Bangladeshi Worker

বেশ কিছুদিন যাবত পত্র পত্রিকায় দেখছি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাকি দেওয়া গাড়ী জব্ধ করা হচ্ছে। যদিও এইসব গাড়ীর পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয় তা আমরা সাধারন মানুষ কখনও জানতে পারি না। যেইসব ধন কুবেররা শুধু গাড়ী থেকে এই কোটি কোটি টাকা টেক্স ফাকি দিচ্ছেন তারা কি অন্যান্য ক্ষেত্রে টেক্স দিচ্ছেন!!

কথা সেটা না কথা হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের সিংহ ভাগই আসে প্রাবাসীদের রক্ত পানি করা পাঠানো রেমিটেন্স থেকে। একবারও কি সরকার সেইসব প্রবাসীদের কথা একবার ভেবে দেখে!!তাদের সুবিধা, অসুবিধা,পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন এইসব কি সরকার ভেবে দেখে!!! যদি দেখত তাহলে কেন প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সৌদি আরব, মালেয়শিয়া, কুয়েত সহ মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলিতে যাবার জন্য দালালের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত হয়???

আমাদের দেশের সাংসধরা নির্বাচিত হওয়ার পর একটি টেক্স ফ্রি গাড়ী আমদানি করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। জনগনের ভোটে নির্বাচিত সংসদরা যেখানে এই সুযোগ পেয়ে থাকেন সেখানে কেন একজন প্রবাসী যে তার নিজের জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন সেই প্রবাসী যখন নিজ গৃহে ব্যাবহার করার জন্য একটি টিভি আনতে যায় তখন এয়ারপোর্টে কাস্টমস অফিসাররা হা করে বসে থাকেন টেক্সের জন্য!! তাদের জন্য কি সরকার এতটুকু সুবিধা দিতে পারে না!! যে মানুষ দেশের অর্থনীতিতে বছরের পর বছর অবদান রেখে যাচ্ছে তারা কি এতটুকু সহানুভূতি সরকারের কাছে পেতে পারে না!!

বিগত সাত বছর যাবত আমি প্রবাসে, জীবনের তাগিদে কিংবা সময়ের প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন দেশে পারি দিতে হয়েছে অনেক সময়, অনেক জায়গায়ই দেখেছি বাংলাদেশীরা খুব ভাল আছে আবার অনেক জায়গায় দেখেছি বাংলাদেশীদের খুব ছোট করে দেখা হয়, বেতন কম দেওয়া হয়, ভিসা এক্সটেসনের সময় অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, আর ঐসব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনও তাদের তেমন সেবা দিয়ে থাকেন না তাই বাধ্য হয়েই অনেকে অবৈধ হয়ে যায়।

যেমন মালেয়শিয়ার কথা বলি, বিগত কিছুদিন আগে মালেয়শিয়ান সরকার অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার একটা সুযোগ দিয়েছেন যদিও সেটার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের মনে। আর নিয়মাবলিতেও আছে অনেক ফাক ফোকর। আর এই ব্যাপারে বাংলাদেশ হাই কমিশনেরও তেমন দৌরাত্ত নেই। মালেয়শিয়ান সরকার মাই ইজি নামক একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বায়োমেট্রিকের দায়িত্ত দিয়েছেন, আর মাই ইজি নিজেই এই বৈধতার ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না! এবং প্রত্যেক আবেদনকারীর মাই ইজির রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রদত্ত ১,১০০ মালেয়শিয়ান রিংগিত ও অফেরতযোগ্য তাহলে সাধারন মানুষ যাবে কোথায়!!! তাই বৈধকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনিশ্চিত যা অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে নেশানা তাক করার মত।

দেশের এত বড় একটা জন শক্তি দেশের বাইরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে যখন তখন সরকার ব্যাস্ত হয়ে পরেছেন মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানোর নতুন বৈধ বেশ্যাবৃত্তি প্রহসন নিয়ে যেখানে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন ও আফ্রিকার ইথিওপিয়া সহ বেশ কিছু দেশ মধ্য প্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মনিবদের অমানুষিক বিশেষ করে যৌন অত্যাচারে কারনে, সেখানে আমরা কেন আমাদের নারী শ্রমিক সেই নির্মম অত্যাচারের রাজ্যে ঠেলে দিচ্ছি!!!

মাননীয় সরকারের কাছে আকুল আবেদন প্রবাসীদের জন্য কিছু করুন! তাদের সুবিধা, অসুবিধা গুলি একটু নজর দিন এতে উপকৃত হবে একজন প্রবাসী,উপকৃত হবে একটি অসহায় পরিবার, উপকৃত হবে সমগ্র বাংলাদেশ।

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ