এক মুঠো ভালোবাসা (২৮তম পর্ব)

ইঞ্জা ২৪ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ০২:২৮:০৩অপরাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য

তুমি বিষয়টি নিয়ে এতো সিরিয়াস হচ্ছো কেন, তোমার ছেলে যথেষ্ট বড় হয়েছে, ও যা চাইছে তাই দাও ওকে, অনিকের বাবা বললেন।

কি বলছো তুমি, ও বিধবা একটি মেয়ে, আমার ছেলের জন্য কি মেয়ের অভাব আছে, অনিকের মার চোখ লাল হয়ে গেছে।
দেখো তুমি বাড়াবাড়ি করোনা প্লিজ, চেষ্টা তো গত ছয় বছর ধরে করেছো, পেরেছো কি ছেলেকে বিয়ে করাতে?
কেমনে পারবো, যত নষ্টের গোড়া ঐ মেয়েটিই।
চুপ করো, চুপ করো, তুমি চিৎকার করছো কেন, অনিক তো বলেই দিয়েছে তোমাকে, হয় ছায়া, নাহয় কেউ নয়।
অনিকের মা হতাশ চোখে তাকালেন রাশেদ সাহেবের দিকে, আমতা আমতা করে বললেন, তুমি ওকে একটু বোঝাও না।
আমি বোঝালেও হবেনা অনিকের মা, তোমার ছেলেকে তো চিনোই, ছায়ার কারণেই সে দেশ ছেড়েছিলো, বেশি বাড়াবাড়ি করলে হিতে না বিপরীত হয়, পরে না ছেলেকে হারাও, তা ছাড়া মেয়েটা সব দিকেই ভালো, সংসারী মেয়ে।
তবুও আমার মন সায় দিচ্ছে না।
দেখো ও বিধবা হয়েছে ওর দোষে নয়, কপালের ফেরে বিয়ের মাত্র সতেরো দিনে ও বিধবা হয়েছিলো, ভুলে গেছো?
অনিকের মা কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলেন, তারপর বললেন, ঠিক আছে তাহলে তাই হোক, আমার ছেলে যেদিকে খুশি সেখানে আমি কেন বাধা দিতে যাবো, সত্যি মেয়েটা খুব লক্ষি, দেখছোনা কেমন সেবা যত্ন করছে।
অনিকের বাবা ফিক করে হেসে দিয়ে বললেন, মন গললো?
ধুর তুমিও না কি, আমি তো ছেলের জন্য চিন্তা করছিলাম, তুমি সুলতান ভাইয়ের সাথে কথা বলো।
এখন না, রাতে ঘুমাতে এলে বলবো।

লাঞ্চের মধ্যেই অনিক বারবার ছায়ার দিকে তাকাচ্ছিলো, কিন্তু ছায়ার মুখ এখনো থমথমে দেখে অনিক চিন্তিত হয়ে উঠলো, ভাবছে কি এমন হলো যে ছায়া গম্ভীর হয়ে গেলো, কাল রাতেই তো ওর অসুস্থতা এবং তার সুস্থতার কথা বললো, তাহলে এখনো কি কোনো সমস্যা রয়ে গেছে?
এদিকে অনিক মনেই করতে পারছেনা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ও ছায়াকে কি বলেছে।
লাঞ্চ শেষে অনিক উঠে রুমের দিকে এগুচ্ছে, ইতিমধ্যে সেলফোনে কল আসাতে ডায়ালে দেখলো সোহেল চৌধুরির ফোন, অনিক রুমে প্রবেশ করে কল রিসিভ করে হ্যালো বললো।
মি. অনিক, আপনি ঠিক আছেন?
হাঁ আমি ঠিক আছি, আপনার খবর বলুন।
আমরা অপারেশন করেছি গতরাতে, মানে আমেরিকান টাইম ভোর ছয়টায়, আমাদের বিসিআইয়ের বেস্ট টিম একশনে ছিলো।
অনিক দম বন্ধ করে শুনছিলো, সিগারেটের প্যাকেট টেনে নিয়ে সিগারেট ধরালো।
সোহেল বলে চলেছে, কিন্তু দুঃখজনক ভাবে ওদের সিফু জেং আমাদের হাত থেকে ফসকে গেছে।
হোয়াট, অনিক উদ্বীগ্ন হলো।
অবশ্য আমরা দ্রুতই ওকে ধরে দ্রুতই ধরে ফেলবো, আমাদের বেস্ট একজন এজেন্ট ওর পিছে লেগেছে।
হুম, ঠিক আছে মি. সোহেল।
না ঠিক নেই।
কি ঠিক নেই?
আসলে ওরা হলো মাফিয়া, ওরা খুব ডেঞ্জারাস।
তো কি সমস্যা?
ওরা আপনার পিছনে লাগবে।
কেন, কেন লাগবে, আমি কি করেছি?
সত্যি বলতে কি ওরা এতো পাওয়ারফুল যে, আজ নয় কাল ওরা জেনে যাবে এই কাজে আপনিও জড়িত ছিলেন।
আমি কই জড়িত ছিলাম, আমি তো কিছুই করিনি?
না কিছু না করলেও ওরা আপনার পিছু লাগতে পারে।
অনিকের সিগারেট শেষ হয়ে এসেছিলো, হটাৎ আগুন ওর হাতে লাগাতে ওহ উফফ করে হাত ঝাড়া দিলো, সিগারেটটা কার্পেটে পড়াতে তা তুলে এস্ট্রেতে গুজে দিলো।

মি. অনিক কি হলো?
না না কিছু হয়নি, বলুন।
আপনাকে এখন সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কেমন?
চোখ কান খোলা রেখে চলাফেরা করতে হবে।
তা করবো কিন্তু আপনাদেরকে হেল্প করতে গিয়ে আমি বিপদে পড়ে গেলাম।
মি. অনিক আমি জানতাম আপনি সাহসী মানুষ, আপনি ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন এরচেয়ে বেশি দুশমন আপনি একাই সামলেছেন, আমরা একটা প্যাকেট পাঠিয়েছি যা এখনই পোঁছে যাবে, ওটা আপনার সাথে সার্বক্ষণিক থাকে যেন, এছাড়া আমাদের এজেন্টরা আপনার আসেপাশেই থাকবে।
না না কি বলছেন, আপনি আমার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখবেন না প্লিজ।
আরেহ এ আপনার সিকিউরিটির জন্য, আপনি বুঝতেই পারবেন না ওরা আপনার সাথেই আছে।
তাই, কিন্তু আমি কোনো বাড়াবাড়ি চাইনা।
তাই হবে কথা দিলাম, বলেই সোহেল চৌধুরি ফোন ডিসকানেট করলো।

অনিক আরেকটা সিগারেট ধরালো চিন্তিত মনে, ভাবছে কি করা যায়, ডোর বেলের শব্দ শুনে ও রুম থেকে বেরিয়ে সামনের দরজা খুললো।
মি. অনিক?
জ্বি আমি।
এই নিন আপনার প্যাকেট।
অনিক চিন্তিত মনে দরজা লাগিয়ে প্যাকেটটা নিয়ে রুমে ফিরে গেলো, দরজা লাগিয়ে প্যাকেট খুলে ও অবাক হলো একটা 9mm ম্যাগনাম অটোমেটিক পিস্তল এবং বেশ কিছু গুলি দেখে, এক সময় ও সবসময় নিজের কাছে রাখতো, হাতে নিয়ে এমন ভাবে হাত ভুলালো যেন নিজের আপন কেউ।
উত্তেজনা কাটাতে রুমের মিনি ফ্রিজ থেকে মিনি বোতলের একটা স্রিনফ ভোদকা খুলে পুরাটাই গলায় ঢেলে দিয়ে নাক মুখ কুঁচকালো।
ফোন রিং হচ্ছে দেখে উঠিয়ে ডায়ালে দেখে ছায়া কল দিচ্ছে, অবাক হলো অনিক, রিসিভ করে বললো, এখন বেরুবে?

না আমি আগেই বেরিয়েছি, এখন পার্ক স্টিটের দিকে যাচ্ছি, পারলে চলে আসো।
আচ্ছা আসছি বলেই অনিক ফোন ডিসকানেট করে দ্রুত রেডি হয়ে নিলো, বন্ধের দিন আজ, তাই জিন্স আর কালো টি শার্ট পড়ে নিয়ে পিস্তলটা লোড করলো, এরপর প্যান্টের পিছনে গুঁজে নিয়ে রুম থেকে বেরোলো।
অনিক কই যাস, অনিকের মা এসে জিজ্ঞেস করলো?
একটু বেরুচ্ছি মা, কিছুর দরকার আছে?
না কিছু লাগবেনা, শুন আজকে তোর সুলতান চাচার সাথে কথা বলবে তোর আব্বা।
কি ব্যাপারে?
তোদের ব্যাপারে, অনিকের মায়ের চোখে দুষ্টামি খেলা করছে।
অনিক মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মা তুমি ঠিক বলছো?
হাঁরে বোকা ছেলে।
তুমি খুশি তো?
আমার ছেলে বিয়ে করবে এর চেয়ে খুশি আর কি হতে পারে?
আই লাভ ইউ মা, বলেই অনিক ওর মার কপালে চুমু দিলো।
তাড়াতাড়ি আসিস, আজ রাতে তোর প্রিয় বিরিয়ানি রান্না করবো।
ওয়াও, মা আসলে তুমি সত্যিই লক্ষি মা আমার, আসি এখন।
যা আল্লাহ হাফেজ।

অনিক নিচে নেমে এসে আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলো গাড়ীর জন্য, কিছু সময় পর অনিক বেরিয়ে এলো নিজেদের গ্রাউন্ড ছেড়ে।
মনটা ওর আজ ভীষণ ফুরফুরে, গাড়ীর সিডি প্লেয়ার অন করে দিলো।

...... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ