চশমা প্রেম

রোকসানা খন্দকার রুকু ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার, ১০:৫৯:৩৭অপরাহ্ন আড্ডা ১৭ মন্তব্য

সাবিনা ইয়াসমিনকে কদিন কোথাও না পেলে আমি আতি পাতি করে খোঁজ দ্যা সার্চ লাগাই। কাজে ম্যাসেজ দিয়েছি একমাস তার খবর নেই। ভাবলাম, ম্যাগাজিন বানাচ্ছে তাকে আর বিরক্ত না করি। " মন সয় না, সখীরে বিনা " তিনি ম্যাসেজ ঝুলায় রাখেন বছরের পর বছর আর ফোন বেজে বেহাল। তবুও বেমক্কা লজ্জা শরমের বালাই না নিয়ে ফোন দিলাম-

- ওমা হেতির নাকি চোখ দিয়া পানি পরে টপটপ।

- আহারে! প্রেমে ছ্যাকা খাইছেন, মনে কষ্ট নিয়েন না। একটু কাঁদলে ঠিক হবে।

আমারে এক ধমক। এই ম্যাগাজিন বানাইতে তার ফটোজনিক চোখের এ অবস্থা। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ব্লগে। ঘুম নাই, খাওয়া নাই।

তবুও সাহস করে বললাম- ধমক দ্যান ক্যান, আমি কি খারাপ বলেছি। চশমা তো প্রেমই। তাকে ছাড়া দিন- রজনী বৃথা। সারাক্ষণ আঁচলে, নাকে, চোখেই তো লেপ্টে থাকে। তাকে ছাড়া কোথাও গেলে বলে- যেওনা সাথী চলেছ একেলা,,,,।

- গান বন্ধ করুন তো! যত্তোসব।

কি আর করা, সুরুত করে পালিয়ে সেদিন থেকেই ভাবছি নিজের চশমা অভিজ্ঞতা লিখে ফেলবো।আমরা কমবেশি সবাই চশমা পরি। সুপ্রিয় ব্লগার ও লেখক বন্ধুরা চলুন নিজ নিজ চশমা প্রেমের অভিজ্ঞতা মন্তব্যে লিখে আড্ডায় মেতে উঠি সোনেলায়--সবার মন্তব্য পোষ্টে যুক্ত করা হবে।।।

 

রোকসানা খন্দকার রুকু , চশমা প্রেম ## ০১

আমার চোখের ডাঃ জি কে আফজাল খান। মা গো মা, ডাঃ তো না; এক্কেরে নায়ক জাফর ইকবাল। তিনি বেশ খানিকখন এ গাল ওগাল ধরে চোখ দেখার পর এবার আস্তে করে মাথা তার কাছে টেনে নিয়ে চোখে চোখ লাগিয়ে দিলেন। প্রায় চুমুর কাছাকাছি, ভাবলাম দিয়েই ফেলে নাকি। থুক্কু গ্লাস ছিল মাঝে তবুও ডাঃ এর কড়া স্প্রের গন্ধে আমার মনে তো লাড্ডু ফুটে শেষ। একটা চুমু দিলে দিক, কি হইসে! হঠাৎ মনে হল পাশে তো ডাইনোসর বসা। চেয়ার ঘুরিয়ে দেখি কটমট করে তাকিয়ে আছে।

প্রথম প্রেমের মতোই দারুন আর এক এক্সাইটমেন্ট চশমা বানাতে দেবার পর। কখন বানানো হবে আর জম্পেস চশমাখানা চোখে দিয়ে কখন হাঁটবো তা ভেবে রীতিমতো ঘামছি।

চশমা চোখে লাগিয়ে বেশ মুডেই হাঁটতে গেলাম। ও আল্লাহ রাস্তাগুলা হঠাৎ উঁচু- নিচু ক্যা? ডাঃ কি চোখে বিয়ার ঢাইলা দিছে নাকি? হঠাৎই পুরা রংপুর শহর উঁচু নিচু, দালান কোঠাও উঁচু - নিচু, পা রীতিমতো টলছে? ডাইনোসর পাশেই হাঁটছে কিন্তু রেগে আছে বলে, পরিমরি হলেও তাকে বলাও যাচ্ছে না হাত ধরো। আমার নাকি নাক ঘেমে গেছিল, গালও লাল হয়েছিল ডাঃ এর ছোঁয়ায়। ঘেমে গেলে আমি কি করবো, হয়তো সবারই হয়। শুধু শুধু- ম্যায় কারু তো শালা ক্যারেক্টার ঢিলা হ্যায়,,,,

বেশ হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলাম হঠাৎই ডাইনোসর এক ঝটকায় তার হাত থেকে হাত সরিয়ে নিল। কি সর্বোনাশ, এতোক্ষণ তাহলে ডাইনোসরের হাত মনে করে অন্যজনের হাত ধরে এগুচ্ছিলাম? সে বেচারাও অতি ভদ্র মানুষ,আমাকে আধা অন্ধ ভেবে কি সুন্দর রাস্তা পার করাচ্ছিলেন।

তাকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার। ফুটপাতে উঠতে গিয়ে খেলাম হোঁচট। নিজেকে আবিস্কার করলাম, একজনের লোমশ বুকে। এক হাতে শার্টের কলার আকড়ে ধরেছি। মহান পুরুষ বুকে জায়গা না দিলে কি যে হতো!

- থ্যাংক ইউ🥰

- ইটস ওকে। চশমা আজই নিয়েছেন?

- জী! কেবলই।

- বেশ কিউট লাগছে!

- থ্যাংকস এগেইন!🥰

সেদিন আর বাসায় ফিরে ডাইনোসর বিছানায় জায়গা দেয়নি। তবে আমারও রাত মন্দ কাটেনি।

কদিন বেশ চশমা চোখে দিয়েও চশমার উপর দিয়ে দেখা রীতিমতো মুদ্রাদোষে পরিনত হলো। এছাড়া দরজা, ফ্রিজ, লোকজনের সাথে ধাক্কা লাগালাগি তো ছিলোই। আর শাকিব খানের মতো মিনিটে বিশবার ঠিক করার ব্যাপারটা তো আছেই! এভাবে একসময় চোখের উপর মায়াময় এক আকর্ষণে চশমা মশাই মোটামুটি স্যাটেল। এখন তাকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও নয়!!❤️❤️

 

হালিমা আক্তার, চশমা প্রেম ## ০২

বই রিভিউ লিখতে চেয়েছিলাম। রুকু আপার চশমা প্রেম দেখে, চশমা প্রীতি জেগে উঠলো। ভাবলাম চার চোখ নিয়ে লিখে ফেলি কিছু একটা।

কবে, কখন, কোথায় তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল। সে কথা বিস্তারিত লিখতে গেলে, পাঠক উল্টো দৌড় দিবে। একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি। তার সাথে কোন বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় বা জ্যোৎস্না ভেজা রাতের বেলায় মিষ্টি মধুর প্রেমালাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎ ঘটে নাই। নাম না জানা কোন ডাক্তারের চেম্বারে প্রথম আলাপ।

ডাক্তারের প্রশ্ন- কী করা হয়। বললাম – এইতো লেখা পড়া। আগে পড়তাম, এখন পড়াই। বাস জুটে গেল। ডাক্তারের ভাষ্য- তাহলে তো চশমা ছাড়া উপায় নাই। কী আমার প্রেমরে। মনে হলো দুনিয়ার তাবৎ শিক্ষকদের জন্যই চশমার কারখানা তৈরি করা হয়েছে।

সেই থেকে একসাথে পথ চলা। চশমার সাথে ভালোবাসা থাকলেও, বিচ্ছেদ ও ঘটে। একমাত্র কোন কিছু পড়ার বা লেখার সময় তার খোঁজ হয়। অবশ্য তাতে চশমার কোন মন খারাপ হয় না। দিব্যি ভালোই কাটছে তার সাথে সময়। জানিনা কবে আবার বলে উঠে- মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না। ❤️❤️

 

রেজওয়ানা কবির, চশমা প্রেম ## ৩

গরমে তড়িঘড়ি করে কলেজ শেষে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আবার চিন্তা রাতে কি রান্না করব??এভাবেই চলছে নিত্যদিনের রুটিন। রাতে রুকু আপুর ফোন চশমা নিয়ে আড্ডা হবে ব্লগে আয়!!!
হুম আসছি বলেই কখন ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পেলাম না।
আজ ভাবলাম লিখেই ফেলি,,,,,
আমার চশমা প্রেম,,,,,
২০০৪ সাল, তখন ক্লাস এইটে পড়ি,প্রতিদিন ক্লাসে গিয়ে ফাস্ট বেঞ্চে বসি। দেরীতে গেলেও বান্ধুবীরা যায়গা রেখে দেয়। সেরকমভাবেই চলছিল,একদিন ফাস্ট বেঞ্চে আমরা কেউই যায়গা পাই নি, তাই পিছন থেকেই ব্লাকবোর্ডের অংক তুলতে লাগলাম,যতই লিখতে থাকি স্যার তার আগেই মুছে ফেলে আর আমি অন্যদের দেখে লিখি,সেদিনও বুঝিনি। এভাবে টানা কয়েকদিন পিছন থেকে বোর্ডের লেখা অন্যের খাতা থেকে দেখি বলে পলাশ স্যার বলল রেজওয়ানা,তুমিতো কারো দেখে লেখো না,কি ব্যাপার?
আমি ঃ স্যার দূর থেকে দেখতে দেরী হয়, মাথা ব্যথা করে।
স্যারঃ ডাক্তার দেখাও।
এরপর বাসায় এসে দাদীকে বলতেই পরদিন দাদী রংপুরে ডাঃ মোখলেছুর রহমানের কাছে নিয়ে গেল।
ডাঃ আংকেল আমার বন্ধুর বাবা।
তার চেম্বারের গোল গোল ওজনের যন্ত্র লাগিয়ে বহুক্ষন আমার XYZECXYZEC এর পরীক্ষা নিয়ে প্রেশক্রাইব করে দিলো চশমা আর কিছু ঔষধ। ঘুম, গোসল ব্যতীত এই চশমা কিন্তু ছাড়া যাবে না। উত্তেজনা নিয়ে নতুন চশমা বানিয়ে পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে খুব লজ্জা লজ্জা লাগল ভেবে চশমা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে আবার ফেরার পথে চশমা মার্কা ওজনখানা চোখে দিয়ে বাসায় ফিরতাম।
কেটে গেল ৬ মাস,,,, আবার ডাঃ আংকেলের কাছে,,,
চশমার পাওয়ার একেবারে -২.৫😭😭😭
তারপর থেকে গোল্লু চশমা আমার জীবন সঙ্গী হয়ে গেল।
বন্ধুরা মিলে কফি খাচ্ছিলাম,চোখে চশমা নাই,পাশের টেবিলে এক ছেলে বার বার নাকি আমার দিকে তাকাচ্ছিল আর চোখ মারছিল,,আমার বন্ধু বলল, তোর দিকে তাঁকায় আছে পাশের টেবিলের ঐ ছেলেটি! আমি বললাম দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা! উঠে গিয়ে ছেলেরে দিলাম ধমক,একনাগাড়ে বলেই ভাবলাম উফ!!কি একটা কার্য্য উদ্ধার করলাম!!
আমার বলা শেষে পাশে সোহাগ এসে বলল কিরে!!!তোর চশমা কই?আজবতো? যে ছেলে তোর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে ছিল সেতো তোর সামন দিয়েই চলে গেল।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সরি বলে পালিয়ে রক্ষা হলো সেদিন। চশমা না থাকার এই দূর্গতি ছিল😭😭😭
এরপর আরও বহুত ঘটনা ঘটেছে এই চশমা নিয়ে।।।।।
যাইহোক আরেকটা ঘটনা বলি। আমার সাঁজগোজের খুবই শখ, তাই নিজের বিয়েতে ভাবলাম চশমা পড়বোই না, এত সুন্দর করে সাঁজবো, ছবি তুলবো, এই চশমা সব ঘেটে দিবে এটা কোন কথা???
কিন্তু দুরের জিনিস কিভাবে দেখবো?
লেন্স কিনলাম,চোখে লাগালাম,,,,দারুন দারুন পিকও তুললাম,প্রোগ্রাম শেষে লেন্স খোলার সময় চোখে প্রচন্ড আঘাত পেলাম, আর লেন্স পড়া হলো না😭। রাতে সবার সাথে আনন্দ করার পর ফ্রেশ হতেই নীল পাঞ্জাবীতে পিছন থেকে আজাদ কে জড়িয়ে ধরাতেই কুপোকাত😭হায় আল্লাহ!!”আমার চশমা কই??? চশমা লাগায় দেখি আমার দুষ্টু দেবর😃😃😃
এরপর চাম্পিস মার্কা চশমা আমার বন্ধু হয়ে গেল, এ আমাকে ছাড়েই না, আঠার মতই লেগে আছে আজও । শুধু এখন আমার বন্ধু চশমুদ্দিনের পাওয়ার বেড়ে একজায়গায় স্থির হয়ে আছে। এখন সে ৩.৭৫ এবং ৪ এ গিয়ে স্থায়ী।।।।।
এখন চশমাই আমার,,,,,,,♥️♥️♥️
তুমি আমার প্রথম সকাল,একাকী বিকেল, ক্লান্ত দুপুরবেলা,
তুমি আমার সারাদিনমান, তুমি আমার সারাবেলা,,,,।।

 

মোঃ মজিবর রহমান, চশমা প্রেম ## ৪

ও মোর জ্বালা! কন কি? নাক দিয়া জল পরে না চোখ দিয়া কইছে কিছু! না ঝামেলা এড়াতে কইছে? যাউকগে, চশ মা খুবউ প্রিয় ফ্যাশন হাল নাগাতে। আর যখনি কানা হই তয় লাগে জ্বালা। কান ব্যাথা, ভালো লাগেনা। কতই উপদ্রব জুটল। হায়! ছিলো প্রেমে এখন বিরহে।

আমার এক বন্ধু ইস্কুল থেকেই চশমা ইউজ করত। কিন্তু চশমা দিয়ে দেখা নজর তার বালা আছিলো না। কখন নিচ দিয়া কখন উপর দিয়া টুকটুকি করত যাকে বলে নজর দোষে জর্জরিত। মেয়েদের কমপ্লিন থাকত তার প্রতি আসলে পঞ্চগড়ের আটয়ারি বাড়ি আমার বন্ধুর। ত এখন সেনজর দোষ এড়াতে পারে নাই।💜💜

 

এম ইন্জা, চশমা প্রেম ##৫

চশমাঃ ডাক্তার আমাকে দিয়েছে কিন্তু আমি পাওয়ার্ড চশমাতে এতো কম্ফোর্ট ফিল করিনা বিধায় খুবই কম পড়ি, বরঞ্চ আমি রোদ চশমায় বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি, ফলশ্রুতিতে নামকরা ব্রান্ডের বেশ কিছু রোদ চশমা আমার আছে।💜💜

 

অনন্য অর্নব, চশমা প্রেম ##৬

স্টুডেন্ট লাইফে কালো রে-ব্যান পরে রিটায়ার্ড সেনা কর্মকর্তা ব্যবসায়ীর মেয়েকে প্রপোজ করতে গেলে মুন্নীর পাশে থাকা তার খালাতো বোন যখন বললো, "চশমার ফাঁকে তোমার বাবার ব্যবসায় দুই চোখ" তখন মনে হইছিলো চশমাটা খুলে ফেলে দিই আর মুন্নীর বদলে তার খালাতো বোনকে প্রপোজ করে প্রমাণ করে দিই আমি চশমার ফাঁকে তাকে দেখছিলাম, তার বাবার ব্যবসা নয়। অবশ্য এর পরেও অনেক বার প্রিয় রে-ব্যান গগলসটা পরেছিলাম।💜💜

 

হালিম নজরুল চশমা প্রেম ##৭

গোসল শেষ করে তড়িঘড়ি জামাকাপড় পরতে গিয়ে হাতার মাধে পা, ডানের মোজা বায়ে চলে যাচ্ছে। হাতে সময় মাত্র পাঁচ মনিট। এদিকে বউ জ্বলন্ত গরম ভাত বেড়ে বসে আছে “না খেয়ে বেরুতে পারবে না”। নাকে মুখে কটা ঢুকিয়ে পানি গিলতে গিয়ে উঠে গেল তালুতে। দুটো হাঁচি দিয়ে উম্মাদের মতো চশমাটা খুঁজছি। নাহ, কোথায় গেল চশমাটা! বউ চিৎকার করে বলে উঠল “এমন অন্ধই হয়েছো যে দুই পায়ে দুই কালারের মোজা পরে বসে আছো!” কিছু না বোঝার ভান করে হো হো করে হেসে উঠলাম। বউ এবার চুড়ান্ত তিরস্কার করে বলে উঠল “কাঁধে জোয়াল রেখে সারাবাড়ি লাঙল খুঁজছো!” এবার লজ্জায় লাল হয়ে চোরের মতো বেরিয়ে পড়লাম। সত্যিই তো চশমাটা মাথা আঁচড়ানোর সময়ই তো চোখে দিয়েছিলাম।💜💜

 

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

  • মোঃ মজিবর রহমান

    ও মোর জ্বালা! কন কি? নাক দিয়া জল পরে না চোখ দিয়া কইছে কিছু! না ঝামেলা এড়াতে কইছে?

    যাউকগে, চশ মা খুবউ প্রিয় ফ্যাশন হাল নাগাতে। আর যখনি কানা হই তয় লাগে জ্বালা। কান ব্যাথা, ভালো লাগেনা। কতই উপদ্রব জুটল। হায়! ছিলো প্রেমে এখন বিরহে।

    থাকগে বেশি লম্বা লম্বা কমেন্ট কেউ পড়বেনা এও জ্বালা।

  • হালিমা আক্তার

    বই রিভিউ লিখতে চেয়েছিলাম। রুকু আপার চশমা প্রেম দেখে, চশমা প্রীতি জেগে উঠলো। ভাবলাম চার চোখ নিয়ে লিখে ফেলি কিছু একটা।

    কবে, কখন, কোথায় তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল। সে কথা বিস্তারিত লিখতে গেলে, পাঠক উল্টো দৌড় দিবে। একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি। তার সাথে কোন বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় বা জ্যোৎস্না ভেজা রাতের বেলায় মিষ্টি মধুর প্রেমালাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎ ঘটে নাই। নাম না জানা কোন ডাক্তারের চেম্বারে প্রথম আলাপ।

    ডাক্তারের প্রশ্ন- কী করা হয়। বললাম – এইতো লেখা পড়া। আগে পড়তাম, এখন পড়াই। বাস জুটে গেল। ডাক্তারের ভাষ্য- তাহলে তো চশমা ছাড়া উপায় নাই। কী আমার প্রেমরে। মনে হলো দুনিয়ার তাবৎ শিক্ষকদের জন্যই চশমার কারখানা তৈরি করা হয়েছে।

    সেই থেকে একসাথে পথ চলা। চশমার সাথে ভালোবাসা থাকলেও, বিচ্ছেদ ও ঘটে। একমাত্র কোন কিছু পড়ার বা লেখার সময় তার খোঁজ হয়। অবশ্য তাতে চশমার কোন মন খারাপ হয় না। দিব্যি ভালোই কাটছে তার সাথে সময়। জানিনা কবে আবার বলে উঠে- মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না।

  • আলমগীর সরকার লিটন

    ১৫শত টাকা খরচ করে চশমা নিয়েছিলাম ছোট ছেলে আফীক বাবু হারিয়ে ফেলেছে মেজছেলে আকুক বলে কোথায় রেখেছি জানি না
    বলেন ত এখন কি করি যদি চশমা ছাড়াই সব দেখি মাঝে মাঝে কেমন লাগে দেখি!

    চমৎকার অনুগল্প রুকু আপু ভাল থাকবেন——–

  • রেজওয়ানা কবির

    গরমে তড়িঘড়ি করে কলেজ শেষে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আবার চিন্তা রাতে কি রান্না করব??এভাবেই চলছে নিত্যদিনের রুটিন। রাতে রুকু আপুর ফোন চশমা নিয়ে আড্ডা হবে ব্লগে আয়!!!
    হুম আসছি বলেই কখন ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পেলাম না।
    আজ ভাবলাম লিখেই ফেলি,,,,,
    আমার চশমা প্রেম,,,,,
    ২০০২ সাল, তখন ক্লাস এইটে পড়ি,প্রতিদিন ক্লাসে গিয়ে ফাস্ট বেঞ্চে বসি। দেরীতে গেলেও বান্ধুবীরা যায়গা রেখে দেয়। সেরকমভাবেই চলছিল,একদিন ফাস্ট বেঞ্চে আমরা কেউই যায়গা পাই নি, তাই পিছন থেকেই ব্লাকবোর্ডের অংক তুলতে লাগলাম,যতই লিখতে থাকি স্যার তার আগেই মুছে ফেলে আর আমি অন্যদের দেখে লিখি,সেদিনও বুঝিনি। এভাবে টানা কয়েকদিন পিছন থেকে বোর্ডের লেখা অন্যের খাতা থেকে দেখি বলে পলাশ স্যার বলল রেজওয়ানা,তুমিতো কারো দেখে লেখো না,কি ব্যাপার?
    আমি ঃ স্যার দূর থেকে দেখতে দেরী হয়, মাথা ব্যথা করে।
    স্যারঃ ডাক্তার দেখাও।
    এরপর বাসায় এসে দাদীকে বলতেই পরদিন দাদী রংপুরে ডাঃ মোখলেছুর রহমানের কাছে নিয়ে গেল।
    ডাঃ আংকেল আমার বন্ধুর বাবা।
    তার চেম্বারের গোল গোল ওজনের যন্ত্র লাগিয়ে বহুক্ষন আমার XYZECXYZEC এর পরীক্ষা নিয়ে প্রেশক্রাইব করে দিলো চশমা আর কিছু ঔষধ। ঘুম, গোসল ব্যতীত এই চশমা কিন্তু ছাড়া যাবে না। উত্তেজনা নিয়ে নতুন চশমা বানিয়ে পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে খুব লজ্জা লজ্জা লাগল ভেবে চশমা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে আবার ফেরার পথে চশমা মার্কা ওজনখানা চোখে দিয়ে বাসায় ফিরতাম।
    কেটে গেল ৬ মাস,,,, আবার ডাঃ আংকেলের কাছে,,,
    চশমার পাওয়ার একেবারে -২.৫😭😭😭
    তারপর থেকে গোল্লু চশমা আমার জীবন সঙ্গী হয়ে গেল।
    বন্ধুরা মিলে কফি খাচ্ছিলাম,চোখে চশমা নাই,পাশের টেবিলে এক ছেলে বার বার নাকি আমার দিকে তাকাচ্ছিল আর চোখ মারছিল,,আমার বন্ধু বলল, তোর দিকে তাঁকায় আছে পাশের টেবিলের ঐ ছেলেটি! আমি বললাম দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা! উঠে গিয়ে ছেলেরে দিলাম ধমক,একনাগাড়ে বলেই ভাবলাম উফ!!কি একটা কার্য্য উদ্ধার করলাম!!
    আমার বলা শেষে পাশে সোহাগ এসে বলল কিরে!!!তোর চশমা কই?আজবতো? যে ছেলে তোর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে ছিল সেতো তোর সামন দিয়েই চলে গেল।
    আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সরি বলে পালিয়ে রক্ষা হলো সেদিন। চশমা না থাকার এই দূর্গতি ছিল😭😭😭
    এরপর আরও বহুত ঘটনা ঘটেছে এই চশমা নিয়ে।।।।।
    যাইহোক আরেকটা ঘটনা বলি। আমার সাঁজগোজের খুবই শখ, তাই নিজের বিয়েতে ভাবলাম চশমা পড়বোই না, এত সুন্দর করে সাঁজবো, ছবি তুলবো, এই চশমা সব ঘেটে দিবে এটা কোন কথা???
    কিন্তু দুরের জিনিস কিভাবে দেখবো?
    লেন্স কিনলাম,চোখে লাগালাম,,,,দারুন দারুন পিকও তুললাম,প্রোগ্রাম শেষে লেন্স খোলার সময় চোখে প্রচন্ড আঘাত পেলাম, আর লেন্স পড়া হলো না😭। রাতে সবার সাথে আনন্দ করার পর ফ্রেশ হতেই নীল পাঞ্জাবীতে পিছন থেকে আজাদ কে জড়িয়ে ধরাতেই কুপোকাত😭হায় আল্লাহ!!”আমার চশমা কই??? চশমা লাগায় দেখি আমার দুষ্টু দেবর😃😃😃।
    এরপর চাম্পিস মার্কা চশমা আমার বন্ধু হয়ে গেল, এ আমাকে ছাড়েই না, আঠার মতই লেগে আছে আজও । শুধু এখন আমার বন্ধু চশমুদ্দিনের পাওয়ার বেড়ে একজায়গায় স্থির হয়ে আছে। এখন সে ৩.৭৫ এবং ৪ এ গিয়ে স্থায়ী।।।।।
    এখন চশমাই আমার,,,,,,,♥️♥️♥️
    তুমি আমার প্রথম সকাল,একাকী বিকেল, ক্লান্ত দুপুরবেলা,
    তুমি আমার সারাদিনমান, তুমি আমার সারাবেলা,,,,।।

  • বন্যা লিপি

    বাপরে!!! এত এত চশমা কাহিনী পইড়া আমি হাঁফাইয়া গেছি। বাপুরে বাপু!!!! এত রসালো কাহিনী এক চশমার জন্য??? পারেনও😃😃😃

    আচ্ছা!!! এখানে অনন্য অর্ণবের কোনো কমেন্ট দেখলাম না! তাহলে পোষ্টে যোগ হলো কি করে????

    ইঞ্জা ভাইজানের কমেন্টও তো নাই কমেন্ট বক্সে! তারও কমেন্ট যুক্ত করলেন কি করে????
    গ্রুপ পোষ্টে কমেন্ট করেছিলো নাকি? সেটা এখানে যোগ করে দিয়েছেন?
    কি জানি!!!
    সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছি।

  • হালিম নজরুল

    গোসল শেষ করে তড়িঘড়ি জামাকাপড় পরতে গিয়ে হাতার মাধে পা, ডানের মোজা বায়ে চলে যাচ্ছে। হাতে সময় মাত্র পাঁচ মনিট। এদিকে বউ জ্বলন্ত গরম ভাত বেড়ে বসে আছে “না খেয়ে বেরুতে পারবে না”। নাকে মুখে কটা ঢুকিয়ে পানি গিলতে গিয়ে উঠে গেল তালুতে। দুটো হাঁচি দিয়ে উম্মাদের মতো চশমাটা খুঁজছি। নাহ, কোথায় গেল চশমাটা! বউ চিৎকার করে বলে উঠল “এমন অন্ধই হয়েছো যে দুই পায়ে দুই কালারের মোজা পরে বসে আছো!” কিছু না বোঝার ভান করে হো হো করে হেসে উঠলাম। বউ এবার চুড়ান্ত তিরস্কার করে বলে উঠল “কাঁধে জোয়াল রেখে সারাবাড়ি লাঙল খুঁজছো!” এবার লজ্জায় লাল হয়ে চোরের মতো বেরিয়ে পড়লাম। সত্যিই তো চশমাটা মাথা আঁচড়ানোর সময়ই তো চোখে দিয়েছিলাম।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ