সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

আজিম ৮ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, ১০:৪৫:২৬অপরাহ্ন এদেশ, সমসাময়িক ১৮ মন্তব্য

দেশে সুশাসন নাই, ক্ষোভ প্রকাশ করার সুযোগ নাই, প্রতিবাদ কেউ করলেই ধরে নিয়ে যায়, এজন্যই দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করছে, এটা যারা বলেন, তাদের সাথে সেরকমভাবে একমত হতে পারিনা আমি। আবার যারা বলেন, সরকারই বিরোধী দলকে দায়ী করার জন্য এসব করছে, তাদের সাথে তো নয়ই। আবার যারা বলেন, জাতীয় ঐক্য চাই এইসময়ে, তারা যে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্খা থেকে এটা বলেন, কোনো সন্দেহ থাকতে পারেনা তাতেও।
গত ০১/০৭/২০১৬ ইং তারিখে গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারী রেস্তোঁরায় যে হত্যাযজ্ঞ ঘটে গেল, তার কোনো এক্সকিউজ থাকতে পারেনা। কোনো যুক্তিতেই এটা বলা যাবেনা যে, এজন্য ঘটনাটা ঘটতে বাধ্য হয়েছে। জঙ্গিসহ ২৮টি প্রান ঝরে গেছে সেদিন, যার মধ্যে জঙ্গিরা বাদে সবাই নিরীহ এবং ১৭ জনই বিদেশি। বিদেশিদের কেন খুন করা হলো? এককথায় বলতে গেলে বলতে হয়, বহির্বিশ্বের কাছে বর্তমান সরকারকে অকার্যকর হিসেবে প্রমান করা এবং যে-হারেই হোক-না-কেন এদেশের এগিয়ে যাওয়াকে পিছিয়ে দেয়াই হচ্ছে এর উদ্দেশ্য।
কোটি টাকার প্রশ্নটি হলো, কারা এর পেছনে? ঘটনায় নিহত জঙ্গিদের কারা প্ররোচিত করেছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ভাবতে হবে, কারা এদেশের সরকারকে বহির্বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, কারা এটা প্রমান করতে চায় যে, এসরকার অদক্ষ এবং এদের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই?
২০১৪-র ৫-ই জানুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ-সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলমান ছিল। আবার এই সময়ের মধ্যেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কারনে জামাতে ইসলামী নামক সংগঠনটির কয়েকজন প্রধান নেতার ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। ২০১৫ সালের তিনমাস এদেশে আগুন-সন্ত্রাস হয়েছে, সরকার উৎখাতের আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিরীহ-সাধারন মানুষকে জলন্ত আগুনে পুড়িয়ে নিদর্য়ভাবে মারা হয়েছে। কারা করেছে এসব, এই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি প্রধান সরাসরি, কোনোরকম রাখ-ঢাক না করেই বলে থাকেন, সরকারী দল এসব করে বিএনপির উপর দায় চাপাচ্ছে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ, বলতে গেলে অধিকাংশ মানুষই তা বিশ্বাস করেনা। তারা মনে করে, না, বিএনপি-জামাত জোটই এসব করেছে। কারন এর বছর দেড়-দুই আগেও এদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় প্রদানের প্রক্রিয়া যখন চলমান ছিল, সেসময়ও আমরা এরকম আগুন-সন্ত্রাস দেখেছি। সেসময়ও দেখেছি, চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে বলে সাধারন মানুষের ধমর্বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাঁদের দিয়ে অনেক ধ্বংসাত্মক কাজ করানো হয়েছে। সারা দেশে বিশেষ করে বগুড়া, রাজশাহী, চাপাই-নবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, চট্টগ্রামের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, সাতকানিয়াসহ প্রায় পুরো দেশব্যপী চালানো হয়েছিল ভীতিকর ধ্বংসাত্মক সব কাযর্ক্রম। কেন? একাত্তরের মানবতাবিরোধী যে অপরাধগুলির জন্য তাদের সাজা হচ্ছিল, সেই অপরাধগুলি কি তারা সংঘঠন করেননি? অবশ্যই করেছিলেন এবং আগুন-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের হোতারাও তা জানতেন। তবুও অপরাধীদের বাঁচানোর অংশ হিসেবে তাঁরা এসমস্ত সন্ত্রাসী কমর্কান্ড করেছেন এবং ছাত্রশিবিরের তরুন তরুন ছেলেদের এসমস্ত কাজে ব্যবহার করতেন।
বিএনপি-জামাত জোট বলে থাকে, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার বিলোপ সাধন কেন করল? এখানে বলা যেতে পারে যে, উক্ত জোটের আন্দোলন-সংগ্রাম কি সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে কখনো? বলবেন, সরকার কি বিএনপি-জামাত জোটকে কখনো রাজপথে নামতে দিয়েছে? আমরা স্মরণ করতে পারি, মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের রায় যখন প্রকাশিত হওয়ার পথে, ২০১৩’এর একেবারে প্রথমদিকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন অলিগলি থেকে জামাত-শিবিরের কর্মী-সমথর্করা বেরিয়ে এসে আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হামলা চালাত। সরকার কঠোর না হলে এসমস্ত হামলা মোকাবিলা করা সম্ভব হতো কীভাবে? তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার ভাল করেছে কি-না, সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং তা চলবেও। আবার বিএনপি-জামাতের আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা পূণ:প্রতিষ্ঠার কারনে যতটা না হয়েছে, তারচেয়ে অনেক বেশি হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য। তারা কি ভেবেছিলেন যে, ছিয়ানব্বইতে তারা যেমন বাধ্য হয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা পুণ:প্রতিষ্ঠা করতে, সরকারও সেরকম বাধ্য হবে। হতোও, যদি বিএনপি মানবতাবিরোরোধী অপরাধীদের সমথর্নে নানারকম কথাবার্তা না বলতো এবং বিচারিক কাযর্ক্রমকে সমর্থন দিত।
যাহোক, গুলশান হামলা এবং পবিত্র ঈদের দিন শোলাকিয়ায় যে ঘটনাগুলো ঘটল এবং তিনজন জঙ্গি শুদ্ধ বাংলায় সরাসরি যেভাবে হুমকি দিল যে, এরকম ঘটনা আরো ঘটবে, তাতে বিশ্বপরিসরের আইএসের সংশ্লিষ্টতা থাকার পক্ষে যুক্তি রয়েছে।
সম্প্রতি বেশি করে দেখা যাচ্ছে, অনলাইনে প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনের উপরে আওয়ামী লীগের পক্ষের মন্তব্য হলে অধিকাংশই পড়ে ডিজলাইক, লাইক পড়ে কম। আর বিএনপি-জামাতের পক্ষের মন্তব্যে লাইক পড়ে বেশি, ডিজলাইক কম। বিষয়টা আমাদের মনো:পুত হচ্ছেনা। কারন আমাদের ভয়, ওরা ক্ষমতায় গেলে তখন আবার জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে কিনা দেশে। অবশ্য বিশ্বপরিসরে তখন জঙ্গিবাদের অবসান হলে এদেশেও তা হবে। তবে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় যেতে চায়, তবে তাকে এখন থেকেই আমূল পরিবর্তিত হয়ে যেতে হবে। নতুবা যেকোনোভাবেই হোক-না-কেন, আওয়ামী লীগকে বোধহয় ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে। জোর করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে না পারাটাই দেখতে পাওয়া যায় বেশি।
অথচ আওয়ামী লীগ, যদিও এখনো সময় নাই তা নয়, দলীয় লোকজনদের ফেভার করা থেকে বিরত হয়, অপরাধী দলীয় লোক হলেও যদি সাজার ব্যবস্থা করে, একেবারে বিবেক দিয়ে যদি দেশ পরিচালনা করে, দুর্নীতিবাজ, সে দলীয় লোকজন হোক অথবা সরকারী কর্মকর্তা, এক্ষেত্রে সেরকম বাছ-বিচার মোটেই না করে বিচার এবং সাজার ব্যবস্থা করে, সর্বোপরি ন্যায়-নীতির দন্ড নিয়ে দেশ পরিচালনা করে, তবে দলটির বিকল্প আর কোনো দল হতে পারবেনা। এরকম আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চাই আমরা।
এরকমভাবে দেশ পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ দেখতে পারে এতে জঙ্গিবাদ কমে কি-না।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ