম তুমি বুঝি ঘুমাও না মা?এভাবেই বসে বসে আমাকে দেখো?..আম্মু হাসতে হাসতে বলে উঠলো নারে পাগলী এইমাত্র আসলাম-আমার মামনিটা আজ কোন ডাকাডাকি ছাড়া কেনো উঠে গেলো?—ঘুম হয়নি,শরীর খারাপ করেনি তো, শুরু হলো প্রশ্ন—সব মা রা বোধ হয় এমনি হয়—একদিন একটু সাতপাঁচ হলেই চিন্তায় পড়ে যায়—আমি বিছানা ছেড়ে উঠে আম্মুকে বললাম, তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও, আমি আজ তোমাকে ডেকে তুলবো—আজ আমার অনেক ভাল লাগছে, আমি একটু বাগান থেকে হেঁটে আসি—ততক্ষণে তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও—আম্মু বলল যা ঘুরে আয়...

প্রতি সোম মঙ্গলবার আমি সাদা ড্রেস পরি—কেনো পড়ি তার কোন ব্যাখ্যা নাই..এতো বড় হয়ে গেলাম অথচো এখনো চুল বাঁধতে জানি না, বাসায় সব সময় আমার চুল খোলাই থাকে, আর বাইরে বা কোন অনুষ্ঠানে উঁচু করে সবগুলো চুল একসাথে নিয়ে একটা ঝুটি,এই হলো আমার চুলবাঁধা....

এলোমেলো চুলের সাদা ড্রেস পরা আমি ভোর দেখার জন্য দরজা খুলে বাইরে পা রাখতেই মনে হলো এক স্বর্গীয় ভুবনে বিরাজ করতে যাচ্ছি—খালি পায়ে পা রাখলাম বাইরের জগতে—শিশির ভেজা শুকনো পাতার চাদর বিছানো রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম একা একা—ঝোপঝাড়ে ফুটে থাকা কুয়াশাসিক্ত বনোফুলগুলো আমায় দেখে হেসে উঠলো—এত্তো মিষ্টি হাসি একটু করে স্পর্শ না করে থাকতে পারলাম না—দু’একফোটা শিশির আলতো করে আমার কপালে টুপ করে এসে তাদের অস্তিত্ব জানান দিলো—ভোরের রঙে চোখ আলোকিত হয়ে উঠলো—গুণগুণ করে কারা যেনো সারগাম শুরু করলো, পাখিদের প্রাণেও যে শিহরণ জেগে উঠেছে বুঝতে আর বাকী রইলো না....

হঠাৎ এক দমকা বাতাস এসে ছুঁয়ে গেলো—সামনে তাকাতেই দেখি সাদা ড্রেস পরা খুব সুন্দর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাত বাড়িয়ে—না আমি তাকে চিনি না, তবে আমিও তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম—তারপর আমরা দুজন আবার হাঁটতে শুরু করলাম.....

সে আমাকে বলল, তুমি এই শীতের সকালে গরম কাপড় ছাড়া কেনো বের হয়েছো?..

আরে তাইতো, কী অদ্ভূত এতোক্ষণ আমার খেয়ালই ছিলো না যে, আমি গরম কাপড় পড়িনি—আর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও পড়েনি—বললাম তুমিও তো পরোনি—

মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,পরী তুমি আসলেই খেয়ালী মেয়ে—ঠান্ডা তো লাগছে না, কেনো শুধু শুধু গায়ের উপর ভারী জামাকাপড় জড়িয়ে রাখবো?..

আজব তুমি কিভাবে জানো যে আমিই পরী,আমিই খেয়ালী মেয়ে?—

জানি, তোমার খেয়ালীপনায় বলে দিচ্ছে তুমিই খেয়ালী, তুমিই পরী---

আমি আবারো অবাক হলাম,তুমি কেনো বলছো না যে তুমি কে?..

আচ্ছা সেই ভোরের কথা তোমার মনে আছে?—যে ভোরের কথা তুমি শুধু পড়েছো আর মায়াবী বলেছো—আজকের ভোরটা তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে?....

তুমি শূন্য?...

উফফফ পরী তুমি খুব প্রশ্ন করো?—আমাকে চিনতে তুমি এতো দেরি করলে?—এমন মিষ্টি ভোরে আমি ছাড়া তুমি আর কাকে খুঁজে পাবে?...

আরে তাই তো, এতো স্নিগ্ধ মায়াবী তুমি ছাড়া আর কে হবে?—হুমমম ভোরটাও অনেক মায়াবী...

পরী, তুমি বুঝি এই প্রথম ভোর দেখছো?..

না, আগেও দেখেছি, অনেকবার দেখেছি, কিন্তু আজকের মতো এতোটা ভালো আগে কখনো লাগেনি...

পরী, তুমি কি জানো শিশির কেনো এতো ঝরে?..

হুমমম জানি তো, ঘাসকে ভালোবাসে বলে...

তাই, এবার বলো পাখি এতো সুন্দর করে কেনো গান গায়?..

এটাতো খুব সহজ প্রশ্ন, প্রকৃতিকে ভালোবাসে বলে...

বাহ!!এবার বলো বৃষ্টি কেনো ঝরে?...

মাটিকে ভালোবাসে বলে...

আচ্ছা এবার বলো চাঁদ রাতে আকাশে কেনো হাসে?..

মনে হয় রাতের নির্জনতাকে চাঁদ খুব ভালোবাসে...

মনে হয়?...

হুমমমম..

হঠাৎ করে কয়েকটা প্রজাপতি আমাদের দুজনের সামনে দিয়ে উড়ে গেলো—তা দেখে শূণ্য আবার প্রশ্ন করে বসলো, আচ্ছা বলতো প্রজাপতির গায়ের রং এতো সুন্দর কেনো?...

সাথে সাথেই বলে ফেললাম আকাশের রঙধনু সুন্দর বলে—শূন্যকে বললাম উফফফ শূন্য তুমি এতো প্রশ্ন করো কেনো?....

মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে শূন্য বললো, আচ্ছা আর করবো না—তবে এইটা বলো যে,সূর্য কেনো উদয় হয়?...

হুমমম মনে থাকে যেনো, এটাই শেষ প্রশ্ন...

পরী, তুমি কিন্তু বলোনি সূর্য কেনো উদয় হয়?...

কেনো আবার, পৃথিবীকে ভালোবাসে বলেই তো সূর্য উদয় হয়....

এবার বলো পরী, তুমি আমার সব প্রশ্নের কেনো উত্তর দিচ্ছো?...

শূন্য তুমি কিন্তু আমাকে বোকা বানাচ্ছো, এটাও কিন্তু একটা প্রশ্ন হয়ে গেলো...

বলো না প্লীজ....

তুমি ভোর ভালোবাস বলে আমিও তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছি, তাইতো তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি.....

শূন্যর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে কতোদূর চলে এসেছি জানি না—

হঠাৎ শূন্য বলে উঠলো, দেখো পরী খুব সুন্দর একটা ঘাট দেখা যাচ্ছে, চলো সেখানে বসি....

হুমমম চলো বসি...

ঘাটের কাছে পৌঁছাতে দেখি ছোট্ট বিলে ডুবুডুবু পানি—আর ওটা দেখেই শূন্য আর বসতে চাইছে না—চলো পরী সাঁতার কাটি-এতো সুন্দর স্বচ্ছ পানি আমার সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করছে....

কিন্তু শূন্য আমিতো সাঁতার জানি না...

আরে বোকা আমি তো আছি.....

শূন্য নেমে গেলো ডুবু পানিতে আর হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে—আমি হাত বাড়াতে যাবো ওমনি পা পিছলে ডুবু পানিতে পড়ে গেলাম—শূন্য পরী বলে চিৎকার করে উঠলো....

আর তখনি আব্বুর ডাকে স্বপ্নটা ভেঙে গেলো—ওঠ মামনি চারদিকে আযান দিচ্ছে নামাযের সময় হয়েছে—আম্মু এসে আব্বুকে বলছে আপনি যান গেইট খোলা হয়েছে, আমি ওকে দেখছি—আব্বু মসজিদে চলে গেলো—আমিও উঠে বসলাম—আম্মুর কাছে জানতে চাইলাম আমি কি এতোক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম?—আম্মু বললো তোর বাবা সেই কখন থেকে তোকে ডেকে যাচ্ছে—দেরি না করে নামাযটা পড়ে নে....

নামায শেষ করে প্রতিদিনের মতো আজ আর ঘুমালাম না—কিছুক্ষণ বারান্দায়, তারপর কিছুক্ষণ বাগানে পায়চারি করলাম—নিজেকে নিজে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছি, কেনো আমি এমন অদ্ভূত স্বপ্ন দেখতে গেলাম?...স্বপ্নগুলো এমন অদ্ভূত কেনো হয়?.....

শূন্য শূন্যালয় আপু তোমাকে খুব মিস করছি—অনেকদিন তুমি আমাদের পাশে নেই—প্লীজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসো মায়াবী একটা ভোর নিয়ে.....

(খেয়ালী মেয়ের অদ্ভূত স্বপ্ন)

0 Shares

৭৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ