স্যার ফজলে হাসান আবেদ সাহেব মারা গেলেন গত রাতে। বাংলাদেশের প্রতিটি মিডিয়া উনাকে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম সেরা পথিকৃৎ বলে দাবি করে তাঁর বর্ন্যট্য জীবন নিয়ে ফিচার করছে মোটামোটি সবকয়টি নিউজ মিডিয়ায় তিনি একজন দারিদ্রবিমোচক।কিছুক্ষন আগে স্যার আবেদ সাহেবকে নিয়া একটা ফিচার পড়লাম কিন্তু উক্ত ফিচার লেখকের সাথে আমি সবকিছুতে একমত হতে পারলাম না। সেই ফিচার লেখকের ভাষ্যমতে মুক্তিযুদ্ধের সহায়তার জন্য স্যার আবেদ সাহেব ১৯৭১ সালের মে মাসে শেল অয়েল কোম্পানির চাকুরি ছেড়ে ইসলামাবাদ ও কাবুল হয়ে লন্ডন চলে যান। এটাকে কি চলে যাওয়া বলে নাকি সেইভ কান্ট্রিতে পালিয়া যাওয়া বলে?? ফিচার লেখকের কাছে আমার জানতে ইচ্ছে করেছিল। পালিয়ে গিয়ে এ্যাকশন বাংলাদেশ ও হেল্প বাংলাদেশ নামে দুইটি সংগঠন করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছেন তারপর তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ ডিসেম্বরে স্বাধীন দেশে ফেরত আসেন। মানে দুঃসময়ে পালিয়ে গিয়ে সুসমে দেশে এসে সময় ও সুযোগের যথার্থ ব্যবহার করেন এবং ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রতিষ্ঠিত করেন ব্র্যাক।
এখন কথা হচ্ছে ব্র্যাক এর কাজ কি?এই পর্যন্ত যত এন,জি,ও বাংলাদেশে হয়েছে তাদের কাজ কি? আপনি ঘুরে ফিরে বাংলাদেশে এন,জি,ও নিয়ে যখন গভীর থেকে গভীরে পর্যবেক্ষন করবেন তখন দেখতে পাবেন বাংলাদেশের ৯৯% এন,জি,ও মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করে থাকে, যা কাগজে কলমে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প হলেও বাস্তবে হচ্ছে সুদি ব্যবসা। প্রতিটা এন,জি,ও গঠনতন্ত্রে অলাভজকন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন করলেও বাস্তবে তারা লাভ করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশী। আপনি জানেন ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার কত? ব্র্যাকের ঋণ প্রকল্পের সবচেয়ে কম লাভ বা সুদের হার হচ্ছে বরগা চাষী ঋণ যার সুদের হার ক্রমহ্রাসহাড়ে ২০%। এখন ধরেন আপনি এই ঋণ নিলেন তারপর দুই মাস বা তিন মাস পর আপনার মনে হলো পুরো ঋণের টাকা সুদসহ ফেরত দিবেন তখন কিন্তু তারা সেটা একবারে জমা নিতে চায়না কারন ওই যে ক্রমহ্রাসমান হার!! এই হারে তাদের লাভ কম আসে। এটা গেলো সুদের কারবারের ছোট একটা উদাহরণ তাদের আরো আরো অনেক ঋণ প্রকল্প আছে যা আরো বেশী লাভজকন সূদের ব্যবসা।
এবার আসুন শিক্ষা ব্যাবসা নিয়ে কিছু বলি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সম্পর্কে কি কারো ধারণা আছে? যদি থাকে তাহলে আমার কথার মর্মাথ তারা বুঝতে পারবেন। হ্যা আমি জানি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালরের শিক্ষার মানদণ্ডে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে আছে কিন্তু এত বড় এন,জি,ও এর অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নামে মাত্র টিউশন ফি দিয়েও তো যোগ্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সুযোগ দিতে পারতো তাই না? এই বিশ্ববিদ্যালয়ও একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসবে নিবন্ধন করা কিন্তু লাভের পরিমান কোনদিক থেকেই কম না। বাংলাদেশের কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই লাভ ছাড়া চলে না। এইগুলা হবার কথা ছিল বোর্ড অফ ট্রাষ্টিজে যারা আছে তাদের সমাজ সেবামূলক দাতব্য সংস্থা কিন্তু আদতে কি এইগুলা দাতব্য সংস্থা??
তারপর আসুন আড়ং। কিছুদিন আগে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট গোলাম সারোয়ারের বদলি নিয়ে মিডিয়ায় কিন্তু কম কথা হয়নি! শেষ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবল আন্দোলন ও সমালোচনার ফলে সেই বদলি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। নির্বাহী ম্যাজিট্রেট গোলাম সারোয়ারের দোষ কি ছিল জানেন? অতি উচ্চ মাত্রায় কাপড় বিক্রির জন্য আড়ং কে জরিমানা করেছিলেন তিনি। এখন অনেকেই বলবেন ব্যবসা করে লাভ করতেই পারে। হ্যা ভাই আমিও একমত ব্যবসা লাভের জন্যই কিন্তু সেই লাভের একটা নীতিমালা কি থাকা দরকার নাই?? আপনি জানেন আড়ং কোথা থেকে কাপড় সংগ্রহ করে? প্রত্যান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অসাধারণ প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নামে মাত্র মুল্যে আড়ং কাপড়, হ্যান্ডিক্রাফট সংগ্রহ করে।ক্ষেত্র বিশেষে আড়ং এর কাপড়ের দাম বিশ্বের নামী দামী ব্র্যান্ড যেমন এইচ এন্ড এম, মার্ক এন্ড স্পেন্সার, নেক্সট, রিভার আইল্যান্ডের চেয়েও বেশী। কিন্তু মানের দিক বিবেচনা করলে সেসকল ব্র্যান্ডের কাছাকাছি সূচকেও আড়ং টিকবে না।
এবার আসি ব্র্যাকের ভিক্টীম সাপোর্ট এইড, যক্ষা নিরাময় প্রোগ্রাম, স্যানিটেশন প্রোগ্রাম বিষয়ে। যদি ভাবেন এসকল সার্ভিস ব্র্যাকের সমাজ সচেতনা মূলক ফ্রী সার্ভিস তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন এইসকল কার্যক্রম দেখিয়ে ব্র্যাক হাজার কোটি টাকা বিদেশী ডোনেশন কালেকশন করে যার অর্ধেকও এসকল প্রকল্পে ব্যায় হয় কিনা সন্দেহ আছে। একটা জিনিস মনে রাখবেন বাংলাদেশের কোন এন,জি,ও অলাভজনক দাতব্য সংস্থা না। সবাই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও দারীদ্রতা কে পুজি করে নিজের লাভের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। ব্র্যাক যদি দারিদ্র বিমোচনই করে তাহলে গ্রামীণ ব্যাংক তো একই কাজ করছে তাহলে একজনকে এত সম্মান আর আরেকজন (ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস) কে কেন সূদখোর বলে এত অপমান করি?এটাকেই বলে রাজনীতি (বিস্তারিত লিখলাম না) দুইটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কিন্তু একই তবে ব্র্যাকের আয়ের ফাক ফোকর অনেক বেশী। পরিশেষে বলতে চাই ‘’নাথিং ইজ ফ্রি ইন বাংলাদেশ’’ আর বাংলাদেশের কোন এন,জি,ও দারিদ্র বিমোচনে কাজ করে না তার দারিদ্রতাকে পুজি করে লাভের ব্যবসা করে।
২২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া আমিও একমত আপনার সাথে। ধন্যবাদ আপনাকে
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
সুপায়ন বড়ুয়া
সহমত ভাই যা অনেকে জেনে ও বলে না
শুভ কামনা
ইকবাল কবীর
জ্বি এই নিরব থাকার ভূমিকাই অনেক অন্যায়কে আরো সুযোগ করে দেয় অন্যায়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে।
ইসিয়াক
একেবারে মনের কথা লিখেছেন ভাইয়া।
সত্য উন্মোচিত হোক। শুভকামনা।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে।
মোঃ মজিবর রহমান
বাংলাদেশে সবাই রাজা যারা চাপাবাজ। যার শক্তি সেই ক্ষমতাবান। যার মেধা যেভাবে খাটায়।
ইকবাল কবীর
বর্তমানে চাপাবাজের চেয়ে তেলবাজের ক্ষমতা ও পেশী শক্তি দুটাই বেশী।
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! তা ঠিক। বলেছেন।
সুরাইয়া পারভিন
নাথিং ইজ ফ্রি ইন বাংলাদেশ’’ আর বাংলাদেশের কোন এন,জি,ও দারিদ্র বিমোচনে কাজ করে না তার দারিদ্রতাকে পুজি করে লাভের ব্যবসা করে।
শতভাগ সহমত আমি আপনার সাথে। দুর্দান্ত উপস্থাপন
ইকবাল কবীর
ফ্রি পেলে আমরা বাঙ্গালি নাকি আলকাতরাও খাই। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে আলকাতরা ও বর্তমানে ৩০ টাকা কেজি এই জন্য বললাম নাথিং ইজ ফ্রি ইন বাংলাদেশ। যারা ফ্রি ফ্রি করে তারা হয়ত চাপা মারে নয়ত প্রতারনা করে। ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ কর্মসূচী শ্রেফ সুদের ব্যবসা, যে সুদ ইন্টারেস্টের হার যে কোন ব্যংক থেকে ডাবল।
দেশে কোনো কিছুই ফ্রি নেই, সবাই একটা মুখোশ লাগিয়ে কথার ফুলঝুড়ি বিলিয়ে চলে।
অনেক ভালো পোস্ট।
ইকবাল কবীর
জ্বী ভাইয়া মাইক্রোক্রেডিট পদ্ধতিতে যে কোন কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ে সুদের পরিমান বেশী। ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
অনেক দিন পরে একটি ব্লগীয় লেখা পড়লাম,
আমরা সবাই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেই, কেউ ভিন্ন চিন্তা করিনা।
কিন্তু একজন ব্লগার সবাই যা ভাবেন, তা থেকে ভিন্ন এবং সঠিক চিন্তা করেন।
এই লেখাটি তেমন।
আরো লেখা চাই ছোট ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
ব্র্যাক যদি দারিদ্র বিমোচনই করে তাহলে গ্রামীণ ব্যাংক তো একই কাজ করছে তাহলে একজনকে এত সম্মান আর আরেকজন (ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস) কে কেন সূদখোর বলে এত অপমান কেন করি?….
এর উত্তর আপনার পোস্টেই আছে। যে যত সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে তার কলঙ্কের পরিমানও সমপরিমানেরই থাকবে। তাদের পক্ষে/ বিপক্ষে বলার মানুষের অভাব নেই। শুধু অভাবমোচনের জন্যে তারা যেসব পথের সন্ধান দিয়েছেন, সেখানে নৈতিকতার অভাব পুরণে ব্যার্থ হয়েছেন।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভালো পোস্ট দিয়েছেন।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
তৌহিদ
আমাদের দুর্ভাগ্য একজন নোবেল বিজয়ীকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে পারিনি। অন্যদিনে বৃটিশদের দেয়া নাইটহুড খেতাব প্রাপ্ত একজনকে মাথায় বসিয়েছি। যে নাইটহুড উপাধি রবীন্দ্রনাথ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে আমি জানি সুদের বেড়াজালে পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কি হাল হয়!
নাথিং ইস ফ্রী, এই যে তাকে এত সম্মান করছি সেটাও কিন্তু টাকার বিনিময়ে আবেদ সাহেব অর্জন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চলে যাওয়া যাকে বলে সুবিধাবাদী অবস্থান! এটা গ্রহণযোগ্য নয়। সে সময় অনেকেই বিদেশ থেকে দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি যদি বিদেশেই থাকতেন তাহলে স্বি ফান্ড সংগ্রহের বিষয়টি যথাযথ হতো কিন্তু পালিয়ে গিয়ে?
তারপরেও যে চলে গেছে পরপারে সেতো চলেই গিয়েছে। এসব বলে আর কি লাভ? তিনি ভালো থাকুন ওপারে এটাই কাম্য।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য।
রেহানা বীথি
এনজিও’র ক্ষুদ্রঋণের চোরাবালিতে দরিদ্র মানুষের জীবন শুধু তলিয়েই যায়। উদ্ধার পাওয়ার কোনও উপায়ই নেই।
ইকবাল কবীর
জ্বী ভাই ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্রকে আরো দারিদ্র বানায়।
মনির হোসেন মমি
একটা মানুষের সব দিকই ভাল নিউজ থাকে না তবে তার দারিদ্রমোচনের পদ্ধতিতে এ দেশে বহু অসহায় মানুষ উপকৃত (অন্য উপায় না পেয়ে) যেমন হয়েছেন তেমনি কিছুতো বিতর্কীত থাকবেই কারন তার প্রতিষ্ঠানটিওতো চালাইয়া রেখে বিস্তৃত করতে হলে লাভের প্রয়োজন আছে তবে তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়।এ ক্ষেত্রে মনিটরিংএ সরকারেরও দায় ভার ছিল।
আমিও যতটুকু জানি তার শিক্ষা ব্যাবস্থায়,আড়ং ,এইড, যক্ষা নিরাময় প্রোগ্রাম, স্যানিটেশন প্রোগ্রাম এ সব বিষয়ে তার যুগান্তকারী তেমন কোন সাফল্য বা জনগণের উপকৃত হয় এমন কোন নিউজ নেই সবিই ব্যাবসা মনে হল তবুও এই ভাল যে মন্দের ভাল।এদেশে বহু কোটিপতি রাজনিতীবিদ আছেন যারা তার এ পথে না গিয়ে বিদেশে সুইচ ব্যাংকে টাকা জমান কিংবা পুরো পরিবার সেটেলড ব্যাবসা বানিজ্য সব বিদেশে করছেন অথচ টকাগুলো এ দেশের সেঅর্থে তিনি যা করছেন তা মন্দ নয়।
অবশ্যই আমিও একমত ড.ইউনুস বিষয়ে।উভয়ে আমার মতে ভাল মানুষ অন্তত তথাকথিত ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের চেয়ে।রাজনৈতিক কালো থাবা হতে এ দেশ মুক্ত হতে না পারলে জনগন কখনোই এ সবের সুফল ভোগ করতে পারবেন না।
এক সময় যুবক নামের এক সংগঠন জনগনের হাজারো কোটি টাকা মেরে দিল সরকার নীরব।অথচ সরকারে মদদেই তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।এখন ডেসটিনির কথা যদি বলি ঝুলে আছে লক্ষ লক্ষ জনতার ভাগ্য।কী হয় কে জানে! অথচ এটাও করা হয়েছিল সরকারের অনুমতিক্রমেই।জনগনের কাছ হতে হাজারোলক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে জনগনকে আদালতের মুলা দেখাচ্ছেন। সবিই সরকারের লোভ লালসার জের।
সৎ সাহসিকতায় এমন লেখা,লেখা যায়।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকেও গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।