মহারাণী

সৌবর্ণ বাঁধন ২১ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ১০:১৭:২৬পূর্বাহ্ন খ্যাতনামা ব্যক্তি ১০ মন্তব্য

রাণী ভিক্টোরিয়া, যার পুরো নাম আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া রেজিনা, পৃথিবীর রাজতন্ত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ ছিলেন। তিনি ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও অধিকৃত ভারতের সম্রাজ্ঞী ছিলেন, যে সাম্রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যেতো না। তেষট্টি বছরের সুদীর্ঘ শাসনের প্রভাব ইতিহাসে এতো বেশি যে একটা সময়কালের নামই হয়ে গিয়েছে ভিক্টোরিয়ান যুগ। রাজা তৃতীয় জর্জের চতুর্থ ছেলে ডিউক প্রিন্স এডওয়ার্ডের মেয়ে ভিক্টোরিয়া ২৪মে, ১৮১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেন। ছোটবেলা ভবিষ্যত সিংহাসনের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে মা আর তত্ত্বাবধানকারী স্যার জন কনরয়ের কঠোর তত্ত্বাবধানে পার করতে হয়েছিল, বস্তুত বাইরের কোন পুরূষের সঙ্গেই তাকে মিশতে দেয়া হতোনা। মাত্র আট মাস বয়সে পিতৃহারা হলে তার মা কঠোর ভাবে তাকে আগুলে রাখতেন। মা চাইতেন যদি ভিক্টোরিয়া নাবালিকা অবস্থায় সিংহাসনের অধিকার পান, তখন পর্দার আড়াল থেকে রাজত্ব চালাবেন। এজন্য রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সাথেও তাকে মিশতে দেয়া হতোনা, এমনকি চাচা উইলিয়ামের রাজ্যাভিষেকেও যেতে দেওয়া হয়নি! স্যার জন কনরয় তাকে কঠোর ভাবে দেখাশুনা করতেন, এটা ছিল ভিক্টোরিয়ার মা ও জন কনরয়ের তৈরি কেনসিংটন সিস্টেম। হয়তো উদ্দেশ্য ছিল ভিক্টোরিয়াকে সম্পূর্ণ ভাবে মা আর কনরয়ের উপর নির্ভরশীল করে রাখা, যাতে করে পরবর্তীতে তারা রাজ্য চালনায় ভূমিকা রাখতে পারে! আরেকটা কারণ ছিল পূর্ববর্তী রাজাদের এবং তথাকথিত অভিজাত সম্প্রদায়ের বদ অভ্যাস ও বাজে জীবনাচরণ শেখা থেকে তাকে বিরত রাখা। কনরয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন মায়ের মৃত্যু হলেও তিনি ভিক্টোরিয়াকে দেখে রাখবেন। রাতের সময়টুকুও মায়ের সাথেই ঘুমাতে হতো! ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসার পর জীবনে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন! রানী তার শৈশব নিয়ে চরম অসুখী ছিলেন!

২০ শে জুন ১৮৩৭ সালের সকাল ৬ টায় যখন আর্চবিশপ তাকে জানাতে আসল রাজা উইলিয়ামের মৃত্যু সংবাদ এবং তার রাণী হওয়ার খবর, ভিক্টোরিয়ার প্রথম আদেশ ছিল-‘আমাকে আলাদা ভাবে একা থাকতে দাও!’ তাদের এই তিক্ত সম্পর্কের কথা তখন সবাই জানতো। কেনসিংটন সিস্টেম থেকে বিদ্রোহ করে বের হতে পারলেও মূল্য দিতে হয়েছিল, তার ডায়েরিতে বহুবার এসেছিল ‘একাকি” শব্দটি। তবে ছোট বেলা থেকেই কনরয়ের কঠোর তত্ত্বাবধান আর শাসনে বেড়ে ঊঠায় সারাজীবন তার মধ্যে একটা পরনির্ভরশীলতা ছিল। বিশেষ করে দৃঢ় চেতা সাহসী পুরুষদের প্রতি, পরবর্তী জীবনে স্বামী আলবার্ট, পরে রবার্ট ব্রাউন, আব্দুল করিম মুন্সীর প্রতি নির্ভরশীলতা ও এক ধরনের দূর্বলতা প্রদর্শন সম্ভবত এরই প্রমাণ ছিল!


তার মা জার্মান ছিলেন, ছোট বেলা থেকেই ভিক্টোরিয়া জার্মান ও ইংরাজি দুই ভাষাতেই দক্ষ হয়ে উঠেন। মায়ের কাছে পাওয়া এই জার্মানদের প্রতি দূর্বলতা, তার সারাজীবনই ছিল। তিনি তার কাজিন জার্মান প্রিন্স আলবার্টের প্রতি অনেক আগে থেকেই অনুরক্ত ছিলেন, কিন্তু যেহেতু রাণীকে কোন প্রজা বিবাহের প্রস্তাব পাঠাতে পারতেন না, তাই রাণী স্বয়ং প্রস্তাব পাঠালে ১৮৪০ সালে আলবার্টের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও ব্রিটিশ নাগরিকরা একজন জার্মানকে এতো বড় রাজনৈতিক অবস্থানে খুব একটা ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু তারা পরস্পরকে প্রচন্ড পছন্দ করতেন, প্রথম প্রথম যে সমস্যা হয়নি তাও নয়! তারপরও এডওয়ার্ড তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার ব্যক্তিজীবন ও রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে ঘনিষ্ট সহচরে পরিণত হন। তাদের বলা হতো উনবিংশ শতকের আদর্শ যুগল। সম্ভবত রাণীর জার্মানদের প্রতি দূর্বলতাও এই পছন্দের অন্যতম কারণ ছিল। তাদের সংসারে নয় ছেলে মেয়ের প্রায় সবাইকে বিয়ে দিয়েছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবারে, আর ধারণা করা হয় একই সাথে তার কাছে থেকেই ইউরোপের রাজপরিবার গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল হিমোফিলিয়া নামের রোগ। এইজন্য অনেক ইতিহাসবিদ ভিক্টোরিয়াকে গ্রান্ডমাদার অফ ইউরোপ ও বলে থাকেন। বিয়েগুলোর পিছনে একটা কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক এজেন্ডাও ছিল। একদিকে ইউরোপের শান্তির জন্য চেষ্টা করে গিয়েছেন, বিশ্বাস করতেন তার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়রা হয়তো সংঘাতে জড়াবেন না, যা রাণীর মৃত্যুর পর চরমভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছিল!


একদিকে ইউরোপে শান্তির জন্য তার আপ্রাণ প্রচেষ্টা, অন্যদিকে উপনিবেশ জুড়ে অত্যাচার আর রক্তপাত- ভারতের সিপাহী বিদ্রোহের নির্দয়তা, বুয়র যুদ্ধ, চীনে, আফগানিস্থানে যুদ্ধ! আসলে কেমন ছিলেন রাণীর বেশের আড়ালের ব্যক্তিমানুষ! রাজকীয় বিয়ের ছবি আর শিল্পীর আঁকানো প্রোট্রের্টের আড়ালে থাকা একজন সাধারণ নারীকেও মাতৃত্বের দায় মেটাতে বহুসময় রাজসভা আর রাজকার্যের বাইরেই থাকতে হয়েছিল। নয়বার গর্ভধারণ তাকে ক্লান্ত বিধ্বস্ত করে ফেলেছিল। বিবাহিত জীবনকে আনন্দময় ভাবলেও গর্ভধারণের শারীরবৃত্তীয় বিষয় নিয়ে বিরক্ত ছিলেন। এটাকে বিবাহিত জীবনের অন্ধকার দিক ভাবতেন, অনেক সময় নারীজীবনকে তার কাছে মনে হয়েছে সন্তান উৎপাদনকারী পশুর মতো যন্ত্রণাময়! অনেকবার তাকে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনেও ভুগতে হয়েছে। একেবারে ছোট শিশু বা নবজাতকদের প্রতি মায়ার বন্ধন গড়াটা তার কাছে খুব কঠিন কাজ ছিল! পরবর্তীতে তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন-‘ছোট শিশুদের আমার কাছে কুৎসিত মনে হয়! তারা যতক্ষণ না কিছুটা মানুষের মতো আচরণ করা না শিখে, ওদের ভালোবাসতে পারিনা!’ তবু তিনি তার সন্তানদের অনেক ভালোবাসতেন। তাদের সুস্থতা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন, ছোট ছেলে লিওপোল্ড যে হিমোফিলিয়ার রূগী ছিল, তাকে অন্যদের চেয়ে বেশী স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতেন।
সমসাময়িক পুরূষদের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে শক্ত চরিত্র ছিলেন। ভিক্টোরিয়া এবং তার স্বামী আলবার্ট দুজনেই জার্মান ভাষা আর কায়দা কানুনে শিক্ষিত ছিলেন, তাদের মধ্যে গভীর মিলের এটাও একটা কারণ ছিল। যেই সময়ে সমগ্র ইউরোপে রাজতন্ত্রের পতন সূচিত হচ্ছিল, সেই সময় রানী আবার ব্রিটেনে তাকে পুনুরুজ্জীবিত করেছিলেন। মূলত তারা দুইজন জনগণের সামনে নিজেদের আরো দশটা পরিবারের মতো সাধারণ পরিবার হিসেবে উপস্থাপিত করতে পেরেছিলেন। তখন নতুন আবিষ্কৃত প্রিন্টিং মেশিন এ পত্রিকা ও ছবি ছাপানোর জোয়ারের সুবিধা ভালোমতোই নিয়েছিলেন। জনগণ প্রথমবারের মতো প্রতিদিন দেখতে পেত তাদের রাণী কি করছে! এটা মানুষের কাছে ছিল অভূতপূর্ব ঘটনা! দূরত্ব কমে এসেছিল, কমেছিল ভুল বোঝাবুঝিও। তবে সেই সময়ের পত্রিকার সম্পাদকীয়, কার্টুন পর্যালোচনা করে অনেকে ধারণা করেন রাণী প্রচন্ড একগুঁয়ে হলেও আসলে রাজনীতির কেন্দ্রে একজন পুতুল ছিলেন মাত্র। এরকম পরিস্থিতি সত্ত্বেও স্বামীকে প্রচন্ড প্রাণবন্ত ভাবে ভালোবাসলেও কখনো রাজনীতিতে কর্তৃত্ব ফলাতে দেননি। তৎকালীন যুগের নৈতিকতা আর জেদি মুক্ত মানসিকতার অদ্ভুত সংমিশ্রণ এটা।


১৮৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে তার প্রিয় আলবার্ট হঠাত টাইফয়েডে জরে মারা যান। যাকে ছাড়া তিনি একদিন ও চলতে পারতেন না, তার পছন্দের পোশাক ছাড়া পড়তেন না, তার সব কিছুর সাথে মিশে ছিলেন এই আলবার্ট! প্রচন্ড ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন, বহুদিন আর লোকসম্মুখে আসেননি। আলবার্টের ঘর ঠিক আগের মতো করে সাজিয়ে রাখতেন, সকালে ওয়াশ রুমে গরম পানি দিয়ে আসতো চাকরেরা, যা দিয়ে আলবার্ট বেঁচে থাকতে সেভ করতেন। অনেকের মতে এগুলো নিয়ে রাণীর মধ্যে অবসেশন শুরু হয়েছিল! রাজকার্য বলতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রয়াত স্বামীর ভাস্কর্য স্থাপন করতেন। জীবনের পরবর্তী চল্লিশ বছর রাণী কালো রং এর পোশাক পরতেন সবসময়! ব্রিটিশ জনগণ তার এই অনুপস্থিতিতে অখুশি হয়ে উঠেছিল, কিছু লোক বাকিংহাম প্রাসাদের ওয়ালে লিখে এসেছিল ‘প্রয়োজন নেই রাজতন্ত্রের’!

তার জীবনের এই পর্যায়ে অধিকাংশ সময় কাটাতেন স্কটল্যান্ডের উইন্ডসর ক্যাসলে, যেখানে তিনি আর আলবার্ট সুখের সময় কাটাতেন প্রথম জীবনে! ১৮৬৬ রাণীর সাথে তার একজন সারভেন্ট জন ব্রাউনের অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে উঠে। রবার্ট ব্রাউন একজন গর্বিত স্কটিশ পাহাড়ি ভূমির মানুষ, রাণীর ঘোড়ার সহিসের কাজ করতেন। ১৮৬০ সালের পর থেকেই অনেক বেশি বন্ধুর মতো রাণীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। গাড় স্কটিশ উচ্চারণে কথা বলতে অভ্যস্ত ব্রাউন রাণীর সাথে কথা বলার সময় রাজকীয় ভদ্রতা বা প্রথার ধার ধারতেন না। এইসব অদ্ভুত বিষয় আশেপাশের মানুষের মধ্যে অনেক রকম রটনার জন্ম দিয়েছিল! তবে রাণী তাকে খুব পছন্দ করতেন, ঘন্টার পর ঘণ্টা তার সাথে কাটাতেন! ১৮৬৭ সালে ঐতিহ্যবাহী হাইড পার্কে সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার সময় রবার্ট ব্রাউনকে পাশে রাখতে চাইলে মন্ত্রীরা বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠান বাতিল করেছিলেন। ব্রাউনের সাথে এই অদ্ভুত সখ্যতা রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। অনেকে আড়ালে আবডালে রাণীকে ব্যঙ্গ করে মিসেস ব্রাউন বলে ডাকা শুরু করেছিলেন! তবে হয়তো রাণী রবার্ট ব্রাউনের মধ্যে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পেয়েছিলেন। অনেকের মতে হয়তো ব্রাউন রাণীর প্রয়াত স্বামীর সাথে যোগাযোগের জন্য স্পিরিচুয়াল মিডিয়া হিসেবে কাজ করত! আর তাই রাণী তার প্রতি এতোটা দূর্বল ছিলেন! ১৮৮৩ সালে ব্রাউন ইরাইসিপেলাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যদিও রাণী নিয়মিত ডায়েরী লিখতেন, তবু হয়তো এই অধ্যায়ের কথা নিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব নয়, কারণ মৃত্যুর পর তার ছেলে মেয়েরা ডায়েরীর এই অংশটুকু সম্ভবত নষ্ট করে ফেলেছিল! তবে এটুকু বোঝা শক্ত নয় রাজকীয় মুকুট আর স্যালুটের আড়ালে রাণী একজন আবেগী মানুষ ছিলেন, যিনি আবেগের সামনে যুক্তির ধার ধারতেন না!

রাণীর শাসন কালের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভারত থেকে উপহার হিসেবে আসেন আবদুল করিম। কিছুদিনের মধ্যেই এই ব্যক্তি রাণীর সবচেয়ে বিশ্বাসী মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। রবার্ট ব্রাউনের তিক্ত স্মৃতি তখনো সবার মনে দগদগে হয়েছিল, এই অনুমানে মুন্সী আবদুল করিম তাই রাজ পরিষদে হয়ে গেলেন ঘৃণার পাত্র! এই আবদুল করিমের কাছে রাণী উর্দু শিখতে শুরু করেন, তার নতুন ভারতীয় সাম্রাজ্যের মানুষদের কথা জানতে শুরু করেন। এমনিতেও বর্ণবাদের কারণে তাকে সবাই অপছন্দ করতো, সবাই ভাবছিল এ আবার নতুন ব্রাউন হবে কিনা! যদিও অনেক খানেই রাণী নিজেকে মুন্সীর কাছে উল্লেখ করেছেন-‘কাছের বন্ধু’ ‘তোমার স্নেহময়ী মা’ ইত্যাদি নামে! এমনকি লন্ডনে করিমের স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা করেছিলেন। তার প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবিদ্বেষী আচরণকে তিরস্কার ও করেছেন। তাদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্কের কোন উল্লেখ কোথায় নেই, যদিও রাণীর অনেক কাছে পৌছেছিলেন মুন্সী আবদুল করিম। রাণী তার সাথে অনেক সময় কাটাতেন যেভাবে ব্রাঊনের সাথে কাটাতেন আগে! তার অনেক প্রোট্রেট আকানোর ব্যবস্থাও করেছিলেন। কথিত আছে ১৯০১ সালে রাণীর মৃত্যুর পর তার ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ড মুন্সীর কাছে রাণীর পাঠানো সবগুলো চিঠি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং মুন্সীকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। হয়তো রাণীর মনের ভিতর যে নিঃসঙ্গ মানুষ হাহাকার করতো আলবার্টের মৃত্যুর পর সে সবসময় নির্ভর করার মতো বন্ধু খুঁজত! আবার এমনো হতে পারে আবদুল করিম তার কাছে অন্যদেশি এক অদ্ভুত মানুষ ছিল, যাদের কখনো দেখেন নি তিনি, তাই আগ্রহী ছিলেন তাদের বিষয়ে জানতে!

তার চরিত্রের অনেক কিছু এসেছে শৈশবের কৃত্তিম পরনির্ভরশীল পরিবেশে বড় হওয়া এবং সেই যুগের সামাজিক মূল্যবোধের মিশ্রণ থেকে। অনেক ঐতিহাসিকের মতে তিনি ছিলেন একগুঁয়ে, সংশয়ী কিন্ত দূর্বল প্রকৃতির মহিলা যার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সবসময় শক্তিমান পুরূষ চরিত্রের দরকার হতো! তিনি মা ও স্ত্রী হিসেবে সবটুকু দিতে পেরেছিলেন, কিন্তু প্রিয় স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেও আমৃত্যু হতাশায় নিমজ্জিত ছিলেন এবং রাণী হিসেবে ক্রমাগত অকার্যকর হয়ে পড়ছিলেন। তবে এটা নিয়ে দ্বিমত নেই যে রাণী তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের আদর্শ নারীর ভূমিকায় সফল ছিলেন; যৌবনে হাস্যোচ্ছল প্রেমিকা, তারপর রাজকীয় মাতা, অবেশেষে হতাশায় নিমজ্জিত একজন বিধবা! এটাই তো ভিক্টোরিয়ান নারীদের প্রতিকৃতি! আবার প্রথাগত জেন্ডার রোলের কথা চিন্তা করলে, রাজকীয় বিবাহে, পুরুষের রাজকার্য সামলানোর কথা, রাণীর অন্দরমহল; কিন্তু ভিক্টোরিয়ার জন্য ভূমিকাটা সম্পূর্ণ উলটো ছিল! অনেক গবেষক মনে করেন ছোটবেলার কেনসিংটন সিস্টেমে বেড়ে উঠার কারণেই তার প্রভাবশালী পুরুষ চরিত্রের প্রয়োজন হত। কিন্তু লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, হয়তো রাণী প্রথম থেকেই হয়তো স্নেহাসক্ত একজন মানুষ যিনি স্নেহ পেতে ও দিতে ভালোবাসতেন। এখানে ভিক্টোরিয়ান যুগের নারীদের সেক্সুয়াল রিপ্রেশন বা যৌন অবদমন দিয়েও তার অনেক আচরণ ব্যাখ্যা করা যায়, ফ্রয়েডীয় মতে কিছুটা হিস্টেরিকাল ব্যবহার ছিল হয়তো! তবে সবই এসবই তাত্ত্বিক কথা, প্রমাণগত ভিত্তি নেই! রাণীর জীবনে যারাই আসুক, তিনি কিন্তু কখনোই কোন পুরূষ চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পালটাননি। তবে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর পর মানসিক সমস্যায় পড়েছিলেন, আর এই সুযোগে তার দেশের রাজনৈতিক নেতারা হয়তো নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী, উপনিবেশবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিলেন। কিংবা রাণী নিজেই এই জাতীয়তাবাদের জোয়ার তুলেছিলেন, জনগণকে সাম্রাজ্যবাদের লোভ দেখিয়ে নিজেকে মহিমান্বিত করে রাজতন্ত্রের টিকে থাকাকে নিশ্চিত করেছিলেন।

কৃতজ্ঞতাঃ বিভিন্ন সময়ে পড়া অনেক বই ও প্রবন্ধ, যাদের নাম ও উদ্ধৃতি এখন মনে নেই! এবং ছবি কৃতজ্ঞতা ইন্টারনেট।

(লেখাটি আগে একবার প্রকাশিত হয়েছিল অন্যখানে*)

 

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ