১১৭তম জন্মদিনে আবুল মনসুর আহমদ

আজিম ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রবিবার, ০৭:৫৩:১১অপরাহ্ন বিবিধ ৪ মন্তব্য

ছত্রিশ বছর আগে ১৯৭৯ সালে আবুল মনসুর আহমদ মারা যান। আবুল মনসুর আহমদ’র ১১৭তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমী-তে অনুষ্ঠিত হলো আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি সম্মেলন-২০১৫। আগেও উনার জন্মদিনের আয়োজন হতো ছোট পরিসরে। তবে এবারই এরকম বিরাট করে আয়োজন করা হলো।
আবুল মনসুর ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিক। সারা দিনে তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। একটি সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ হিসেবে আলোচনা, আরেকটি সাংবাদিক এবং শেষেরটি রাজনীতিক হিসেবে। আবুল মনসুর অনেক ছোটগল্প লিখেছেন, যেগুলিতে তিনি রঙ্গ ও ব্যঙ্গবিদ্রুপের মাধ্যমে সামাজিক অসঙ্গতিগুলো দুর করতে চেয়েছেন। সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজকে জাগাতে চেয়ে তিনি প্রমান করেছেন যে, সাহিত্য থেকে মানবজীবন কখনোই বিচ্ছিন্ন নয়। আবুল মনসুর আহমদের কর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাহিত্য-সম্পর্কিত সকালের সেশনের সভাপতি সৈয়দ শামসুল হক।
জনাব আবুল মনসুর কোলকাতা থেকে প্রকাশিত অনেক সংবাদপত্রে চাকরী করেছেন। এ সম্পর্কে মূল প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেন ড. মো: চেঙ্গিস খান। ১৯৩৮ সালে দৈনিক নবযুগ পত্রিকা বের করেন এবং এর সম্পাদক হন। চারবছর মাত্র টিকে থাকে পত্রিকাটি এবং এরপর তিনি দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অনেক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, দেশ ভাগ হওয়া অনেক আগে থেকেই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে তিনি প্রথম কথা বলেন তাঁর দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার মাধ্যমে। সিনিয়র সাংবাদিক আবুল মোমেনের মতে, দৈনিক ইত্তেহাদ তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার সবচেয়ে প্রগতিশীল দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এর মূল অবদান আবুল মনসুর আহমদের। সংবাদপত্রের মালিকের সাথে সম্পাদকের যে দ্বন্দ্ব, তা তিনিই প্রথম সামনে নিয়ে আনেন, আজো নিরসন হয়নি সে দ্বন্দ্বের। সাংবাদিক এবং সম্পাদক, উভয় হিসেবেই দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তাঁকে হয় কোথাও নিজেকেই চাকরী ছেড়ে দিতে হয়েছিল অথবা মালিকই তাঁকে চাকরী হতে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
রাজনতিবিদ আবুল মনসুর-এর আলোচনায় এমিরেটাস অধ্যাপক জনাব আনিসুজ্জামান তাঁকে রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হিসেবে উল্লেখ করেন। বলা হয়, তাঁর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চিন্তার মধ্যে যে মৌলিকতা ছিল তা বিরল। রাজনৈতিক সততা, সদিচ্ছা ও প্রতিবাদের যে ঐতিহ্য তিনি সৃষ্টি করে গেছেন, তা আমাদের অনুসরন করা উচিৎ বলে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন। এই মহাপুরুষ শেরে-বাংলা এ,কে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার মন্ত্রী ছিলেন, আবার ১৯৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায়ও মন্ত্রী ছিলেন। হঠাৎ করে ১৯৬২ সালে মাত্র ৬৪ বছর বয়সে কেন যেন রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে অবসরে চলে যান আবুল মনসুর আহমদ। অবসরে না গেলে আমরা আরো কিছু শিখতে পারতাম তাঁর কাছ থেকে।
ওখান থেকে বের হয়ে টিএসসি সড়কদ্বীপ পযর্ন্ত হেঁটে এলাম। অনেক ছেলেমেয়ে এখানে। প্রায় সবাই ওরা ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী। বসে আছে কেউ বান্ধবীর সাথে অথবা কিছু শুধু ছেলেও বসে আছে। যেখানে বান্ধবী আছে সেখানে একধরনের আলাপ, আবার যেখানে শুধুই ছেলেরা, সেখানে অন্য ধরনের। আলাপগুলোর কিছু বোঝা যায়না, সকলের চেঁচামেচিতে কে যে কী বলছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। সে চেষ্টাও করছিনা আমি। কারন যদিও এখানে নয়, তবু একসময় এইদিন আমারও গেছে। নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত সবাই। আর বিভিন্ন ধরনের খাবার, লেবুর রস থেকে শুরু করে ফুচ্কা, চা, কফি, কী নাই এখানে! সিগ্রেট তো চলছে অফুরন্ত।
সড়কদ্বীপের পুরোটাই ভাসছে তারুন্যে। এই তারুন্যের রয়েছে কিছুটা আত্মকেন্দ্রিকতা। আজকের তরুনদের অধিকাংশই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত। আমরাও তাই করেছি। পড়তে এসেছে, পড়বে তো অবশ্যই। বাবা-মা’র ত্যাগের ঋণ শোধ করার একটা তাগিদ তো আছে ওদের মধ্যে। তবুও কী যেন একটা খোঁচা লাগে। মনে হয় ওদের কত সমস্যা, সেগুলি সম্পর্কে ওরা অবহিত কি? পড়াশুনা শেষে যে কমর্জীবন শুরু হবে ওদের, কী অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে, সে সম্পর্কে কতটুকু জানে ওরা? ২/৩ বছর আগে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে এখানে। সেটার খবর কি, খবর রাখে ওরা? জানি, দেশে যে কোন সরকারী চাকরী পেতে যে ঘুষ লাগে, এটা ওরা জানে। এই সম্পর্কেও ওদের টেনশন আছে। দেশটা দুর্নীতিতে ভরে গেছে, এই প্রজন্ম জানে সেটাও। নারী নির্যাতন এবং জঘন্য অপরাধ ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটছে ভুরি ভুরি, বন্যায় তলিয়ে গেছে ওদের গ্রামগঞ্জের বিস্তীর্ন প্রান্তর। গল্পরত ওদের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়েছে আমাদেরই মতো এরাও ঐ একইরকম। ওরাও মনে করে, কী করব আমি!
এটা শুধু একজন ছাত্র নয়, এদেশের আপামর জণগোষ্টি ভাবে এরকমই। ’কী করব আমি!’ তবে করতে না পারলেও কী করা উচিৎ, কমপক্ষে সেই ধারনাটা থাকলেও ওরা সারাজীবন মানুষ হয়ে থাকবে, অমানুষের মানসিকতায় আচ্ছন্ন হবেনা, সেপর্যায়ের মতো কোন কাজ করবেনা।
ওখানে ১৫%-এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী হবেনা যারা ছাত্র রাজনীতি করে। সারাদেশে এধরনের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক, বলা যায় বিরাট এবং বিশাল। এদেশে রাজনীতি-না-করা ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এককথায় অসংখ্য। বিরাট এই ছাত্র-ছাত্রী দেশের জাতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারে। এই ছাত্রসমাজ সাম্প্রদায়িক এবং অসহনশীল রাজনীতি ঘৃণা করে বলে বিএনপি এদের টানতে পারবেনা, সেবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। ২০০৮-এ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে বলে অঙ্গীকার করায় এই ছাত্রসমাজের প্রত্যক্ষ সমর্থণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। টানা প্রায় ৭ বছর দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের কিছু বিচ্যুতির কারনে এই ছাত্রসমাজ আর সেরকমভাবে আওয়ামী লীগের উপর টান অনূভব করেনা। এরা দোদুল্যমান এবং/অথবা এরা কোন রাজনীতির ধার ধারেনা। স্বাধীন এবং প্রধান প্রভাব বিস্তারকারী।
অস্বীকার করা যাবেনা, তবুও সারাদেশে বিএনপি’র একটা ভোটব্যাংক আছে। আর তারুন্যের এই ব্যাংকের ভোট ইতিমধ্যে কোনদিকে হেলেছে, তা বলা যাবেনা কারো পক্ষেই নিশ্চিতভাবে। আওয়ামী লীগকে এই তারু্ন্যকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করতে হবে এবং এই তারুন্যকেও সেদিকেই এগিয়ে যেতে হবে, কোন উপায় নাই। তবে শর্তসাপেক্ষে। ঐযে, চাকরীর ব্যাপারে সম্পূর্ন নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, সম্পূর্ন মেধার ভিত্তিতে এবং কোনরকম দুর্নীতি ছাড়াই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। দেশে সেরা থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে দুর্নীতিবাজদের বিচার হতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত হয়েছে, এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে এই প্রজন্মসহ সকল মানুষের কাছে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য দেশের সাধারন মানুষ দ্বারা নদী ড্রেজিংএর বিশাল কাযর্ক্রম গ্রহন করতে হবে এবং বাঁধগুলো কেন ভেঙ্গে যায় সেসব তদন্ত করে দোষীদের শাস্তিপ্রদান করা সরকারের অনেক অনেক বড় দায়িত্ব এবং এটিও নিশ্চিত হতে হবে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ প্রতিরোধী কমিটি গঠন এবং ধর্ষিতা যাতে সুবিচার পায়, কোন তথ্য গোপন করার অপচেষ্টা প্রতিরোধ করাসহ সকল কিছুই যাতে অত্যাচারিতের পক্ষে যায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিৎ করার জন্য এই কমিটি যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত হতে হবে।
বিপরীতে এই প্রজন্ম বিএনপি’র তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। এলে আসবে অথবা চুপ করে থাকবে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু না করতে ওরা বাধ্য করবে বিএনপিকে। তরুন প্রজন্মের এসব সমস্যা সরকার মেটাতে পারলে বিএনপিও আর বেশি কিছু করতে হেজিটেট করবে। আমার মনে হয়, শুধুমাত্র এভাবেই আওযামী লীগ সরকার আগামীতে টিকে থাকতে পারে। তাদের হাত ধরেই এদেশ হতে পারে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত তথা উন্নত দেশগুলোর সারিতে অথবা কাছাকাছি কেবলমাত্র এভাবেই।
এ হবে এক রিকনসিলিয়েশন, যাতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ