১৯৭১ সনের ২৮ ডিসেম্বর গভর্নর হাউজে ( বঙ্গভবন ) ১৯৭১ এর যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে , বাম থেকে তাজউদ্দিন আহমেদ , সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ ,  ইতিহাসের কলঙ্কিত দিন , স্বাধীন দেশে যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মহান নেতাদের হত্যাযজ্ঞের দিন। ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিভৃত প্রকোষ্ঠে বন্ধী  অবস্থায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর  অবর্তমানে ১৯৭১ এর যুদ্ধে  নেতৃত্বদানকারী প্রবাসি বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি  সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী  তাজউদ্দিন আহমেদ এবং মন্ত্রী পরিষদের অন্য দুই সদস্য  ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

কারা এই ঘাতক ? ১৯৭৫ সনের ১৫ ই আগস্ট যারা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যা করেছিল , তারাই এই ঘাতক। এই হত্যাকাণ্ড দিয়ে ঘাতকরা প্রমান করে দিয়েছিল যে , তাদের আক্রোশ শুধু বঙ্গবন্ধুর উপরে নয় , যারা ১৯৭১ এর স্বাধীনতার চেতনার ধারক ও বাহক , তাঁরাই ঘতকদের আক্রোশের মুল লক্ষবস্তু। কি দোষ করেছিলেন নির্মোহ তাজউদ্দিন আহমেদ ? যিনি যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বুদ্ধিমত্তা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি প্রবাসী সরকার গঠন করে , একটি সফল যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ এ তো তিনি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীসভার মন্ত্রীও ছিলেননা ! তাঁদের দোষ একটিই তা হচ্ছে , ১৯৭১ সনে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা  । পাকিস্তানকে ভেঙ্গেছিলেন। যে উদ্দেশ্যে ১৪ ডিসেম্বর ঘাতকরা জাতীকে মেধাশুন্য করার জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছিল , সেই একই উদ্দেশ্যের বর্ধিত রূপ এই জেল হত্যা । ঘাতকরা জানতো এই চার নেতা জীবিত থাকলে , দেশে রাজাকারদের উত্থান সম্ভব হবে না , পাকিস্থানি শাসনের অনুরূপ শাসন এখানে কায়েম করা যাবে না । জাতীকে এই চারজন নেতা আবার নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৭১ এর চেতনায় দেশকে পরিচালিত করবেন ।

ঘাতকদের কে ক্ষমা করে পুরুষ্ক্রিত  করার মধ্যে দিয়ে প্রমানিত হয়ে যায় , আসলে কারা ছিল এই হত্যাযজ্ঞের পিছনের মানুষ। কেন এই হত্যাযজ্ঞের বিচার হবে না ? কেন এই হত্যাকান্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়েছিল ? এসব প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে হতাকান্ডের মুল ভুমিকা কাদের ছিল ।  কেন বিনা বিচারে খুন করা হয়েছিল হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ? সব প্রশ্ন গুলো একটি দিক নির্দেশ করে । যার ফলাফল আমরা দেখি , রাজাকার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয় , ১৯৭১ সনের পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর দোসর , শান্তি কমিটির একজন চেয়ারম্যান হয় দেশের প্রেসিডেন্ট ।

এই হত্যাকান্ডের বিচার এর অবস্থা : জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার এ ঘটনায় তখনই লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জেল হত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এরপর দীর্ঘ ৮ বছরেরও বেশি সময় বিচার কাজ চলার পর গত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামীর মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর ৫ জনকে খালাস দেয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামীর মৃত্যুদন্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। এতদিনেও এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

আমরা চাই  জাতীর এই সূর্য সন্তানদের হত্যাকান্ডের বিচারের রায়ের বাস্তবায়ন । আমরা দায়মুক্ত হতে চাই। সুধিতে চাই রক্তের ঋণ ।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ