সুন্দরবনের উপকন্ঠে মগ-ফিরিঙ্গি-পর্তুগিজ –১

রিতু জাহান ১৪ জুলাই ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৫:৪১পূর্বাহ্ন এদেশ ৫৫ মন্তব্য

খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে,

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে।

এ ছড়ার সংগে বাংলার, বিশেষ করে নিন্ম বঙ্গের মানুষের পরিচয় ঘটেছিল দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে। পেছনে ফেলে আসা দুঃসময়ের সেই যুগ, প্লাবনভূমির করুন বাস্তবতায় এতোটাই দুঃখময় হয়েছিল, যে স্পর্শের বাইরে থেকেও তা অনুভব করা যায়। অস্তমিত যুগের সেই দুঃসময়ের কথা -ইতিকথা কেবল বাঙলার ইতিহাসের মধ্যেই সীমিত হয়ে থাকেনি। মগ ফিরিঙ্গি, পর্তুগিজ বণিকদের ধর্ষণ, লুট, বর্বরতার কথা ভিনদেশী পরিব্রাজক রাও লিখে রেখে গেছেন তাদের ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

আমরা সকলেই জানি, মারাঠা পরিচিতি ছিল বর্গী নামে। এরা ছিল ভারতের মহারাষ্ট্রের অধিবাসী। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময় এরা বাঙলায় প্রবেশ করে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল।এদের মূল উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, বাঙালীর গ্রামীন সমাজে এরা ভাঙন সৃষ্টি করেছিল তা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত।

বর্তমানে বার্মা অতীতে আরাকান নামে পরিচিত। এরা পর্তুগীজদের সহায়তায় নদীপথে এসে নদী তীরবর্তী। এলাকার গ্রামগুলো একের পর এক লুণ্ঠন মধ্য দিয়ে বাঙলার মানুষের জীবন অস্থির করে তুলেছিল। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে দক্ষিণবঙ্গের বহু অঞ্চল যে জনশূন্য হয়ে পড়েছিল।

মহারাষ্ট্র পুরান কাব্যে গ্রামবাসীদের পলায়নের খন্ড পরিচয় পাওয়া যায়। বর্গীদের আক্রমন থেকে জগৎশেঠও রেহায় পাননি। জানা যায় জগৎশেঠের বাড়ি থেকে লুণ্ঠনের পরিমাণ ছিল তিন লক্ষ টাকা। নবাব আলীবর্দী খানকে দীর্ঘ দশ বছর বর্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়েছিল। দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেদিন পরিণত হয়েছিল বর্গীদের বিচরন ক্ষেত্র।

আঠারো শতকে মধ্যপাদে নদীয়া জেলার কটোয়া অঞ্চলে বৈষ্ণব বৈরাগ্য সাধনার প্র্ণ খোল করতালের ধ্বনি বর্গী অভিযানের প্রতিঘাতে কিছু দিনের জন্য স্থিমিত হয়ে পড়ে। বর্গীদের আক্রমনে নবাব আলীবর্দী খাঁর আরামাগের 'মুবারক মঞ্জিল' ও কেঁপে উঠেছিল। ১৭৪১ খৃষ্টাব্দে ১৫ই এপ্রিল নবাব বর্ধমান শহরে উপস্থিত হন মারাঠাদের প্রতিরোধ করতে। পরদিন সকালে তিনি জানতে পারেন মারাঠারা বর্ধমান শহরকে ঘিরে রেখেছে। আলীবর্দী খাঁ তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ওখানে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। অর্থাৎ তার জীবনে নিঃশব্দে একটি বিপর্যায় ঘটে খেল এবং ইতিহাসে তা চিহ্নিত হয়েও থাকল।

এ প্রসংগে গঙ্গারাম লিখেছেনঃ

ঘেরাও হইতে নবাব আইল কাটঞতে

শুনিয়া ভাস্কর তবে লাগিল ভাবিতে।।

ছি ছি ছি হা এ গেল পলাইয়া।

এতদিন বৃথা আসিয়া ছিলাম ঘিরিয়া।।

চলবে,,,,,

0 Shares

৫৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ