
দুরত্ব যে কোন সম্পর্ক না টেকার একটা বড় ইস্যু। আর অন্য ইস্যু হলো সম্পর্কের যত্ন না নেওয়া বা গুরত্ব না দেওয়া। পুস্পিতার বেলায়ও তাই, আমার জন্য তার দুরত্ব বিস্তর এবং গুরুত্ব একদমই নেই। যদি থাকতো তাহলে সেদিন কফি শপে অপমান করার পর আমাকে ফোন দিয়ে সরি বলতো।
তবুও আমি দিনে বেশ কবার ফোনের দিকে তাকাই। যদিও আমার তেমন ফোন কল আসে না। নতুন রেসিপি কেমন চলছে তাই জানাতেই মাঝে মধ্যে ফোন আসে।
ফোন বাজলেই আমি চমকে উঠি। কিংবা শাড়িতে পাতলা কাউকে দেখলেই মন বলে নিশ্চয়ই পুস্পিতা। এক্ষুনি এসে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলবে,
- সরি আপু, আমি বুঝতে পারি নি। আমার লক্ষীসোনা মাফ করো।
আমি ভেতরে ভেতরে খুশিতে ফুলেফেঁপে তবুও রাগের ভান করে বলবো,
- অতোকথা বলার সময় মনে ছিল না। আমি মোটেও সরিতে ভুলবো না।
- তাহলে চলো কিছুক্ষণ রিকশায় ঘুরিয়ে আনি। দেখবে নিমিষেই তোমার মন ভালো হবে।
মেয়েটি চলে গেল, পুস্পিতা ছিল না। পাগলটা কি করছে বড্ড জানতে ইচ্ছে হয়। ছোট ছোট ব্যাপারে সে ভীষণ খুশি হয়, অল্পেই রাগ পরে যায়। অথচ কেমন করে আমাকে ভুলে বসে আছে। মনে পরে গেল, একবার আমরা বাজার করছিলাম। রিন পাউডারের দুই কেজির সাথে মাঝারি সাইজের বালতি ফ্রী দেয়। রিন কেনার কারণে আমার বেশ কয়েকটা জমা হয়েছে। আজকেরটা কি করবো দোকানীকে তাই বলছিলাম।
পুস্পিতা রসুন কেনা বাদ দিয়ে এসে বললো,
- ও তুমি জানোনা, আমার একটা খুউব দরকার।
- আগে বলবি না। এটা নিয়ে নে, পরে লাগলে আরও এনে দেব।
সে যেন বিরাট মূল্যবান কিছু হাতে পেল। অতি খুশিতে ভরা বাজারে আমাকে জড়িয়ে টপাক করে গালে চুমু দিয়ে ফেললো। দোকানী তখন হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে।
আমি পরে চুপি চুপি বললাম,- দোকানী বালতি দিলে তাকেও বুঝি চুমু দিতি? এতোক্ষণে সে মারতে এলো এবং লজ্জা পেল।
আবার না চাইলেও বিভিন্নজনের মাধ্যমে কথা এসেই যায়। পুস্পিতা নাকি আজকাল অনেক ব্যস্ত। সে যেহেতু কলেজের কালচারাল কমিটির সদস্য তাই সব আয়োজন তাকে থাকতে হয়। আমি ফেসবুকে তাদের জমজমাট আয়োজন, অনুষ্ঠানের ছবি দেখতে থাকি।
এর মধ্যে হঠাতই আশফাক সাহেবের সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। আমি চায়ের জন্য হোটেলে ঢুকছিলাম। তিনি তখন পাশের ছোট্ট দোকানে সিগারেট টানছিলেন। আমাকে দেখে সিগারেট ফেলে আমার সাথে চায়ে বসে গেলেন। পুস্পিতা আর আমার কথা হয় না এ ব্যাপারটা তিনি বোধহয় জানেন না। কিংবা জানলেও এড়িয়ে গেলেন।
কারন সেদিনও তাদের কলেজে কোন প্রোগ্রাম ছিলো আমাকে খুব জোর করলেন যাওয়ার জন্য। এরপর আমায় অস্বস্তিতে ফেলে চায়ের বিলও দিয়ে দিলেন। তার অতি আগ্রহ আমার কাছে কিছুটা বিব্রতকর লাগলো।
অবশ্য আশফাক সাহেবের সাথে আমার কোন দ্বন্দ নেই। একে- অপরের রাজি সম্মতিতে দুজন ম্যাচিউরড মানুষ প্রেম হোক বা পরোকীয়াই হোক করতে পারে। এতে তৃতীয় পক্ষের কিছু বলার নেই। সে যতোই আমি তার বোন হই না কেন।
আমি সামান্য লেখালেখির সুবাদে ফেসবুকে কোন কিছু পোস্ট করলেই আশফাক সাহেব কমেন্ট করেন। আমি বিব্রত হই আবার ধন্যবাদও দেই। এর অন্য কারনও ছিল, কারন ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারটি পাবলিক করা ঠিক নয়। কিন্তু আমরা এ কাজটি বরাবর করেই থাকি।
যাকে নিয়ে পুস্পিতার সাথে আমার ছ মাস কথা হয় না দেখা হয় না। তিনি আমার সাথে যোগাযোগ রাখেন এ বিষয়টি পুস্পিতার হয়তো খারাপ লাগে।
শুনতে পেলাম সে বলেছে,
- আপু একজন অসূখী মানুষ তাই অন্যের ভালো থাকা পছন্দ না। আর আশফাককে যদি তার এতোই অপছন্দ তাহলে তার সাথে যোগাযোগ রাখেন কেন? বেশ তো কমেন্ট চালাচালী চলে দেখি। আবার 'জনাব' ও ডাকেন!
ভদ্রতা ভালো জিনিস কিন্তু সেটি মাঝে মাঝে বিপদে ফেলে দেয়। আমি কিছুটা হলেও শঙ্কিত বোধ করলাম। আমি অযথা গায়ে পড়ে কারও সাথেই লাগি না। বড় শত্রুও তার বিপদে ডাকলে আমি চলে যাই। আর আশফাক সাহেবের সাথে ফেসবুকে এড হওয়া বা নম্বর পাওয়া পুস্পিতার জন্যই। তো এখানে আমার কিইবা করার আছে। আর তাকে হঠাৎ করে ব্লক করে দেয়াটা রীতিমতো অশিক্ষিত, মূর্খের মতো কাজ।
গতবছর ভ্যালেন্টাইন ডে তে পুস্পিতা আর আমি এদিক সেদিক ঢু মেরে সে চলে গেল আমি রেসিপি ঝামেলায় আটকে ছিলাম। বেশ রাতেই বাসায় ফিরে দেখি অনেকবার ফোন। কল ব্যাক করতেই পুস্পিতা হাত- পা ছেড়ে দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। আশফাক সাহেব তাকে নাকি ফেসবুক, ম্যাসেন্জার, ওয়াটস আপ সবগুলো থেকেই ব্লক করেছে। আমাকে ততক্ষনাত আশফাক সাহেবের নাম্বার দিল। আমি যেন তাকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করি। আমার সাথে কোনদিনই ফোনে যে লোকটার কথা হয়নি। সেই লোকটাকে কিভাবে কি বলবো ভাবতে না ভাবতেই দুবার পুস্পিতার ফোন এলো। পুস্পিতা হেঁচকি তুলে তুলে এতো কাঁদছিল যে আমি বাধ্য হলাম ফোন দিতে।
আশফাক সাহেবের ভাষ্য একটু অন্যরকম- আপু আপনাকে আমি যথেষ্ট রেসপেক্ট করি কিন্তু আপনার বোন সে তো অন্যরকম। যখন তখন ফোন দেয়, ফোনে না পেলেই সবসময় আমাকে গালিগালাজ করে। বাজে সন্দেহ করে৷ উল্টা পাল্টা কথা বলে। মুখের ভাষা এতো অকথ্য। বাপ- মা তুলে গালি দেয়। সেজন্য আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না।
তবুও আমি আশফাক সাহেবকে অনুরোধ করলাম। এবং অনেক অনুরোধের পরই তিনি ব্লক খুলে দিলেন।
তারপর থেকে আশফাক সাহবের সাথে আমার আর কথা হয়নি। আমি তার নাম্বারও সেভ করিনি। আর পুস্পিতা নিজেই ফেসবুকে তাকে এড করে দিয়েছে। অথচ আজ সেটাতেও আজ তার সমস্যা।
ছবি- নেট থেকে
১১টি মন্তব্য
ফারজানা তৈয়ূব
অসাধারণ লেখা
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা আপু।
রেজওয়ানা কবির
আবার টুইস্ট রেখে গেলেন🥰🥰জানার অপেক্ষায় রইলাম পুস্পিতা আর আসফাকের পরিনতি।।।
কিছু মানুষ অল্পতেই খুব খুশি হয় তাই পুস্পি বালতি পেয়েই হয়ত ভীষনভাবে খুশি হয়েছিল।
শুভকামনা রইল।।।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
বড় আপু দারুন লিখছেন, সবগুলো পর্ব পড়া হয়নি তবে এটা খুব ভালো লাগলো।
পুষ্পিতা বালতি পেয়ে যেমন খুশি হয়েছে আমিও তেমনি সামন্য বিষয়ে ভীষণ খুশি হই।
দেখা যাক পরে কি ঘটে,পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
আচ্ছা, থাকুন অপেক্ষায়। আপনার মন খারাপের গল্প পড়েছি কমেন্ট করবো।
শুভ কামনা অশেষ।
মোঃ মজিবর রহমান
আসলে ইচ্ছে /বেইচ্ছ বা ভালো লাগালাগি থেকেই যে সম্পর্ক হই তাওনা। কিচ্ছু সম্পর্ক ঐযে বললেন দুরত্ব আবার কাছাকাছি থাকার জন্যুই সম্পর্ক হই। সব ইচ্ছে মরেনা আবার সব সম্পর্ক মেলেওনা।
সুন্দর লেখনী ভাল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী ভাই সুন্দর বলেছেন। অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা।
হালিম নজরুল
আমি সামান্য লেখালেখির সুবাদে ফেসবুকে কোন কিছু পোস্ট করলেই আশফাক সাহেব কমেন্ট করেন। আমি বিব্রত হই আবার ধন্যবাদও দেই। এর অন্য কারনও ছিল, কারন ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারটি পাবলিক করা ঠিক নয়। কিন্তু আমরা এ কাজটি বরাবর করেই থাকি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাই।
হালিমা আক্তার
শেষ কি হয় দেখার ইচ্ছা। মাঝের একটা পর্ব মনে হয় পড়া হয়নি। প্রেম কি এতোই সস্তা, কমেন্ট করলেই কিছু একটা হয়ে যাবে। অপেক্ষায় রইলাম।