বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর কার্যকালীন সময় এই ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে হাওয়া হয়ে গেছে। ঐ টাকার আর কোন হদিস নাই, টাকাগুলো ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেয়া হয়েছিল। টাকাগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, সে চেষ্টাও করা হয়নি সম্ভবত:। নাহলে উদ্ধার হলোনা কেন! শেখ বাচ্চুর বিরুদ্ধে এপর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অর্থাৎ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। এদিকে খবরে (দৈনিক সমকাল, ০৫/০৮/২০১৫ ইং) প্রকাশ, আবদুল হাই বাচ্চুর ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না এসব ব্যাপার সমন্বয় করতেন, ঘুষের বিষয়টা দেখতেন। কমিশন হিসাবে তিনি ১৫-২০ পার্সেন্ট গ্রহন করতেন। এটা গ্রহন করেও কেউ পেত, কেউ পেতনা ঋণের অর্থ। আশ^াস দিয়েও প্রতারণা করত সে ভূয়া অথবা ঋণ-প্রত্যাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে। ঘুষ দিয়েও যারা কথামতো ঋণ পাননি, ঋণের টাকা ফেরৎ চাইলে পান্না তাদের বলতেন, টাকা তো ভাইকে (শেখ বাচ্চু) দিয়ে দিয়েছি, আবার এই টাকা উদ্ধারের জন্য ভাইকেও কোন কথা বলা যাবেনা। অদ্ভুত ব্যাখ্যা। ইদানিং স্বয়ং মাননীয় অর্থমন্ত্রীর জাতীয় সংসদে শেখ বাচ্চুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের কারনেই বোধহয় কিছুটা এ্যাকশন হচ্ছে। এখন সংবাদ হচ্ছে যে, জনাব বাচ্চু এবং পান্না, উভয়েরই মোবাইল বন্দ্ব এবং পান্না দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আহ্, কত সুখ, কত শান্তি। দু’চার বছরে অনেক টাকা কামিয়ে নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়া। এর চেয়ে শান্তির আর কী আছে!
এক গার্মেন্টস্ ব্যবসায়ীকে জানি, অভিজাত এক এলাকায় ৫-তলা নিয়েই নিজের ডুপ্লেক্স-প্যাটার্নের বাড়ীতে বসবাস করেন। তিনি তাঁর শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন দেন এবং ওখানে বেতনও কিঞ্চিৎ বেশি। এথেকে ধারনা করা যায়, যেসমস্ত মালিক শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত দেননা আর কম দেন, তাঁদের জীবনযাপন আরো কত লাক্সারিয়াস। এদেশের গার্মেন্টস্ মালিকেরা চড়ে বেড়ান একাধিক উন্নতমানের গাড়ীতে।
এরকমভাবে বলা যাবে দেশে একশ্রেণির মানুষ অনেক প্রাচুর্যের মধ্যে জীবনযাপন করেন। কতো সুখে কাটে তাদের জীবন, ভাবলে ওরকম সুখের মধ্যে থাকতে কার না ইচ্ছা হয়! কার না ইচ্ছা হয়, বৈধ/অবৈধ যেকোন উপায়েই হোক না কেন, অল্পসময়ের মধ্যে অনেক টাকা কামিয়ে নিশ্চিত, নিরাপদ জীবনযাপন করতে! জেল, সাজার কোন বালাই নাই যখন, বিপদ বুঝতে পারলে বিদেশ পাড়ি জমানো যখন কোন ব্যাপারই না, তখন এই জীবনের উপরই তো মানুষের আকাঙ্ঘা থাকবে খুবই স্বাভাবিকভাবে।
আমাদের দেশের কৃষক-শ্রমিক-রিক্সাওয়ালা নির্বিশেষে মেহনতী মানুষ কী নিদারূন কষ্টে দিনানিপাত করেন, তা আমরা বুঝিনা, বুঝতে চাইনা। আমরা মনে করি এটাই ওদের নিয়তি। এভাবেই কিছু মানুষকে কষ্ট করে যেতেই হবে, যেখানে সবচেয়ে ঘণবসতিপূর্ন এদেশে এর চেয়ে বেশি আশা করা ঠিক না। এটাই ঘটবে, এটাই ওদের নিয়তি। নিজে সুযোগ পেলে সদ্ব্যবহার করতে ভুল কোরোনা, ব্যাস, আর কিছু চিন্তা করার দরকার নাই তোমার। কে কী করলো, তা দিয়ে তোমার অতো দরকার কী?
বাহ্, কত সুন্দর সমাধান, কত সহজে বলে গেলেন আপনি। আর সেই সময়টায় বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম-বাংলার দরিদ্র মানুষেরা। নদীর ভাঙ্গনে অনেক সাধের তাঁদের বাড়ীঘর সব ভেঙ্গে-গুড়িয়ে যাচ্ছে। গাদাগাদি করে বাস করতে গিয়ে গার্মেন্টস্ কর্মী আমার বোনটি হচ্ছে ধর্ষিতা, চৈত্রের দুপুরে ঘামে জর্জরিত আমার রিক্সাওয়ালা ভাইটি যাত্রী নিয়েই চলেছে অজানা কোন গন্তব্যে, অবয়বে যাঁর ফুটে উঠেছে অসহায়তা, সকরূনতা। ঘর্মাক্ত সেই অবয়বের দিকে কী আমরা তাকিয়ে দেখি, না দেখার সময় হয় আমাদের! কান্নাবিজড়িত চিত্তে আমাদের মা-বোনেরা চেয়ে থাকেন তাঁদের সন্তান, স্বামীদের খুনের বিচারের আশায়। বিচার কেন জানি হয়না। নির্ভৃত্বেই কাঁদে যেন বিচারের বানী, চার্জশীট সঠিক হয়না, খালাস পেয়ে যায় আসামী।
কথা আমরা বেশি বলতে অভ্যস্ত। আর নাহয় না বলি। শুধু জানতে চাই, আমরা কী হয়ে যাব সেইরকম যে, কোথায় কী হচ্ছে, তা আমার জানা বোঝার দরকারটা কী, আমারটা ঠিক হলেই হলো। আমাদের গড় চিন্তা এরকম হলেও এদেশে আছে অনেক ছেলেমেয়ে, অতি কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে যারা। কষ্টকর শ্রমের কাজ করেও যারা অদম্য চেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। অমানবিক কষ্টকর জীবনযাপন করেও যারা এদেশকে একটা মর্যাদাবান দেশ হিসাবে দেখতে চায়। তারা চায় আর যাতে এদেশে একটাও খারাপ কাজ না হয়, এদেশে সমান মর্যাদা নিয়ে যাতে বাস করে সকলে। কোন মানুষকে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হতে যাতে না হয়। গ্রামগঞ্জের স্কুলকলেজের কিশোরকিশোরী ছাত্রছাত্রীদের হৈচৈ, কলকাকলী শুনে তো আমাদের মনে হয়, হাঁ, এরাই এদেশের বোনাফাইড নাগরিক। কারন এদের মধ্যে আর যাই হোক, কোন কপটতা নাই। মন এদের সবসময় উজ্জ্বল এবং উচ্ছ্বল। এই মনে তাদের নেই কোন ভোগবিলাসিতা, আছে শুধু স্বপ্ন, অনেক বড় স্বপ্ন, সম্মিলিত যেস্বপ্নের কাছে ভেসে যাবে সকল অন্যায়, অবিচার আর দু:শাসন।
হাঁ, এই তরুনরা অনেক টাকা অর্জনের খারাপ, নোংরা পথে যাবেনা। এতে তারা মোটেই অনূভব করেনা কোন শান্তি। সঠিক প্রতিপালন হলে এরা দেশটাকে একদিন নিয়ে যাবে আকাশের কাছাকাছি, অনেক উঁচুতে।
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান সম্ভবত সকল প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা সহ অবসরে গেছেন।
তিনি অন্যায় করতেই পারেন না!!!
এ যখন অবস্থা তখন আলো দেখছি না বলতেই পারি। তবে অদূরে তা দেখব না এমন আশাও করি না।
দুরূহ তা।
আজিম
দুরূহ তো বটেই।
ছাইরাছ হেলাল
কী কেপ্পন(কৃপণ) রে বাবা,
প্রথম মন্তব্যকারীর জন্য বরাদ্দ মাত্র সাত সাতটি অক্ষর!!
এটির উত্তর দিয়ে বসবেন না যেন অক্ষর খরচ করে।
শিরোনামটি দিয়েছেন কবিতার, লিখেই ফেলুন এখানে এবার থেকে।
আজিম
আমার কবিতা সবার হাসির খোরাক যোগাবে ছাইরাছ ভাই।
আর তাছাড়া আমি তো কবিতার শিল্পী নই। কী করে আসবে কবিতা!
নীলাঞ্জনা নীলা
অভাব মানুষকে নাকি অপরাধ করতে শেখায়। আমি দেখি অভাব নয়, আমাদের দেশের মানুষদের স্বভাব এটা।
খুব সত্যি কথা কিছু পেতে চাইলে ঘুষ দেয়াটাই আর্ট।
আজিম
ভাল বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
গতকাল একটি সংবাদ পত্রে পড়লাম বেসিক ব্যাংকের টাকা লুটপাটের পরিমান যা প্রকাশ পেয়েছে তার চেয়ে বেশী।
প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।
বাস্তব কিছু কথা লেখায় তুলে আনায় ধন্যবাদ আপনাকে।
তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন আমরা সবাই ভালো থাকবো।
আজিম
জ্বী জিসান ভাই, স্বপ্ন দেখি আমরা একদিন সবাই ভাল থাকবো।
ইমন
;(
আজিম
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অরণ্য
লেখাটি বাসে বসে পড়েছি। ভাল লাগলো। কিছু চিন্তার খোরাক আছে। (y)
আজিম
ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
কিচ্ছু বলব না,
সোনার বাংলার সোনার তেনা এরা।
মুখে কুলুপ দেওয়ায় ভাল।
আজিম
ঝড়ের আশঙ্কায় আমরা বালির মধ্যে চোখ-মুখ-মাথা গুঁজে পড়ে আছি ঝড় যাতে আমাকে না ছোঁয়। যদিও জানি যে, এভাবে প্রলয় বন্দ্ব হবেনা।
মোঃ মজিবর রহমান
আজিম ভাই কাকে বলব?
এনারা রাজনিতি করেছে টাকা কামাইয়ের জন্য দেশের জন্য না।
তাই মাননীয় প্রাইম মিনিস্টার এদের জায়গায় জায়গায় দিয়েছে টাকা বানাইয়া লই যত পার ততো।
হা হা হা আহা
আজিম
মজিবর ভাই, দু:খের কথা কী আর বলবো!
স্বপ্ন
দেশ হতে এমন লুটপাট চলে গেলে আমরা এখন বহুদূর চলে যেতাম।
আজিম
সহমত জ্ঞাপন করছি জনাব স্বপ্ন।।
লীলাবতী
চোরের জয়জয়কার।
আজিম
জ্বী, সেটাই।
শুন্য শুন্যালয়
সঠিক প্রতিপালনের জন্য সামনে কোন দৃষ্টান্ত তো দেখতে পারছিনা।
আজিম
অনেক কিছু বলার ছিল জনাবা। কিন্তু এমুহূর্তে পারছিনা।
দেশের একজন মোটামুটি হলেও সচেতন ব্যক্তি হিসাবে এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।