দশ বছর আগে আকাশ ভরা তারার নিচে দাদুর গল্প শুনতাম। সন্ধ্যা হলেই দোয়ারে মাদুর পেতে গল্পের আসর বসত। নতুন বাড়ি করা হচ্ছে আমাদের, দোয়ার ভরা বালু। আমার বালুতে বসতে ভালো লাগতো। কেন ভালো লাগত জানি না তবে ভালো লাগত। আম্মু কিছুক্ষন বকাবকি করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যেতেন ,আমি হাত পা ছড়িয়ে বালুতে বসে গল্প শুনতাম। ঐ যে অনেকগুলো তারা এক সাথে, ওটাকে কি বলে? দাদু বলতো তারা সাত ভাই চম্পা। জ্ঞান বিজ্ঞানের মারপ্যাচ পাশ কাটিয়ে সাত ভাই চম্পাই আমার কাছে সহী। সাত ভাইবোন মিলে গা জড়াজড়ি ভেসে আছে তারার দেশে ভাবতেই কেমন অদ্ভুত আনন্দ হত। জগত সংসারের মায়া যে মানুষটাকে কোনো দিন ছুতে পারেনি সেই মানুষটা সকল মায়া কাটিয়ে একদিন টুপ করে হারিয়ে গেলেন। গল্পের শেষটা আর শোনা হলো না আমার, আধ বলা গল্পেরা সারা জীবনের জন্য গলার কাছটাতে দলা পাকিয়ে আটকে গেলো।
আমাদের বাড়ির পাশে যে শালবন সেখানে ইয়া উচু দুটো শালগাছ ছিলো। সারা দিন বাদুরের ক্যাচরম্যাচরে টেকা যেত না। দুটো শঙ্খচিলও ছিলো। মাঝে মাঝে বিল থেকে বিশাল বিশাল মাছ নখে বাধিয়ে নিয়ে আসত বাসায়। গুলতি দিয়ে উড়ন্ত চিলের গায়ে লাগিয়ে যেদিন মাছ পেড়ে ফেলতাম সেদিন আমাদের ঈদের আনন্দ। একদিন গুলতি দিয়ে একটা বাদুড়ও পেড়ে ফেললাম। আহত বাদুড়টাকে ধরতে গিয়ে বাধলো বিপত্তি, কেমন মায়ামায়া চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। অবিকল শিশুর মত। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো বাদুড় আর মারা যাবে না। এত মায়া নিয়ে যে প্রাণ তাকিয়ে থাকে তাকে হত্যা করি কি করে!!
শালগাছগুলো এখন আর নেই। শৈশবের শঙ্খচিল দুটোও হারিয়ে গিয়েছে সেই কবে। আমার শঙ্খচিলেরা কেন হারিয়ে যায়?
দশ বছর আগে তখন মাত্র কৈশোরে পা দিচ্ছি। প্রেম সবে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে কিশোর মনে। নিমাইয়ের মেমসাহেবের আদরে তখন বুকের বাম পাশটা গলে যায় তীব্র মায়ায়। কান্না পেয়ে যায় রেণুর চিঠি যখন ছাই হয়ে মিশে যায় মুঠোর মাঝে। হঠাত একদিন খেয়াল করলাম কার জন্য মন আকুলিবিকুলি করে। কবে গ্রীষ্মের বন্ধ দিবে ,কবে সে ছুটিতে আসবে । আমি অধীর আগ্রহে দিনগুনি। মাস যায় বছর যায় , দেখা আর মিলে না। বহু বছর পর যেদিন দেখা হয়ে গেলো ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। দশ বছর পরেও আমি শহর থেকে শহরে ছুটে বেড়াই আমার মেমসাহেবের খুঁজে।
দশটা বছরে কিভাবে কিভাবে যেন বড় গিয়েছি। অথচ আমি বড় হতে চাইনি। আমি আবার একদিন ছোট হব, ছোট হতে হতে একদিন মিশে যাব এ ধরনীর রিক্ত ধুলোয়।
৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
হা হা হা যতই চেষ্টা করেন ছোট আর হতে পারবেন না তবে ছোটদের বড় করে তুলার মাঝে নিজের ছোট বেলার স্মৃতি খুজে পাবেন।দারুণ স্মমতির আঙ্গিনা লিখেছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
একদিন সত্যিই অনেক দেরি হয়ে যায়। দিন-মাস-বছরগুলো পেড়িয়ে যায় সময়ের নিয়মে। শুধু ধরে রাখা যায়না, স্মৃতির আয়নাটাও ঝাপসা হতে হতে মিলিয়ে যায়। ছোট থেকে বড়ো হই, তারপর হঠাৎ সমাপ্তির দ্বারে পৌছে যাই।
শুভ কামনা। 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
ছোট বেলার সোনালী স্মৃতি কখনো মুছে যায় না,
থেকে যায় বুকের গহীনে,
মাঝে মাঝেই আমরা নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই,
কস্টের মাঝেও ভালোবাসা খঁজে পাই।
অনেক সময় আমাদের দেরী হয়েই যায়,
কিন্তু কিছু করার থাকেনা,
মেনে নিতে হয়।
ভাল লেগেছে একান্ত অনুভুতি।
শুভ কামনা।
নাজমুল হুদা
মৃত্যুর প্রয়োজনে আমাদের শৈশব কিশোর বড় হয় , আর মেম সাহেবরা পর হয় ।
আরজু মুক্তা
আসলেই,বড় হলেই মধুর সময়গুলো হারিয়ে যায়।।
বনসাই হলে ভালো হতো।।
শাহরিন
গল্পটা পড়ে আমি ও আমার ছোট বেলায় হারিয়ে গেলাম। আহা কত সুখের স্মৃতি।
মোঃ মজিবর রহমান
ঐ সে ছোটবেলা, গুড়িগুড়ি পায়ে হাটা, এলোমেলো কথা বলা, সবার আদর ,সোহাগ ার ভালবাসায় বেড়ে উঠা এক ছেলে রায়হান সিদ্দীক আজ বড় খোকা হয়ে বড়ত্বে পদার্পণ করেছে ার পিছনে ফেরা যায়না, বাট অনুভব করা যায়।