পৃথিবীর সব চেয়ে কঠিন কাজ মানুষকে হাসানো।জীবন চলার পথে ঘাত প্রতিঘাতের আঘাতে ঝর্ঝরিত মানুষের সরল মন বেশীর ভাগ সময় থাকে কোন না কোন বিষয়ের সমাপ্তি বা শুরু নিয়ে চিন্তিত।কারো চিন্তা জটিল কারো বা হলুদ আবার কারো বা ঘোর অন্ধকার।এমন একটি মুহুর্তে মন বিষন্ন থাকাটা স্বাভাবিক।এই বিষন্ন মনকে কিছুটা ভাল রাখতে আমরা ঝুকি কোন না কোন বিনোদনের দিকে।সেই সব বিনোদনগুলোর মধ্যে চলচ্চিত্র একটি উত্তম মাধ্যম।কেননা মনের মতন একটি চলচ্চিত্রই পারে আপনার আমার জীবনকে বদলে দিতে পারে মনে প্রশান্তির ছোয়াঁ দিতে কারন চলচ্চিত্র যে জীবনেরই গল্প।সেই গল্পকে একটু রসালো করতে আর্বিভাব ঘটে কৌতুক অভিনেতার যারা মানুষকে হাসায়,সিনেমাটিকে করে তুলে প্রানবন্ত।
সেই আশির দশকের শেষের দিকের কথা সেই সময় আমি প্রচুর সিনেমা দেখতাম বিশেষ করে বাংলাদেশী ছবি কেননা সে সময় আমার মতন গরীবের কলকাতার বাংলা,হিন্দী,ইংলিশ ছবি ভিসিআর এ দেখা ছিলো স্বপ্নের মতন।যাক সে কথা, খান জয়নুল,রবিউল, হাবা হাসমত,মতি,দিলদার আরো অনেকে এ দেশের চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতা ছিলেন।পর্দায় যখন ওদের দেখতাম কেনো জানি অভিনয় শুরুর আগেই আমার কেবল হাসি পেত।অবশ্য তাদের অভিনয়ে মানুষকে হাসানোর দক্ষতা ছিল অবর্নণীয়।

"চেষ্টা করবো এক এক করে তাদেরকে এই সোনেলা পরিবারে পরিচিতি তুলে ধরতে "

খান জয়নুল

সম্ভবতঃ বাংলাদেশীয় সিনেমার প্রথম দিকের কমেডিয়ান অভিনেতা।শুধু সে কমেডিয়ান নয় তাকে নায়কের সহ নায়কও বলা চলে।দেশীয় চলচ্চিত্রে ষাটের দশকে যে ক’জন কৌতুক অভিনেতা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম অগ্রজ এ  খান জয়নুল।নাচের পুতুল,ছন্দ হারিয়ে গেল,অবুঝ মন’এর মত ছবিগুলোতে কেবল ভ্রু আর মুখের ভাঁজের অনবদ্য অভিনয় এক হাস্যমুখর পরিবেশ তৈরি করেন।সে ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমার কাহিনীকার এবং সংলাপ রচয়িতাও করেন যেখানে অভিনয় করেন সুমিতা দেবী, সুজাতা, খান জয়নুল ও আলতাফ।এ ছবিটিকে ঐতিহাসিক ছবি বলা যায় কারন এ ছবিতেই ছোট একটি চরিত্রে আমাদের নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান।১৯৭৬ সালের ১৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান এই কৌতুক অভিনেতা।৪২ বছরের জীবনে তিনি প্রায় পঞ্চাশটির মতো সিনেমাতে অভিনয় করেন।যার মধ্যে মিশর কুমারী,অন্তরঙ্গ,মাটির মায়া,অশান্ত ঢেউ,দিনের পর দিন,স্মৃতি তুমি বেদনা,ময়না মতি,সাইফুল মুলুক বদিউজ্জামান,গোপাল ভাঁড়,মধু মিলন,ডাক পিয়ন ,সন্তান, পদ্মা নদীর মাঝি,দর্পচুর্ণ,সপ্তডিঙ্গা,মাটির মায়া,অশান্ত ঢেউ,দিনের পর দিন,সুতরাং,কাঁচকাটা হীরে এবং গাফ্ফার খান পরিচালিত ‘দিওয়ানা’ ছবিটি ছিলো তার অভিনীত জীবনের শেষ ছবি।


রবিউলকে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের সফল কৌতুক অভিনেতা বলা চলে।তার পর্দায় উপস্থিতিই দর্শকদের মনে আপনা আপনি হাসি এসে যায়।যেমন তার শরিরের গঠন তেমনি তার অঙ্গভক্তি ও সংলাপের পারদর্শিতা।এক কথায় কমেডিয়ান বলতে আমি রবিউলকেই বুঝি।সে-ই পারফেক্ট।প্রায় শতাধিক ছবিতে তার হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে অভিনয় করেন।আর তার অভিনয়ে অন্যতম আরেকটি গুণ ছিলো সে হাতির কানের মতো কান দুটোকে তালে তালে নাচাতে পারতেন।১৯৫৯ সালে আকাশঁ বাড়ী,১৯৭৬ এ গুন্ডা ১৯৭৪ সালে আলোর মিছিল,১৯৭২ সালে চৌধুরী বাড়ী,১৯৬৯ এ নীল আকাশের নীচে ১৯৮০ সালে আলোচিত ছবি ছুটির ঘন্টা ইত্যাদি ছবিগুলো এ দেশীয় চলচ্চিত্রে সিনেমা প্রেমীদের মনে দাগ কেটে যায়।
নাট্যকার,চিত্র নাট্যকার,লেখক,অভিনেতা ও কৌতুক অভিনেতা অভিনয় ও অভিনয় জগতে বিভিন্ন মাধ্যমে যার বিচরণ তিনি হলেন আমাদের প্রিয় আশীষ কুমার লোহ ।তিনি ১৯৩৭ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলায় এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।সেই বাল্যকাল থেকেই তার অভিনয়ের প্রতি জোক ছিলো যা তার এলাকায় বেশ সুনাম ছিলো।ষাট দশকের এই কমেডিয়ান অভিনেতা পাকিস্থান টেলিভিশন ঢাকার কেন্দ্রের  কমেডিয়ান নাটক হীরা-চুন্নী-পান্নায় অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয়তা পান।ষাট দশকেই তিনি সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন।তার অভিনীত প্রথম ছবি ছিলো হারানো দিন।প্রতিটি চরিত্রকে তিনি অভিনয়ের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন এ জন্য তাঁর অভিনীত প্রতিটি চরিত্রই প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো আর কৌতুক অভিনেতা হিসাবে তার স্থান অতি উচ্চেতে অবস্থান।তিনি তার জীবন দর্শায় প্রায় চল্লিশটিরও বেশী ছবিতে অভিনয় করেন যার মধ্যে  আলী বাবা ৪০ চোর, মধুমালতী, শাস্তি, ঘরে বাইরে, পরিণীতা, কারওয়্যাঁ, বেগানা, ও কায়সে কঁহু (ঊর্দু সিনেমা) ভাওয়াল সন্ন্যাসী, নদী ও নারী, মৌচাক, সখী তুমি কার, কার বউ, আপন দুলাল, নয়ন তারা, অনেক দিন আগে, সুতরাং, অঙ্গার, অচেনা অতিথি, রূপালী সৈকতে,  ইত্যাদি ছবিগুলো তাকে অমর করে রাখবে।তিনি ১৯৯৪ সালের ৩ নভেম্বর মাত্র ৫৭ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

বাংলাদেশীয় চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি হাসির অভিনয়ে দর্শকদের মন যুগিয়েছেন বিশিষ্ট কৌতুক অভিনেতা দিলদার। তিনি জন্ম গ্রহন করেন ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে।১৯৭২ সাল তিনি ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন।মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘কেন এমন হয়’।তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এস এস সি পাস।তার অসংখ্য ছবিতে দর্শকদের মাতিয়ে গেছে তার কৌশলময় কৌতুক অভিনয় দিয়ে।তিনি আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন যার নায়ক ছিলেন তিনিই।২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।সেই বছর জুলাই ১৩ তারিখে মারা যান অসম্ভব জনপ্রিয় এই মানুষটি।
তার অভিনীত বেশ কয়েকটি অভিনয়ের ভিডিও।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ভ্রাতৃদ্বয় এহতেশাম ও মুস্তাফিজের লিও দোসানী ফিল্মসে সহকারী সম্পাদক ও পরিচালক ছিলেন কৌতুক অভিনেতা আনিস।এক সময় তিনি অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে পড়েন। যদিও ১৯৬০ সালে বিষ কন্যা ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি অভিনেতা হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি পরে ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আনিস অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহমান পরিচালিত ‘এইতো জীবন’।তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে অভিনয় করেন।তিনি নবাব সিরাদ্দৌল্লা মঞ্চ নাটক করে ব্যাপক আলোচিত হন।বাংলাদেশ টেলিভিশনে মরহুম ফজলে লোহানীর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "যদি কিছু মনে না করেন"এ কইনচান দেহি কৌতুক পর্বে অভিনয় করে তার কৌতুক অভিনেতা হিসাবে দক্ষতার পরিচয় দেন।তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন,আমি একজন সফল মানুষ।আমি নিজে হাসি অন্যকে হাসাই ,দুঃখ বলে কিছু নেই আমার জীবনে।জীবন সম্পর্কে এমন সাহসী উক্তির জনকের জন্ম ১৯৪২ সালে জলপাইগুড়িতে।তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে "কুলি ১৯৯৭সালে অজান্তে ১৯৯৬ সালে চাকর ১৯৯২ সালে বড় বাড়ীর মেয়ে ১৯৮২সালে মহানগর ১৯৮১সালে গুন্ডা ১৯৭৬সালে,অদৃশ্য শত্রু ২০১৪সালে সীমারেখা ২০১৪সালে স্বামী ভাগ্য ২০১২সালে কোটি টাকার প্রেম ২০১১সালে যেমন জামাই তেমন বউ ২০১০সালে এবাদত ২০০৯সালে মৃত্যুর ফাঁদে ২০০৯সালে কোটি টাকার ফকির ২০০৮সালে বড় ভাই জিন্দাবাদ ২০০৮সালে সমাধি ২০০৮সালে আমি বাঁচতে চাই ২০০৭সালে কোটি টাকার কাবিন ২০০৬সালে মমতাজ ২০০৫সালে চেয়ারম্যান ২০০১সালে লাঠি ইত্যাদি।
এ এফ এম আব্দুল আলী লালুকে কৌতুক অভিনেতা হিসাবে আবিষ্কার করে জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব মরহুম ফজলে লোহানীর আশির দশকের জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "যদি কিছু মনে না করেন" এ কইনচান দেহি কৌতুক পর্বের মধ্যে দিয়ে।তখন তিনি এবং আনিস দুজনেরই পাল্টাপাল্টিতে প্রশ্নোত্তর পর্বটি বেশ জনপ্রিয় করে তুলেন।তিনি শেষ জীবনে অনেক অর্থে কষ্ঠে ছিলেন।মৃত্যুকালে তিনি ঠিক মত তার চিকিৎসা করাতে পারেননি অবশেষে ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের নিজ বাসায় মৃত্যু বরণ করেন।

ডেগেরো ভিতরে ডাইলে চাইলে উতালী গো সই ,দিওয়ানা বানাইয়া খাইলো মোরে গিল্লা ইত্যাদি গান এবং অভিনয়ে এমন দক্ষ কৌতুক অভিনেতা খুব কমই জন্মায়।এ যাবৎ কাল প্রায় ৫০টি গান তিনি গেয়েছেন।টেলিসামাদ তেমনি একজন অভিনেতা এবং কৌতুক অভিনেতা যিনি অভিনয় জগতের সব স্থানেই তার বিচরণ।বাংলাদেশ টেলিভিশনেও ছিলো তার সমান জনপ্রিয় বিচরণ।বিটিভির ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন,আবদুস সামাদ বাদ দিয়ে টেলি+সামাদ=টেলিসামাদ নামটা দিয়েছিলেন।সেই থেকেই তাকে সবাই টেলিসামাদ নামেই চেনেন।
তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারী,মুন্সীগঞ্জ জেলার নয়াগাঁও এলাকায়।১৯৭৩ সালে তার প্রথম ছবি ‘কার বউ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন।প্রায় চার দশক ধরে সে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।তার বেড়ে উঠাটাই ছিলো সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে।বড় ভাই বিখ্যাত চারু শিল্পী আব্দুল হাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারু কলায়।সংগীতেও রয়েছে এই গুণী অভিনেতার পারদর্শিতা।‘মনা পাগলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন।তিনি দর্শকের কাছে মুলত পরিচিতি পান আমজাদ হোসেনের‘নয়নমণি’ ছবির মাধ্যমে।টেলিসামাদ এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রে রবিউল,খান জয়নুল,আশীষ কুমার লৌহ,আনিস,লালু,হাসমতের মতো গুণী কৌতুক অভিনেতাদের সাথেও অভিনয় করেন।সবাইকে হাসিয়ে যিনি অন্যের দুঃখ কষ্টকে ভুলিয়ে দিতেন তিনিই আজ তার জীবন সায়েহ্নে এসে মুখের হাসি হারিয়ে ফেলেছেন।২০১৫ সালে তার সব শেষ ছবি জিরো ডিগ্রীর পর তিনি বহু অর্থ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন।

কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন ১৯২৭ সালে ধুবড়ী জেলা ভারতের আসামে তার জন্ম।তিনি বাংলাদেশী নাগরিক।তার অভিনীত বিরাজ বৌ ছবির এফডিসিতে একটি গানের সুটিং দৃশ্যে আমি ছিলাম তাই তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি জেনেছি তার অনেক কিছু।অত্যান্ত অমায়িক একটি লোক এবং বেশ হাস্য রসালোও বটে।১৯৫৬ সালে আব্দুল জব্বার খান নির্মিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বাংলা ও সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনেতা হিসেবে অভিষেক ঘটে।তিনি ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রে নিয়মিত ছিলেন।তিনি প্রায় চার শত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।তিনি ১৯৭৯ সালে সাইফুদ্দিন সুন্দরী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।এই গুণি অভিনেতা ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এ ইন্তেকাল করেন।

হাবা হাসমত হিসেবে তিনি ছিলেন অধিক জনপ্রিয়।তার অভিনীত চরিত্রগুলো ছিলো অধিকাংশই সহজ সরল হাবা টাইপের।তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে-১৯৮৩ সালে নতুন বউ,১৯৭৪ সালে আলোর মিছিল,অবুঝ মন ১৯৭২সালে ও নীল আকাশের নীচে ১৯৬৯ সালে।হাসির এ মানুষটি ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

আরেক কৌতুক অভিনেতা মতি।১৯৯৩ সালে ১৬ নভেম্বর পরোলোক গমন করেন এ অভিনেতা।অঞ্জুঘোষ এবং ওয়াসীম অভিনীত প্রায় সবগুলো ছবিতেই তিনি ছিলেন সিনেমাটিতে দর্শকদের আনন্দ দিতে কৌতুক এবং সহ নায়ক অভিনেতা।সওদাগর,আবে হায়াত, ইত্যাদি তার ছবিগুলো ছিলো ব্যাবসা সফল।
 ব্ল্যাক আনোয়ার ঢাকার সুত্রাপুরে ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা সোনা মিয়াও ছিলেন এক জন অভিনয় শিল্পী।তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে -সুয়ো রানী দুয়ো রানী’,অনন্ত প্রেম, সাক্ষী’,সৎভাই’সহ বহু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি এবং বিটিভিতে বহু নাটকেও তিনি সমান তালে তার অনবদ্য অভিনয় চালিয়ে যান। সর্ব শেষ তিনি ‘কাবলিওয়ালা’ সিনেমায় অভিনয় করেন।হাসির এ মানুষটি সবাইকে কাঁদিয়ে ২০০৭ সালে ১০ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান।

আফজাল শরীফ,বর্তমান এই একজন কৌতুক অভিনেতাই আছেন যিনি মাঝে মাঝে চলচ্চিত্রে নাটকে কিংবা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে দেখতে পাই যিনি মানুষকে হাসিয়ে থাকেন।
সে মুলতঃ মঞ্চ হতে পরবর্তীতে টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।সে সম্ভবত ১৯৮৪/৮৫ সালে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন।১৯৮৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও পরিচালিত টিভি ধারাবাহিক ‘বহুব্রীহি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ছোট পর্দায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন।আর  ১৯৯২ সালে গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার আগমন।কমেডিয়ান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সে ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

কিছু কথা:
আমাদের ঢালিউডের শুরু থেকেই চলচ্চিত্রে কৌতুকের আয়োজন ছিলো রমরমা।সোনা মিয়া,ফ্যাটি মহসিন,সাইফুদ্দিন,হাবা হাসমত,পরান বাবু,মতি,বেবী জামান,ব্ল্যাক আনোয়ার,খান জয়নুল,রবিউল,আনিস,টেলি সামাদ, দিলদার,কাজল,সুরুজ বাঙালী,আফজাল শরীফ,ববি,জ্যাকি আলমগীর সহ আরো অনেকে ঢাকার  চলচ্চিত্রে কৌতুক শিল্পীর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন।এমন কি আমজাদ হোসেন,দিলীপ বিশ্বাস, এবং সুভাষ দত্তের মতো খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকাররাও বড় পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করেন অনেকটা কৌতুক অভিনয় দিয়ে।
প্রায় নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকার চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতাদের চাহিদা ছিলো অপরিসীম।তখন অবস্থা এমন ছিল যে,কৌতুক পর্ব ছাড়া ছবি নির্মাণ করা অসম্ভব ছিল।আর এখন এই প্রধান বিনোদনটিই চলচ্চিত্র থেকে রীতি মতো উধাও হয়ে গেছে।নেই আগের মতো কৌতুক অভিনেতা এবং কৌতুক দৃশ্য যে জন্য বর্তমানে ছবি বা সিনেমা দেখে আনন্দ না পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে যুক্ত হয়েছে ছবিতে কৌতুক পর্ব বা কৌতুক অভিনেতা না থাকা।
আরেকটি বিষয়ও চলচ্চিত্র ব্যাবসা উন্নয়ণে অন্তরায় তা হলো এ যাবৎ কাল সংস্কৃতি অঙ্গনে যারাই কাজ করেছেন বিশেষ করে নায়কের সহযোগি যে চরিত্রগুলো তাদের পারিশ্রমিক পেতেও বেগ পেতে হত।সে কারনে অধিকাংশ এ সব পাশ্ব চরিত্রের অভিনেতাদের তাদের জীবনের শেষ মুহুর্তে অনেক অর্থ কষ্টে দিন কাটান।অনেকে অর্থের কষ্টে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেন।অথচ তাদেরকে পুজি করে সরকার ব্যাববসায়িকরা কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন।সরকার এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গণ এ বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।
কৃতজ্ঞতায়:
http://www.mastarybd.com
বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম
ছবি:অনলাইন কালেক্টেড

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ