পর্বতকন্যের ইতিকথা

প্রদীপ চক্রবর্তী ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, ০৬:৩০:২৬অপরাহ্ন উপন্যাস ১৫ মন্তব্য

#পর্ব_৫২

কত আকাশগামী ইচ্ছে রোজ ঈশ্বরের বুকে প্রদীপের আলো নিভিয়ে দেয়,তা কজন বা খুঁজ রাখে?
বলরাম দাদার সহধর্মীনি জয়িতা বৌদির সাথে পার্বতী শাকসবজি কাটতে ব্যস্ত। বারান্দায় হেমন্তের ভেজা কুয়াশায় শাকসবজি বেশ তরতাজা। আমি আর বিনোদ প্রাতরাশ শেষ করে বারান্দার একপাশে রৌদ্রতেজে বসে আছি। মিষ্টি সকাল সমুধুর বাতাস আর সুবর্ণ রৌদ্র।
প্রতিদিনের ন্যায় আজকের সকাল ছিলো বেশ ভালো। এদিকে বলরাম দাদা রায়বাহাদুর পদে ভূষিত হওয়ার পর থেকে গ্রামের অধিকাংশ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়। এসব দায়িত্ব নিয়ে বলরাম দাদার দিনকাল কাটছে বেশ ভালো।
বাড়ি থেকে ফোন করে বাবা বলরাম দাদাকে বলেছেন বাংলাসাহিত্য বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য কলকাতায়।
এই কথা হঠাৎ শুনে মস্তিষ্ক প্রায় ধুমড়ে মুচড়ে। এমনিতেই লেখায় পড়ায় প্রচুর চাপ। তারমধ্য বাংলাসাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া সে তো বেশ কঠিন।
যদিও ছোটবেলা থেকে বাংলাব্যাকরণ ও বাংলাসাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করার খুবি ইচ্ছে আমার। বর্তমানে আমি নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পরীক্ষা শেষ করে ছুটির ফাঁকে অবসরে আমি আর বিনোদ চলে এসেছি বলরাম দাদার সাথে। কিন্তু হঠাৎ করে বাবার এই সিদ্ধান্ত। তা উপড়ে দেওয়া কখনো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার স্বপ্ন থেকে আমাকে নিয়ে আমার বাবার দেখা স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য আমি প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাই। তাই বাংলাসাহিত্য বিভাগে লেখাপড়া করার জন্য বলরাম দাদার পরিচিত এক বন্ধু যিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাসাহিত্য বিভাগের অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত দিনেশ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সাথে কথা বলে আগামীকাল ভর্তি হওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক করে নিলাম।
বিনোদ প্রায় আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। সে কি করবে কি না। না বাড়িতে চলে যাবে এসব নিয়ে প্রায় সে চিন্তাগ্রস্ত। বিনোদ চায় যে সেও আমার সাথে বাংলাসাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করতে। বাড়িতে বিনোদ ফোন দিয়ে তার বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে একযোগে আমরা আগামীকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্য যাত্রা করলাম বলরাম দাদার সাথে।
অজানা অদেখা বিদ্যাপীঠ কেমন কেমন লাগছে।
তবুও মন বেশ আনন্দে ভরপুর আমার আর বিনোদের।
জীবনের প্রথম বাংলাসাহিত্য নিয়ে লেখাপড়ার যাত্রা।
আমি আর বিনোদ ব্যতীত সেখানে সকলে অপরিচিত।
যদি পার্বতী আমাদের সাথে ভর্তি হতো তাহলে আমরা একসাথে তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ে রোজ যেতাম আর আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতাম।
হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসো জ্ঞানের জন্য তা কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করো। জগৎ সংসারে ছড়িয়ে দাও সুশিক্ষার জ্ঞানবাণী। ভর্তি ইচ্ছুক সকল শিক্ষার্থীদের সাথে একযোগে ভর্তি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা সকলে। বাড়ি ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে পড়ছে।
পার্বতী সন্ধ্যা আরতিতে ব্যস্ত। মন্দিরের বারান্দা আবির বসে আছে সাথে বলরাম দাদার স্নেহময়ী মা।
সূর্যাস্তের শেষ অস্তগামী সন্ধ্যা তীরে। বাঁকা চাঁদ আকাশের পূর্বকোণে ষোড়শী রূপে ছড়িয়ে আছে আলোআঁধারে।

#পর্ব_৫৩

ইদানীং বাইরের ব্যস্ততা বাড়লে আমাদের ভালোবাসা  ক্রমাগত ঘরবন্দি হয়ে আছে। রোজ রাতে চাঁদে আলোয় ভেসে আসা কার্নিশের গায়ে কত স্বপ্নিল জোনাকিপোকা আর তারারাজীর আলোয় উদ্ভাসিত হেমন্তের অমানিশা রাত্রি। ভালোবাসা যে বড্ড ছোঁয়াছে যখনতখন আমাদেরকে আঁকড়ে ধরে।
আগামীকাল কৃষ্ণনগর থেকে অন্নপূর্ণা তাহার বাবা মায়ের সাথে বলরাম দাদার বাড়িতে আসার কথা।
এই কথা জয়িতা বৌদির মুখ থেকে জানতে পেরে বিনোদ আনন্দে ভরপুর। রাত্রি পোহালে তবে একে অপরের নয়ন পুলকিত প্রেমে সঞ্চারিত হবে। মধুময় আর নির্যাস প্রেমে শরতের ন্যায় হেমন্তের কুয়াশা ডাকা সকাল ভালোবাসার শিশিরে জমে উঠবে কত অনুরাগে।
একদন্ড ভালোবাসা আর প্রেমময়ীর অনুরাগে বিনোদ রোজকার দিনের মতো করে আজ অনন্য। কয়েক দিবস আর কয়েক রজনী কাটানো একাকীত্বের নির্বাকে  আজকে হয়তো এই একাকীত্বের নির্বাকে দীর্ঘশ্বাস একি বন্ধনে নব প্রেমে জেগে উঠবে। যেমন করে আমার আর পার্বতীর ভালোবাসার স্রোত নদী বহে নিয়ে এসেছিলো অন্তর্যামী বেশে।
কলকাতায় আসার পর থেকে আমাদের আত্মীয়তার রেশ কিছুতেই কমতি ছিলোনা। খাবারদাবার সবসময় ভূরিভোজে ডুবে থাকতো দুহাত। তারমধ্য দিনদিন দেহের মধ্যে আলস্যতার বাসা বাঁধছে। কাজ নেই। তবে কলকাতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমার আর বিনোদের লেখাপড়ার চাপটা বেশ বেড়েছে। কয়েকদিন ধরে মন উড়ছে স্বপ্ন ফেরারি বাড়ি ফিরবে। যদিও এখন যাওয়া যাবেনা।
তাই হুট করে ঠিক করে নিলাম কলকাতার বাইরে কোথাও যেতে হবে। তবে এইবার একা অনেকটা একা কাউকে সাথে করে নয়। বলরাম দাদার সাথে কথা বলে দিল্লি যাব বলে এয়ারলাইন্সের টিকিট সংগ্রহ করে নিলাম আগামীকাল রোজ বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় ফ্লাইট। কাপড়চোপড় একে একে ঠিক করে নিয়েছি প্রায়। অন্নপূর্ণা ও তার বাবা মা সবাই মিলে এই হেমন্তে কুয়াশা ডাকা রৌদ্রদগ্ধে বলরাম দাদার বাড়িতে আগমন। তাই বাড়ির সবাই ব্যস্ত। আমি দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। আমার পাশে বিনোদ। বিনোদ হঠাৎ হুট করে বিছানা থেকে উঠে চলে গিয়েছে অন্নপূর্ণার সাথে দেখা করতে। নব উল্লাসে নব আনন্দে বইছে আজি কত ভালোবাসা পুলকিত প্রেমে।
দেখা হয়েছিল শরতের কোন এক অভিসারে।
আজ তার পূর্ণতা হেমন্তের ভরদুপুরে। হয়তো তাদের দুজনের মধ্যে বেশ খানিকক্ষণ কথাবার্তা চলছে। তখন আমি ঘুমে বিভোর। পার্বতী স্নান করে অন্নপূর্ণার সাথে কথাবার্তা বলতে ব্যস্ত ।
পার্বতীকে ভালোবেসে রোজ আমি কত কাব্যরসে বিভোর হয়েছি। তাকে নিয়ে রোজ যে কত কবিতা লিখেছি তা যে হিসাবের খাতায় আজও অজস্র সীমাহীন। ভালোবাসা সিন্ধুর খুঁজে কখনো কখনো আনমনা হয়ে পড়ে আমাদের শুষ্ক শরীরের ব্যস্ত শহরের করিডোরে।
ব্যস্ত শহরের অলিগলি আর দেওয়ালের প্রাচীর আজও কত ধূসর শেওলায় নিমজ্জিত। কিন্তু এই প্রাচীরের প্রাচীরতা ভেঙ্গে কেউ দেখতে চায় না প্রাচীরের রূপকথা।
তেমনি করে আমার আর পার্বতীর মধ্যে কতটুকু ভালোবাসার বন্ধনে গ্রথিত তা কেউই আজ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেনি।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ