মানুষের জীবনে গন্ধের প্রভাব অপরিসীম। রাতে হেঁটে যাচ্ছে মানুষ, দূর থেকে ভেসে আসছে কামিনী ফুলের সুঘ্রাণ, মন ভাল হবেই। মনকে সতেজ, প্রফুল্ল রাখতে সুগন্ধের জুড়ি নেই। আবার মনের প্রফুল্লতা নষ্ট করতে দুর্গন্ধের জুড়ি নেই। সব কিছুরই আলাদা আলাদা গন্ধ আছে। গন্ধহীন কি কোনকিছু আছে এই জগতে?
কোনো কোনো সময় প্রাপ্ত বিশেষ গন্ধ মানুষ ভুলতে পারেনা। মনে হলেই সে গন্ধ নাকে চলে আসে, এ কারণে গন্ধের কাছাকাছি বা স্পর্শে থাকতে হবে মানুষকে এমন কোনো কথা নেই। পিচ্চি কালে মায়ের শরীরের সুগন্ধ এখনো অনুভব করি, মা এবং সেই সময় থেকে অনেক দূরে থেকেও। কেহ কেহ তার প্রিয়জনের শরীরের সুগন্ধ অনুভব করেন, কেহ কেহ প্রিয়ার চুলের সুগন্ধ অনুভব করে প্রতিনিয়ত। এই অনুভবে পছন্দের একটি বিষয় থাকে। প্রবল ভাললাগার মানুষের শরীরের ঘ্রাণ মানুষকে তার প্রতি অনুরক্ত করে রাখে। একারণেই দেখা যায় চোখ বেধে দিয়ে অনেকের মাঝ থেকে শুধু গন্ধ দিয়ে প্রিয় মানুষকে খুঁজে পান মানুষ।
ভুমিকা শেষ, এবার কেন এই লেখা? তা বলি:
দুদিন আগে শাহাবাগ থেকে উত্তরা রুটের বিআরটিসি এসি বাস এ উঠলাম সকাল সাতটা ত্রিশ মিনিটে। সকালে ভীড় নেই তেমন বাসে। রাস্তাও ক্লিয়ার, জ্যাম নেই তেমন। বেশ ভাল বাসের ভিতরকার পরিবেশ। বাসের মাঝামাঝি ডান পাশের জানালার পাশে বসলাম। ঠান্ডা সকালে একটু ঘুম ঘুম অবস্থা। ফার্মগেট অতিক্রম করার পরার পর ঝিমুনি শুরু করলাম, মহাখালী ফ্লাইওভার উঠছে বাস এটুকু মনে আছে এরপর ঘুম। তীব্র এক গন্ধ লাগছে নাকে, স্বপ্নে পাচ্ছি না তো এমন গন্ধ? ঘুমই ভে্ঙ্গে গেলো। ঘুম ভাঙ্গার পরে চলন্ত যানবাহনে কিছুটা বোকা বোকা হতবুদ্ধি হয়ে যাই আমি, হয়ত সবারই এমন হয়। জেগে উঠে বুঝতে বুঝতে কয়েক মুহূর্ত লাগলো। রেডিসন হোটেল দেখে বুঝলাম কোথায় যাচ্ছি। কিন্তু কিসের গন্ধ পাচ্ছি? চাবুকের মত গন্ধটি এবার মস্তিস্কে আঘাত করলো। বনানী নেমে গিয়েছেন অনেক যাত্রী। আমার বাম পাশে বাননী থেকে ওঠা নতুন যাত্রীর গা থেকে এই গন্ধ বের হচ্ছে। এমন দুর্গন্ধ কোনো মানুষের গা হতে নির্গত হতে পারে! কোনো জন্তু জানোয়ারের গা হতেও এমন দুর্গন্ধ বের হয় কিনা জানিনা। নাক আর কতক্ষণ চেপে রাখা যায়? কী করি কী করি, আমি তো এই দুর্গন্ধে আজ মরেই যাব। আচ্ছা যদি আমি আজ এখন মরেই যাই, পত্রিকায় কি এমন শিরোনাম আসবে? - দুর্গন্ধে ব্লগার সজীবের মৃত্যু! উফফ কী যে করি? : (আচ্ছা আমার পোস্ট মর্টেম করবেন কে? তিনি কি আমার ফুসফুসে এই দুর্গন্ধ পাবেন? মুহুর্তের মধ্যে শুন্য শুন্যালয় আপু, কৃন্তনিকা আপু আর শিশিরকনা আপুর কথাও মনে এলো। গতকাল আমার প্রিয়াকে পারফিউম গিফট করেছি, একই ব্রান্ডের বডি স্প্রে নিয়েছিলাম একই সাথে আমি। টি-সার্ট এর নীচে হাত দিয়ে শরীরে হাত ঘসে নাকের কাছে হাত আনলাম। উহু কিসের কী? এই দুর্গন্ধের কাছে জগতের সমস্ত সুগন্ধ পরাস্ত হবে। অবশেষে সিট থেকেই উঠে পড়লাম। দুর্গন্ধরাজ জিজ্ঞেস করে' ভাই কি সামনে নামবেন'? আরে না ভাই, বসতে বসতে পায়ের রগে টান পরেছে, একটু দাঁড়িয়ে থাকি - বলি আমি। এই বলে সিট থেকে উঠে ড্রাইভারের কাছে গিয়ে দাঁড়াই।
বিমান বন্দর থেকে কয়েকজন উঠলেন। খালি সিট দেখে কিছুটা প্রতিযোগিতা করে দুজন গিয়ে বসলো দুর্গন্ধরাজ এর পাশে খালি সিটে। মনে মনে বলি - যাও বসো মাগার টিকতে পারবা না। ফলাফল - এক মিনিটের মধ্যেই দুজন সিট থেকে উঠে প্রায় দৌড়ে আমার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। একজনকে কানের কাছে জিজ্ঞেস করলাম " ভাইয়া সিট থেকে উঠলেন যে? পা ব্যাথা করছে নাকি? " :p উত্তরে তিনি বললেন " জি ভাই পায়ে ব্যাথার কারণে বসতে পারিনি, আপনিও? " :D)
সেই দুর্গন্ধকে কিছুতেই তাড়াতে পারছি না, আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সে....
Thumbnails managed by ThumbPress
৩০টি মন্তব্য
অরুনি মায়া অনু
হা হা হা দুর্গন্ধে আমাদের ব্লগার সজীব কিছুতেই মরতে পারেন না। এমন একটা কাহিনীওও কত্ত মজার করে লিখলেন।
আসলেই গন্ধের এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে জীবনে,যেটা অল্প কথায় বোঝানো যাবেনা। তবে যাই হোক মানুষের গা দিয়ে বিশ্রী গন্ধ কারোরই কাম্য নয়। একটু সতর্ক হলে, পরিচ্ছন্ন হলে কি এমন ক্ষতি। ভাগ্যিস আমি ঐ লোকের পাশে বসিনি। তাহলে আল্লাহই জানেন কি হত আমার।
ব্লগার সজীব
আপনি ঐ লোকের পাশে বসলে আর কোনোদিন বাসে উঠতেন না আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্, বিচিত্র অভিজ্ঞতা!
আমি নিশ্চিত আপনি অক্কা পেলে ডাক্তাররা আপনার ফুসফুসেও এই গন্ধ পাবে,
তা পাক তারা, কিন্তু ডাক্তারনিরা সহ্য করতে পারবে কিনা তাই ভাবছি।
দারুণ উপস্থাপন,
ব্লগার সজীব
ডাক্তারনিরা সহ্য করতে পারবেননা ভাইয়া এটি নিশ্চিত। ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
সজিব ভাইয়া এই দুর্গন্ধে মরবেন না বরং জিবিত হলেন।
ব্লগার সজীব
দোয়া করবেন ভাইয়া, এই গন্ধ যেন আর না পাই 🙁
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! ভাল থাকুন।
ব্লগার সজীব
🙂
মিষ্টি জিন
সজু ভাইয়া আপনার এই গল্প পডে আমার এক লেডি আত্মীয়র কথা মনে পডে গেল.. আমি বাইরে থেকে বাসাঁয় ঢুকলেই বুঁঝতে পারি তিনি এসেছেন। চলে যাবার পর পুরো বাড়ী এয়ার ফ্রেশনার দিয়ে ভাসিয়ে দিলেও গন্ধ যায় না। বুঝুন তাহলে ?
“দূর্গন্ধরাজ” নামটা আমার পছন্দ হয়েছে। আপনার এবারের লেখার বিষষটা কিন্তু দারুন। কারো কারো টনক নডতে পারে। তবে নামটা দুর্গন্ধরাজ হলে বেশী ভাল হোত।
ব্লগার সজীব
যাদের শরীরে দুর্গন্ধ আসে এনারা কি জানেননা তা? পরিচ্ছন্ন থাকলে দুর্গন্ধ তো থাকার কথা নয়। নামকরন এটিই করতে চাচ্ছিলাম 🙂 ধন্যবাদ আপু।
ইঞ্জা
:D) :D) ২০০৭ এ যখন ঢাকায় চলে আসি তখন আমাকে বাসে চড়তে হতো অফিস গমনের জন্য আর এই ধরণের পরিস্থিতির মধ্য আমিও অনেক পড়েছি আরেকবার তো কিছুক্ষণ পর পর বায়ু নির্গমন করছিলেন দেখে রাগে দুঃখে বাস থেকেই নেমে পড়েছিলাম।
ব্লগার সজীব
হা হা হা বায়ু নির্গমন :D), ব্যাপক আনন্দ পেলাম আপনার মন্তব্যে 🙂
ইঞ্জা
:D) (3
ব্লগার সজীব
🙂 -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
কিছু লোক আছে সে ছেলে হউক মেয়েই হউক তাদের এমন এক ধরনের গন্ধ আছে যা অসহ্য করার মতো।যাক গন্ধ নিয়ে যখন অনেক দিন পর এলেন তখন নিশ্চয় জেনেছেন শুন্য আপু দেশে এলেন না কেনো আড্ডায়। -{@
ব্লগার সজীব
শুন্য আপুর সাথে দেখা করার কত যে ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ব্যাক্তিগত ঝামেলায় আর যাওয়া হয়নি। ব্যাড লাক আমার 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাভু বাইয়া মনে আছে আমি “এলোমেলো কিছু কথা”য় এই গন্ধ নিয়েই লিখেছিলাম? সেখানে লিখেছিলাম আমার কোন কোন গন্ধ প্রিয়। জানেন আমার নাকের পাওয়ার মারাত্মক? আর এ জন্য যে কি জ্বালা! যেখানে কেউ বাজে গন্ধ পায়না, আমি পেয়ে যাই। আর সেটা অবশ্য পরে সকলেই বুঝে নেয়। আমি এই লেখাটা পড়েই বমি করেছি। মা গো আপনি কিভাবে সুস্থ থেকেছেন আমি জানিনা। বাসে হাজার সিট পেলেও আমি সিনিয়র সিটিজনের সিটে বসতাম না। কারণ বেশ কিছু সিনিয়র সিটিজেন এতো অপরিষ্কার থাকে, গন্ধে টেকা যায়না। গত পরশু কি হলো এখন তো আমি ওই সিনিয়র সিটিজনদের সিটেই বসি, কারণ ওয়াকার ব্যবহার করি। আমার পাশে এক বুড়ো, না পারছিলাম উঠতে না বসতে। ব্যাগ থেকে হ্যান্ডক্রিম বের করে লাগিয়ে গন্ধ নিতে নিতে এসেছি।
এই যে আমার ছেলে খেলা থেকে যখন আসে বাসায়, সোজা পাঠিয়ে দেই ওয়াশরুমে। বাজে গন্ধ তো নেয়া যায়ই না, তেমনি আমি পারফিউমের উগ্র গন্ধও নিতে পারিনা।
ব্লগার সজীব
হ্যা নীলাদি আপনার গন্ধ নিয়ে লেখার কথা মনে আছে। আপনি গন্ধ আগে ভাগেই পেয়ে যান! ভাগ্য ভাল যে আপনি ঐ বাসে ছিলেন না। পরিচ্ছন্ন থাকলে গন্ধ হবার কথা না। ধন্যবাদ দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাভু বাইয়া মানুষ কি করে এভাবে নিজেকে রাখে আমি ভেবে পাইনা। কারো কারো তো মুখ থেকেও গন্ধ বের হয় কথা বলার সময়। মা গো। ছিঃ!
ব্লগার সজীব
মুখ থেকে যাদের গন্ধ আসে, তারা পৃথিবীর নিকৃষ্ট জীব।
নাসির সারওয়ার
বলেন কি! এরকম গন্ধও আছে যা কিনা মানুষ মেরে ফেলতে পারে!! যাক, আমার বারো মাসই সর্দি থাকে। ওসবে আমার কিচ্ছুটি হবেনা।
আপনার লেখার মতই তবে ভিন্ন উপস্থাপনায়। অনেক ভালো লাগলো।
ব্লগার সজীব
হ্যা ভাইয়া আছে এমন গন্ধ, আমার নিজেরই ধারনা ছিলনা এমন বাজে তীব্র দুর্গন্ধ মানুষের শরীরে হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ক্রিস্টাল শামীম
কি আর বললার মানুষের গন্ধই তো তাই পায়ের অজুহাত মাথায় চলে আসছে। ঢাকার ১৫ নাম্বার গাড়িতে তো আরো বেশি। এমন টা অনেকবার হয়েছে নাকে কাপড় দিতে পারিনাই তাতে কী মনে পাথর বেঁধেছিলাম।
ব্লগার সজীব
আসলে এদের বোধ নেই, থাকলে কিছু পারফিউম অন্তত দিতেন গায়।
নীরা সাদীয়া
হাহাহাঃ তবে আমার একটা গন্ধ প্রবলেম আছে। এ গন্ধ, সে গন্ধ, কত কি যে নাকে এসে লাগে।
ব্লগার সজীব
অনেকেরই গন্ধের অনুভুতি তীব্র। তারা অন্যদের তুলনায় গন্ধ বেশি পান।
শাহানা আক্তার
দুর্গন্ধে মারা যাবার কথা ভাবছেন অথচ নাম দিলেন “রাজ” আমিও আজ একজনের সঙ্গে কথা বলার সময় ওনার মোজার দুর্গন্ধ পাচ্ছিলাম..ভাগ্য ভালো তিনি দু একটি সৌজন্যমূলক কথা বলেই সে স্থান ত্যাগ করেছেন। নাহলে আমাকেও হয়তো এমন কোনো ছুতো খুঁজে বের করতে হতো।
ব্লগার সজীব
মোজার গন্ধ! ইয়াক ইয়াক। একটি লেখায় পড়েছিলাম ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার বাহিনী তথ্য আদায়ের জন্য মিত্র বাহিনীর বন্দীদের সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত মুজার রুমে রেখে দিত। এই দুর্গন্ধে অনেক বন্দী তথ্য প্রকাশ করে দিত।
শুন্য শুন্যালয়
লেখা পড়েই তো ইয়াক ইয়াক করছি, কে জানে আমাকেই এখন এই দূর্গন্ধ তাড়িয়ে বেড়ায় কিনা। আমি আর কোনদিন বাসেই উঠবো না। সজু আমাকে একটা নতুন মডেলের গাড়ি কিনে দাও দেখি।
সাধারন ঘটনাও ক্যাম্নে ক্যাম্নে সজু স্টাইলে এনে ফেলো, টাস্কিত হই। পোস্টের আগে এন্টি মর্টেম করে দেখুম নাকি? পুরা ফরমালিনে ডুবাইয়া আনুম নাক, ফুসফুস সব।
শিক্ষণীয়ঃ বাসে উঠলে পায়ের ব্যাথা থাকা অতীব জরুরী। 😀
ব্লগার সজীব
আপনাকে একটি গাড়ি কিনে দেবই দেব, দোয়া করবেন খাস দিলে আমার যেন একটি গাড়ি গিফট করার সামর্থ হয়।
ঐ দুর্গন্ধরাজ এর পাশে বসে ভেবেছি দুর্গন্ধে মারা ফেলে পোষ্ট মর্টেম যদি আপনিও করেন, ফুসফুসেও তো দুর্গন্ধ পাবেন, তা সহ্য করবেন কিভাবে?
শিক্ষণীয়ঃ বাসে উঠলে পায়ের ব্যাথা থাকা অতীব জরুরী :D) :D)