“অদ্ভুদ স্বামী”

মনির হোসেন মমি ২৬ জুন ২০১৮, মঙ্গলবার, ০২:৫৩:২৭অপরাহ্ন গল্প, বিবিধ ৫ মন্তব্য

মা..গো,তুমিতো মা মরতানা!
মায়ের আধাপাকা চুখগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে ছেলের এমন ভাষ্য।তার পর মা যা বললেন।
-কি যে কছ ছেরা!
-হ’মা আমিতো ঠিক কইতাছি...এই দেহনা আমার হগল চুল এহনিই পাইক্কা গেছেগা!তোমারতো হেই তুলনায় চুল কিছুই পাকে নাই..আমি মনে হয় তোমার আগেই মরমু।
মা আশ্চর্য ছেলের প্রতি সহানুভুতি দেখাল।
-তুই ছেরা কি যে কছ না মুহে যা আহে তাই কছ,,তুই মরবি কেন!
-হ;মা এই দেহনা দেশে কি ভাবে যুবক যুবক পোলাপাইন কেমনে মরচাছে...আমার বন্ধুদের সিরিয়ালেতো এ পর্যন্ত ডজন খানেক গেল এরপর কার পালা কে জানে!কৈ একটা বুড়া মরতেওতো দেখলাম না!তাই আগেই মাফ সাফ কইরা দিও।
-তুইনা ছেরা একটা পাজি!তুই মরবি কেন?তুই বেচে থাকবি তোর সংসার পোলাপাইন আছেনা!আর এহন তোরা খাছ কি!আর আগে আমরা কি খাইছি!বুঝস নাই?
-হ’মা বুঝছি...এহন কোনডা যে খামু তাই বুঝি না।সব খাওনেতো কেবল ভেজালঁ বলে হুনি।আচ্ছা মা তুমি রাইত হইছে শুইয়া পরো।

মায়ের সাথে কথা বলে অন্দর মহলে ঢুকবেন ভাবছেন ঈদে এবার খরচ কমানো যায় কি করে!কর্তীর যে লিষ্ট!এ পর্যন্ত তিন চার বার শপিংয়ে যাওয়া হয়ে গেছে।কাল চাদঁ রাত কালতো যাবেই।খুব সতর্কতায় সাহেব তার নিজ রুমে ঢুকলেন।পকেট ভর্তি ঈদ বোনাসের টাকা।ঢুকতে কর্তীর উচ্চ কণ্ঠস্বর।

-হেইতো আইলা!এতো রাইত কইরা আইলা যে?
-তুমি কি কও আমি না আইলেই ভালা হইতো?
-হ’তাই,
-হ’বুঝছি আমার আরেকটা বিয়া করন দরকার আছিলো তাইলে ঐহানে এ রাইতটা অন্তত কাটাইতে পারতাম।
-কি কইলা তুমি!
-আমি কি কইছিনি তোমার কতা ধইরাইনা কইলাম।
শুরু হল কান্না ঝড়।বাঙ্গালী মেয়েরা সাধারনতঃ জগতের সব কিছু দিতে রাজি কিন্তু তার স্বামীর ভাগটা কাউকে দিতে রাজী কখনোই হবে না।এটা কোন দোষের কিছু নয় এটাই বঙ্গ ললনাদের মুল পরিচয়।সাহেবতো অবাক!এখানে এভাবে বিলাপ করে কান্না করে এসব বাজে কথা বলার কি আছে!বুঝতে পারছেন না এ পরিস্থিতি সামাল দিবেন কি করে।রীতি মতন নাক মুখ চুল তার নিজের ছিরতে ইচ্ছে করছে।আস্তে আস্তে বৌয়ের কানের পাশে মুখ রেখে বসলেন সাহেব।তারপর!
-ইয়ে...বাপের বাড়ীতে কারে কারে বলে ঈদের কি জামা কাপড় দিছো হুনলাম?
কান্নার শব্দে ঘর্মঘট লাগল।নাক মুখ চোখ দু হাতের কব্জি দিয়ে জল মুছতে মুছতে সোফায় বসলেন।সাহেবও তার পাশাপাশি বসলেন।খুব ক্ষীণ কণ্ঠে বিবি বলতে থাকলেন।
-কি করমু...গত ঈদেও ওগো কিছু দেই নাই এবার না দিলেতো ইজ্জতই থাহেনা।
-হ’আমার টাহা আর তোমার ইজ্জদ!ভাল করছো তা কারে কারে দিছো কাউরেতো আর বাদ রাহ নাই?
-না সবাইরেই দিছি।
-মফিজরে দিছো(তার একমাত্র সালা)?
-হ;
তিন লাফ দিয়ে সাহেব চিল্লাইয়া দাড়াইয়া গেলেন।
-আরে করছো কি!ঐ হালায়তো আমারতেও দশ হাজার লইয়া গেল।বলল ইজ্জতের ব্যাপার দুলা ভাই।কিয়ের ইজ্জদ বুঝলাম না।লাগাওতো হালার মোবাইলে ফোন লাগাও।কর্তী মোবাইলে দ্রুত নাম্বার টিপে ফোনটা সাহেবকে দিল।ফোনের ঐ পার হতে।
-হেলো আফা,,,
-আরে বদমাইশ আমি আফা না তোর দুলা ভাই!
-হ;দুলা ভাই কন কি খবর?
-দেখছো নি হে-ই কইল রাতে ফোন দিয়া ইজ্জতের কাহিনী বলবো আবার হেয় অহন জিগায় কি খবর।
-ও’আচ্ছা তাই!কি করমু দুলা ভাই ও’না এবার বহু আগেই আবদার করছিলো এবারের ঈদে আমি যেন ও’রে ঐশরিয়ার শাড়ী কিন্না দেই..তাই আর কি!
-হুম!তা ঐ ও’টা কে?
-বুকা নাকি এহনো বুঝেন নাই!
-হ’আমিতো বুকাই নইলে কি গার্লফ্রেন্ড তোমার আর টাহা যায় আমার।ঐ আমারে কেউ ধররে....
ফোন সোফায় রেখে হঠাৎ আবার ঘরের মেজেতে বসে পড়ল সে।কর্তীও নিশ্চু নিঃশব্দে ধীরে ধীরে কাতর হয়ে তার পাশেই বসলেন।এবং বলতে থাকলেন খুব ধীর কণ্ঠে।
-ঘরে সাবাইরে দিছি কেউ বাদ নাই।আমিও নিছি দুইটা শাড়ী পাচ হাজার করে তিনটা কামিজ পনের হাজার করে..
-থাক থাক,ভাল করছো...সবাই সবারটা কিনছো একবারোতো জিগাইলানা আমি কিছু কিনছিনি!

কর্তীর মুখের ভাষা যেন ফুরিয়ে গেছে।ঈদের সব আনন্দ নষ্ট হয়ে যাবে বলে সাহেব প্যান্টের দুপকেট হতে টাকার বান্ডেলগুলো বের করে বিবির হাতে দিলেন এবং বললেন।
-অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম শেষ পর্যন্ত আমার মৃত্যুর পর শুয়ানো খাটে তুমিই বেশী কান্নাকাটি করবা।পৃথিবীতে একাকী বেচে থাকার তোমার কষ্টটাই বেশী হবে।
-তুমি খালি খালি অলক্ষনি কতা কও,,,তুমি মইরা গেলে আমার কি হবে?
-কেন আমার রেখে যাওয়া ব্যাংক ব্যালেন্স জায়গা জমি দেহাশুনা করবা ইচ্ছাওলে ফুর্তিতে মজে যাবা।
-তুমি না এহনো ভালা অইলা না...যাও টেবিলে ভাত দেয়া আছে খেয়ে নেও তাড়া তাড়ি।
-কেন!আজগেইকি চানঁ রাইত করবানি!
-তুমি না!মুখে কিছুই আটকায়না!
ভালবাসার অদ্ভুদ আলতু ছোয়ায়ঁ সাহেবকে খাবারের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন কর্তী।সাহেব মনের আনন্দে মিনমিন করে গাইছে,,,আতরঁও গোলাপ চন্দন মেখে দে,সজনী তোরা,সাজিয়ে গুছিয়ে যে আমায়...।

সমাপ্ত।

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ