অথঃ শিমুলনামা

আগুন রঙের শিমুল ৩ আগস্ট ২০১৪, রবিবার, ১০:৫২:৩০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২০ মন্তব্য

 

টাইম ইউ ওল্ড জীপসি ম্যান

ভোর ভোর ঘুম ভাংতেই, আঙ্গিনা জুরে মিঠে সৌরভ। কলতলায় তুমুল কোলাহল, পুরো গ্রামের তিনটা টিউবওয়েলের একটা, তাই। কাচারীঘরের থেকে ভেসেছিল মিহিকুচি দরুদের সুর।

কলতলার পাশেই বিরাট "তাফালে "জ্বাল হচ্ছে খেজুরের গুড়। গনগনে আগুনের আলোয় উদ্ভাসিতা শিশুটির নিশ্চিত আশ্রয়, দাদী। এক দৌড়ে তার কোলে সেধিয়ে যেতেই, এক পৃথিবীর ওম।
উঠোন পেরিয়ে হেটে আসে শিশুটির তরুনী মা, হাতে ধোঁয়া ওড়া কাপ। সাথে সাথেই দৌড় আবারো, দাদু ম্যাজিক বাক্স খুলে বের করে স্বর্ণ দ্যুতিময় চামচ, যেটা দিয়ে নেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত কোনদিনই ওভালটিন চা হয়নি।

প্রতিজ্ঞা ছিলো শিশুটি বড় হয়ে দাদুর চামচ অবশ্যই নিয়ে নেবে, এবং সে খাবে চা দাদু খাবে ওভালটিন। সেই ভয়ে দাদু চারপাশে তাকিয়ে কেউ নেই নিশ্চিত হয়ে, শিশুটির কাপে ঢেলে দিতেন ফু দিয়ে ঠান্ডা করা চা। রাগী তরুণ পিতা ঠিক দেখে ফেলে শশা মাচার নিচের বিস্তৃত হলুদের খেত থেকে।

তারপর একদিন, শিশুটির ঘুম ভাংগে অনেক বেলায়। উঠোন জুড়ে অপরিচিত মুখ সব। কাচারীঘর থেকে ভেসে আসছে করুন কন্ঠের কোরান পাঠ, বাড়ি জুড়ে অচেনা ঘ্রাণ, মৃত্যুর। আর লোবানের। উঠোনের মধ্যিখানে শুয়ে আছে তার আবছা জগৎ। দাদী নেই। আজও নেই কেউ, পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতা নেই। মা আর তরুণী নেই, পিতার রাগ নেই ....... শিশুটির শেকড় নেই। টবের জীবন কাটায় প্রাক্তন শিশুটি Sad

টাইম ডিড ইউ সী ....

" অল্পজলের নদীটি পায়ে হেটে পেড়িয়ে যায় সে,
গোধূলির মায়ার আলোয়।
মৃত শঙ্খের বুকে বাজে ভুলে যাওয়া সুর,
জলের দুঃখ ধুয়ে যায় জলে,
কান্নাজল বয়ে চলে একাকার বিষন্ন মায়ার দুপুর।"

এবং পরবাসী প্রাক্তন শিশুটি........

এই শহরে নিতান্তই আগন্তুক সে, স্রোতের শ্যাওলা। তবুও মানুষের প্রবৃত্তির বশে ঊষর মাটিতেও শিকড় নামানোর নিরন্তর চেষ্টা। যান্ত্রিকসভ্যতার শহরে বেমানান হেটে যাওয়া। কেবলমাত্র ব্রিজের ওপর দিয়ে পারাপারের নদীটির পার ধরে হাটাহাটির কারণে দুইবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, যদিও যন্ত্র নগরী তবুও কিছু জায়গা টানে, অমোঘ।

ফোর্থ নভেম্বর রোড।

শুধুমাত্র হাঁটার রাস্তা। কয়েক মিটার পরপর ছোট ছোট স্পিকার ঝুলানো, অলংকৃত খিলান দুপাশে। এবং হঠাৎ হঠাৎ কেউ গেয়ে ওঠে বিষন্ন রাগিনী। টিপটিপ বৃষ্টির দিনে কখনোবা নেমে আসে ঝাক বেধে দেবদূত গন। কোন না কোন খিলান তলে বাজে করুন বেহালা, উদাসীন বাদক একমনে বাজিয়েই যায় ..... ছরের প্রতিটি টানে রিক্ত হাহাকার গলে গলে পরে। মাঝপথে হঠাৎই দাড়িয়ে যায় প্রেমিক যুগল। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভাগ করে আসমুদ্র উষ্ণতা, সে হুডটা আরো একটুখানি টেনে দিয়ে হেটে যায় নির্বিকার,টিপিটিপ বৃষ্টিতে।
পেছনে গলে পরে ........ বেহালার কান্না, প্রেমিকের উষ্ণতা, লুকা নিয়াপলিটানোর ভরাট গলার বিষন্নতা .......  সমাজ  অস্বীকার করে দুর্বীনিত বিটনিক যুবকের তারস্বরে চিৎকার।

অদুরে গীর্জার ঘন্টা ধ্বনির শব্দে ডানা ঝাপটিয়ে উড়াল পায়রা দম্পতির .........
আর সে ডুবে যাওয়া চাদেঁর পিছুপিছু হাঁটতেই থাকে

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ