অণুগল্পঃ খুনী

রাইসুল জজ্ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রবিবার, ০৪:৫২:৪৮অপরাহ্ন বিবিধ ১৬ মন্তব্য

একটা ছয় পাওয়ালা পতঙ্গ উড়ে এসে বসলো আমার কপালে । ঠিক যেখান থেকে আমার পাক খাওয়া চুলের গোছা শুরু হয়েছে সেখানে । তার ছয়টা পা ছড়িয়ে পড়লো কপালের অর্ধেকটা জুড়ে । পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো চোখের দিকে । আমার জোড়া ভ্রুর জঙ্গল পেরিয়ে ঠিক নাকের ডগায় এসে থামলো ওটা । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার কাল তলপেট বেয়ে চুয়েচুয়ে পড়ছে আঠালো কষ । মাথা গুলানো হলদেটে রং । তীব্র একটা গন্ধে পেট গুলিয়ে উঠলো । পোকাটার বাঁকানো হুলের মাথায় জমতে শুরু করেছে কালো বিষ । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সব । অথচ আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আছে । হাত তুলে তাড়াতে পারছি না । দম বন্ধ হয়ে আসছে । প্রতি নিঃশ্বাসেই কমে যাচ্ছে অক্সিজেনের পরিমান । আমি ঘামছি, অদ্ভুত ভাবে ঘামছি । আমার রোমকূপ দিয়ে ফোয়ারার মত বেরিয়ে আসছে ঘাম । ভিজে যাচ্ছে বিছানা বালিশ । দূরে কোথায় একটা গানের সুর বাজছে । করুণ একটা অস্পষ্ট সুর । খুব পরিচিত কিন্তু মনে করতে পারছি । ঠিক তখনই ক্রিস্টালটা শব্দ করে বেজে উঠলো । আমার বাঁ হাতের কব্জির মাঝে লাগানো এক ইঞ্চি বাই হাফ ইঞ্চির ক্রিস্টাল বল । সাড়ে চার বছর হলো ওটা লাগানো হয়েছে চামড়ার মাঝে । যোগাযোগ মডিউল । প্রতিটা মানুষের শরীরেই একটা করে ক্রিস্টাল ঢুকিয়ে দিয়েছে ওরা । ক্রিস্টালের শব্দে আমি জেগে উঠলাম, ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় ভালো লাগছে কিছুটা । ক্রিস্টাল স্ক্রীণে তিন তারা যুক্ত একটা মেসেজ এসেছে । তিন তারা মাত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এতোটায় গুরুত্বপূর্ণ যে মৃত্যু পথযাত্রী কারো কাছে এই মেসেজ আসলে আগে মেসেজটা পড়তে হবে তারপর মরতে হবে । তারপরও গুরুত্ব দিলাম না । আগে শাওয়ার নেয়া দরকার, দীর্ঘ শাওয়ার । দুঃস্বপ্নটা মাথা থেকে তাড়াতে হবে আগে ।

বসে আছি স্টেশনে রাতের শেষ ট্রেন ধরব বলে । শেষ ট্রেনে যাত্রী থাকে না । একা একা ট্রেনের কামরায় বসে ঝিমুতে ভাল লাগে । ঝিমুতে ঝিমুতে এক অপরুপা নারীর কথা ভাবতে ভালো লাগে । একসময় যে আমার ছিলো এখন নেই । কেন নেই সেটা একটা বিরাট রহস্য । ঝিমুতে ঝিমুতে সেই রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করি । তবে আজকে সেই রহস্য নিয়ে ভাববো না । আজকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে । কঠিন সিদ্ধান্ত গুলো আমি সাধারণত দুসেকেন্ডেই নেই । আজকের টা ভিন্ন । আজ জীবন মরণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে । আরেকবার ক্রিস্টাল বলের স্ক্রীনে চোখ রাখলাম । তিন তারা চিহ্নিত মেসেজেটা আরেকবার দেখলাম । ওরা আমাকে দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় সেলেক্ট করেছে । আমাকে মরতে হবে । ঠিক রাত একটা তেত্রিশ মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ডে যদি না আমি তার আগেই আমার জীবনের পরিবর্তে অন্য একজনকে না মারি । সহজ হিসাব আর কঠিন সিদ্ধান্ত । খুনি হও অথবা খুন হও ।

রাত একটা বত্রিশ । ট্রেনের কামরায় আমরা দুজন । এখনো সেই অপরুপা মেয়েটির চলে যাওয়ার রহস্যের সমাধান হয় নি । সমাধান জানাটা আমার প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন । ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম অন্য যাত্রীর দিকে । তার মাথায় হুডি । পকেট থেকে বের করা ছোট অস্ত্রটা তাক করলাম তার মাথা বরাবর । ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করছে । কিছুক্ষন পর খুলে যাবে দরজা । কিছুতেই তাকে বের হতে দেয়া যাবে না । দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি । দম বন্ধ করা কয়েকটি মুহুর্ত । ট্রেন থেমে গেছে । উঠে দাড়ালো যাত্রী । তার হুডি খুলে পড়েছে । ট্রিগারে চাপ দেওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে দেখতে পেলাম সেই অপরুপ মেয়েটির মুখ যার চলে যাওয়ার রহস্য আমি এখনো ভেদ করতে পারি নি ।

পরিশিষ্টঃ স্টেশনের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়লো রাতের শেষ ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করার পথে দরজা খুলে লাফিয়ে পড়ে এক যুবক । প্ল্যাটফর্মের মেঝেতে থেঁতলে যায় তার মাথা । ভিডিওর নিচে তখন সময় দেখাচ্ছিল রাত একটা তেত্রিশ মিনিট সাতচল্লিশ সেকেন্ড ।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ